সারারাত ফারহান ঘুমাতে পারেনি। শুধু একটা চিন্তা করেছে, পায়েল কী চিরকুট পেয়েছে? যদি পেয়েই থাকে তাহলে নিশ্চয় খুব খুশি হবে পায়েল।সে খুশির ঝলকানো মুখটা দেখতে খুব ইচ্ছা করছে ফারহানের।সে ঠিক করেছে এবার পায়েলকে বলবে তার সাথে যেন দেখা করে।এভাবে আর লুকোচুরি প্রেম তার আর ভালো লাগছে না।
সকালের ভোরের আলো ফুটতেই গায়ে চাদুর জড়িয়ে বেরিয়ে পড়ল।কুয়াশাচ্ছন্ন সকাল দেখতে দেখতে চলে আসল হাতিরঝিল।চিরকুট'টা পেয়ে খুশিতে আপ্লুত হয়ে পড়ল ফারহান।পায়েলের চিরকুট'টা মেলে ধরে পড়তে গিয়ে ফারহান চিন্তিত হয়ে পড়ল।পায়েল নিজে থেকে তার সাথে দেখা করতে চায়? তার ফোন নাম্বার চাইছে।যে মেয়েটা আজ পর্যন্ত তার নামটা জানতে চায়নি, আজকে সেই মেয়েটা...এক দিকে খুব খুশি হচ্ছে অন্যদিকে চিন্তাও হচ্ছে। সে একটা চিরকুটে তার নাম্বার দিল।নিচে দিয়ে লিখে দিল,' ফোন কোরো।তখন তোমায় বলব কোথায় দেখা করব?' বলে সে বেড়িয়ে গেল।
রজনী হাতিরঝিলে যাওয়ার জন্য সকাল সকাল রেডি হয়ে নিচে নেমেছে।নিচে এসে দেখল দরজায় তালা ঝুলছে।বিরক্ত হয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। কপাল কুঁচকে বলল,' চাবি এখন কই পাই?'
বলে সোফায় বসে রইল। জুলেখা উঠে নাস্তা বানাল।সবাইকে ডেকে পাঠাল।রজনী শুধু একটা জিনিস খেয়লা করল? সকাল ১০টা বাজতে চলেছে। এখনো দরজার তালা খুলছে না? তাই সে জিজ্ঞেস করল,' মামণি, দরজা খুলছো কেন? '
জুলেখা সিরিয়াস হয়ে বলল,' কালকে আমাদের পাশের বাসায় দিনে ডাকাতি হয়েছে।তাদের টাকা পয়সা, সোনার গয়না সব নিয়ে গেল।সেই ভয়ে সবাই এখন দিনেও দরজায় তালা মেরে রাখে।রাহা ডাকাতকে খুব ভয় পায়।আর আমাদের ঘরে সোনার গয়নাও আছে। যদি চুরি হয়ে যায় সেই ভয়ে তালা দিয়ে রেখেছি।'
মায়ের কথায় মিটিমিটি হাসল রজভ। রজনী সেটা খেয়াল করল।কিন্তু বুঝতে পারল না এখানে হাসির কী বলা হয়েছে? সে রজভকে ঠোঁট বাঁকাল।আর জুলেখা বলল,' তালা দেওয়ার কী আছে। লক করে রাখলেই হয়।'
জুলেখা এবার কিছু বলেনি।রাহা বলল,' আমি ডাকাতকে খুব ভয় পাই সুন্দরী। ডাকাতের কথা শুনলে আমার গা কাটা দেয়।এই দেখো ভয়ে আমি কাঁপছি।তুমি তালা খোলার কথা বলো না।'
রজনী খুব বিরক্ত হলো।কিন্তু মুখে সেটা প্রকাশ করল না। জুলেখা বলল,' মামণি।আমার বাইরে একটা কাজ আছে।আমার বাইরে যেতে হবে।একটু তালাটা খুলে দাও।'
' তালা খুলে দেওয়া যাবে না।'
' তালা খুলতে কয়েক সেকেন্ড লাগবে।আমার তালা লাগিয়ে দিয়ো।'
' বলছি না খোলা যাবে না।'
' আমাকে যেতেই হবে।'
' তুমি যাতে বাইরে যেতে না পারো সেই জন্যই তালা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।'
' কী? '
' যা শুনেছো তাই।' বলে জুলেখা উঠে দাঁড়াল।চলে গেল।তার পিছন পিছন রাহাও চলে গেল।
রজনী খুব রাগ হচ্ছে।সে বুঝতে পাচ্ছে এই বুদ্ধিটা কার? নিশ্চয় তার মায়ের।তার মা তাকে এই বিয়ের নাকক বাঁধনে আটকানোর জন্য এইসব করছে।সে বিড়বিড় করে বলল,' তুমি যতই চেষ্টা করো।কিছুতেই এই বিয়ে তুমি আটকাতে পারবে না!' বলেই টেবিলে বসে থাকা রজভের দিকে চোখ গেল।এখন তার কাছে পরিষ্কার। কেন তখন রজভ হেসেছিল?ওদের মিথ্যে বলা কথা সে বুঝতে পারেনি,কিন্তু রজভ বুঝতে পেরে হেসেছে।সে শব্দ করে উঠে দাঁড়ায়।রজভ তার দিকে তাকাল।সে টেবিলে উপর থেকে পানি ভর্তি গ্লাস হাতে নিল।এরপর এটা রজভের প্লেটের সামনে জুড়ে মারল।খুব জোরে একটা শব্দ হলো। কিছু পানি রজভের মুখে আঁচড়ে পড়ল, কিছুটা নিচে। টেবিল গড়িয়ে গ্লাসটা নিচে পড়ে যেতে নিতেই রজভ ধরে ফেলল।গালি গ্লাসটা রজনীর হাতে দিয়ে সে উঠে চলে গেল।রজনী সেটা ফ্লোরে আঁচড়ে মারল।সেই শব্দটা শুনে রজভ পিছন ঘুরে রজনীর দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসল।সে হাসি দেখে রজনীর দ্বিগুণ রাগ হলো।সে টেবিল থেকে আরেকটা গ্লাস নিয়ে রজভের দিকে ছুড়ে মারল।রজভ সেটা ক্যাচ ধরে ফেলল। রজনীকে দেখিয়ে বলল,' রজনীগন্ধা , আরেকটা ছুঁড়ে মারো, দেখি ধরতে পারিনি কীনা।'
রজভের এই ঠাট্টা মোটেও ভালো লাগেনি।সে হনহন করে হেঁটে রান্না ঘরে চলে গেল।রজভ উপরে চলে গেল।
রান্নাঘর থেকে একটা চুরি এনে তালা কাটার চেষ্টা করল। কিন্তু সেই চেষ্টা বৃথা গেল।সে চুরি ফেলে জুলেখা কাছে গেল। আকুতি মিনতি করে চাবিটা চাইল।কিন্তু দিল না।সে রাগ করে উপরে চলে গেল।
রজভ সোফায় বসে মোবাইল টিপছে। রজভকে দেখে রজনী বলে উঠল,' আপনার মায়ের থেকে চাবি এনে দিন।আমি বাইরে যাব।'
' তোমার সেই ভালোবাসার মানুষটার সাথে দেখা করতে যাবে।'
রজনী কিছু বলল না এই ব্যাপারে।সে বলল,' চাবিটা এনে দিন দয়া করে।'
' তুমি না বললেও কী হয়েছে।আম্মু জানে তুমি ওই কাজে বাইরে যাবে।তাই চাবি কখনোই দিবে না।'
' আপনি গিয়ে একবার চান।আপনি আপনার কথা বলে চাবি নিন।যে আপনি বাইরে যাবেন।'
' কেন আমি মিথ্যে বলব?'
' আমার জন্য।'
' মানুষ নিজের আপনজন বা প্রিয়জনের জন্য মিথ্যে বলে।আপনি তো আমার কোনোটাই নয়।তাহলে আপনার জন্য কেন শুধু শুধু মিথ্যে বলে আমার পাপের বোঝা বাড়াব?'
' আইছে আমার সত্যিবাদী।যান গিয়ে চাবি আনেন।'
রজভ মোবাইল রেখে রজনী মুখোমুখি হয়ে দাঁড়াল।বলল,' আমার মত কাইল্যা ছেলের কপালে তোমার মত রূপবতী মেয়ে জুটেছে।কী করে চাবি এনে দিয়ে ওমন রূপবতী বউকে কীভাবে হাতছাড়া করি।ভাগ্য করে পেয়েছি বটে।' বলে মোবাইল নিয়ে চলে গেল।রজভের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল রজনী।
দেওয়ালের সাথে হেলান দিয়ে রজনীর নিজেই নিজেকে বোকা বলে গালি দিচ্ছে।আর বিড়বিড় করে বলল,' ফারহানের চিরকুট আমি পেয়েছি।তখন আমার দেওয়া চিরকুটে আমার নিজে নাম্বারটা দিয়ে আসতে পারতাম।কিন্তু তা না করে গাধীর মত ফারহানের নাম্বার চেয়েছি।আজ যদি আমার নাম্বার দিয়ে আসতাম।তাহলে ফারহান আমায় ফোন করতে পারত।কিন্তু এখন আমি এই বন্দীখানা থেকে কবে মুক্তি পাব।কালকে আবার চলে যাবে ওই দূর দেশে।সেই দেশে যাওয়ার আগেই ফারহানের সাথে কথা বলা খুব জরুরী। ফারহানকে সবটা খুলে বলতে হবে।'
সকাল গড়িয়ে রাত এলো। এখনো ফারহানের মোবাইলে পায়েলের ফোন আসল না।ফারহান খুব চিন্তিত হলো।সে বুঝতে পাচ্ছে না পায়েল কেন ফোন করছে না এখনো।সেই সকালে নাম্বার দিয়ে এসেছে।ফোনের অপেক্ষা করতে করতে রাতের বারোটা বেজে গেল।ফোন আসল না। ফোনের দিকে তাকিয়ে সারারাত কেটে গেল।ফজরের আযানের ধ্বনি শুনে অযু করে বাইরে চলে গেল। নামায পড়ে হাতিরঝিলে গেল।নিজের দেওয়া চিরকুট'টা দেখে ফারহান বুঝতে পেরেছে কেন একটা ফোন ও আসেনি তার মোবাইলে।সে স্বগতোক্তি করে বলল,' জরুরী কথা আছে।অথচ চিরকুট এসে নিল না।'
সেখানে ঠাঁই বসে রইল।বলে উঠল,' কাল নেয়নি ।আজ তো নিতে আসবে।তখন তোমার সাথে দেখা হবে।জানতে চাইব কী এমন জরুরী
কথা বলার ছিল।'
সকাল গড়িয়ে দুপুর হলো।বিকালে গড়াবে ঠিক সেই সময় তার মায়ের ফোন আসলা।তাকে বাসায় চলে যেতে হলো।এরপর সন্ধ্যা আবার হাতিরঝিলে আসল।তখন দেখল, তার দেওয়া চিরকুট'টি জায়গাই রাখা। সে মাথা নিচু করে বসে রইল।মাথা উঠিয়ে হাতিরঝিলে চারপাশে তাকাল। যদি তার পায়েল আসে।কিন্তু তখন তার চোখ পড়ল বাদামওয়ালার দিকে।সে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে গেল বাদামওয়ালার দিকে।বলল,' তোমাকে কিছু বলে গিয়েছে আমার চিরকুটওয়ালী।ওর কোনো সমস্যার কথা।ও কেন আসছে না আমার চিরকুট নিতে।'
ফারহানকে দেখে বাদামওয়ালা বলল,'কাস্টমার বিদায় করে আমি আপনার সাথে দেখা করতে যাইতাম।' এটা বলে বাদাম রাখা পত্রিকার নিচ থেকে দুটো চিরকুট বের করে বলল,' এই নিন।'
ফারহান জিজ্ঞেস করল, ' কী এটা।'
' ওই আফার রেখে যাওয়া চিরকুট।আপনি কয়দিন আসেনি।তখন ওই আফা এসে রেখে গেছিল।আপনি আসছে না দেখে আমি ওই চিরকুটগুলো নিয়ে আমার কাছে এনে রেখে দিয়েছি।'
ফারহান চিরকুট গুলো পড়ল।দুটো চিরকুটেই একই লিখা।সে বুঝতে পেরেছে আগে দিন একটা রেখে চলে গেছে পরেদিন রিপ্লাই চিরকুট আসেনি দেখে সেইম লিখা আবার লিখেছে।সে এটা বুঝতে পাচ্ছে না হঠাৎ করে পায়েল তার সাথে দেখা করতে চাইছে কেন? ওর কোনো বিপদ হয়নি তো।সে বাদামওয়ালাকে বলল,'এতদিন কেন আমায় চিরকুটগুলো দেননি।'
' এতদিন অসুস্থতা জন্য বাদাম বিক্রি করতে আসতে পারিনি।আজ অসুস্থতা নিয়ে এসেছি এই চিরকুট গুলো আপনার হাতে দেওয়ার জন্য।আমি পড়ে বুঝিছি। আফার আপনার সাথে দেখা করার খুব জরুরী। '
' আচ্ছা ও তোমাকে কিছু বলে যায় নিই।'
' না।উনি এসেছিলেন দু'দিন।ওই দুদিন চিরকুট রেখে গিয়েছিলেন।আমি শেষের দিন চিরকুট নিয়ে আমার কাছে রেখে দিই।ভেবেছি পরেদিন আসলে আফাকে বলল,' আপনি আসেনি।চিরকুটগুলো আমি নিজের কাছে রেখেছি।' আর চিরকুট উনার হাতে দিয়ে দিতাম।কিন্তু চিরকুট নেওয়ার পরেরদিন থেকে খুব জ্বর ছিল।আসতেই পারেনি।'
ফারহান মন খারাপ করে বসে রইল।চিৎকার করে বলল,' পায়েল, আমি তোমার জরুরী কথা শুনতে চাই।কবে এসে বলবে সেই কথাগুলো।'
প্রতিদিন গল্প দিই।কিন্তু গঠনমূলক মন্তব্য কেউ করছেন না।এত কষ্ট করে আপনাদের জন্যই তো লিখি।আপনারা কী পড়ে ভালো-মন্দ মন্তব্য করতে পারবেন না।
Golpo Ta kub beshi sundor