আমি মূলত চট্টগ্রামের ই ছেলে।সেই হিসেবে মিরসরাই যাওয়ার সৌভাগ্য অনেক হয়েছে। চট্টগ্রামের মিরসরায়ের নাম হয়তো অনেকেই শুনেছেন।অপরূপ সৌন্দর্যে ঘেরা এই মিরসরাই। ঝর্ণার খনিও বলা হয় মিরসরাইকে! একদিকে পাহাড় অন্যদিকে সাগর। আর ভ্রমণপিপাসুরা চায় এমনই একটি স্থান। আঁকা বাঁকা পথে পাহাড় ভ্রমণ কিংবা সাগর। কোলাহল মুক্ত এমননি একটি সাগরের খোঁজে ছুটে চলেন ভ্রমনপিপাসুরা।
উপজেলার সাহেরখালী ইউনিয়নের বেড়িবাঁধ এলাকায় সি-বিচে আবিস্কার করছে স্থানীয় ভ্রমণপিপাসুরা। যা ইতোমধ্যে "মিরসরাই সি-বিচ" নামে পরিচিতি লাভ করেছে।
সম্প্রতি জেগে উঠা চরের পাশ ঘেঁষে গড়ে উঠছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিল্পনগর। শাহেরখালী বেড়িবাঁধের স্লুইসগেট এলাকা থেকে প্রায় ৩/৪ কিলোমিটার পশ্চিমে সাগরের মোহনায় নির্মাণ করা হয়েছে আরো একটি স্লুইসগেট। যেটাimageদিয়ে কন্ট্রোল করা হবে উপকূলের পানি। চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। নির্মাণ করা হয়েছে আরো একটি বেড়িবাঁধ।
মূলত বেড়িবাঁধের পুর্বাংশে গড়ে উঠছে শিল্প কারখানা। এর পশ্চিম অংশে জেগে উঠেছে বিশাল চর। নজরুলের সেই কবিতাটির কথা মনে পড়ে যায়, নদীর এ-কূল ভাঙে, ও-কূল গড়ে এই তো নদীর খেলা। সকাল বেলার আমির রে ভাই, ফকির সন্ধ্যাবেলা রে ভাই!
আর এই চরকে ঘিরে স্বপ্ন দেখছেন মিরসরাই ভ্রমণপিপাসুরা। প্রতিদিন ভিড় করছেন শত শত পর্যটক। দেখতে পতেঙ্গা সি-বিচ এর মতো হওয়ায় স্থানীয়রা মিরসরাই সি-বিচ নামেই দেখছে এই বিচকে।
বেড়িবাঁধ জুড়ে সবুজের সমারোহ, খেজুর আর নারিকেল গাছের সারি, পাখিদের কোলাহল, কিছুদূর পর পর সাগরের সাথে মিশে যাওয়া ছোট ছোট খালের অবিরাম বয়ে চলা, বাঁধের পূর্বে গ্রামীণ জনপদ আর পশ্চিমে সাগরের কোল জুড়ে ম্যানগ্রোভ বন, এসব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হবে যে কেউ। কিছুদূর পার হলে শোনা যায় বঙ্গোপসাগরের ডেউয়ের গর্জন। খেজুর, নারিকেল আর ঝাউ গাছের সারি। বিস্তৃত চরজুড়ে কেওড়া গাছের সমহার। রয়েছে হরেক রকমের বৃক্ষ। বাঁধের কোল ঘেষে বাস করে অনেক দরিদ্র পরিবার। পূর্বে তাকাতেই দেখা মিলে বিস্তীর্ণ মাঠে সোনালী ফসল, আপন মনে কাজ করছে কৃষক।
পশ্চিমে তাকালে চোঁখ যতদূর যায় সবুজ আর সবুজ। পথে পথে দেখা মিলে সামুদ্রিক বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। চিংড়ি ঘের আর মাছের চাষ। স্লুইসগেট জুড়ে জেলেদের ব্যস্ততা, সাগর থেকে মাছ নিয়ে ফেরে জেলেরা। কেউ জাল বুনে অবসরে, কেউ আবার উত্তাল সাগরে নৌকা ভিড়ায়।
লাল কাঁকড়া, সাগরের বিভিন্ন জাতের কাঁকড়া ভেজা মাটিতে ছোট ছোট গর্তে মুখ তুলে থাকে, পায়ে হাটতে দেখা মিলে মুখ তুলে থাকা সাগরের বিভিন্ন মাছ। সবুজ বনায়নজুড়ে হরিণের পায়ের পদচিহ্ন। কখনও কখনও দেখা মিলে হরিণেরও। সন্ধা হলেই শোনা যায় শিয়ালের ডাক। শীতের মৌসুম খেজুরের মিষ্টি রসের স্বাদ, আর মহিষের দুধের চা খেয়ে মুহুর্তেই দূর হবে শরীরের ক্লান্তি। সকালের সূর্যের আলোয় ঝিলমিল করে সাগরের ঢেউ। বিকেলে মিষ্টি রোদ আর সূর্যাস্তের সৌন্দর্যের মন কেড়ে নিবে যে কারোই।
সম্প্রতি পর্যটনে মুখর হয়ে উঠছে সাহেরখালী সি-বিচ। প্রতিদিন ভীড় করছে শত শত পর্যটক। ঘুরতে আসা এমনই দুই বন্ধুর সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। গোলাম কাউসার ও আলী রিয়াদ বলেন, মিরসরাইয়ে এতো সুন্দর সি-বিচ রয়েছে তা ভাবতেই ভালো লাগছে। কোলাহল মুক্ত পরিবেশ, পাখির কলকাকলী, বিশুদ্ধ বাতাশ, লাল কাগড়া, বনের ভেতর হরিণের আনাগোনা আর নৌকা ভ্রমন সত্যি অসাধারণ। ফ্যামিলি নিয়ে ঘুরতে আসাও মন্দ হবেনা। তারা আরো বলেন, যাতায়াত ব্যবস্থা আরো উন্নত হলে ভালো হতো। তাদের দাবী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা যদি সু-নজর দেয় যাতায়াতের ব্যবস্থা আরো উন্নত হলে স্থানীয়সহ পর্যটকদের সুবিধা বাড়বে।
কিভাবে যাবেনঃ
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বড়তাকিয়া থেকে সিএনজি যোগে আবুতোরাব, সেখান থেকে পায়ে হেটে যেতে চাইলে আবুতোরাব থেকে আনন্দরহাট পর্যন্ত সিএনজিতে যেতে হবে। সেখান থেকে কিছুদূর হেটে মায়ানী-শাহেরখালী সাঁকো পার হয়ে ১ কিলোমিটার হেটে পৌঁছাতে পারবেন শাহেরখালী বেড়িবাঁধ। অথবা রিজার্ভ সিএনজিতে গেলে আবুতোরাব, আনন্দরহাট, নিজামপুর ও ভোরের বাজার থেকেও যেতে পারেন।
তবে এখনও খাওয়ার কোন ভালো রেস্টুরেন্ট নেই সেখানে। সকালে ঝাঁল নাস্তা আর গরু কিংবা মহিষের দুধের চা। রান্না করে খাওয়ার উপযোগি জায়গা বলে মনে হয়েছে। লাগড়ি কুড়িয়ে রান্না করে খাওয়ার স্বাদ অন্য রকম। অন্যথায় আপনি আবুতোরাব কিংবা মিরসরাই থেকে খাবার অর্ডার করতে পারেন।
ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান সময়ের জন্য।লেখাটা পড়ে যদি আপনাদের ভালো লাগে,আশাকরি সবাই লাইক, কমেন্ট এবং সাবস্ক্রাইব করে পাশে থাকবেন।❤
Thank you so much for sharing a nice article like this brother .thanks a lot.i support you my brother.