#অনুভূতি_সিজন🍁২
#Roja_islam
#part 29
৮ বছর পড়.....
ডাইনিং এ বসে বর্ণ! হাতে তার খাবার প্লেট পাশে বসে আদ্রিতা! বর্ণের মেয়ে! বর্ণ খাইয়ে দিচ্ছে তার মেয়েকে। ৭ বছর এর মেয়েটা বড্ড পাকা তোতা পাখির মতো পটর পটর করছে আর খাচ্ছে! বর্ণ অতি উৎসুক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তা শুনছে। সারাদিন স্কুলে কি করেছে সেটা বানিয়ে চরিয়ে বলছে আদ্রতি তার বাবাকে! অনেক ইতিহাস বানিয়ে চরিয়ে বলে কিছুক্ষণ চুপ থাকে আদ্রিতা। তা দেখে বর্ণ সরু চোখে মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে!
.
-- কি চাই আমার তোতা পাখির???
-- আর দেরি করেনা আদ্রিতা বলে উঠে। বাবা কাল আমার সাইকেল চাই আমিও রাফির মত সাইকেল চালিয়ে বিকেলে খেলবো৷ তার পর রাফির সাথে ঘুরতে যাবো৷
.
কথাটা বলেই আদ্রিতা ভীতু চোখে তাকায় বাবার দিকে!! বর্ণ কপাল কুচকে আদ্রিতার দিকে তাকিয়ে বললো।
.
-- হ্যাঁ রাফির সাথে ঘুরতে গিয়ে তারপর মার খেয়ে ভ্যা ভ্যা করে কান্না করতে করতে বাড়ী ফিরবে তাই তো??
-- আদ্রিতা এবার হেসে কুটিকুটি হয়ে বললো৷ হিহি বাবা একটা সিক্রেট বলি তোমায় কাউকে বলোনা মা কেও না!! আমায় রাফি কখনো মারে না। আমি ওকে মেরে কেদেদি জেনো ও আমায় না মারে আর ভয়ে কাউকে কিছু না বলতে পারে বুঝেছো?? ভালো বুদ্ধিনা 😎
-- বর্ণের হাসি পেলেও মেয়ের বুদ্ধিতে খুশী হলো৷ তাও বললো৷কিন্তু আমার তোতা পাখি রাফিকে মারে কেনো??
-- কারণ ও আমার থেকে বেশী মিলির সাথে পটর পটর করে বাবা এটা আমার একদম পছন্দ নয়৷ ও কেনো মিলির সাথে কথা বললে বলো আমি আছি তো জানি??
.
বর্ণের মাথায় ঢুকছেনা এই টুকুনি মেয়ের ব্যাপার স্যাপার। এই টুকু মেরের জেলাসিও থাকে জানতো না বর্ণ!! এর মধ্যে পিছন থেকে আদ্রিতা তার মার কণ্ঠ শুনে ভীতু চোখে বাবার দিকে তাকিয়ে বলে উঠে!
.
-- বাবা মাকে বলে দিও না কিন্তু!!
-- বর্ণ মাথা দোলায়! হু?
-- কি করছো তোমার এখানে??
-- আদ্রিতা মাকে বলে উঠে। আম্মু বাবা আমায় সাইকেল কিনি দেবে বলেছে!!
.
আদ্রিতার কথায় বর্ণ তার বৌ এর মুখ এর দিকে তাকিয়ে মুখ কাচুমাচু করে। কারণ তার বৌ রেগে তার দিকে তাকিয়ে আছে। তা দেখে বর্ণ নিজেকে বাঁচাতে বলে উঠে।
.
-- তোতা পাখি আমি বলেছি না তুমি চেয়েছো??
-- আদ্রিতা রেগে বললো। ছিঃ বাবা তুমি মাম্মার ভয়ে আমার দোষ দিচ্ছো??
-- বর্ণ কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। ইয়ে মানে....
-- চুপ করো তোমরা দু জন। তোমাদের জন্য আমি শান্তি পাচ্ছিনা জাস্ট!!পাগল হয়ে যাবো আমি। কি পেয়েছো তোমরা?? পুরো শহরের বিচার আমার বাসায় আনবে?? তাই তো সাইকেল কিনে দিচ্ছো মেয়েকে?? এই এই মেয়েরা সবাইকেল চালায়??
-- আরফা সরি আসলে সত্যি আমি বলি নি কিনে দিবো!!
-- বর্ণের কথায় আদ্রিতা এবার রেগেই বললো। বাবাই কাট্টি।তুমি মিথ্যে বলছো আমার নামে। বলেই আদ্রিতা হন হন করে চলে গেলো।
-- বর্ণ অসহায় দৃষ্টিতে আরফার দিকে তাকিয়ে বললো। আরফা আমি সত্যি বলছি বিশ্বাস করো আমি বলিনি!!
-- আরফা রেগে চিৎকার করে বললো৷ কেনো বলো নি কেনো?? কয় টা সাইকেল বাপ বেটি মিলে ভাংছো হিসেব আছে আরো কিনে দাও আরো ভাঙো আমার কি আমার কথা তুমি তোমার মেয়ে শোনো?? পুরো শহরের বিচার আনাও বাসায় আমার কি? প্রতিদিন ১০০ টা বিচার আসে বাসায় তোমার জন্য আমি কিছু বলতে পারিনা তোমার মেয়েকে। এবার আমি পালিয়ে যাবো এই সংসার থেকে৷আমি জাস্ট আর পারছিনা!!
.
আরফা হাবিজাবি বলতে বলতে চলে গেলো। বর্ণ ভোতা মুখ করে বসে রইলো। এই টুকুনি মেয়ে তার কিভাবে ফাসিয়ে দিলো তাকে। সে ভেবে পাচ্ছেনা!! বর্ণ প্লেট ডাইনিং এ রেখে হাত ধুয়ে আরফার পিছন পিছন গেলো বৌ এর রাগ ভাঙাতে।
.
-- আরফা এই শোনো না??
-- তুমি কথা বলবেনা!! তোমরা কি ভেবেছ আমি শুনিনি ও রাফিকে মারে আমি সব শুনেছি। তোমরা মেয়ে কত দুষ্ট আর তুমি ওকে কিছুই বললে না সব শুনার পর ও??
-- আরে বাবা ও বাচ্ছা মেয়ে বুঝেই কত টুকু বলো??
-- ও বাচ্ছা??
.
অদের কথার মাঝেই কানে এলো রাফির কান্নাকাটি আরফা বর্ণ দৌড়ে গেলো বাইরে। গিয়ে দুজন হকচকিয়ে গেলো কারণ৷ আদ্রিতা রাফির পিঠে চরে তাকে মারছে আর রাফি নিচে শুনে চিৎকার করে কাদছে! হাত পা ছুড়াছুড়ি করে। আরফা বর্ণ দৌড়ে যায় দুজনকে ছাড়াতে কিন্তু হাজার চেয়েও ছাড়াতে পারছেনা আদ্রিতাকে সে কিল-ঘুষি দিয়েই যাচ্ছে রাফির পিঠে আর চিৎকার করছে৷ আরফা না ছাড়াতে পেরে মাথায় হাত রেখে বসে পড়ে বর্ণ অনেক কষ্টে ছাড়ায় রাফিকে৷ আর জিজ্ঞেস করে আদ্রিতাকে।
-- তোতা পাখি কেনো মারছো ওকে??
-- বাবা ও আবার মিলির সাথে কথা বলেছে!
-- রাফি করুণ স্বরে বলে উঠে। তোতা পাখি আমি সত্যি কথা বলিনি ওই নিজেই এসে কথা বলেছে৷
-- এই কে তোতা পাখি আমি শুধু মাত্র বাবার তোতা পাখি আর কাউর না।
-- হিহি তুমি আমার তোতা পাখি বাবা না। বলেই রাফি দৌড়৷
.
আদ্রিতাও রাফির পিছন দৌড়। আরফা আর বর্ণ নিজেদের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে ফিক করে হেসে দিলো আদ্রিতা রাফির কথা শুনে। বর্ণ হাসতে হাসতে বললো!
.
-- আদ্রিতা একদম বেলার মতন হয়েছে বেলা ও..... এই টুকু বলেই চুপ হয়ে যায় বর্ণ।
-- আরফা হাসি থামিয়ে বর্ণের হাত ধরে নিয়ে ড্রইং রুমে বসায়। নিজেও পাশে বসে বর্ণের কাধে মাথা রেখে বলে উঠে। তুমি মিস করো খুব বেলা কে তাই না?
-- বর্ণ আরফার দিকে তাকিয়ে বললো। তুমি মিস করোনা রাফিন কে??
-- ভীষণ!!
-- আমিও বেলাকে মিস করি ভীষণ!! জানো??
-- কি?
-- আদ্রিতাকে এতো ভালোবাসার কারণ??
-- কাউকে ভালোবাসার কারণ থাকে??
-- আদ্রিতাকে ভালোবাসার আলাদা একটা কারণ আছে আমার মনে!!
-- সেটা কি??
-- আদ্রিতার এই পাগলামো গুলো একদম বেলার মতো। বেলা বিয়ের পরেও প্রচুর বাচ্চা সভাবের ছিলো। সব কিছুতে দুষ্টুমি কতদিন যে খাবারে ঝাল মিসিয়ে খাইয়ে কাদিয়েছে। সেটা ও নিজেই জানত না৷ এই ঝাল ই আমার প্রথম কাছে আসার কারণ ছিলো। সব কতটা দ্রুত শেষ হয়ে গেলো আরফা! ওর জন্য আমার অনুভূতি গুলো মনেই দলা পাকিয়ে রইলো কিছুই বলা হলোনা আরফা কিছুইনা! কেনো এতো টা এলোমেলো হয়ে গেলো সব?
.
আরফা নিরবে মাথা নুইয়ে আছে। কিছুই বলার নেই যে। সেও তো ভাবে কোনদিন এভাবে আবার তাদের জীবনে ঝড় আসবে আর সব বদলে দিবে৷ কিন্তু এবার ওদের আলাদা করতে ঝড় আসেনি এসেছিলো ওদের এক করেদিতে। কিন্তু আরফা কোনদিন স্বপ্নেও এভাবে তাদের মিল হক সে চায় নি।চায়নি কাউর প্রাণ যাক। সেতো সব ভুলে নতুন করে শুরু করেছিলো। এটাও চেয়েছিলো।বর্ণ ভালো থাক বেলার সাথে তবে কেনো এমন হলো?
.
.
৮ বরছ আগে ঐদিন রাহি বেলাকে নিয়ে ডক্টর দেখাতে বের হয়। রাস্তায় তাদের গাড়ি টা এক্সিডেন্ট হয় মারাত্তক ভাবে। একটা বড় ট্রাক এর ধাক্কায় ওদের গাড়ি একটা বড় খাদে পড়ে যায়। ড্রাইভার এর বডি দুইদিন খুজার পড় পানি থেকে উদ্ধার করা হয়৷ রাহি আর বেলাকে গাড়ি থেকেই পাওয়া যায় এক্সিডেন্ট এর দিনি। কিন্তু বেলাকে তখনি মৃত ঘোষণা করা হয়। রাহির পালস চলছিলো তাকে ইমেডিয়েটলি হস্পিটাল এডমিট করা হয়। পরিবারের সবার কানে এই নিউজ যাওয়ার সাথে সাথেই সবার পাগল হয়ে যাওয়ার অবস্থা। সব থেকে অবস্থা খারাপ ছিলো। বর্ণ ও বেলার চাচ্চুর। বেলার চাচ্চু যে বেলাকে এতোটা ভালোবাসে তা দেখে ফ্যামিলির সবাই হতভাগ ছিলো৷ বেলার চাচী ইমান অজ্ঞান ছিলো কেদে। বর্ণ পাগলের মতন ছিলো বেলাকে হারিয়ে শুধু রাহির পাশে বসে ছিলো সে তাকে বোনের কাছ থেকে দূরে নেওয়া যায়নি তার ধারণা ছিলো রাহিকে একা ছাড়লে রাহিও বেলার মতন দূরে চলে যাবে। বর্ণ সব বুঝতে পারছিলো বেলা তাদের মধ্যে আর নেই কিন্তু সে এটা কিছুতেই মানতে পারছিলোনা মেয়েটা নেই আর তার কাছে। ঐদিকে বর্ণের বাবা ছেলে বৌ আর মেয়ের এই অবস্থা দেখে। স্ট্রোক করেন উনাকেই রাহির সাথে এডমিন করা হয় উনি এই অতিরিক্ত চাপ নিতে পারেন নি।অবশেষে বর্ণের বাবাকে হস্পিটাল এ রেখেই বেলা আর ড্রাইভার এর দাফন কাজ সম্পূর্ণ হয়। বর্ণ বেলা আর ড্রাইভার এর দাফন কাজের সময় থেকে কেমন শক্ত হয়ে যায়! সে শুধু নিচে তাকিয়ে থাকতো। খুব কষ্ট এর মাঝে ৭ টা দিন বেলা ড্রাইভার এর শকে চলে দুই পরিবারের বর্ণকে খুব সাপোর্ট করে ইমান বেলার চাচ্চু নিজের মেয়ে বোন হারিয়ে ও৷ ৭ দিনেও রাহির অবস্থা খুব একটা ভালোনা। ডক্টর ঠিক করে কিছু বলতেও পারেনা আধো রাহি ঠিক হবে কিনা। এর মধ্যে বর্ণের জন্য আরো কষ্ট চলে আসে বর্ণের বাবার অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যায়৷ তিনি ছেলেকে দেখতে চায়। কিন্তু বর্ণ রাহির পাশ থেকে উঠেইনা তাকে এক প্রকার জোর করেই তার বাবার কাছে নেওয়া হয়। বর্ণ তার বাবার বেহাল চেহারা করুণ অবস্থা দেখে দৌড়ে গিয়ে বসে বাবার পাশে হাত ধরে পাগলামো শুরু করে বর্ণ।
.
-- এই বাবা তুমি ও চলে যাবে বেলার কাছে?? যেওনা বাবা আমি একা হয়ে যাবো বেলাকে ফিরে আসতে বলো বাবা আগের মতো এনে দাও ওকে বাবা৷ বর্ণ চিৎকার করে বাবার হাত ধরে কাদে।
-- বর্ণ এর বাবা ছেলের হাহাকার সহ্য করতে পারেনা বহু করে বলে উঠে। আমায় ক্ষমা করে দে বাবা আমি তোদের ভালো চাইতে গিয়ে সব সময় তোদের খারাপি করে ফেলেছি। আমায় ক্ষমা করে দে।
.
এর একদিন পর বর্ণ এর সামনে তার বাবা শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে। বর্ণ আর ঠিক থাকতে পারেনি পাগলামো শুরু করে৷ রাহির কথাও সে ভুলে যায়। এক প্রকার অসুস্থ হয়ে পড়ে বর্ণ। তাকে কোনভাবেই স্বাভাবিক করা যায়নি। বেলার চাচ্চু হতভাগ হয়ে পড়ে ডক্টর বর্ণকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখে। বর্ণকে কিছুতেই স্বাভাবিক না করতে পারায়। বর্ণকে ছাড়াই বর্ণের বাবার দাফন কাজ সম্পূর্ণ করে। সবার প্রচুর খারাপ লাগে বর্ণের জন্য যথাসম্ভব সবাই পাশে থাকে বর্ণের৷ রাহির তখনো কোন জ্ঞান নেই সে জানেই না সে কত প্রিয় মানুষ কে হারিয়েফেলেছে তার বাবা ভাবী বেচে নেই৷ জানবে কিভাবে সে নিজেও যে মৃত্যুর সাথে লড়ছে।
.
১ মাস পেরিয়ে যায় বর্ণ আস্তে আস্তে মানোসিক রোগীতে পরিনত হয়। আল্লাহ জেনো বর্ণকে জীবনের সব কষ্ট এক বারে দিয়েছেন এই ১ মাসে। কিন্তু আল্লাহ দোয়া শিল তার দোয়ায় রাহি আস্তে আস্তে অনেক টা সুস্থ হতে থাকে। এতোটা কঠিন সময় সবাই পার করছিলো বর্ণ আর রাহিকে নিয়ে। যে তাদের কষ্টের ও সীমা ছিলো না। রাহির সুস্থতা দেখে সবার মনে একটু শাস্তি অনুভব হয়। বর্ণের অসুস্থতার পর ইমান ছিলো রাহির আগে পিছে। ইমান এমন ভাবেই রাহির পাশে ছিলো জেনো রাহি নয় বেলা অসুস্থ। রাহির সুস্থতায় সবার ভালোলাগলেও দুশ্চিন্তার শেষ ছিলোনা। চিন্তা একটাই এতোকিছুর পর মেয়েটা সুস্থ হচ্ছে এখুনি সব শুনলে তার কি অবস্থা হবে?? সব শুনে তো এভাবেই মরে যাবে রাহি। সবাই সিদ্ধান্ত নেয়। রাহিকে এখুনি কিছু জানাবেন না৷ কিন্তু বললেইকি আর তা করা সম্ভব?? ৩ মাস এর শেষ এর দিকে রাহি সুস্থ হয় মোটামুটি ভালোভাবেই। কিন্তু বর্ণের অবস্থা ততই খারাপ। রাহি পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার আগ থেকে ভাই ভাবী বাবাকে খুজে অস্থির কিন্তু ইমান বেলার চাচ্চু সব সামলে নেয়। রাহিও অসুস্থ অবস্থায় এতো চাপ দিতে পারেনা। কিন্তু রাহি পুরোপুরি সুস্থ হলে একদিন ইমান সব বলে দেয় রাহিকে। রাহি খুব কাদে কিন্তু ভেঙে পড়ে না। রাহি বরাবরই বুদ্ধিমান একটা মেয়ে। সে বুঝে যায় এখন তারো দুর্বল হলে চলবেনা। তার ভাইকে সুস্থ করতে হবে তার পাশে দাড়াতে হবে তাকে। বর্ণকে এভাবে অসুস্থ হতে দিতে পারেনা রাহি৷ সব জানার পরের ১ ঘণ্টার মধ্যেই বর্ণের সাথে দেখা করতে যায় রাহি। বর্ণকে মানোসিক হস্পিটাল এ রাখা হয়েছিলো৷ বর্ণের ঐখানের অবস্থা দেখে রাহি এক মুহূর্তের জন্য ভেঙে গুরিয়ে গিয়েছিলো । বর্ণ একি তার ভাই চিনছিলোনা রাহি। রোগী নয় পাগল বলবে যে কেউ বর্ণকে৷ রাহি এসব সহ্য করতে পারেনা ভাইকে নিয়ে বাড়ী ফিরে তৎক্ষনাৎ। রাহি বেলার চাচ্চু ইমান আর চাচীকে তাদের বাড়ীতেই থাকতে জোর করে। তারা রাজী হয়ে যায় দুই টা মানুষ কে এভাবে তো একা ছাড়া যায়না। বর্ণ কে বাড়ী আনারপর রাহিকে দেখেও চিনতে পারেনি তার বোনকে। বর্ণ পুরো পাগলের মতো আচরণ করে। সারাদিন আবোলতাবোল বকে কি জেনো। রাহি বুঝতে পারে অতিরিক্ত চাপ পরেছে বর্ণের উপর। বর্ণ ঐ ঘটনা মানতে পারেনি। রাহি বর্ণকে নিজে হ্যান্ডেল করার চেষ্টা করে ব্যার্থ রাহি শেষে বড় বড় ডক্টর দেখায়। এর পর প্রায় ২ বছর পড় ডক্টর এর পরামর্শ আর রাহি বেলার ফ্যামিলির সেবায় বর্ণ সুস্থ হতে থাকে৷ পুরোপুরি সুস্থ হয় বর্ণ আরো ১ বছর পড়। সুস্থ হওয়ার পড় থেকেও বর্ণ চুপচাপ ই থাকতো রাহি বলতোনা কিছু কারণ রাহি জানে বর্ণ বেলাকে নিয়েই ভাবে অনুশোচনায় ভোগেন বর্ণ। কিন্তু মুখে কিছুই প্রকাশ করেনা বর্ণ। কার কাছে করবে? যার কাছে করা দরকার সেত ঝড়ের বেগে চলে গেছে দূরে কোথাও। এখন বেলার কথা মনে পড়লেও বর্ণের চোখে ভাসে বেলার রক্তে ভেজা শরীরটা ফ্যাকাসে ক্ষতবিক্ষত মুখটা। আর ঝাপসা হয়ে আসে চোখ দুটো। সব অনুভূতি তখন একত্রে চোখের পানি হয়ে গরিয়ে পরতে চায় বর্ণের।
.
.
রাহির অনেক বলায়। বর্ণ আবার তাদের অফিস জয়েন করে যেটা আপাদত অফিসের মেনেজার দেখছিলো৷ অফিস জয়েন করার পড়ে বর্ণ আস্তে আস্তে স্বাভাবিক জীবনে পা রাখে। বেলার ফ্যামিলিকেও বর্ণ আর যেতে দেয়নি তারা রাহি আর বর্ণের সাথেই থাকে। বর্ণ সুস্থ হওয়ার পড় বেলাদের বাড়ী যায় ইমান কে নিয়ে। বেলার রুম থেকে তার প্রান প্রিয় পাখি গুলো আনতে। এনেছিলো ও কিন্তু সেগুলো মরে যায় অল্পদিন পড়েই কষ্ট হয় বর্ণের প্রচুর পাখি গুলো মরে যাওয়ায়। বর্ণ স্বাভাবিক জীবনে ফিরলেও। সে সারারাত জেগে থাকে সেই ডাইরিতে কিজেনো লিখে সারারাত হয়তো বেলাকে বলতে না পারা তার অনুভূতি গুলো লিখেই পার করে বর্ণ রাত টুকু। কারণ রাতেই বেলার মুখ টা তারা করে তাকে।ঘুমুতে দেয়না বর্ণকে।
.
বর্ণের দিন গুলো এভাবেই চলছিল।তখনো বর্ণ ভাবেনি তার অতীত তার বর্তমান হবে আবারো। আরফা তার হবে আবারো৷ বর্ণ অফিস এর কাজে সিলেট যায়। সেটা প্রথম সুস্থ হওয়ার পর দূরে যাওয়া ভাবেনি বর্ণ তার জীবন এভাবে বদলে যাবে৷ কাজ শেষে ফিরার পথে দেখা হয় আরফার সাথে বর্ণের৷ আরফা তার শাশুড়ী তার মেয়ে আদ্রিতা এবং ননদীর সাথে বেরাতে যাচ্ছিলো। বর্ণ দূরে গাড়ি থেকেই আরফাকে দেখেছিলো। বর্ণের গাড়ী অনেক টুকুই চলে যায় বর্ণ থামাতে বলেনা গাড়ী ড্রাইভার কে৷ তারপর হঠাৎ ই মাথায় আসে সে আরফাকে কত কষ্ট দিয়েছে তার একবার অন্তত ক্ষমা চাওয়া উচিৎ আরফার কাছে৷
.
.
আরফা সবাইকে নিয়ে রাস্তা পার হবে পিছন থেকে নিজের নাম শুনতে পেয়ে আরফা পিছন ঘুরে অবাক না হয়ে পারেনা!! বর্ণ তার দিকে দৌড়ে আসছে কিছুদূর থেকে আরফা অবাক হয়ে তাকিয়ে রয় বর্ণের দিকে। কত বছর পড় দেখছে আরফা তার এক সময় এর এই প্রিয় মানুষ টাকে। আসলেই কি এক সময় এর শুধু? না সব সময়েরি কিন্তু সেটা অতীত হিসেবে৷
.
বর্ণে দৌড়ে আরফার সামনে এসে দাড়িয়ে ফাপাতে থাকে তার পর ফ্যাকাসে হেসে বলে।
.
-- ভালো আছো??
.
আরফা কি বলবে ভেবে পেলোনা৷ আরফা তার শাশুড়ী আর ননদ এর দিকে একবার তাকায় তারা বর্ণের দিকে তাকিয়ে আছে। আরফার কোলে ফুটফুটে আদ্রিতাকে দেখে বর্ণ আবার বলে।
.
-- এটা তোমার মেয়ে??
-- হু। বলেই আরফা শ্বাশুড়ি কে বলে উঠে৷ মা ও বর্ণ,, বর্ণ চৌধুরী আমার...
.
আর কিছু বলতে পারেনা আরফা। তার আগেই মহিলা এসে বর্ণের হাত চেপে ধরে বর্ণের নাম শুনেই। বর্ণ আরফা অবাক হয়। তিনি কোনো কথা না বলে বর্ণকে সাথে নিয়ে রাফিনদের বাড়ী নিয়ে যায়৷বর্ণকে এক প্রকার জোর করে। আর বর্ণকে বলে তার বাবাকে এখানে আসতে বলতে।তাতে বর্ণ অবাক হয়ে বলে।
.
-- আমার বাবা বেচে নেই।
.
বর্ণের কথা শুনে আরফা অবাক হয় সাথে কষ্ট পায় বর্ণের জন্য।সে চলে যায় সেখান থেকে।আর বাবা নেই শুনে মহিলা বর্ণের হাত চেপে ধরেই বলে উঠে৷
.
-- তোমার আরফাকে বিয়ে করতে হবে আজি তুমি তোমার ফ্যামিলির কাউকে ডাকো এক্ষুনি।
.
এই কথায় বর্ণ অবাক এর শেষে৷ কিন্তু সাফ না করে দেয় সে৷
.
-- আমি পারবোনা আমার...... !
-- মহিলা রেগে বললো৷ কেমন ভালোবাসা তোমার মেয়েটা তোমার জন্য কতটা পাগল তুমি জানো৷
.
মহিলা আরফার রাফিনের বিয়ের প্রথম দু বছর এর আরফার তার জন্য করা সব পাগলামোর কথা খুলে বলে বর্ণ অবাক না হয়ে পারেনা সব শুনে। বর্ণ ভাবে সে কতটা ঠিক কতটা ভুল বুঝেছিলো আরফাকে। তার প্রচুর অনুশোচনা হলে বর্ণ আরফাকে বিয়ে করতে পারবেনা মনে মনে ঠান নেয় কারণ৷ বিয়ে করলে বেলাকে ঠকানো হবে৷ বর্ণ মহিলার সাথে পেরে উঠে না তিনি ইমোশনাল করে ফেলতে চাইছে বর্ণকে সে না পেরে রাহিকে কল লাগায়। রাহি জানায় সে আসছে সেখানে এড্রেস দিতে বর্ণ দিয়ে দেয়৷ এসবের কিছুই আরফা জানেনা না আরফা কিচেনে ছিলো। ঐদিন রাতেই রাহি কাজী সহ হাজির হয় আরফার শ্বশুর বাড়ী। আরফার শাশুড়ীর সাথে একা কথা বলে প্রায় ২ ঘণ্টা রাহি। আর সেদিন রাতেই তাদের বিয়ে হয়ে যায়৷ বর্ণ যদিও কিছুতেই রাজী ছিলোনা কিন্তু রাহি ভাইকে কান্নাকাটি করে রাজী করায়। আর আরফা এসবে পুরোটা সময় হতবিহ্বল হয়ে দাড়িয়ে ছিলো। আরফা ঘোরে ছিলো ঘোর কাটে যখন ওকে ওর ননদ আর রাহি বাসর ঘরে পাঠায়। আর সেখানে আরফা আদ্রিতা আর বর্ণের বন্ধুত্ব হতে দেখে। আরফা আর কিছু না ভেবে ওয়াশরুমে যায় দৌড়ে আর চিৎকার করে কাদে। বর্ণ আদ্রিতা শুনতে পায় সেই কান্না। দুজনেই তাকিয়ে থাকে ওয়াশরুমের দরজায়। বর্ণ সেদিকে তাকিয়ে থেকেই কোলে থাকা ছোট্ট আদ্রিতাকে জিজ্ঞেস করে
.
-- তোমার বাবা কোথায়??
.
ছোট্ট আদ্রিতা মাথা দুলায় শুধু সে দিন। ঐদিন এর পর দিন থেকে আরফা বর্ণের জীবন নতুন করে শুরু হয়৷ বেলা ফ্যামিলি আরফা বর্ণ রাফি এক সাথে পরিবারের মতন ই থাকে আরফাকে মেনে নেয় বেলার চাচী চাচ্চু। কিন্তু ইমান এর মন বুঝা যায় না...... ৷আরফার রাফিনের বাসায় যায় মাঝেমধ্যে তার শাশুড়ী রূপে মাকে দেখতে৷ আরফার মা বাবাও এখন মেয়ের খুশীতে খুশী৷
.
বর্ণ আরফার কোলে মাথা রেখে সোফায় শুয়ে এতোক্ষণ অতীত এত স্মৃতি চারন করছিলো। আদ্রিতার মাথা দুলানো টা চোখে ভাসতেই সে চোখ খুলে আরফার দিকে তাকালো!! আরফা এক মনে বর্ণের চুলে বিলে কেটে দিচ্ছে। কিন্তু চোখ তার জানালা পেরিয়ে আকাশের দিকে৷ বর্ণ আবার চোখ বন্ধ করেই জিজ্ঞেস করলো আরফাকে।
.
-- আরফা আদ্রিতার বাবার কি হয়েছিলো??
-- আরফা চমকে বললো। ডোন্ট ট্যাল মি। তুমি এখনো জানোনা?? আমাদের বিয়ের কত গুলো বছর পেরিয়ে গেছে!!
-- রাহি বলতে চেয়েছিলো আমি শুনিনি৷ আমি শুধু জানি আদ্রিতার বাবা রাফিন আর বেঁচে নেই!!
-- শুনোনি কেনো আমিতো শুনেছিলাম রাহির কাছে বেলার কথা।
-- আরফা??
-- হু??
-- তুমিকি বিয়ের পর কোনদিন আমায় ভুলতে পারোনি?? ভালোবাসোনি রাফিনকে৷
-- রাফিনকে ভালোবেসেছি আমি তোমার পড়ে কিন্তু তোমায় ভুলতে পেরেছি কিনা জানি না৷ কারণ রাফিনকে ভালোবেসে ফেলেছি বুঝতে পেরে ওর সাথে নতুন করে শুরু করেছিলাম সব ভুলে। কিন্তু ভুলেও ভুলতে পারতাম না তোমায়৷ মাঝেমধ্যে তোমার কথা আমার মাথায় চরে বসতো আমি অস্থির হয়ে উঠতাম। ঐ সময় এর অনুভূতি টুকু কি ছিলো তার নাম আমি জানিনা...
.
আরফা কে অস্থির হতে দেখে বর্ণ উঠে জরিয়ে ধরে আরফাকে৷ তার পর বলে উঠে।
.
-- বলবে কি হয়েছিল আদ্রিতার বাবার সাথে??
.
বর্ণের বুকে মাথা রেখেই আরফা বলতে শুরু করে।
.
.
চলবে..
[ অনেক চেষ্টা করলাম আজকেই শেষ করার হলোনা। আর হ্যাঁ এখন গল্প টা ভালো না লাগলে আমার কিছু করার নেই কারণ আমি এভাবেই শুরু থেকে গল্প সাজিয়েছি। সব কিছুর হিন্ড ও আমি দিয়েছি আগেই। যে এমন হবে। আপনারা না বুঝলে আমারকি? 😑]
Roja Islam