"তার চোখের কোণে অশ্রুগুলো ঠিকই দেখতে পেরেছিলাম-(বাবা)❤"

20 24
Avatar for IrfanSagor
4 years ago

খাওয়া দাওয়া শেষ করে নিজের রুমে যাচ্ছিলাম। কিচেন থেকে একটু সামনে গেলেই বাবার রুম। হঠাৎ মনে হল একটু বাবার রুম থেকে ঘুরে আসি।অনেকদিন হল বাবার রুমে যাওয়া হয় না।বিয়ের পর থেকেই বাবার সাথে আগের মত সময় কাটানো হয় না।শুক্রবারে সময় পেলেই বউকে নিয়ে ঘুরতে চলে যায়।বাবা গেছেন কিছু ঔষধ আনতে।আমি বাবার রুমে ঢুকে দেখি রুমটা খুব এলোমেলো।খুব অগোছালো।ঠিক যেমন একটা ছোট্ট বাচ্চার রুম।বাবার বয়স হয়েছে।শরীরটারও দিন দিন অবনতি ঘটছে।আমার সাথে তার অনেকদিন কথাতো দূরে থাক তার চেহারাটাও দেখি না।সারাদিন অফিস করে রাত করে বাসায় আসি।এসে খেয়ে দেয়ে ঘুমায় পড়ি।সকালে উঠে আবার অফিসে চলে যায়।বাবাকে নিয়ে ভাবার সময় আমার নাই।আমি জুইকে ডাক দিলাম।জুই বাবার রুমে এসে বলল,

-কি হয়েছে এতো চিৎকার করছো কেনো??

-বাবার রুমটা এত অপরিষ্কার আর অগোছালো কেনো??

-তো আমি কি করবো??

-কি করবে মানে?তোমাকে না বলেছি বাবার যত্ন নিতে।

-আমি কি প্রতিদিন শুধু ওনাকে নিয়ে পড়ে থাকবো নাকি।যত্তসব।বাড়ির আরো অনেক কাজ আমাকে করতে হয়।

-তাই বলে বাবার যত্ন নিবে না।

-কেনো?ওনাকে সময় মতো খাওয়াচ্ছি।সময় মতো ঔষধ দিচ্ছি এসব কি যত্ন নেওয়া না।

আমি কিছু বলিনি আর।জানি ওকে কিছু বলে লাভ হবে না।ও এমনই।খুব জেদি।ভালোবেসে বিয়ে করেছি।তাই এসব সহ্য করতে হচ্ছে।জুই চলে গেলো রান্নাঘরে।আমি চুপচাপ বাবার ঘর পরিষ্কার করতে লাগলাম।।রুমটা পরিষ্কার করার সময় চোখ পড়লো টেবিলে রাখা খাতাটার উপর।বাবা খাতা দিয়ে কি করছে।কৌতুহল বেড়ে গেল কি আছে তা দেখার জন্য।আমি খাতাটা নিয়ে প্রথম পেইজটা খুললাম।প্রথম পেইজে লেখা আছে আমার ডায়েরি।লেখাটা পড়ে খুব অদ্ভুদ লাগলো।আমি পরের পেইজ খুলতেই দেখি।মায়ের একটা পুরানো ছবি।আর তার নিচে লেখা আছে কলিজা।বাবা মাকে অনেক ভালবাসতো।কিন্তু মায়ের মৃত্যুর পর বাবা খুব পাল্টে গেলেন।মা যখন মারা যায় তখন আমি ইন্টারে পড়তাম।ঐসময় বাবা খুব ভেঙে পড়েছিলেন।আমি আর আপুরা মিলে অনেক কষ্টে বাবাকে সেই কষ্টটা ভুলাতে পেরেছি।আমরা তিন ভাই-বোন।আপুরা বড় আর আমি সবার ছোট।আমার আপুরা মানে ইরা আপু আর জান্নাত আপুর বিয়ে হয়েছে দুইবছর।তারপর থেকে বাবা আর আমি একা থাকি।জুই আর আমার বিয়ে হয়েছে ৬মাস হল।বাবা অনেক আগেই তার চাকরী থেকে রিটায়ার্ড হয়েছেন।আমি পরের পেইজটা উল্টালাম।সেখানে মাকে নিয়ে লেখা অনেক কবিতা আছে।আমি সব পড়ে একটু মুচকি হাসলাম।কয়েক পেইজ উল্টানোর পর লেখা আছে,

-আজ আমার ছোট্ট ছেলেটার বিয়ে।না ছোট্ট না অনেক বড় হয়েছে।সে এখন চাকরি করে।কাব্য এখন দ্বায়িত্ব নিতে শিখেছে।আজ তার বিয়ে।মেয়ে তার পছন্দের।আমি না দেখেই হ্যা করে দিই।আমার ছেলে মেয়ের আশা আমি কোনোদিন অপূর্ণ রাখিনি।তাই তাদের পছন্দ মতো সব করেছি।জুই মা দেখতে খুব মিষ্টি।দোয়া করি তারা যেনো সুখী হয়।

এভাবে কয়েক পেইজ পড়লাম সবগুলোতেই আমাকে নিয়ে লেখা।পরের পেইজ উল্টিয়ে দেখলাম,

-কাব্য এখন খুব ব্যস্ত।নিজের শরীরটাও দিনদিন অবনতি হচ্ছে।কাব্যের সাথে আগের মতো রাতের আকাশ দেখা হয় না।চায়ের দোকানে বসে আর চা খেতে খেতে বাপ-ছেলের আড্ডা দেওয়া হয় না।সারাদিন ঘরে বসে থেকে খুব বিরক্ত লাগে।তাই বউমাকে বলেছিলাম একটা ডায়েরি কিনে দিতে।কিন্তু বউমা আমাকে বলল,

-বাবা এই বয়সে ডায়েরি দিয়ে কি করবেন??

-কিছু না।একটু লিখালিখি করতাম।

-এত টাকা দিয়ে ডায়েরি না কিনে।অল্প দামে কিছু খাতা কিনে লিখলেই তো হয়।আমি কিছু না বলে খাতা কেনার টাকা নিয়ে নিলাম।এখন খুব লজ্জা হয় বউমার কাছ থেকে টাকা খুজতে।গতমাসে ঔষুধের টাকা খুজতে গিয়ে অনেক বকা শুনতে হয়েছিল।বলেছিল,

-এত দামী ঔষুধ না খেয়ে অল্প দামী ঔষুধ খেলেই তো হয়।

আমি সেদিনও কিছু বলিনি।কিছু কিভাবে বলব।কাব্যকে বললে সে ভাববে আমি মিথ্যা বলছি।সে তো আর আমার কথা ভাবে না।সে এখন নিজের ঘর সংসার নিয়ে ব্যস্ত।আমি চাই না তার সুন্দর সংসারটাকে নষ্ট করতে।এখন যে ঔষুধগুলো খাচ্ছি সেগুলো খুব সস্তা।তাতেও কষ্ট নাই।ছেলের সাথে আছি এইটাই যথেষ্ট।তবে বউমা আমাকে একটুও সহ্য করতে পারে না।আমি কিছু বললেই সে বিরক্ত হয়।কোমরের ব্যাথাটা বেড়েছে।বউমাকে ডাক্তার দেখাতে যাবো বলে কিছু টাকা চাইতে গেলে বউমা বলে,

-সব ঢং।

তাই আর কিছু বলিনি।বাধ্য হয়ে এই মাসের ঔষুদের টাকাটা বাঁচিয়ে রেখেছি।ডাক্তার দেখাতে যাবো বলে।কালকে বউমা বলেছিল আমি নাকি তাদের সংসারের বোজা।তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি আজকে ডাক্তার দেখাতে যাবো।সেখান থেকে বাসায় এসে শেষবারের জন্য ছেলের মুখটা দেখে কালকেই বৃদ্ধাশ্রমে চলে যাবো।

আমি আর পড়তে পারছিনা।চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে।যেই বাবা আমাকে সামান্য কষ্ট কোনোদিন পেতে দেই নিই।সেই বাবা আজ হাজারো কষ্ট ভোগ করছে।জুই এতটাই নিচ।ছিঃ নিজেকে ওর স্বামী বলতেই লজ্জা হচ্ছে।আমি চুপচাপ রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম।কিছুক্ষণ পর বাবা ফিরে আসলো।এসে আমাকে দেখে বলল,

-বাবা আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

-কি বাবা??

-আমি কালকে বৃদ্ধাশ্রমে চলে যাবো।আমাকে কি অফিসে যাওয়ার সময় আশ্রমে নামিয়ে দিবি।

-আচ্ছা বাবা।

কথাটি বলে বাবা চলে গেলো।আমাকে কিছু বলার সুযোগ দিল না।আমার পাশে জুই ছিল।সে খুশি হয়েছে।আমাকে বলল,

-যাক এতদিনে আপদ বিদায় হবে বলে মনে হচ্ছে।কি বল কাব্য।

আমি কিছু বললাম না।রাতে জুইকে বললাম,

-এই শোনো কালকে আমরা ছুটিতে যাবো কক্সবাজার।তুমি তোমার কাপড় চোপড় প্যাক করে রাখিও।

-সত্যি বলছো তুমি??

-হ্যা সত্যি।

জুই খুশি হয়ে রান্না করতে চলে গেলো।বাবা আমাদের সাথে খাইনা অনেক দিন হল।আজকে আসলো খেতে।জুই আব্বার পছন্দের খাবার বানিয়েছে।বাবাতো কাল চলে যাবে তাই।বাবা নিস্তব্ধে খেয়ে চলে গেলো।তার চোখের কোণে অশ্রুগুলো ঠিকই দেখতে পেরেছিলাম।সকালে রেডি হলাম।গাড়িতে আমি,জুই আর বাবা বসে আছি।প্রথমে গেলাম জুইয়ের বাড়িতে।জুইকে বললাম,

-তোমার ব্যাগটা নাও।আর চল একটু তোমার বাবার সাথে দেখা করে আসি।

-কিন্তু ব্যাগ কেনো??

-আরে চলই না।

আমি জুইয়ের বাসায় গেলাম।বাবাও আসলো।বাবাকে নিয়ে এসেছি।সোফায় বসে আছি।জুইয়ের বাবা-মা আমাদের দেখে বলল,

-কিরে জামাই সাহেব অসময়ে যে??

-জ্বি আপনাদের জিনিষ আপনাদের বুঝিয়ে দিতে এলাম।

-আমাদের জিনিষ মানে??

-আপনাদের মেয়েকে।

পাশ থেকে জুই বলল,

-কি বলছো এসব কাব্য??

-হ্যা ঠিক বলছি।আর শুন তোর মত নিচ মেয়েকে বউ হিসেবে না রেখে।আমি সারাজীবন বউ ছাড়াই থাকবো।আর আমি ডিভোর্সের পেপার পাঠিয়ে দিব।সাথে তোর পাওনা সব টাকাও।

বাবা পাশ থেকে আমাকে থাপ্পড় দিয়ে বলল,

-ছিঃ কাব্য ছিঃ।তোকে আমি এজন্যেই মানুষ করেছি।নিজের বউয়ের সাথে কেউ এভাবে ব্যবহার করে।মাফ করবেন বেয়ান সাহেব।আমি কাব্যকে বুঝিয়ে বলবো সব।

জুইয়ের আব্বু আম্মু কিছু না বুঝে বলল,

-কাব্য বাবা কি হয়েছে খুলে বল??

বাবা হয়তো টের পেয়েছে।আমি বাবাকে বললাম,

-আব্বু তুমি গাড়িতে গিয়ে বস।আমি আসছি।

আব্বু যেতে রাজি না।বাধ্য হয়ে চিৎকার দিয়ে বললাম,

-তোমাকে যেতে বলেছি যাও।

-আব্বু চলে গেলো।

তারপর জুইয়ের আব্বু বলল,

-জামাই সাহেব কি হয়েছে??আমার মেয়ে কি ভুল করেছে??

-কাব্য আমি কি করেছি??আমি তো তোমাকে অনেক ভালবাসি।

-চুপ কর তুই।তুর মতো মেয়ের মুখে ভালবাসি শুনতেই ঘৃণা লাগে।আর হ্যা আপনাদের মেয়েকে ভুলেও আমার চোখের সামনে যেনো না দেখি।

-আমার মেয়েটা কি করেছে সেটাতো বলো,

-কি করেনি সেটা জিজ্ঞেস করেন??যেই বাবা আমাকে এতটা বছর কষ্ট করে বড় করেছে।নিজে হাজারো কষ্ট সহ্য করে আমাকে মানুষ করেছে।নিজের কষ্টগুলোকে লুকিয়ে আমাদের ভাই-বোনের সুখের জন্য লড়াই করেছে।সেই বাবাকে আপনার মেয়ে আপদ বলে।বাবা শব্দটা মানে কি সেটা আপনার মেয়ে জানেনা।ওকে শিখিয়ে দিবেন।আর হ্যা জুই তুমিও শুনে রাখো,

-আমার বাবা তোমার কাছে আপদ।কিন্তু আমার কাছে সব কিছুর উর্ধে।আমার কাছে সবচেয়ে দামী।সবচেয়ে প্রিয়।

-জুই আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল,

-সরি কাব্য আমাকে ক্ষমা করে দাও।

-আমি পারবো না।ক্ষমা করা আমার পক্ষে সম্ভব না।তুমি বাবাকে আপদ মনে করো তাই না।বাবাকে এত কষ্ট দেওয়ার পর কিভাবে ভাবলে আমি তোমাকে মাফ করবো।তোমার জায়গা আমার মনেতো দূরের কথা আমার পায়ের নিচেও না।

আমি চলে আসলাম।গাড়ি স্টার্ট দিলাম।বাবা আমাকে বলল,

-কিরে বউমা কয়??

-ও আজকের পর আর আসবে না।বাবা আমাকে মাফ করে দাও।আমি ভুলে গিয়েছি।ভুলে গিয়েছি তোমাকে সময় দিতে।তুমিই আমার কাছে সব।

এখন আমি আর বাবা চায়ের দোকানে বসে বসে চা খাচ্ছি।আর আড্ডা দিচ্ছি।হুমম বাবার চোখে খুশির ঝলক দেখতে পাচ্ছি।অনেকদিন পর বাবা হাসছেন।তার হাসিমাখা মুখটা দেখি না অনেকদিন হল।তাকে হাসতে দেখে মনের মাঝে এক আনন্দের ঝড় বয়ে যেতে লাগলো।বাবা ভালবাসি।অনেক ভালবাসি তোমায়।

-------------সমাপ্ত------------

💞💞বাবা।💞💞

Sponsors of IrfanSagor
empty
empty
empty

ধন্যবাদ❤

10
$ 0.00
Sponsors of IrfanSagor
empty
empty
empty
Avatar for IrfanSagor
4 years ago

Comments

Surdor hoyece vai aita dekhe amr babar kotha mone pore gelo baba kothati oti cotto kintu babar daitto ta je onek boro allhar kase aita boli prithibite sobar pita matak jeno sustho rakhe ar tader nek hayat dan koruk

$ 0.00
4 years ago

Right.tnx for Your compliment

$ 0.00
4 years ago

খুব সুন্দর হয়েছে।বাবার মুখটা মনে পড়ছে। বাবার কোনো তুলনা হয় না।বাবারাই পারে সন্তানের জন্য সব সুখ বিসর্জন দিতে। ভালো থাকুক পৃথিবীর সবার বাবা।

$ 0.00
4 years ago

ঠিক,একমাত্র বাবাই তার সুখ বিসর্জন দিয়ে সন্তানকে আগলে রাখতে চেষ্টা করে।

$ 0.00
4 years ago

I subscribed you.Please subscribe me.

$ 0.00
4 years ago

অকে

$ 0.00
4 years ago

একমাত্র বাবাই তার সুখ বিসর্জন দিয়ে সন্তানকে আগলে রাখতে চেষ্টা করে। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর পোস্ট করার জন্য

$ 0.00
4 years ago

ঠিক বলেছেন।ধন্যবাদ এভাবে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য❤

$ 0.00
4 years ago

welcome

$ 0.00
4 years ago

Dad means everything. All fathers love their children more. I still remember going to school holding my father's hand as a child. The father is like the shade of a banyan tree to the child. Childbearing life without a father seems miserable. Thank you so much for presenting such a beautiful article to us...🤗🤗

$ 0.00
4 years ago

feeling good to read your valuable point.. Thanks a lot for this good point dear❤

$ 0.00
4 years ago

বাবা মানে সবকিছু। সব বাবারাই তাদের সন্তানকে অধিক ভালোবাসে। ছোটোবেলায় বাবার হাত ধরে প্রথম স্কুলে যাওয়া এখনো মনে পড়ে। বাবা সন্তানের কাছে বটগাছের ছায়ার মতো। বাবা ছাড়া সন্তানদরন জীবন দুর্বিশয় মনে হয়। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে এমন সুন্দর আর্টিকেল আমাদের মাঝে উপস্থাপন করার জন্য।

$ 0.00
4 years ago

সেটাই, বাবা সকল দুঃখ, কষ্টকে আড়াল করে সন্তানের দুঃখদুর্দশা লাঘভ করার চেষ্টা করেন।ধন্যবাদ

$ 0.00
4 years ago

So sad

$ 0.00
4 years ago

❤❤❤

$ 0.00
4 years ago

আপনি সত্যিই অসাধারণ গল্প লিখেন। আসলেই বাবার কোনো তুলনায় হয় না। বাবা সকল দুঃখ, কষ্টকে আড়াল করে সন্তানের দুঃখদুর্দশা লাঘভ করার চেষ্টা করেন।

$ 0.00
4 years ago

আসলেই, সব বাবারাই তাদের সন্তানকে অধিক ভালোবাসে। ধন্যবাদ

$ 0.00
4 years ago

আসলেই

$ 0.00
4 years ago

বাবা মা আমাদের সবচেয়ে আপনজন। তারা আমাদের নিস্বার্থ ভাবে ভালোবাসে৷ আমাদের সফলতায় কোন স্বার্থ ছাড়াই তারা খুশি হন।

$ 0.00
4 years ago

আসলেই, বাবা মায়ের মতো নিস্বার্থ ভালোবাসা আর কোথাও পাওয়া যায়না

$ 0.00
4 years ago