The villain husband

0 4

The Villain Husband

পার্ট : ১৮

অনেকক্ষন ধরে রুমে বসে আছে শ্রাবন এ বাসায় আসার পর থেকে রুদ্র একবার ও শ্রাবনের রুমে আসেনি,

কিন্তু রুদ্রের সাথে কথা বলাটা দরকার শ্রাবনের, নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে যে কষ্ট দিয়েছে তাকে নিজের হাতে শাস্থি দেয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে শ্রাবন।

তাই রুদ্রকে তার দরকার, কখন কিভাবে কি করবে সব প্লেন করতে হবে,

ভাবতে, ভাবতে রুম থেকে বেড় হলো শ্রাবন।

রুদ্রের রুম কোনটা শ্রাবন সঠিক জানে না তাই এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতেই যাচ্ছে শ্রাবন।

হঠাৎ কারেন্ট চলে গেলো, কারেন্ট চলে যাওয়াতে এবার শ্রাবন এক যায়গায় ঠায় দাঁড়িয়ে আছে, মোবাইলটাই রুমে রেখে এসেছে, মোবাইলটা থাকলে ফ্লাস জালিয়ে রুমে যেতে পারতো, কিন্তু তাও পারছে না, উপায় নেই তাই ঠায় দাঁড়িয়ে আছে,,,

ওগো তোমায় নিয়ে সখী,

যদি কোনো গল্প লেখি।

তুমি এসো চিলে কোঠায়,

শোনাই আমার বিনার বানী,

তুমি মন্ত্রতালে শোনো!

আজ আমার এ আবৃতি!!

অন্ধকার রুম থেকে কেও কবিতাটি আবৃতি করছে, অন্ধকার তবুও শ্রাবন চোখ বুজে আবৃতি শুনছে, যেন অন্তরের খুব গভীর কোথাও, ভেদ করছে আবৃতিটা।

- আরে ভাই আপনি এখানে দাঁড়িয়ে?

শ্রাবন চোখ খুলতেই দেখো কারেন্ট এসে গিয়েছে, কিন্তু তার চোখ বন্ধ থাকায় টের পায়নি, রুদ্রের কথায় চোখ খুললো শ্রাবন,

- হ্যা আসলে তোকেই ডাকতে যাচ্ছিলাম হঠাৎ কারেন্ট চলে গেলো,

- ওহ আচ্ছা চলেন আপনার রুমে যাই,

- আচ্ছা রুদ্র( মনে মনে ভাবছে শ্রাবন, আবৃতি কন্যার কথা রুদ্রকে জিজ্ঞেস করবে কিন্তু তারপর ও কোনো এক অজানা কারনে জিজ্ঞেস করলো না)

- কি হলো ভাই কিছু বলবেন?

- নাহ কিছুনা, কথা আছে একটু চল,

তারপর শ্রাবন আর রুদ্র রুমে গেলো,

বাহিরে খুব সুন্দর চাঁদ উঠেছে, জোছনা যেন রাতকেও রঙিন করে তুলেছে, রুমের ব্যালকনি ধরে দাঁড়িয়ে এই ফুরফুরে মেজাজে আবৃতি করছে তিতির। আবৃতি তিতির এমন একটা ভালোলাগা যাকে আবৃতি প্রেম ও বলা যায়,

চুল গুলো কাটার দিয়ে কোনো রকম বাধা চোখ বুজে আবৃতি করে যাচ্ছে তিতির, এমনটা সে প্রতিদিনই করে তবে আজ যেন আবৃতিটা নতুন করে প্রান ফিরে পেয়েছে মনে হচ্ছে তিতিরের কাছে,এমন মনে হওয়ার রহস্য তিতির নিজেও জানে না,

একলা একলা এক চঞ্চল সদ্য যৌবনে পা দেয়া একটি মেয়ের মনে অনেক ভাবনা জাগতে পারে,যে ভাবনাগুলো হয়তো কোনো ব্যাখ্যা হয়না তবে ভাবনাগুলো হয় সুন্দর, কারন সে ভাবনাগুলো আসে মনের অন্তরাল থেকে, সদ্য যৌবনে পা দেয়া মেয়েদের মন কখন কেমন থাকে কেও বলতে পারে না,এরা আচমকা কেঁদে দেয় কারনছাড়া হেসে দেয়। সহজ বিষয়কে জটিল আবার জটিল বিষয়কে সহজভাবে কল্পনা করে,

অনেকক্ষন ধরে বিছানায় বসে আছে স্নেহা, বাবা, মা,ভাই সবাইকে একসাথে পেয়ে হয়তো তার খুশিতে নাচার কথা কিন্তু সে তা পারছে না,

কারন তার মনে হচ্ছে এটা রুদ্রের আবার নতুনভাবে তার পরিবারকে ছোট করার ফন্দি, যে করেও হোক সে এবার তার পরিবারকে রক্ষা করবে,

খোট করে দরজা খুলে রুমে এসেই সোজা বিছানায় শুয়ে পড়লো রুদ্র।

- জান মাথাটা টিপে দাও অনেক ব্যাথা করছে,

রুদ্রের দিকে একবার আরচোকে তাকালো স্নেহা, মনে মনে ভাবতে লাগলো মাথা বা টিপে গলাটা টিপে দিলে কেমন হয়। সব ব্যাথা একেভারে সেরে যাবে।

মুখটা উঠিয়ে কিছুক্ষন স্নেহার দিকে তাকিয়ে,

- কি হলো এতো কি ভাবছো? মনে হচ্ছে ঘরে সতীন আনার কথা বলেছি যে মুখটাকে কালো মেঘ করে রেখেছো!!

- সতীন আনলেই বা কি? আই ডোন্ট কেয়ার। আপনি একটা না ১০ সতীন আনুন কিন্তু আমাকে আমার পরিবারকে আর আমার সন্তানকে প্লিজ মুক্তি দিন।

- তুমি আবার শুরু করলে তাইনা? সারাটাদিন খাই কি খাইনা একবার ও খোজ নাও তুমি? বাসায় আসার পর ও শুরু করো কি ভাবো আমাকে আমিকি মানুষ না, আর বার বার নিজের বাচ্চা নিজের বাচ্চা করো কেনো বাচ্চা কি আকাশ থেকে পড়েছে ওর কি বাবার পরিচয় নেই, নিজের বউ আর বাচ্চাকে নিজের কাছে রাখতে চাওয়া অপরাধ হলে হ্যা আমি অপরাধী। কি করবা বলো এই অপরাধের শাস্তি আমাকে যা দিবা তাই আমি মাথা পেতে নিবো,( চিৎকার করে কথাগুলো বলেই বেড়িয়ে গেলো রুদ্র।

স্নেহা বসে রুদ্রের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে,

টেবিলে খাবার দিচ্ছে আনোয়ারা বেগম, আজকে অনেক কিছু রান্না করেছে সে। অনেকদিন পর বাড়িতে আত্নীয়সজনে ভরপুর হয়ে গেছে, তাই ফুরফুরে মেজাজে আছে আনোয়ারা বেগম।

পাশেই মুখ দাঁড়িয়ে আছে তিতির,

- শোন তিতির তুই কিন্তু স্নেহার ভাইটার সাথে অনেক বেয়াদবি করেছিস, ও তোর অনেক বড় আর কোনো বেয়াদবি করবিনা,

- আমি বেয়াদবি করিনি মা, লোকটা জানেনা কার সাথে কিভাবে কথা বলতে হয়,

- মাড়বো টেনে এক চর লোকটা কি হ্যা? ভাইয়া বলবি।( আনোয়ারা বেগম)

- একি আপা আপনি ওকে বোকাবোকি করছেন কেন? কি মিষ্টি মেয়েটা, ( সিরি থেকে নামতে নামতে বললো স্নেহার মামনি)

- আরে আপা আপনি, আর বলবেন বা আপা মেয়েটা বড় হয়েছে কিন্তু বুদ্ধি সুদ্ধি হয়নি, নিজের মতো বকবক করেই যাই,( আনোয়ারা বেগম)

- থাক আপা এই বয়সে এমন একটু হয়, আমার স্নেহাও এমন ছিলো আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে,

তুমি কোন ক্লাসে পড়ো মা?

- ইন্টার 2nd ইয়ার আন্টি।

- বাহ খুব ভালো!!

- তিতির যা তো তোর ভাইয়া ভাবিকে ডেকে আন আর স্নেহাকে বল ভাই আর শ্রাবনকে নিয়ে আসতে,

- আচ্ছা মা, বলেই তিতির চলে গেলো,

- ভাবি ভাবি,

বিছানায় বসে আছে স্নেহা,

- হুম বলো?

- ভাবি মা খেতে ডাকছে, ভাইয়া কোথায়?

- জানিনা তোমার ভাইয়া কোথায় তুমি যাও আমি আসছি।

- ভাবি আংকেল কেও সাথে নিয়ে আসো আর ওই খাটাশটাকেও,

বলেই তিতির জ্বীভে কামড় দিলো,

- কি???? খাটাশ মানে??

- কিছুনা ভাবি মানে তোমার ভাইকেও,

নিচের দিকে তাকিয়ে বললো তিতির।

তিতিরের কথা শুনে স্নেহা হেসে দিলো,

মেয়ে কলেজে পড়লেও আচরণ সে বাচ্চাদের মতোই রয়ে গেছে কথা ভেবেই স্নেহা মুচকি হেসে দিলো,

তিতির কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে,

স্নেহা বুঝতে পারলো তিতির হয়তো ওভাবে বলে ফেলাতে একটু লজ্জা পেয়েছে,

স্নেহা তিতিরের হাত ধরে বিছানায় বসালো,

- জানো ভাইয়া ছোট বেলা থেকেই এমন, খাটাশ একটা। বাবা চকলেট আনলে আমাকে একটা দুইটা দিয়ে ও বেশি নিতো, তুমি ঠিকই বলেছো ভাইয়াটা পচা,

তিতির মাথা উচু করে এক বিজয়ের হাসি দিলো, শেষমেস তার দলে কাউকে পেয়েছে ভেবেই ভালো লাগছে তিতিরে,

তিতির আর একটু শক্ত করে বসলো,

- দেখেছো ভাবি তুমি আমাকে ঠিক বুঝেছো, আর সবাই শুধু বোকা দেয়😞

আর কেও বোকা দিবেনা, আমি আছিনা আমি সবাইকে বলে দিবো।

- আমার লক্ষি ভাবি, বলেই তিতির স্নেহাকে জড়িয়ে ধরলো।

- হুম অনেক হয়েছে এখন চলো,পাপা আর ভাইয়াকে ডেকে আনি!!

- ভাবি আমি যাবো না তোমার ভাইয়া আমার দিকে কেমন রাগি লুকে তাকায় আমার ভয় লাগে!! (ভিতু হয়ে বললো তিতির)

- আরে আমি আছিনা কিছু হবে চলো,

স্নেহা বাবাকে ডেকে নিচে পাঠালো তারপর ভাইয়ের রুমের দিকে গেলো,

- ভাইয়া আসবো,

- হ্যা আয়,

স্নেহার পেছনে পেছনে তিতির ও ঢুকলো,

- ভাইয়া চলো নিচে খেতে যাই!!

- হুম যাবো ডাকতে তো একা আসলেই পারতি!!

- কেনো?? ভাইয়া তিতিরকে নিয়ে আসাতে তোমার কোনো সমস্যা হয়েছে?

- না রে সমস্যা হবে না, আমাকে খুনি আর চোর অলরেডি বানিয়ে ফেলেছে তো তাই আর নতুন করে কিছু হতে চাইনা তাই বললাম।

শ্রাবনের কথা তিতির কিছুটা লজ্জা পেলো কারন তিতির বুঝতে পেরেছে তাকে শোনানোর জন্যই কথাটা বলেছে শ্রাবন,

- ভাবি তোমরা আসো আমি নিচে যাচ্ছি, বলেই তিতির চলে গেলো সেখান থেকে,

- উফ ভাইয়া, এমন ভাবে না বললেও পাড়তি আসলে ওর মন একটু বেশি সরল তাই মুখে যা আসে তাই বলে দেয়, মারপেঁচ বোঝে না।

- হুম, আচ্ছা নিচে চল সবাই হয়তো ওয়েট করছে,( শ্রাবন)

- চলো,

শ্রাবন আর স্নেহা দুজনেই নিচে নামলো,

খাবার টেবিলে বসে আছে সবাই, রুদ্র ছাড়া সবাই আছে,

- স্নেহা না যা রুদ্রকে ডেকে আন,

স্নেহা অবাক হয়ে গেলো, কারন সে তার পাপার মুখে এমন কথা আশা করেনি। যে তাদের এতোবড় ক্ষতি করেছে যে সবার জীবনটা এভাবে ওলটপালট করে দিয়েছি, যাকে তার পাপা একদিন গুলি করে মাড়তেও চেয়েছিলো। সেই পাপার মুখেই রুদ্রজে ডাকার কথা শুনে স্নেহা যেন থমকে গেছে,

পরক্ষনেই স্নেহা ভাবলো,

হয়তো তার পাপা কোনো চাপে পড়ে এমন ভালো ভাবে রুদ্রকে ডাকার কথা বলেছে,

কারন রুদ্র এমনি এমনি তার মা বাবাকে আনার পাত্র না, কোনো না কোনো কারন তো আছে,

ভাবতে ভাবতে স্নেহা রুদ্রকে ডাকতে গেলো,

অনেকক্ষন ধরে গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে রুদ্র, তার রাগের জন্য স্নেহাকে আর কোনো কষ্ট দিতে চায়না সে, তবে দিয়ে ফেলে আর এটাই তার বড় কষ্ট, স্নেহার মাঝে তার সন্তান আছে।

দুজনের খেয়াল রেখেই যা করার করতে হবে,

- খেতে চলুন সবাই ডাকছে,

পেছন থেকে স্নেগার কণ্ঠ শুনে রুদ্র রুদ্র স্নেহার দিকে তাকালো,

- সবাই ডাকছে বলেই ডাকতে এসেছো? নিজে মন থেকে ডাকতে আসোনি??

- না আসিনি, নিচে আসুন প্লিজ!!

রুদ্র কিছু বলতে যাবে তার আগেই রুদ্রের মাথাটা ঘুরতে লাগলো নিমিষেই চারদিকে অন্ধকার দেখতে লাগলো রুদ্র, ঠাস করে ফ্লোরে পরে গেলো,,,

- ভাইয়ায়ায়ায়া( স্নেহা)

চলবে,,

( গল্পে আগে অনেক রেসপন্স ছিলো কিন্তু এখন তা একেবারেও কমে গিয়েছে খারাপ লাগছে ব্যাপারটা।😞)

1
$ 0.00

Comments