সংসার

0 5
Avatar for Hasan16
4 years ago

সংসার

পর্বঃ০১

ফুলশর্য্যার রাতে রাজ যখন মৌকে বলল 'এই নাও ডির্ভোস পেপার সাইন করে দাও। '

রাজের কথাটা মৌ এর কলিজায় গিয়ে বিঁধল।মা মরা মেয়েটার ফুলশর্য্যার রাতে ডির্ভোস পেপারে সাইন করতে হবে এটা কখনো ভাবে নাই সে। হাতের কাঁচা মেহেদীর সাজ! অপরুপা লাগছে মেয়েটাকে। ডির্ভোস পেপারে সাইন করতে গিয়ে এক ফোঁটা চোখের পানি টপ করে কাগজটার উপর পরল। জীবনটা সত্যিই অদ্ভূত চার ঘন্টা আগে যেমন একটি কাগজে সাইন করে নতুন সম্পর্ক আবদ্ধ হয়েছিল। আর এখন একটা সাইনে সে সম্পর্কটা প্রাণহীন হয়ে গেল। এদিকে সাইন করা কাগজটা হাতে নিয়েই, রাজ বলল' সরি মৌ আমার কিছু করার নেই।' পরে যদি তুমি আমাকে ডির্ভোস না দেও। তাই ঝামেলা আগেই মিটিয়ে নিলাম।আর হ্যাঁ আমার সাইনটা বাকি রাখলাম। চুক্তি যখন শেষ হবে আমার সাইনটা দিয়ে কাগজটা পরিপূর্ণ করব। মৌ কিছু না বলে মাথাটা নিচু করে আছে। বুকের ভেতরটা যেন কেমন কেমন করছে। জীবনে কাউকে কোনদিন ভালোবাসেনি। নিজের স্বামীকে সবটা দিবে বলে। কিন্তু আজ স্বপ্নগুলো স্বপ্নই থেকে গেল।

রাজ মৌ এর পাশে থাকা বালিশটা নিয়ে যখনি খাঁট থেকে নামতে যাবে তখনি খেয়াল করল বিছানায় রক্ত! রক্ত দেখে খানিকটা আঁচ করতে পারল সে বিষয়টা কি। মৌকে বসে থাকতে বলে বের হয়ে গেল।

.মৌ বিছানায় বসে বসে ভাবছে, জীবন নামক বহতা নদীর কথা। এ নদীর শেষ কোথায়। বান্ধবীদের কাছে শুনেছি বাসর রাতে এ হয় সে হয়। আর আমার! রাজকেই আর কি বা দোষ দিব। আমি নিজে ইচ্ছায় চুক্তির বিয়ে করেছি। যদিও রাজ আর আমি ছাড়া দ্বিতীয় কেউ জানে না। এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে যায় খেয়াল নেই।

রাজ ফার্মেসি থেকে প্যাড নিয়ে এসে রুমে ডুকতেই দেখে মৌ ঘুমাচ্ছে। জানালা দিয়ে চাঁদের জোছনা এসে মৌ এর চাঁদমাখা মুখটাতে ভর করছে। মনে হচ্ছে অষ্টাদশী কোন রাজকন্যা। রাজ মৌকে ডাক না দিয়ে বালিশটা নিয়ে সুফায় শুয়ে পড়ে। সুফায় শুয়ে থাকতে থাকতে রাজ সুমাইয়াকে ফোন দেয়। দু'বার রিং হতেই সুমাইয়া ফোন ধরে বলে' হ্যালো জান, তুমি কেমন আছো?'

হ্যাঁ আমি ভালো। আর হ্যাঁ তোমার কথা মতো মা'কে খুশি করার জন্য বিয়ে করেছি। মেয়েটাও রাজি হয়েছে। আচ্ছা ছয়মাসের মাঝেই কিন্তু দেশে ফিরবে।

-আচ্ছা! সুইর্ট হার্ট আমাকে ভুলে যেয়ো না। এখন রাখছি বাই।

আচ্ছা। টেক কেয়ার।

২.

সকালবেলা পাখির কিঁচির মিচিরে, রাজের ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম থেকে যখনি উঠতে যাবে ঠিক তখনি কে যেন বারবার দরজায় নর্ক করছে। রাজ তাড়াহুড়া করে বালিশ আর চাদর বিছানায় রাখে। মৌ এর দিকে তাকিয়ে দেখে মৌ এখনো ঘুমাচ্ছে।

রাজ মৌকে ডাক না দিয়ে,দরজা খুলতেই দেখে রিত্ত চা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

আজকে চাঁদ কোনদিকে উঠল যে আমার বোন আমার জন্য চা নিয়ে আসল?

এ্যা চা দেখলেই মনে হয় তোমার জন্য নিয়ে আসছি। আসলে আমি চা তো ভাবীর জন্য নিয়ে আসছি।

রিত্ত চা নিয়ে দেখে মৌ উঠে পড়েছে। মৌ এর কাছে চা টা রেখে বলল' ভাবী তোমার চা।'

- তুমি চা নিয়ে আসছ কেন? আর আমি সকালে চা খায় না।

- তো কি হয়েছে এখন থেকে খাবে।

আচ্ছা।

চা খেয়ে মৌ যখন শাওয়ার নিতে যাবে এমন সময় রাজ মৌ এর হাতটা ধরে ফেলল। মৌ রাজের হাতের স্পর্শে কেমন যেন কেঁপে ওঠলো। লজ্জামাখা দৃষ্টিতে রাজের দিকে তাকালো। রাজ প্যাডটা মৌ এর হাতে দিয়ে বলল' আমি তোমার স্বামী। আশা করি এসব কিছু গোপন রাখার দরকার নেই। আমি কাল রাতেই বুঝতে পেয়েছি তোমার সমস্যা হচ্ছে।

- মৌ রাজের মুখে এমন কথা শুনে লজ্জায় জড়োসরো হয়ে গেল। মনে মনে ভাবতে লাগল, মানুষটাকে যতটা খারাপ ভেবেছিলাম ততটা খারাপ না। ' ভালোবাসায় যায়। মৌ রাজকে যতই দেখে ততই মুগ্ধ হয়। ঠিক তার কল্পনায় পুরুষটার মতো। মৌ ঘুমালেই একজনকে স্বপ্ন দেখতে। আর সেই স্বপ্নটা যে এভাবে সত্যি হবে সে কোনদিন ভাবতে পারে নাই।

মৌ শাওয়ার শেষ করে। গোলাপী রঙের একটা শাড়ি পড়ে যখন রুম থেকে যখন বের হবে। তখন পিছন থেকে রাজ ডেকে বলল ' কি সবাইকে তোমার মেদহীন পেট দেখাবে নাকি?

- নাকি তোমার নাভি দেখিয়ে আমাকে মুগ্ধ করতে চাইছো? এসব বাজে মেয়েরা করে।

- মৌ রাজের কথা শুনে কাঁদো কাঁদো ভাবে বলল, কি করবো আমি শাড়ি পরতে পারি না। ' একটু পরিয়ে দিবে?

- কাছে আসো। শাড়ি পরাটাও পারো না। কি পারো? রাজ ধমক দিয়ে মৌকে শাড়ি পরানো শিখিয়ে দিল। শাড়ি পড়া শেষ হলে

-মৌকে দেখেি রাজের মা বলে' বউমা তুমি রান্না ঘরে আসছ কেন?'

-কেন মা আপনি আসতে পারলে আমি কেন পারবো না? মা আমি আপনার মেয়ের মতো, আপনি এসব আর করবেন না।

- ধূর পাগলী। আসই একসাথে রান্না করি। মৌ খুশি হয়ে যায়। সত্যিই মায়ের আদর বোধহয় এমনি হয়।

.

এদিকে দেখতে দেখতে দু'মাস হয়ে যায়। দু'মাসে মৌ রাজের পরিবারের একজন হয়ে যায়। পরিবারের প্রতিটা মানুষ মৌকে ভালোবাসে। শুধু রাজ ছাড়া। মৌ জানে রাজের হৃদয়ে শুধু সুমাইয়ার বসবাস। আর তাকে বিয়েটাও করেছে শুধু তার মায়ের জীবন বাঁচাতে। ওসময় যদি ওর মায়ের কথা না শুনতো তা হলে অনেক বড় বিপদ হয়ে যেত।

চলবে

1
$ 0.00
Avatar for Hasan16
4 years ago

Comments