শেয়াল ও বাঘের এক মজার কাহিনী

35 67
Avatar for Jahidur123
4 years ago

ঠোট্ট একটা শহর। সেখানে সবচাইতে বড় ডাক্তার হইয়া পড়িল এক নাপিত। ছোটখাট অসুখে এটা ও্টা ঔষধ দিয়াই নয়, ফোঁড়া কাটা হইতে আরম্ভ করিয়ারোগীর পেট চিরিয়া রোগীর পেট চিরিয়া পেট হইতে পুঁজ বাহির করিয়া দেওয়া পর্যন্ত বড় বড় কাটাছেঁড়ার কাজও সে অতি সহজেই করিয়া দেয়। এসবকাজ করিতে ডাক্তারেরা কত রকমের যন্ত্র লয়। ছুরি, কাঁচি ভালোমত গরমপানিতে সিদ্ধ করিয়া, পানিতে ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করিয়া কত সাবধান হইয়া তাহারা রোগীর গায়ে অস্ত্র ধরে। নাপিত কিন্তু সবের ধারধারে না। সে হাতের তোলায় তাহার ক্ষুর আর নরুণ ভালোমত ঘষিয়া খসাখস বড় বড় কাটাছেঁড়ার কাজ করিয়া যায়। এমন পাকা তাহার হাত: রোগীর পেট চিরিয়া, পেটের মধ্যে হাত দিয়া, সেখানে নাড়ির ভিতরে ফোঁড়াটি হইয়াছে, অতি সহজেই সেখানে ক্ষুর চালাইয়া পুঁজরক্ত বাহির করিয়া আনে। তারপর সাধারন সুঁই সুতা দিয়া ক্ষতস্থান সেলাই করিয়া, আর এবটুহলুদ গুঁড়া মাখাইয়া দেয়। ক্ষতস্থান সারিয়া যায়। চোখের পলক ফেলিতে না ফেলিতে সে বড় বড় কাটাছেঁড়ার কাজ করিয়া ফেলে। কাহারও ফোঁড়া হইয়াছে, বেদনায় চিৎকার করিতেছে। দেখি, দেখি বলিয়া নাপিত সেখানে তার ক্ষুর চালাইয়া দিয়া পুঁজরক্ত বাহির করিয়া আনে। রোগী আরাম পাইয়া আনন্দের হাসি হাসে। গলায় মাছের কাঁটা ফুটিয়াছে, দুষ্ট ছেলে খেলিতে খেলিতে মারবেল-গুলি কানের মধ্যে ঢুকাইয়া দিয়াছে, আর খুলিতেপারে না। নাপিত নরুনের আগা দিয়া গলার ভিতর হইতে মাছের কাঁটা বাহিরকরিয়া আনে, কানের ভিতরে নরুনের আগা ঢুকাইয়া দিয়া মারবেল বাহির করিয়া আনে। শুধু কি তাই? পিঠে ফোঁড়া হইলে তাকে বলে কারবঙ্কল। বড় বড় ডাক্তার সেটা কাটিতে হিমশিম খাইয়া যায়। চোখের পলক ফেলিতে ফেলিতে নাপিত সেখানে ক্ষুর চালাইয়া দেয়। এসব কাটাকুটিতে সব রোগীই কি ভাল হয়? কোনটা ভাল হয়– কোনটা পাকিয়া বিষ লাগিয়া ফুলিয়া মরে।তা এরূপ ত ডাক্তারের বেলায়ও হয়। তাদের হাতেই কি সব রোগী ভাল হয়? শহরের সব লোক তাই অসুখে বিসুখে নাপিতকেই ডাকে। ডাক্তার ডাকিলে এত টাকা দাও–অত টাকা দাও, তারপর ঔষধের দাম দাও। কত রকমের ঝামেলা। নাপিতের কাছে ভিজিটের কোন দাম-দস্তুর নাই। দুই আনা, চার আনা যার যাহা খুশি দাও। ঔষধ ত তার মুখে মুখে–গরম পানির সেক, হলুদের গুড়োর প্রলেপ, পেটে অসুখ করলে আদা নুন খাও, তাতে না সারিলে জইনের গুঁড়া চিবাও, জ্বর হইলে তুলসীর পাতা, নিউমোনিয়া হইলে আকনের পাতার সেক। এসব ঔষধ বনে জঙ্গলে, পথে ঘাটে যেখানে-সেখানে মেরে। তাই সকলেইনাপিতকে দিয়ে চিকিৎসা করায়। শহরের আর আর সব পাশ করা ডাক্তারেরা রোগীর অভাবে ভাতে মরে। নাপিতের মেয়েছেলে দুধে ভাতে খাইয়া নাদুসনুদুস। একদিন সব ডাক্তার একত্রিত হইয়া ভাবিতে বসিল, কি করিয়াতাদের পসার ফিরাইয়া আনা যায়। এক ডাক্তার বলে, “দখে ভাই। আগে আমার বাড়িতে রোজ সকালে শত শত রোগী আসিয়া গড়াগড়ি দিত। টাকা-পয়সা তো দিতই, সেই সঙ্গে রোগ সারিলে কলাটা মূলটা, যে দিনের যে, তাও দিয়া যাইত। এই যে আমের মওসুম। আমার ছেলেমেয়েরা একটা আমও মুখে দিযে দেখিল না! আর নাপিতের বাড়ি দেখ গিয়ে… আর এক ডাক্তার বলে,“আরে ভাই! ছাড়িয়া দাও তোমার আম খাওয়া। রোগীপত্তর আসে না। টাকা-পয়সার অভাবে এবার ভাবিয়াছি, ঔষধ মাপার পালা-পাথর, আর বুক দেখার টেথিস্কোপটা বেচিয়া ফেলিব।” অপর ডাক্তার উঠিয়া বলে, “তুমি ত এখনওবেচ নাই। এই দুর্দিনের বাজারে চাউলের যা দাম! ডাক্তারি যন্ত্রপাতিত কবেই বেচিয়া খাইয়াছি। এবার মাথার উপরে টিনের চালা কয়খানা আছে। তাও বেচিবার লোক খুঁজিতেছি।” ওপাশের ডাক্তার বলে, “ভায়া, হে, এসবদুঃখের কথা আর বলিয়া কি হইবে, দেখিতেছ না? আমাদের সকলের অবস্থাই ওই একই রকম। এখন কি করা যায় তাই ভাবিয়া বাহির কর।” অার এক ডাক্তার বলে, “দেখ ভাই! বিপদে পড়লে বুড়ো লোকের পরামর্শ লইতে হয়। শহরের মধ্যে যে বুড়ো ডাক্তার আছেন, বয়স হইয়াছে বলিয়া এখন রোগী দেখেন না। তিনি আমাদের সকলের ওস্তাদ। চল যাই, তাঁহার নিকটে যাইয়া একটা বুদ্ধি চাই; কি করিয়া আমাদের পূর্বের পসার বজায় রাখিতে পারি।” তখন সকলে মিলিয়া সেই বুড়ো ডাক্তারের কাছে যাইয়া উপস্থিত হইল। বুড়ো ডাক্তার আগাগোড়া সমস্ত শুনিয়া বলিলেন, “তোমরা কেহ সেই নাপিতকে আমার নিকট ডাকিয়া আন।” নাপিত আসিলে বুড়ো ডাক্তার তাহাকে বলিলেন, “দেখ এইসব ছোকরা ডাক্তারের কাছে শুনিতে পাইলাম, তোমার কাটাছেঁড়ার হাত পাকা। তুমি একটা কাজ কর। আমাদের নিকট হইতে শারীরবিদ্যাটা শিখিয়া লও। তাতে করিয়া তোমার ডাক্তারি বিদ্যাটা আরওপাকিবে।” নাপিত বলিল, “এ অতি উত্তম কথা। আমি ত মুখ্যুসুখ্যু মানুষ। আপনারা যদি কিছু শিখাইয়া দেন বড়ই উপকার হইবে।” তখন সকল ডাক্তার মিলিয়া নাপিতকে শারীরবিদ্যা মিখাইতে লাগিল। শরীরের এখান দিয়া এই নাড়ি প্রবাহিত হয়। এইটা শিরা, এইটা উপশিরা। এইখানে ধমনী। এইখানে লিভার। হাতের এইখানে এই শিরা। কাটিলে রক্ত বন্ধ হইবে না, লোক মরিয়া যাইবে। এইখানে হৃৎপিন্ড। এইভাবে সত আট দিন ধরিয়া সব ডাক্তার মিলিয়া নাপিতকে শারীরবিদ্যা শিখাইতে লাগিল।নাপিত বুদ্ধিমান লোক। ডাক্তাদের যাহা শিখিতে মাসের পর মাস লাগিয়াছিল, সেতাহা সাত দিনে শিখিয়া ফেলিল। শুধু কি শারীরবিদ্যা? ডাক্তারেরা তাহাকে নানারকম অসুখের জীবাণুর কথাও বলিয়া দিল। ডাক্তারি যন্ত্রপাতি ভালোভঅবে পরিষ্কার করিয়া না লইলে রোগীর কি কি রোগ হইতেপারে তাহাও বুঝাইয়া দিল। তারপর সেই বুড়ো ডাক্তারের পরামর্শমতো সকলডাক্তার একটি রোগী আনিয়া নাপিতের সামনে খাড়া করিল। তাহার সামান্য ফোঁড়া হইয়াছিল। তাহারা তাকে সেই ফোঁড়া কাটিতে বলিল। নাপিত কতরকম করিয়া হাতধোয়। কত ঔষধ গোলাইয়া তার ক্ষুর-নরুন পরিষ্কার করে, কিন্তু তার মনের খুঁতখূঁতি যায় না। হয়তো তার হাত ভালোভাবে পরিষ্কার হয় নাই। হয়তো অস্ত্রে কোন রোগের জীবাণু লাগিয়া আছে। আবারনতুন করিয়া অস্ত্র সাফ করিয়া নাপিত সেই লোকটির ফোঁড়া কাটিতে আরম্ভকরিল, কিন্তু তার হাত যে আজ কাঁপিয়া ওঠে। শরীরের এইখানে এই শিরা এইখানে উপশিরা। ওইখান দিয়ে ক্ষুর চালাইলে রোগী মারা যাইবে; নাপিত ক্ষুর এভাবে ধরে, ওভাবে ধরে, কিন্তু ফোঁড়া কাটিতে কিছুতেই সাহস পায় না। এতদিন অজানাতে রোগীর গায়ের যেখানে সেখানে ক্ষুর চালাইয়াছে। কিন্তু সমস্ত জানিয়া শুনিয়া সে আজ রোগীর গায়ে ক্ষুর চালাইতে সাহস পায় না। ভয়ে তাহার হাত হইতে অস্ত্র খসিয়া পড়িয়া গেল।নাপিত আর তাহার ক্ষুর চালাইতে পারিল না। সেই হইতে নাপিতের পসার বন্ধ হইল। লোকেরা আবার ডাক্তার ডাকিতে আরম্ভ করিল।

35
$ 0.00
Avatar for Jahidur123
4 years ago

Comments

Purota pore valo laglo

$ 0.00
4 years ago

ঠোট্ট একটা শহর। সেখানে সবচাইতে বড় ডাক্তার হইয়া পড়িল এক নাপিত। ছোটখাট অসুখে এটা ও্টা ঔষধ দিয়াই নয়, ফোঁড়া কাটা হইতে আরম্ভ করিয়ারোগীর পেট চিরিয়া রোগীর পেট চিরিয়া পেট হইতে পুঁজ বাহির করিয়া দেওয়া পর্যন্ত বড় বড় কাটাছেঁড়ার কাজও সে অতি সহজেই করিয়া দেয়। এসবকাজ করিতে ডাক্তারেরা কত রকমের যন্ত্র লয়। ছুরি, কাঁচি ভালোমত গরমপানিতে সিদ্ধ করিয়া, পানিতে ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করিয়া কত সাবধান হইয়া তাহারা রোগীর গায়ে অস্ত্র ধরে। নাপিত কিন্তু সবের ধারধারে না। সে হাতের তোলায় তাহার ক্ষুর আর নরুণ ভালোমত ঘষিয়া খসাখস বড় বড় কাটাছেঁড়ার কাজ করিয়া যায়। এমন পাকা তাহার হাত: রোগীর পেট চিরিয়া, পেটের মধ্যে হাত দিয়া, সেখানে নাড়ির ভিতরে ফোঁড়াটি হইয়াছে, অতি সহজেই সেখানে ক্ষুর চালাইয়া পুঁজরক্ত বাহির করিয়া আনে। তারপর সাধারন সুঁই সুতা দিয়া ক্ষতস্থান সেলাই করিয়া, আর এবটুহলুদ গুঁড়া মাখাইয়া দেয়। ক্ষতস্থান সারিয়া যায়। চোখের পলক ফেলিতে না ফেলিতে সে বড় বড় কাটাছেঁড়ার কাজ করিয়া ফেলে। কাহারও ফোঁড়া হইয়াছে, বেদনায় চিৎকার করিতেছে। দেখি, দেখি বলিয়া নাপিত সেখানে তার ক্ষুর চালাইয়া দিয়া পুঁজরক্ত বাহির করিয়া আনে। রোগী আরাম পাইয়া আনন্দের হাসি হাসে। গলায় মাছের কাঁটা ফুটিয়াছে, দুষ্ট ছেলে খেলিতে খেলিতে মারবেল-গুলি কানের মধ্যে ঢুকাইয়া দিয়াছে, আর খুলিতেপারে না। নাপিত নরুনের আগা দিয়া গলার ভিতর হইতে মাছের কাঁটা বাহিরকরিয়া আনে, কানের ভিতরে নরুনের আগা ঢুকাইয়া দিয়া মারবেল বাহির করিয়া আনে। শুধু কি তাই? পিঠে ফোঁড়া হইলে তাকে বলে কারবঙ্কল। বড় বড় ডাক্তার সেটা কাটিতে হিমশিম খাইয়া যায়। চোখের পলক ফেলিতে ফেলিতে নাপিত সেখানে ক্ষুর চালাইয়া দেয়। এসব কাটাকুটিতে সব রোগীই কি ভাল হয়? কোনটা ভাল হয়– কোনটা পাকিয়া বিষ লাগিয়া ফুলিয়া মরে।তা এরূপ ত ডাক্তারের বেলায়ও হয়। তাদের হাতেই কি সব রোগী ভাল হয়? শহরের সব লোক তাই অসুখে বিসুখে নাপিতকেই ডাকে। ডাক্তার ডাকিলে এত টাকা দাও–অত টাকা দাও, তারপর ঔষধের দাম দাও। কত রকমের ঝামেলা। নাপিতের কাছে ভিজিটের কোন দাম-দস্তুর নাই। দুই আনা, চার আনা যার যাহা খুশি দাও। ঔষধ ত তার মুখে মুখে–গরম পানির সেক, হলুদের গুড়োর প্রলেপ, পেটে অসুখ করলে আদা নুন খাও, তাতে না সারিলে জইনের গুঁড়া চিবাও, জ্বর হইলে তুলসীর পাতা, নিউমোনিয়া হইলে আকনের পাতার সেক। এসব ঔষধ বনে জঙ্গলে, পথে ঘাটে যেখানে-সেখানে মেরে। তাই সকলেইনাপিতকে দিয়ে চিকিৎসা করায়। শহরের আর আর সব পাশ করা ডাক্তারেরা রোগীর অভাবে ভাতে মরে। নাপিতের

$ 0.00
4 years ago

Nice post

$ 0.00
4 years ago

Good!

$ 0.00
4 years ago

So beautiful article❣❣sub me back plz

$ 0.00
4 years ago

Nice,,, subscribe done

$ 0.00
4 years ago

A funny story you wrote. If you have written it on your own then you are going to become famous. You must go for publishing your stories in newspapers, in story books, you can also take participate in online story writing competition and win that. I hope i will get more stories from you

$ 0.00
4 years ago

Nice bro

$ 0.00
4 years ago

Nice

$ 0.00
4 years ago

Nice story

$ 0.00
4 years ago

good

$ 0.00
4 years ago

Good Story

$ 0.00
4 years ago

I like this story

$ 0.00
4 years ago

Nice.

$ 0.00
4 years ago

very nice

$ 0.00
4 years ago

Thanks all

$ 0.00
4 years ago

very funny

$ 0.00
4 years ago

Nice, keep it up

$ 0.00
4 years ago

wow

$ 0.00
4 years ago

A very beautiful story: I like the story very much, I hope you will post more like this, thank you

$ 0.00
4 years ago

🤗🤗🤗🤗🤗hey subscribe back plz also visit my article 😍

$ 0.00
4 years ago

looking so beautiful

$ 0.00
4 years ago

good writer carry on

$ 0.00
4 years ago