সিনিয়র ভাবি যখন বউ

0 41
Avatar for Hasan16
3 years ago

সিনিয়র_ভাবি_যখন_বউ

পার্ট_2

– বোকা। সবার সামনে ভাবী ভাবী করবে নাকি। আম্মু এতে কষ্ট পাবে।

– তাহলে…

ভাবী কিছুক্ষণ ভাবল,

– নাম ধরে ডাকতে পারো।

– নাম ধরে!! 😲

– হুম। সমস্যা নেই তো?

– না, কিন্তু।

আমি মাথা চুলকাতে লাগলাম।

– আচ্ছা, যাই ডাকো সবার সামনে ভাবী ডেকো না শুধু।

– ওকে, যাও শুয়ে পড়ো। গুড নাইট।

– গুড নাইট।

আমি গিয়ে সোফায় শুয়ে পড়লাম। কিন্তু, মিরা জানালার পাশেই দাঁড়িয়ে রইল।

– কি হলো ঘুমুবে না? [আমি] – ঘুম আসবে না।

– কেনো? [আমি] – প্রতি রাতে তো নিশান আমার মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিতো। এখন তো নিশান নেই। তাই ঘুমও নেই।

– কিন্তু, তোমার তো ঘুমানো প্রয়োজন।

– কিন্তু, আমার তো ঘুম আসবে না।

– এক কাজ করতে পারি।

– কি?

– আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিই। ঘুমিয়ে পড়ো।

মিরা আশ্চর্য হয়ে তাকাল আমার দিকে। ইতস্তবোধ করছে। নিজেকে অপরাধী মনে করছে।

– কি হলো?

– না না, লাগবে না। আমি ঘুমুতে পারব।

– কিভাবে?

– চেষ্টা করলে এমনিতেই ঘুম আসবে।

আমি সোফা থেকে উঠে মিরার কাছে গেলাম।

– আমি জানি তোমার ঘুম আসবে না। চল আমি মাথায় হাত বুলিতে দিচ্ছি।

আমি মিরার হাত ধরে টেনে বিছানার দিকে যেতে লাগলাম। মিরা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। কিছু বলতে পারছে। আমি মিরাকে শুইয়ে দিয়ে মাথায় হাত বুলাতে লাগলাম।

মিরা লজ্জায় চোখ বুঝে নিল। মিরার কেমন কেমন লাগছে। এতোদিন দিন নিশানের সাথে সংসার করল। আর এখন তার আপন ছোট ভাইয়ের সাথে….। ছিঃ। নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে মিরার।

.

মিরা ঘুমিয়ে গেলে আমি উঠে। সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়ি। কখন ঘুমুলাম মনেই নেই। যখন ঘুম ভাঙল চোখ খুলে দেখলাম সকাল হয়ে গেছে। হাত-পা উপরে তুলে বড় করে হাই তুললাম। বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখলাম মিরা এখনো ঘুমিয়ে আছে। ঘুমন্ত অবস্থায় পরীর মতো লাগছে। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম। মোবাইলটা হাতে নিয়ে অন করলাম। নীলার ১০ টা মেসেজ দেখে আমার চোখ চড়কগাছ। মেসেজ ওপেন করলাম,

১ম – কংগ্রেস মিঃ কাব্য।

২য় – আপনার বিবাহিত জীবন সুখী হোক।

৩য় – তুমি কি জানতে না যে, আমি তোমাকে কতোটুকু ভালোবাসতাম। কেনো এমন করলে আমার সাথে। কি দোষ করেছিলাম আমি? আমার অপরাধটা কি ছিল ?

৪র্থ – ইউ আর এ চিটার কাব্য। ইউ আর এ লায়ার।

৫ম – সেদিন কি বলেছিলে মনে আছে। জীবন চলে গেলেও আমাকে তোমার কাছ থেকে কেউ আলাদা করতে পারবে না। এই তার নমুনা?

– লাষ্ট একটা জিনিসই চাই, তুমি সুখে থাকো।

মেসেজগুলো পড়ে আর বুঝতে বাকি রইল না যে, নীলা আমার বিয়ের ব্যাপারটা জেনে গেছে।

– শিট…এখন কি করে বুঝাবো নীলাকে যে, আমি নিজ থেকে এই বিয়ে করতে চাই নি।

কি করে বোঝাবো? উফফ! কি করি এখন? সত্যিইই নীলা আমাকে অনেকটাই ভালোবাসে। তাই হয়তো ব্যাপারটা সহ্য করতে পারেনি। তাড়াতাড়ি করে নীলার ফোনে কল করলাম। নাহ! বন্ধ দেখাচ্ছে। নীলা তাহলে সত্যি আমাকে প্রতারক ভেবে নিল। আমি আর কি করতাম? কিন্তু, নীলা যাই করোক? নীলাকে ছাড়াতো আমি থাকতে পারব না। আম্মুকে নীলার কথাটা বলা হয়নি। বলার সময় পাইনি। হঠাৎ করেই বিয়েটা হয়ে গেল।

– কাব্য, কোনো সমস্যা?

নীলাতেই মগ্ন ছিলাম। হঠাৎ কারো কন্ঠ শুনে চোখ তুলে তাকালাম। মিরা দাঁড়িয়ে আছে।

– উঠে, পড়েছো?

– হুম, বললে না তো।

– না, তেমন কিছু না।

– আমি জানি সমস্যাটা।

আমি অসহায় দৃষ্টিতে তাকালাম মিরার দিকে। মেয়েটার আশ্চর্য এক ক্ষমতা আছে, মনে কথা বুঝে নিতে পারে।

– নীলা বিয়ের ব্যাপারে জেনে গেছে তাই না?

আমি মাথা নাড়ালাম।

– হুম।

– ভয় পেয়ো না। তুমি শুধু আমার আর নীলার যোগাযোগ করিয়ে দিয়ো। বাকিটা আমি দেখে নিবো।

– হুম।

– আচ্ছা মনে থাকে যেনো।

বলে মিরা ওয়াসরুমে ডুকল। ফ্রেস হয়ে বেরিয়ে এলো।

– ফ্রেস হয়ে নিচে আসো।

বলে মিরা নিচে চলে গেলো। আমি বুঝি না মেয়েটা আমার কেয়ার করছে না আমি মেয়েটার কেয়ার করছি।

.

ফোনটা হাতে নিয়ে নীলার ফোনে আরেকবার ট্রাই করলাম। নাহ, সংযোগ বন্ধ দেখাচ্ছে। এই মেয়েটাও না একটুতে অভিনয় করে ফেলে। কিন্তু, এই ব্যাপারটাতো একটু না অনেক বড়ই। কারো ভালোবাসার মানুষের অন্য কারো সাথে বিয়ে হয়ে গেলে কেউই স্বভাবিক থাকে না। নীলাকে নিয়ে প্রচুর টেনশন হচ্ছে। আমার এমন কর্মকান্ডে অনেক কষ্ট পেয়েছে মেয়েটা। এসব ভাবতে ভাবতেই ওয়াসরুমে ডুকলাম।

.

মিরা নিচে নেমে এলো। খুব অস্থির লাগছে নিজেকে। রাতে একটুও ঘুময়নি। কাব্য ভেবেছিল আমি ঘুমিয়ে পড়েছি। কিন্তু, আমি ঘুমইনি। কি করে ঘুমুবে মিরা? এতোদিন যার স্পর্শে ও ঘুমের দেশে তলিয়ে যেতো এখনতো সেই নেই। তাহলে মিরা ঘুমুবে কি করে?নিশান কি আর ফিরে আসবে না? যদিও আসে তাহলে শুনে যদি ওর ছোট ভাইয়ের সাথে আমার বিয়ে হয়েছে তখন কি ভাববে? নিশ্চয়ই খারাপ ভাববে। মিরা ভাবে, ওর জন্যই কাব্য ওর ভালোবাসাকে হারাতে চলেছে। নিজেকে কঠোর শাস্তি দিতে ইচ্ছে হচ্ছে মিরার। যে করেই হোক নীলার কাব্যের ভালোবাসা সহজ করে দিতে হবে। সমস্যার সমাধান করতে হবে।

.

আমি ফ্রেস হয়ে একটা শার্ট পড়ে নিচে নামলাম। বাসাটা বেশ উৎসব মুখর। তেমনটা না হলেও একমত আর কি? যতই হোক ছোট ছেলের বিয়ে। নিচে নামতেই দেখলাম মিরা আর আম্মুর মধ্যে কথোপকথন চলছে।

– কিরে মা এতো তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙে গেলো? [আম্মু] – হুম।

ছোট্র করে উত্তর দিলো মিরা। আম্মু মিরার থুঁতনি ধরে মুখটা উঁচু করে ধরলেন।

– তুই কিন্তু আমাকে প্রমিস করেছিলি। নিজেকে শক্ত রাখবি। নিশানের কথা ভেবে কষ্ট পাবি না। [যদিও আম্মুর চোখে পানি আছে। তবুও বললেন। ] – তাহলে তুমি কাঁদছ কেনো আম্মু? [মিরা ভাঙা গলায় বলল ] আম্মু ধুকরে কেঁদে উঠল।

– আমার ছেলেটা এখন কোথায় আছে কে জানে?

কাঁদতে কাঁদতে বললেন।

– আম্মু, তোমার যেমন কষ্ট হচ্ছে। আমারও তেমনি কষ্ট হচ্ছে। তাহলে আমি নিজেজে সহজ করব কি করে বলো?

আম্মু মিরাকে জরিয়ে ধরে কেঁদে দিলেন। দুজনেই কাঁদছে।

– আম্মু, কাব্যকে এসবের মধ্যে জড়ানোর কি দরকার ছিল?

– তোর মতো এতো ভালো আর মিষ্টি মেয়েকে হারাতে চাই না যে তাই।

মিরা আম্মুকে জরিয়ে ধরল শক্ত করে।

– কিন্তু, কাব্যের জীবন আর ভবিষ্যৎটা যে নষ্ট করে দিলে।

– আমার বিশ্বাস এতে কাব্যের জীবন নষ্ট নয় বরং আরোও ভালো হবে। সুন্দর হবে। যার তোর মতো একটা বউ আছে তার জীবন নষ্ট হয় কিভাবে?

মিরা নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আম্মুর দিকে।

– আচ্ছা যা এখন টেবিলে গিয়ে বস। আমি নাস্তা রেডি করাচ্ছি।

আম্মু আমার দিকেই আসল। আমাকে দেখতেই মিষ্টি একটা হাসি দিলেন।

– ঘুম ভাঙল তোর?

– হুম।

– যা, টেবিলে যা।

আমি টেবিলের দিকে না গিয়ে একটু বাইরের দিকে গেলাম। নীলাকে ফোনে ট্রাই করলাম। দেখি পাই কি না?

কিন্তু, না এখনো সুইচড অফ দেখাচ্ছে।

.

হঠাৎ করে আরেকবার ট্রাই করতেই ফোন ডুকে গেলো। ২/৩ রিং হওয়ার পর রিসিভ ও করল,

– হ্যালো নীলা…।[আমি]......

চলবে..?

কেমন লাগলো জানাতে ভুলবেন না প্লিজ?

1
$ 0.00
Avatar for Hasan16
3 years ago

Comments