Love right session2

0 14
Avatar for Hasan16
4 years ago

#Love_Right_Season_2❤💕❤

Hasan

পার্ট:১৬

আজকে নিশুর বিয়ে।নিশু ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখছে।ওর চোখভর্তি পানি।মাথা ঘুরছে।কানের কাছে ভোঁ ভোঁ আওয়াজ হচ্ছে।পা দুটো টলছে, নিজেকে সামলে রাখতে পারলো না।ধপ করে পড়ে যেতে নিলো,কিন্তু তার আগেই কেউ একজন ওর কোমর চেপে ধরেছে।চোখ খুললো নিশু!! নীলের হাসিহাসি মুখটা দেখে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।ঠোঁট দুটো চেপে ধরে ফোঁপাচ্ছে সে।নীল ছোটবাচ্চাদের যেভাবে সান্ত্বনা দেয় সেভাবে ওর মাথাটা বুকের সাথে চেপে ধরে বলল,"কে বকেছে, কে মেরেছে? কে দিয়েছে গাল? একবার শুধু নামটা বলো তুলবো পিঠের ছাল😂।

নিশু প্রচন্ড রকমের ক্ষেপে গেলো।ওর চোখের পানি কোন দাম নেই নীলের কাছে?? ওকে কবিতা শোনানো হচ্ছে? ঠেলে সরিয়ে দিলো নীলকে।

নীল:কি হয়েছে নিশুপাখি?

নিশু:কিছু হয় নি।তবে রিহান বিয়ে করলে হবে! ছেলেমেয়ে যাই হোক তোমার বাসায় মিষ্টি পাঠাবো।

নীল:☺উজবুক!

নিশু:কি বললে?

নীল:আর কিছু বলবো না ম্যাডাম।এবার শুধু করবো!..কি করবো জানো?

নিশু:😐কি?

নীল:আদর!..আদরে আদরে তোমাকে ঝালাপালা করে দেবো তোমাকে😜!

ঘুম ভেঙ্গে গেলো নিশুর।তারমানে এতক্ষণ সে স্বপ্ন দেখছিলো?ইশশ কি সুন্দর ছিলো স্বপ্নটা।মনে মনে দোয়া করলো নিশু স্বপ্নটা যেন সত্যি হয়।

নিশুকে সাজানো হয়ে গেছে।অধীর আগ্রহে বসে আছে সে।বরপক্ষ অলরেডি এসে গেছে কিন্তু নীলের দেখা নেই।নিশুর কান্না পাচ্ছে,ভীষণ কান্না পাচ্ছে।আজকে সকালে ঘুম থেকে উঠার পর থেকেই ওর দেখা নেই।সে কি চলে গেছে?..নিশুতো মরে যাবে।

নিশু মনে মনে বলল..একবার শুধু আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাও নীল।তারপর আর কখনো তোমাকে ছেড়ে আসবো না।তুমি বকো, মারো যা খুশি করো নিশু কিচ্ছু মনে করবে না।প্লিজ নীল!

নিশু বাসরঘরে বসে আছে।একটু আগে একগাদা স্লিপিং পিল খেয়ে নিয়েছে সে।মাথাটা টলছে।নীল ছাড়া অন্য কেউ ওর শরীর স্পর্শ করবে,ওকে কাছে টানবে সেটা ও মরে গেলেও সহ্য করতে পারবে না।নিশুর ওপর শুধু নীলের অধিকার।

নীল সাবধানে রুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে নিলো।পাঞ্জাবি বদলে একটা কালো টি-শার্ট আর ট্রাউজার পরে এলো।বিছানায় চোখ পড়তেই ওর চক্ষু ছানাবড়া 😮।আঁতকে উঠলো সে।নিশু এভাবে পড়ে আছে কেন??..পাশে ওষুধের পাতা দেখে ওর শরীর ঝিমঝিম করে উঠলো।হাত পা অসাড় মনে হচ্ছে।নিজের ওপর জোর খাটিয়ে দৌড়ে নিশুর কাছে গেলো সে।নিশুর মাথাটা বুকে চেপে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠতেই ইলারা বেগম আর ইশু দৌঁড়ে এলো।

ইশু:😮ভাইয়া কি হয়েছে??

নীলের পুরো শরীর ঘেমে একাকার।কান্নার চোটে চোখদুটো লাল হয়ে গেছে!মুখ দিয়ে কোন কথা বেরোচ্ছে না।নিশুর শরীরটাকে অনবরত ঝাঁকাচ্ছে সে।

ইশু নিশুর পাশে পড়ে থাকা ওষুধের পাতা দেখে আঁতকে উঠলো।নীলকে টেনে সরালো নিশুর কাছ থেকে।তারপর ধমক দিয়ে বলল..এখন পাগলামি করার সময় নয় ভাইয়া।ওকে তাড়াতাড়ি হস্পিটালে নিতে হবে।

নীল আর একসেকেন্ডও দেরী করলো না।পাঁজকোলা করে কোলে তুলে নিলো নিশুকে।ওর পেছন পেছনে ইলারা বেগম আর ইশু দৌড়াচ্ছে।

নীল গাড়ি সামনে এসে ইশুকে ইশারা করলো গাড়ির দরজা খুলে দেওয়ার জন্য।যেই ওকে সীটে শোয়াতে যাবে ওমনি নীলের গালে চুমু খেয়ে ফিক করে হেসে দিলো😁 নিশু।

নীল:😮

নিশু:😁কি ভেবেছিলে? আমি জানি না?বাবা আমাকে সব বলেছে!..তোমার কি মনে হয়?বরের বেশে তুমি না থাকলে আমি রিহানকে বিয়ে করতাম?..এত বোকা কেন তুমি?.নিশুকে যতটা বোকা ভাবো নিশু কিন্তু ততটা বোকা নয়😎।বিয়ে পড়ানোর সময় তো বরের নাম শুনেছি আমি।.বেশ হয়েছে রিহান গাধাটা জেলে গেছে,কতবড় সাহস তোমার বউয়ের ছবি দিয়ে তোমাকে ব্ল্যাকমেইল করে??

এই মুহূর্তে নিশুকে তুলে যদি সত্যি সত্যি একটা আছাড় মারতে পারতো তাহলে নীল শান্তি পেতো।ইশুও চরম খেপে গেলো।😡এটা কোন ধরনের মজা?

ইশু:তোর কোন আক্কেল আন্দাজ নেই নিশু?..তুই জানিস অল্পের জন্য আমি হার্ট এটাক করে ফেলতাম?..এই ভাইয়া তুই দাঁড়িয়ে আছিস কেন? মার কষে দুইটা ওর গালে! মার!..তারছিঁড়া,গাধী একটা।

ইশুর কথা শুনে নিশু ভয়ে ভয়ে নীলের দিকে তাকালো।নীল কি সত্যি সত্যি চড় মারবে ওকে? ভয়ে চোখমুখ শুকিয়ে গেলো ওর।

নীল ঝুঁকে গাড়িতে মাথা ঢুকালো।ভয়ে গালে হাত দিয়ে ফেললো নিশু।

ইশু:দে!..কষে দিবি ভাইয়া যেন দাঁত নড়ে যায়,ফাজিল একটা!

নীল নিশুর গাল থেকে হাত সরিয়ে দিলো।ওকে অবাক করে দিয়ে গাঢ় করে চুমু খেলে নিশুর গালে।গালের সাথে গাল ঘষলো।

ইশু:😮

ইশু লজ্জায় অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নিলো।ইলারা বেগম দ্রুত ভেতরে ঢুকে গেলেন।

নিশুর ঠোঁটে চুমু খেলো নীল।গলায় নাক ডুবিয়ে দিয়ে বলল..আমি মরে যেতাম নিশু।সত্যি মরে যেতাম!

নীলের চোখের পানি নিশুর ঘাড়ে পড়তেই নিশুর কান্না পেয়ে গেলো।ইশশ!এমন করছে কেন নীল?তারচেয়ে দুচারটা থাপ্পড় মারুক না ওকে।ও কিচ্ছু মনে করবে না।কিন্তু কাঁদছে কেন?..নীলের মুখটা তুলে ধরে গালে কপালে,ঠোঁটে,নাকে,গলায় পাগলের মত চুমু খাওয়া শুরু করলো সে।

ইশু:😐নির্লজ্জের দল।..ছি! ভাইয়া তুই এমন বউ পাগলা হলি কি করে? এইজন্যই তো নিশু এমন বাদর হচ্ছে।বউয়ের আঁচল চেপে বসে থাক তুই।আমি হলে খিঁচে কানের নিচে কয়েকটা দিতাম কয়েকটা এমন বাঁদরামির জন্য।আর তুই আমার ভাই হয়ে এমন করছিস?..হাদারাম একটা!

ওকে অবাক করে দিয়ে নীল গাড়িতে ঢুকে গেলো।গাড়ির দরজা বন্ধ করে দিয়ে বলল,"যাহ তো।বিরক্ত করিস না।এমনিতেই এতদিন ধরে বউকে কাছে পাই নি।সময়নষ্ট করছিস কেন?..আমার এখন সময় নেই।প্রচুর ভালোবাসাবাসি হবে আজ😁।..প্রচুর!

ইশু পড়িমরি করে সেখান থেকে ছুটে পালালো।এই দুই বেশরমের পাল্লায় পড়ে ও নিজেও বেশরম এর মত এতক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলো।হেসে ফেলল সে🙈।নীল আর নিশু একসাথে থাকা মানে অদ্ভুত কিছু করা!অদ্ভুত এরা!অদ্ভুত এদের ভালোবাসা।অদ্ভুত এদের অধিকার বোধ!

নিশু:ছি!নীল গাড়ির ভেতর কি করছো ছাড়ো আমাকে!

নীল:কি করছি😜?

নিশু:তুমি জানো না কি করছো?

নীল অবাক হওয়ার ভান করে বলল..নাতো?

নিশু:লুচু একটা।মেয়ে দেখলেই হুঁশ থাকে না।খালি জড়িয়ে ধরার ধান্ধা!.ছাড়ো আমাকে!

নীল ওর গলায় নাক ডুবিয়ে দিয়ে বলল..😁আগে বলতে হবে আমি কি করছি তা না হলে ছাড়ছি না!

নিশু লজ্জায় লাল হয়ে গেলো🙈।নীলের কানে ফিসফিস করে বলল..ভালোবাসাবাসি করছো!

নীলের ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠলো।নিশুকে ছেড়ে দিতেই নিশু বেরিয়ে গেলো।নীলও বেরলো।

বাসার গেটের কাছে যাওয়ার আগেই একটা সাদা গাড়ি এসে নিশুকে তুলে নিয়ে গেলো।

ইশু দৌঁড়ে বেরিয়ে এলো।ওপরের বারান্দা থেকে সব দেখেছে সে।

ইশু:ভাইয়া নিশু?..কারা ওরা?

নীল গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বলল..আমি জানি না কারা।

তবে মনে হচ্ছে রিহানের কেউ।

নীলের প্রায় কেঁদে ফেলার অবস্থা!এতদিন পর নিশুকে কাছে পেলো সে,আবার অঘটন!,কিন্তু ইশু হাসছে।

নীল:😡তুই হাসছিস যে?..ওরা যদি নিশুর কোন ক্ষতি করে দেয়?

ইশু:কিচ্ছু হবে না নিশুর।যারা নিয়ে গেছে তারা জানে না তোর নিশু কি জিনিস?😂মাথা খারাপ করে দিতে ওস্তাদ!

নীল:আমি যাচ্ছি!

গাড়িটার পিছু পিছু গিয়ে তাজ্জব বনে গেলো নীল।এই কিডন্যাপার গুলো রিহানের পাঠানো।শয়তানটা জেলে বসেও গুণ্ডামির তালে আছে। রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো ওর।ভেতরে ঢুকতে গিয়ে কিডন্যাপার দুটোর কথা শুনে থমকে গেলো।

কিডন্যাপার ১:আমাদেরকে মজুরী বেশি দিতে হবে স্যার!

কিডন্যাপার ২:হ্যাঁ স্যার।

রিহান:😡কেন?..তোমার সাথে তো ওয়ান লাকই ডিল হয়েছিলো।

কিডন্যাপার ১:আমাদের ডাবল পরিশ্রম হয়েছে স্যার!জাত বিচ্ছু এই মেয়ে।মাথা খারাপ করে দিয়েছে।

কিডন্যাপার ২:সারারাস্তায় বকবক করে কানের পোকা বের করে দিয়েছে।

নীল দূর থেকে নিশুকে লক্ষ্য করলো।মুখ বেধে রাখা হয়েছে।চোখের বিন্দুমাত্র ভয়ের ছাপ নেই।চোখ দিয়ে রিহানকে শাসাচ্ছে।হাসলো নীল।ইশু ঠিকই বলেছে!ওর নিশু এত সহজে ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী নয়😂!

রিহানরা বেরিয়ে যেতেই দুজন পাহারাদার রাখা হয়েছে নিশুকে পাহারা দেওয়ার জন্য।নীল পুলিশে ফোন করে দিলো।তারপর পাহারাদার দুটোকে আচ্ছামত মেরে নিশুর কাছে গেলো।নিশু ওকে দেখতে পায় নি।রুমের লাইট সব নিভিয়ে দিয়ে গেছে রিহান যাওয়ার সময়।নীল সাবধানে নিশুর হাত চেপে ধরলো ওকে নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য।

আর তখনই নিশুর খেল শুরু হয়ে গেল।এলোপাথাড়ি কিল দিচ্ছে নীলকে।তারসাথে ওর চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করে ফেলছে।

নিশু:😡হারামজাদা আমার হাত ধরিস তুই? এতবড় সাহস?.নিশুর হাত ধরিস!..আজকে তোর একদিন কি আমার একদিন।কত্তবড় সাহস??..ঐ হাত ছাড়!..ছাড় হাত!

নিশু এলোপাথাড়ি কনুই দিয়ে কিল ঘুষি দিয়ে যাচ্ছে।মারের চোটে নীলের মুখ দিয়ে কথাও বেরোচ্ছে না।

নীল রাগে বোম হয়ে গেলো।..ওহ!শিট! নিশু ওকে কিডন্যাপার ভেবেছে?..দুম করে পিঠে কিল পড়লো।..ওমাগো!

নিশুকে থামানোর অন্য কোন উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়ে নীল ওর ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরলো।নিশুর শরীর অবশ হয়ে গেলো।এ তো ওর নীল!

নিশু:নীল!!

নীলের গায়ের গন্ধ পেয়ে নিশু তাজ্জব বনে গেলো।এতক্ষণ ধরে ও নীলকে মারছিলো।😷এইজন্যই তো বলি কিডন্যাপার এত মার খেয়েও ওকে কিছু করছে না কেন?

নীল হাঁপাচ্ছে।নিশু জড়িয়ে ধরতেই কঁকিয়ে উঠে বলল...ওরা তোমাকে কিডন্যাপ না করে আমাকে কিডন্যাপ করলেই ভালো করতো।..আমার হাড্ডিমাংস সব গুঁড়ো করে ফেলেছো তুমি!

নিশু:সরি!

নীল:..উফফ!..মাআআ!(ব্যাথায় মুখ কুঁচকে ফেললো সে।)

তবে আর সময় নষ্ট করলো না নীল।নিশুকে তাড়াহুড়ো করে বেরোতে গেলো।এখান থেকে বেরোতে হবে গেটে নিশ্চই পাহারা বসিয়ে গেছে রিহান।নীল চুপিচুপি নিশুর হাত ধরে এগোচ্ছিল,এমন সময় নিশু দাঁড়িয়ে গেলো।

নিশু:নীল?(অসহায় কন্ঠে!)

নীল:আবার কি?

নিশু:আমার ভীষণ ক্ষিদে পেয়েছে।সকাল থেকে না খেয়ে আছি।

নীল:😐আমার মুন্ডুটা কেটে দিই?.. খাও?(রাগে লাল হয়ে)

নিশু চুপ মেরে গেলো।এখন কথা বললেই বিপদ।

চলবে

1
$ 0.00
Avatar for Hasan16
4 years ago

Comments