কোটিপতি স্বামী {৫}
মেহেক স্যামথন
------এই ছোট লোকের মেয়ে। তোমার স্ট্যাটাস কি আমার সামনে। তোমার এতো বড় সাহস কি করে হয়। দুই টাকার মেয়ে,আর আমাকে নিচু দেখাও তুমি,,,[ এমন ভাবে কথা বলছে যেন আমায় গিলে খাবে ]..
------ আয়া,,আমি কি করেছি।ছাড়েন,,,আয়া,,,
------ কি করেছো মানে।কোনো দিন পড়াশোনা করেছো? গাই কোথাকার। মুর্খ। কে বলেছিল আমার জিনিসে হাত দিতে,,,কে..? [ রেগে ]..
------ আ,,আ,,,আ,, লাগছে। দয়া করে,ছেড়ে দিন।
----- এতো গুলা ফাইল দিয়েছো।কিন্তু আসল টা দাও নি। সবার সামনে আমাকে নিচু দেখানোর মানে কিইই,,,,কে বলেছিল এইসব করতে। তোমাকে আমি টাকা দিয়ে কিনেছি। কেন আমার বউয়ের দ্বায়িত্ব পালন করতে চাচ্ছো,,কেন..?
------ আর,,আর,,এমন হবে না। দয়া করে ছেড়ে দিন।
------ আরাম আয়েশ,, টাকা পয়সা,এইসব দেখে এখন কি আমার বউ হতে চাচ্ছো..? ছোট লোকের মেয়ে কোথাকার।
তখন পিছন থেকে আকাশের দাদু বলে উঠল,,,
------ আকাশ,,।
আকাশ তারাতাড়ি আমার হাত ছেড়ে দিয়ে তার দুই হাত দিয়ে আমার চোখের পানি মুছে ফেলল,,,
পিছে ফিরে মুচকি হেসে বলল,,,
------ ওহ দাদু।তুমিও আসার সময় পাও না? মাত্রই রোমেন্স শুরু করলাম,আর তুমি কাবাবে হাড্ডি হয়ে এলে।
দাদু আকাশের হাতে একটা থাপ্পড় দিয়ে বলল,,,
------- ওরে সয়তান। বেশি বেশরমা হয়ে গেছিস না।
------ হবো না তো কি। মাত্র বিয়ে করলাম,একটাই বউ আমার।
আকাশের প্রতিটি কথা আমার গায়ে সুচের মতো লাগছে। হাসি না আশার সত্যেও হাসার চেষ্টা করছি।হাসতে যে আমাকে হবেই।হুকুমের গোলাম আমি।
----- আচ্ছা এখন তুই সর তো,,মেঘলার সাথে কথা আছে।
আমার হাত ধরল দাদু।
------ আরে,,আরে,,আরে,,,আমার বউকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো তুমি,?
------ আরে পাগল,,রোমেন্স ছাড়া দুনিয়াটা দেখিস।কাজ আছে, তাই নিয়ে যাচ্ছি। কিছুক্ষণ পর আবার চলে আসবে।
------ আচ্ছা নিতে যাও,কিন্তু বেশিক্ষণ না,,,
------ হুম।পাগল একটা।
আকাশের দাদু আমার হাত ধরে আমাকে নিচে নিয়ে গেলেন।
সারা সন্ধ্যা,,আর রাতে আমি রুমে শুধু সাদকে নিয়ে যাওয়া ছাড়া প্রবেশ করিনি।
এখন সবাই খেতে বসেছি। সাদ আমার সাথের চেয়ারে,,আমি সাদকে খাইয়ে দিচ্ছি।আমার ডানে আকাশের দাদু। আর আমার অপজিটে আকাশ।
আকাশ খাচ্ছে আর ফোনে কথা বলছে।তখন দাদু ধমক সুরে বললেন,,
------ আকাশ,,,খাবারের টেবিলে কোনো ফোন না।
আকাশ ফোন রেখে বলল,,,
------- সরি দাদু।একটা ইম্পর্ট্যান্ট কথা ছিল,আর হবে না।
------ হুম তো শুন। তোর সাথে একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।
----- বলো দাদু।
----- তোদের বিয়েটা তারাহুরোর মধ্যে হয়েছে।তাই আমি চাই তোরা নিজেদের কে সময় দে,একটু ঘুরে বেরা।
------ দাদু,,আমাদের তো লাভ ম্যারেজ,, আমাদের সময় দিতে হবে না।
উনার কথা শুনে অবাক হলাম।আমাদের আবার কিসের প্রেমের বিয়ে..? আর কি কি আছে যা আমি জানি না?
------ সে,যাই হোক।তুই তোর বিজন্যাসের জন্য মেঘলা কে সময় দিস না,,তাই আমি তোদের হানিমুনে যাওয়ার জন্য প্লেন করেছি।
------ কি বলো দাদু।কোথায়?
------ তুই তো দেশের বাহিরে যাবি না। তাই ভাবলাম কক্সবাজারে প্লেন করি।
------ কিন্তু দাদু আমার তো সময় নেই। অনেক ব্যাস্ত আমি।
------ সে যাই হোক।আমি বুঝি না এইসব। আমি হোটেল বুক করেছি। তোরা কাল রউনা দিবি। এক সপ্তাহ থাকবি ওইখানে।
----- কিন্তু দাদু???
------ কোনো কিন্তু নয়। আমার কথাই শেষ।
----- আচ্ছা দাদু।তুমি যা বলবে। তাহলে এখন আমি একটু আসি।কিছু ইম্পর্ট্যান্ট কাজ আছে।
----- খাবার খেয়ে যা।
------ পরে এসে খাবো। মেঘলা তুমি রুমে যাওয়ার সময় খাবার নিয়ে এসো।
আমি শুধু মাথা নাড়ালাম।
আকাশ চলে গেল।
ঘুড়ার কথা শুনে সাদ খুশিতে আত্ম হারা। সে চেয়ার থেকে নেমে দাদুর কাছে গেল আর দাদুর কোলে উঠে বসল।
------ এই বুলি।টমি তো তুব ভালু।
------ হুম।আমি অনেক ভালো।
------ কিন্তু ওই আকাত পাজি।আমার কতা চুনে না।
------ শুনো খোকা। আকাশ কোনো কথা না শুনলে তুমি ফোন দিয়ে আমার কাছে বিচার দিবা।আমি আকাশকে বকে দিবো।
----- সত্যি???
----- হ্যা,,সত্যি।
-----উমমাহ,,,[ দাদুকে জরিয়ে গালে চুমা দিলো সাদ।
তখন দাদু আমাকে বলতে লাগল,,,
------ মেঘলা মা,,, সাদ তোমাকে বা সবাইকে নাম ধরে ডাকে কেন..?
----- আসলে দাদু।সাদ জন্মের পর থেকে দেখে বাবা আমাকে মেঘলা বলে ডাকে। তাই সাদ ও আমাকে মেঘলা বলে ডাকে। আর সব সময় ই দেখে সবাই একে অপরের নাম ধরে ডাকে।তাই সাদ ও ডাকে। আসলে বাচ্চারা তার আশে পাশের পরিবেশ থেকে যা দেখে তাই শিখে। সেই ক্ষেত্রে সাদও বিকল্প নয়।
------ হুম।তা যা বলেছিস।
------ হুম দাদু।
কিছুক্ষণ দাদুর সাথে কথা বললাম। খাওয়া শেষ হওয়ার সাথে সাথে সাদ দৌড়ে চলে গেল হল রুমের দিকে।তখন আকাশের দাদু তার বুয়া কে বলল,,
------ মিনা। ছোট সাহেবের সাথে যা।খেয়াল রাখ।
------ জ্বী দাদি।যাইতাছি।
বলে সাদের পিছে চলে গেল বুয়া। দাদু বলল,,
----- মেঘলা তোরে একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো। যদি মন খারাপ না করিস।
----- এইটা কি বলছো দাদু।আমি মন খারাপ করবো কেন। তুমি নিঃসন্দেহে আমাকে বলতে পারো।
------ আচ্ছা,,, দাদু। সাদের বয়স তো ৫ বছর তাই না? তো সাদ এখন এই ভাবে কথা বলে কেন..? এখন তো সব পরিষ্কার করে বলার কথা সাদের।
------ আসলে দাদু সাদ একটু অসুস্থ।ওর,,,
তখন দোতালা থেকে আকাশ বলল,,,
----- মেঘলা।খাবার নিয়ে একটু রুমে আসো।
----- জ্বী।
------- ওই দেখ।পাগল হয়ে গেছে।যা,, যা খাবার নিয়ে ওর কাছে যা।
আমি মুচকি হেসে আকাশের জন্য খাবার নিয়ে রুমে চলে গেলাম।
আকাশ ল্যাপটপে কাজ করছে।আমি তার সামনের টেবিলে খাবার রেখে দিলাম।
তখন আকাশ বলল,,,
------ আমি তোমার সাথে এইসব করতে চাইনি। যেই কাজে এসেছো সেই কাজ করো। অন্য কিছুতে নাক গলাবা না। রাগ উঠলে আমার মাথা ঠিক থাকে না।
আমি কোনো জবাব না দিয়ে সাদকে দেখার জন্য রুম থেকে বের হয়ে পড়ি।
সকালে★
সকাল সকাল আমার ঘুম ভাঙলো। আসলে মাটিতে শুয়ে থাকায় ঘুম এতোটা হয় না। তাই ভেঙে গেছে। আমি উঠে আগে বিছানার দিকে তাকাই। তখন যা দেখলাম।তা দেখে নিজের হাসি আটকাতে পারলাম না।দেখি আকাশ আর সাদ দুইজন দুইজনকে জরিয়ে ধরে একই সাথে ঘুমাচ্ছে। সাদের নড়াচড়ার অভ্যাস অনেক। আকাশ সোজা হয়ে ঘুমোচ্ছে আর সাদ আকাশের পেটে জরিয়ে ধরে তার এক পা আকাশের ঠিক মুখের উপর তুলে রেখেছে। আর এক পা আকাশের হাতের উপর। এই অবস্থায় দুইজনেকে দেখে আমার প্রচুর পরিমানে হাসি পাচ্ছে।কিন্তু সাদকে এই অবস্থায় আকাশ দেখলে অনেক রাগ করবে।তাই আমি তারাতাড়ি সাদের কাছে গিয়ে সাদকে ঠিক করে শুয়ে দিলাম।
ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি ভোর ৬টা বাজে।
কাপড় নিয়ে গোসল করতে গেলাম। দাদু বলেছে ১০ টায় আমরা রওনা দিবো।তাই ভাবলাম এখন শাড়িটা পড়ে ফেলি।
কিছু ক্ষন পর গোসল করে রুমে এসে দেখি আকাশের এক হাত সাদের ঠিক মুখের উপর।আমি দৌড়ে গেলাম আকাশের কাছে।তাড়াতাড়ি আকাশের হাতটা সাদের মুখ থেকে সরালাম। আমার চুলের পানি আকাশের শরীরে পড়ছিল।আকাশ কিছুটা নেড়ে উঠল আর আমার দিকে ফিরে আমাকে জরিয়ে ধরল। আমি তো ভয় পেয়ে গেলাম একি করছেন উনি।পড়ে দেখি উনি ঘুমের ঘোরে। আমি নিজেকে সরানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু হাজার হলেও মেয়ে মানুষ। ছেলেদের শক্তির সাথে পেরে উঠা যায় না। আমাকে আরো কাছে নিয়ে আসল আকাশ, একদম তার মুখের কাছে।এই প্রথম তাকে এতো কাছে থেকে দেখছি। ঘুমের মধ্যে তাকে অন্যরকম লাগছে। সাধারণ ভাবে একজন বদমেজাজি, অসভ্য, পাজি লোক মনে হয়।কিন্তু ঘুমের মাঝে একজন ভালো মনের মানুষ মনে হচ্ছে। আসলে আমরা মানুষ রাই অন্যরকম। ভিতরে একটা বাহিরে একটা।
তখন ঘুমের ঘোরে আকাশ বলল,,
----- জান।।আই লাভ ইউ সো মাছ। আই লাভ ইউ।।।
বলেই আমার গালে একটা চুমু বসিয়ে দিল।আমি তৎক্ষনাৎ কিছু না ভেবে এক ঝটকায় আকাশকে সরিয়ে ফেললাম।
এতোক্ষণ দুর্বল গাই ছিলাম। হঠাৎ যেন কোথা থেকে শক্তি এসে পড়ল।
আমি সোজা হয়ে দাড়িয়ে পড়লাম আকাশ কিছুটা নড়ে আবার ঘুমের মাঝে চলে গেল।
এই ঘটনাতে নিজের কাছেই লজ্জা লাগছে। কি থেকে কি হয়ে গেল।
চলবে,,,,
[ ছোট পর্বের জন্য দুঃখিত। কাল আমার রেজাল্ট। মনটা ভালো না।সাথে শরীর টা ও ]
0
10