সদর দরজা খুলতেই তাতিয়ানা দেখল গেটের কাছে একটা কালো কালারের গাড়ি এসে দাঁড়িয়েছে। তাতিয়ানা কিছুটা সাইডে সরে গিয়ে গাড়ি প্রবেশ করার পথ করে দিল। গাড়ি গিয়ে সোজা গাড়ি বারান্দায় গিয়ে ব্রেক কসল।গাড়ি থেকে রোগা টাইপের মাঝবয়সী একজন লোক নেমে এলো। তাতিয়ানা লোকটিকে দেখে বলল
—হ্যালো আংকেল, কেমন আছেন আপনি?
—আমি ভালো আছি মাই ডার্লিং তাতিয়ানা। তুমি কেমন আছো ডার্লিং তাতিয়ানা?
— আমি ভালো আছি আংকেল।চলুন বাবার কাছে যাওয়া যাক বাবা বাগানেই আছে।
—চল ডার্লিং যাওয়া যাক।
পাতলা রোগা টাইপের লোকটি ড. হেনরি। ড. হেনরি আর ড. ওয়াং ছোট থেকেই খুব ভালো বন্ধু । স্কুল কলেজ সব জায়গায় তারা একত্রে ছিল। এমনকি তাদের কাজের জায়গাও একই।ড. হেনরি ও ড. ওয়াং এর মতো নাসার একজন খ্যাতিমান বিজ্ঞানী । তারা দুজনে একই সাথে বিভিন্ন গবেষণা চালিয়েছে । ড. ওয়াং এর কিছুদিন পরেই ড. হেনরি ও রিটায়ার্ড করেন।
তাতিয়ানা আর ড. হেনরি কথা বলতে বলতেই গাড়ি বারান্দা থেকে বাগানে চলে এসেছে। তাতিয়ানা বলল,
—আংকেল আপনি একটু বসুন আমি চট করে গিয়ে তোমার প্রিয় ব্লাক কফি নিয়ে আসছি।
— তুমি কেমন করে জানলে যে আমার ব্লাক কফি পছন্দ। আমিতো আগে কখনো আসিনি।?
— বাবা সবসময় আপনার গল্প করতো সেখান থেকেই জেনেছি। আচ্ছা তাহলে আপনারা গল্প করুন , আমি গিয়ে কফি নিয়ে আসছি । বলেই তাতিয়ানা ঘরের দিকে পা বাড়ালো ।
তাতিয়ানার বাবা ড. ওয়াং আর হেনরি দুজনে বসে গল্প করছিল এই ফাঁকে তাতিয়ানা কফির ট্রে নিয়ে হাজির। তাতিয়ানা ড. হেনরির দিকে কফির মগ এগিয়ে দিয়ে বলল,
—আংকেল আপনি এখোনো বিয়ে করেন নি কেন?
— আমার তাতিয়ানা ডার্লিংটার জন্যই বিয়ে করি নি। বিয়ে করলে আমার তাতিয়ানা ডার্লিংটা আমার মত হ্যান্ডসাম ছেলে কই পাবে। বলেই হেসে উঠলো ড. হেনরি।তার সাথে সাথে ড. ওয়াং আর তাতিয়ানাও হেসে উঠলো।তখন হঠাৎ করে তাতিয়ানা বলে উঠলো বাবা আমাকে যে প্রজেক্টের ব্যাপারে বলতে চাইছিলে। তাতিয়ানার কথাতে ড. ওয়াং এর চোখ যেন কপালে উঠলো। ড. ওয়াং এর মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে এই সময় এই ধরনের প্রশ্ন আশা করেনি। তাতিয়ানা নিজের ভুল বুঝতে পারলো কিন্তু কিছু করার নেই যা হবার তা তো হয়েই গেছে।
এদিকে ড. হেনরি তাতিয়ানার কথা শুনে ভাবতে লাগলো কোন প্রজেক্ট সম্পর্কে বলতে চাইছে ওয়াং। কিছুক্ষণ ভেবে তাতিয়ানাকে বলল মা তুমি ভিতরে যাও তোমার বাবার সাথে কিছু ইম্পরট্যান্ট কথা আছে। তাতিয়ানাও সেখানে দেরি না করে ভিতরে চলে গেল।
তখন ড. হেনরি ড. ওয়াংকে বলল কোন প্রজেক্ট এর ব্যাপারে বলতে চাইছিলি তাতিয়ানাকে।ড. ওয়াং সবকিছু খুলে বলল। আর বলল
—এই প্রজেক্টটা গোপনএ দিয়েছিল। কিন্তু কাজ অসম্পূর্ণ অবস্থায় আমার রিটায়ার্ড হয়। তাই প্রজেক্ট বন্ধ হয়ে যায়।কিন্তু তুইতো জানিস কোন কিছু আমি অসম্পূর্ণ রাখতে পারি না তাই গোপনে প্রজেক্ট টা শুরু করি আবার।
—তুই তো ভাল করেই জানিস তাদের গোপন কোন কিছু সমন্ধে অন্য কাউকে জানানো নিষেধ। যদি তাঁরা কোনভাবে জানতে পারে এটা তাহলে তোর খুব বিপদ হবে।একটু সাবধানে কাজ কর বলে ড. হেনরি বিদায় নিয়ে চলে গেল।
ড. হেনরি চলে যেতেই বাবা মেয়ে মিলে দাবা নিয়ে মেতে উঠলো।ড. ওয়াং বেশ ভালো দাবারু প্রতিটা চাল দিয় সে তার মেয়েকে আটকাতে চাছে । কিন্তু তাতিয়ানাও কম যায় না। সে প্রতিটা চাল এর ডিফেন্স খুব ভালোভাবে করছে। চাল এর উত্তরে চাল। কেউ কারো থেকে কম নয়। দাবা খেলতে খেলতে ড. ওয়াং বলল,
— আমার পরিচিত কিছু বড় বড় বিজনেসম্যান আছে। তাদের সাথে তোর মিট করার ব্যবস্থা করে দিব।
—চঞ্চল, বুদ্ধিমতী মেয়ে তাতিয়ানা তার বাবার উদ্দেশ্য খুব সহজেই বুঝে ফেলল।তাতিয়ানা বলে উঠলো বাবা আমি এখন বিয়ে করবো না।
— তা বললে কি হয় মা, তুই এখন বড় হয়েছিস সারাজীবনতো আর তোকে বেঁধে রাখতে পারি না।
— ওসব বলে লাভ হবে না বাবা। আমি এখন বিয়ে করছি না। এইতো কদিন হলো তুমি এলো । আর এক্ষুনি আমাকে পর করে দিতে চাচ্ছা বাবা। আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাব না। আমি চলে গেলে তোমাকে কে দেখবে। তাই আমি কোথাও যাচ্ছি না বাবা।
ড. ওয়াং আর কিছু বলল না তার মেয়েকে। এতো তাড়াতাড়ি তার মেয়েকে বলা ঠিক হয়নি। তাকে আগে বুঝার সময় দিতে হতো। তাকে বুঝিয়ে বলা লাগতো প্রথমে।সে বড্ড তাড়াহুড়ো করে ফেলেছে। মেয়েটা এখোনো বাচ্চাই রয়ে গেছে।
সন্ধ্যা হয়ে গেছে। ঘড়ির কাঁটা ৭ এর ঘরে। অর্থাৎ সাতটা বেজে গেছে। তাতিয়ানা তৈরি হয়ে তার বাবার রুমে গেল।তাতিয়ানার বান্ধবী এলিক্সার আজ বার্থডে । এলিক্সা বার্থডের জন্য বড়সর একটা পার্টি রেখেছে। ড.ওয়াং আর তাতিয়ানাকেও সে ইনভাইট করেছে । সেটারই জন্য তাতিয়ানা তার বাবার কাছে যাচ্ছে।
— বাবা আজ আমার বান্ধবীর জন্মদিন মনে আছেতো। তাতিয়ানা তার বাবা ড.ওয়াংকে বলল।
— মনে আছে মা কিন্তু আমিতো যেতে পারবো না। একটা ইম্পরট্যান্ট কাজ করতেছি । ল্যাপটপের দিক থেকে চোখ না সরিয়েই বলল ড. ওয়াং।
তাতিয়ানা দেখল তার বাবা ল্যাপটপে কিছু একটা করছে। খুব তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাতিয়ানা দেখল ল্যাপটপের স্ক্রিনে project302 the hidden project লিখাটা ভেসে আছে।সত্যিই খুব ইম্পরট্যান্ট কাজ। তাই তাতিয়ানা আর তার বাবাকে ডিসটার্ব করল না। তার বাবার থেকে বিদায় নিয়ে গাড়ি বারান্দার দিকে পা বাড়ালো ।
রাত প্রায় ১:০০ বেজে গেছে। এলিক্সার বার্থডে পার্টিতে ইনজয় করতে করতে কখন যে এতো রাত হয়ে গেছে তাতিয়ানা বুঝতেই পারেনি। অবশ্য এলিক্সা তাতিয়ানে আজ রাতটা তাদের ওখানেই কাটিয়ে দিতে বলেছিল, কিন্ত ড. ওয়াং একা বলে সে বেড়িয়ে এসেছে । বাড়ির কাছাকাছি আসতে তাতিয়ানা দেখলো আজও বাড়ির দরজা খোলা। সে ভাবলো তার বাবা আজও কোনো মজা করছে। তাই গাড়ি বারান্দাতে গাড়ি রেখে সে তার বাবাকে ডাকতে লাগলো। কিন্তু কোন সারা পাচ্ছে না। তাই ঘরের ভিতরে যেতেই সে দেখল সবকিছু ভাঙ্গচুর হয়ে আছে। তার ভিতরটা ছ্যাৎ করে উঠলো। তাতিয়ানা দৌঁড়ে তার বাবার রুমে গেল। সেখানেও সব কিছু পরে আছে যেন কেউ কিছু একটা খুঁজেছে। কিন্তু বাবা, বাবা কোথায় গেল। তাতিয়ানা মাথা কাজ করছে না সবকিছু কেমন যেন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। রাগে আর কষ্টে মাথার চুল সে টানতে লাগলো।তখন হঠাৎ মনে পরল প্রজেক্ট সম্পর্কে । প্রজেক্টের জন্য বাবা কিছু হয়নি তো? তাতিয়ানা লুকিয়ে ড.ওয়াং আর হেনরির সব কথা শুনেছিল।
তাতিয়ানা দৌঁড়ে আবার তার বাবার রুমে গেল । যেখানে ফাইলটা রেখেছিল সেখানে কিন্তু সে ফাইল পেলো না। ল্যাপটপ টা নিয়ে দেখলো সেটাতেও কোনো ফাইল নেই সব ডিলিট করেছে।তাতিয়ানা পুরো ঘর তন্ন তন্ন করে খুঁজতে লাগলো। কোনো কিছুতো নিশ্চয়ই আছে যা সে পাচ্ছে না।রাগে সে ঘর থেকে বাহিরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই ভাঙ্গা ফুলদানিতে পা লেগে ফুলদানিটা কিছুটা ছড়িয়ে গেল। তাতিয়ানা পায়ে আঘাত নিয়ে আবার উঠতে যাবে তখন মনে হলো কিছু একটা রয়েছে ফুলদানিতে। তাতিয়ানা ফুলদানির ভাঙ্গা অংশগুলো সারাতেই দেখলোএকটা পেন ড্রাইভ । এটাতো সে তার বাবার ল্যাপটপে দেখেছিল। এটাইতো প্রজেক্ট সম্পর্কিত সেই পেন ড্রাইভ টা। নিমিষে তার ব্যাথা যেন দূর হয়ে গেলো। পেন ড্রাইভ এর পাশে একটা চিরকুটও আছে যেটাতে লেখা হেনরি। তাতিয়ানা হঠাৎ মনে পরলো তার প্রতিবেশী এডওয়ার্ড আংকেল কে বলে দেখি তারা কোথাও বাবাকে দেখেছে কিনা।
চলবে...
Veru very Nice and