Vampower

0 4
Avatar for Hasan16
4 years ago

#ভ্যাম্পায়ার_বর

#পর্ব_৯

#M_Sonali

নির্জন পাহাড়ি রাস্তা ধরে হেটে যাচ্ছে চাঁদনী আর শ্রাবনী। দুজনেরই মনটা ভিশন খারাপ। মিতুর বাসা থেকেই ফিরছে ওরা। কারো মুখে কোনো কথা নেই দুজনেই একদম নিরব হয়ে আছে। বেশ কিছুক্ষণ পর নিরবতা ভেঙে শ্রাবনী বলে উঠলো

-- চাঁদ তুই এখন তারাতারি বাড়ি চলে যা, আমাকেও বাসায় যেতে হবে একটা কাজ আছে। আর হ্যা দ্রুতো চলে যাবি কিন্তু সন্ধার আগে। এখান থেকে তো তোর বাসা বেশি দুরে নয় তাই সমস্যা হবে না।

-- এত তারাতারি তারাতারি করছিস কেনো বলতো। আমার তো এই সময় পাহাড়ি রাস্তা ধরে হাটতে ভালই লাগছে। তবে মিতুর কথা ভাবতেই বুকের ভিতরটা হু হু করে উঠছে। একদিনেই কি হাল হয়েছে মিতুর। জানিনা ওর সাথে ঠিক কি হয়েছিলো।

-- হুমম তাই তো তোকে বলছি সন্ধার আগে বাসায় চলে যা। কারন আমরা ঠিক জানিনা মিতুর সাথে কি হয়েছে। আমি চাইনা তোর সাথেও এমন কিছু হোক। তাই সন্ধার আগেই বাসায় চলে যা। আর হ্যা সাবধানে থাকিস নিজের যত্ন নিস।

কথাগুলো বলেই চাঁদনীকে আর কিছু বলার সুজোগ না দিয়েই শ্রাবনী উল্টো পথে দৌড়ে চলে গেলো। চাঁদনী সেখানেই কিছুক্ষণ অবাক হয়ে শ্রাবনীর চলে যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বাসায় যাওয়ার জন্যে পা বাড়ালো।

কিছুটা পথ হাটতেই চাঁদনীর মনে হতে লাগলো ওকে কেউ ফলো করছে। খুব শুক্ষ নজরে দেখছে কেউ ওকে। হঠাৎ এমন অনুভুতি হওয়ায় চাঁদনীর শরীরের শিরদাঁড়া বেয়ে একটা শীতল শ্রোত বয়ে গেলো। যেনো ভয়ে কাটা দিয়ে উঠলো সারা শরীর। পিছনে ঘুরে তাকানোর সাহসটাও চাঁদনীর হচ্ছে না এখন। চাঁদনী দ্রুতো পা চালাতে লাগলো। আর একা একাই বক বক করে বলতে লাগলো

-- ইশশ কেনো যে আজকে স্কুটার টা সাথে আনলাম না। স্কুটার টা থাকলে এতটা ভয় করতে হতো না এখন আমার। কখন ভুউউ করে বাসায় পৌঁছে যেতাম আমি।

নিচের দিকে তাকিয়ে আনমনে দ্রুতো হেটে চলেছে চাঁদনী আর ওপরের কথাগুলো ভাবছে। কোথায় যাচ্ছে কোন দিকে যাচ্ছে ওর সেদিকে কোনো খেয়ালই নেই। হঠাৎ একটি দ্রুতগামী ট্রাক নিয়ন্ত্রন হাড়িয়ে ছুটে আসলো চাঁদনীর দিকে। চাঁদনীর খেয়াল হতেই দেখলো ট্রাকটা খুব কাছে চলে এসেছে ওর। ভয়ে চাঁদনী চোখ বন্ধ করে জোরে একটা চিৎকার দিলো। কিন্তু একটু পরেও যখন চাঁদনী বুঝতে পারলো ওর কিছু হয়নি বরং ও কারো বুকের সাথে লেপ্টে আছে তখন ভয়ে ভয়ে চোখ খুললো চাঁদনী। আর দেখলো শ্রাবন ওকে আষ্টেপৃষ্ঠে বুকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে আছে। যেনো ছেড়ে দিলেই হাড়িয়ে যাবে ও। শ্রাবনকে দেখে অবাক হয়ে পাশে থাকা ট্রাকের দিকে তাকালো চাঁদনী। ট্রাকটা পাশেই দাড়িয়ে আছে। কিন্তু ট্রাকের ভিতর কাউকে দেখা যাচ্ছে না।

চাঁদনী ট্রাকের দিক থেকে চোখ সরিয়ে শ্রাবনের দিকে তাকিয়ে দেখলো শ্রাবনের মুখে ভয় স্পষ্ট। যেনো শ্রাবনের কলিজাটা কেউ বের করে নিতে চেয়েছিলো কিন্তু পারেনি। শ্রাবনকে দেখে ঠিক এমনই লাগছে। শ্রাবন রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ঐ ট্রাকের দিকে। একটুপর ট্রাকের দিক থেকে চোখ সরিয়ে চাঁদনীর দিকে তাকালো শ্রাবন। চাঁদনীও শ্রাবনকেই দেখছে। চাঁদনীর চোখে চোখ পরতেই কিছু না বলে আচমকাই চাঁদনীর কপালে আলতো করে চুমো একে দিলো শ্রাবন। তারপর আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরলো বুকের মাঝে। শ্রাবনের হার্টবিট গুলো গুনতে পারছে চাঁদনী। মুখে কিছু বলার ক্ষমতা যেনো হাড়িয়ে গেছে ওর। ও শুধু অবাক হয়ে সবটা বোঝার চেষ্টা করছে।একটু পর শ্রাবনের কথায় ধ্যান ভাঙলো চাঁদনীর। শ্রাবন চাঁদনীকে হালকা ছেড়ে দিয়ে বললো

-- এই মেয়ে নিজের সাথে আমাকেও কি মেরে ফেলার প্ল্যান করেছো নাকি তুমি? রাস্তা দিয়ে হাটার সময় সামনে দেখে হাটতে হয় জানো না। আমার আসতে আর একটু দেরি হলে কি হতো ভেবেছো একবার। তুমি জানো কিছুক্ষনের জন্যে হার্টবিট থেমে গিয়েছিলো আমার। দম বন্ধ হয়ে মারা যাচ্ছিলাম আমি। তোমার কিছু হলে আমি কি করে বাচতাম বলো। তোমার মাথায় কি দুষ্টুমি করা ছাড়া আর কোনো বুদ্ধি নাই?

এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে থামলো শ্রাবন। শ্রাবনের কথা শুনে শ্রাবনের বুক থেকে মাথা তুলে শ্রাবনের দিকে তাকালো চাঁদনী। তারপর অবাক হয়ে বললো

-- আমার কিছু হলে আপনার কি? আমি এক্সিডেন্ট হতে চলে ছিলাম বলে আপনার দম কেনো আটকে গিয়েছিলো? কেনো এত পাগলের মতো করছেন আপনি? কে হই আমি আপনার? আর আমাকে আপনি এভাবে জরিয়ে রেখেছেন কেনো আপনার বুকে, যেনো ছেড়ে দিলেই আমি হাড়িয়ে যাবো?

চাঁদনীর কথা শুনে চাঁদনীকে ছেড়ে দিয়ে কিছুটা দুরে সরে দাঁড়ালো শ্রাবন। তারপর অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে বললো

-- সরি চাঁদনী, আসলে তোমায় এক্সিডেন্ট করতে দেখে একটু ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। প্লিজ তুমি কিছু মনে করো না। সন্ধা হয়ে গেলো তুমি তারাতারি বাসায় চলে যাও।

কথাটা বলেই দৌড়ে শ্রাবন কোথায় যেনো চলে গেলো। চাঁদনী হা করে তাকিয়ে রইলো শ্রাবনের চলে যাওয়ার দিকে। কি হলো কিছুই মাথায় ঢুকছে না ওর। চাঁদনী মনে মনে বললো

-- ইশশ আমিও না সত্যিই একটা ইডিয়ট, ছেলেটা আমায় দু দুবার এক্সিডেন্ট হওয়ার থেকে বাচালো। আর আমি কিনা ওনাকে একটা ধন্যবাদ না দিয়ে বরং শুধু প্রশ্ন করে গেলাম। এখন বাসায় চলে যাই কালকে বরং কলেজে গিয়ে ওনাকে ধন্যবাদ দিয়ে দিবো।

কথাগুলো ভেবেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাসায় চলে গেলো চাঁদনী। চাঁদনীকে বাসায় পৌঁছাতে দেখে শ্রাবন ফিরে এলো সেই ট্রাকের কাছে। চাঁদনী বাসায় পৌঁছানো পর্যন্ত শ্রাবন আড়াল থেকে চাঁদনীর ওপর নজর রাখছিলো।

ট্রাকের কাছে পৌঁছেই খাদে অজ্ঞান হয়ে পরে থাকা ট্রাক চালকের কাছে চলে গেলো শ্রাবন। ট্রাক চালক লোকটা নেশায় পুরোপুরি মাতাল হয়ে ট্রাক চালাচ্ছিল। অজ্ঞান ট্রাক চালোকের কাছে এসেই রাগে ফোস ফোস করতে লাগলো শ্রাবন। তারপর দাঁত কিড়মিড় করে বললো

-- তোদের মতো নেশাখোর ড্রাইভারের জন্যেই কত শত নিরিহ মানুষ অকালে মারা যায়। আর আজকে তো তোর জন্যে আমি আমার চাঁদপাখিকে হাড়াতে বসে ছিলাম। তোর কোনো ক্ষমা নেই।

কথাগুলো বলেই অজ্ঞান ট্রাক চালককে উচু করে তুলে ধরে গলায় নিজের বিশাল দাঁতগুলো বসিয়ে দিলো শ্রাবন। তারপর ঢক ঢক করে রক্ত চুষে খেতে লাগলো। রক্ত খাওয়া শেষ হতেই নিজের বিশাল বিশাল ধারালো নখ গুলো দিয়ে লোকটার শরীর ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে পাহাড় থেকে ছুড়ে নিচে ফেলে দিলো। তারপর রাগ কমাতে জোরে একটা গর্জন করে উঠলো শ্রাবন। শ্রাবনের গর্জনে কেপে উঠলো পুরো পাহাড়। ততক্ষণে সন্ধা পেরিয়ে অন্ধকার হয়ে গেছে চারিদিকে। হঠাৎ ঘারে কারো হাতের ছোঁয়া পেয়ে পিছনে ঘুরে তাকালো শ্রাবন। শ্রাবনের পিছনে শ্রাবনী ভ্রু কুচকে শ্রাবনের দিকে তাকিয়ে আছে।শ্রাবন তাকাতেই শ্রাবনী বলে উঠলো

-- কি হয়েছে ভাইয়া তুমি এতটা রেগে আছো কেনো? আর ঐ লোকটাকে এভাবে মারলেই বা কেনো?কি করেছে ও?

-- ও আমার চাঁদপাখিকে মারতে চেয়েছিলো। আমি যদি আজকে ঠিক সময় না আসতাম তাহলে ঐ ট্রাক দিয়ে আমার চাঁদপাখিকে পিষে দিতো ও। তাই ওর রক্ত খেয়ে ওকে মেরে ফেলেছি আমি।আমার চাঁদপাখির যে ক্ষতি করতে চাইবে তারই এমন হাল করবো আমি।

কথাটা বলেই রাগ কন্ট্রল করতে না পেরে ট্রাকটাকে ধাক্কা দিয়ে পাহাড় থেকে ফেলে দিলো শ্রাবন। শ্রাবনের এমন আচরন দেখে শ্রাবনী বললো

-- ভাইয়া তুমি কি সত্যিই চাঁদকে ভালবেসে ফেলেছো নাকি? তুমি কি ভুলে গেছো একটা পিয়র ভ্যাম্পায়ার কখনো কোনো মানুষের সাথে ভালবাসার সম্পর্ক করতে পারে না। এর পরিনতি কতটা ভয়াবহ?

শ্রাবনীর কথা শুনে শরীরের সব শক্তি দিয়ে একটি গাছে জোরে করে ঘুষি মারলো শ্রাবন। সাথে সাথে গাছটা ভেঙে হুড়মুড়িয়ে নিচে পরে গেলো। শ্রাবনের এমন আচরনে ভয়ে কেপে উঠলো শ্রাবনী। শ্রাবন চিৎকার করে বললো

-- হ্যা আমার মনে আছে শ্রাবনী ভুলিনি আমি যে আমি কোনো সাধারন মানুষ নই। বরং আমি একজন পিয়র রক্তচোষা ভ্যাম্পায়ার। আর কোনো পিয়র ভ্যাম্পায়ারের সাথে কখনো কোনো মানুষের মিলন সম্ভব নয়। এর পরিনতি অনেক ভয়ানক। তবুও আমি চাই আমার চাঁদপাখিকে। কারন আমি ওকে ভালবাসি খুব খুব খুব ভালবাসি আমি চাঁদনীকে। চাঁদনী আমার মন প্রান অস্তিত্ব জুরে মিশে গেছে। ওকে ছাড়া আমি আর এক মুহুর্তও নিজেকে ভাবতে পারিনা। আমি যে কোনো কিছুর মুল্যে হলেও চাঁদনীকে চাই। আমার ভালবাসাকে আমার বুকে সারাজীবনের জন্যে চাই আমি।

কথাগুলো বলতে বলতে হাটু গেরে নিচে বসে পরলো শ্রাবন। শ্রাবনী কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে শ্রাবনের পাশে বসে নরম গলায় বললো

-- সত্যিই ভাইয়া আমি এতদিন ভেবে ছিলাম তুমি হয়তো এমনিই চাঁদনীকে নিয়ে মজা করো। কিন্তু তুমি যে ওকে সত্যি সত্যিই এতটা ভালবেসে ফেলেছো ভাবতে পারিনি আমি। কিন্তু ভাইয়া তুমি যদি চাঁদনীকে নিজের করে নাও এতে যে চাঁদনীর জীবন কতটা রিস্কি হয়ে যাবে সেটা তো তোমার অজানা নয়? তুমি কি চাও ভাইয়া যে চাঁদনী তোমার সামনে ধুকে ধুকে মরুক?

-- নাহ আমি সেটা কখনোই চাই না। আমি বেচে থাকতে আমার চাঁদপাখির কিছুই হতে দিবো না আমি। ওর জীবন সুখে ভড়ে দিবো আমি। কিন্তু আমি কখনোই এটা মানতে পারবো না যে আমার চাঁদনী অন্য কারো হবে। ও কোনো ছেলের সাথে কথা বললেই শরীর জ্বলে যায় আমার। আমি ওকে কি করে অন্য কারো সাথে সহ্য করবো তুই বলতে পারিস শ্রাবনী? আমি বিয়ে করবো চাঁদপাখিকে। নিজের করে নিবো ওকে আমি।

-- ভাইয়া তুমি কি পাগল হয়ে গেছো? কি সব যা তা বলছো তুমি? এটা কখনোই সম্ভব নয় ভাইয়া। চাঁদনীর অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে এমন করলে?

শ্রাবনীর কথার কোনো উত্তর দিলো না শ্রাবন। কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থেকে গম্ভির গলায় বলে উঠলো

-- তুই মিতুর কাছে যা শ্রাবনী, ওর কাছে এখন সব সময় থাকা প্রয়জন তোর। রাত হয়ে গেছে তিয়াসা আর এভিক যখন একবার মিতুর রক্তের স্বাদ পেয়েছে। যখন তখন আবার এটাক করতে পারে মিতুর ওপর।

-- আর তুমি কোথায় যাবে ভাইয়া?

শ্রাবনীর কথার উত্তর না দিয়ে শ্রাবন উড়ে চলে গেলো সেখান থেকে। আর শ্রাবনী একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মনে মনে বললো

-- ভাইয়া তুমি নিজেও জানো না যে তুমি নিজের অজান্তেই চাঁদনীর কত বড় ক্ষতি করতে চলেছো। চাঁদনীকে বিয়ে করলে তোমরা কেউই কখনো সুখি হতে পারবে না। বরং নিজেদের বিপদ ডেকে আনবে তোমরা।

কথাগুলো ভেবেই মিতুর বাসার দিকে উড়ে চলে গেলো শ্রাবনী।

,

👹

,

রাত ১২.০০ টা

গভির ঘুমে ঘুমিয়ে আছে চাঁদনী। জানালার কাঁচটা সরিয়ে আস্তে করে রুমে ঢুকলো শ্রাবন। তারপর সোজা গিয়ে চাঁদনীর মুখোমুখি বসে তাকিয়ে রইলো চাঁদনীর দিকে। চাঁদনীর ঘুমন্ত মুখটা কেমন নিশ্পাপ লাগছে দেখতে। চাঁদনীর দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছে শ্রাবন। শ্রাবনের চোখ থেকে এক ফোটা পানি গড়িয়ে চাঁদনীর হাতের ওপর গিয়ে পরলো। শ্রাবন সেটা খেয়াল করেনি। হাতে পানি পরতেই চাঁদনী ঘুমের ঘোরে বলে উঠলো,,,,,

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

কি হতে চলেছে শ্রাবন আর চাঁদনীর জীবনে? ওদের ভালবাসা কি পুর্নতা পাবে? নাকি ভালবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠার আগেই ভেঙে যাবে??

1
$ 0.00
Avatar for Hasan16
4 years ago

Comments