Love

0 1
Avatar for Hasan16
3 years ago

#অবশেষে_তুমি_আমার

পর্বঃ ১২

#তাসনিম_রাইসা

- এভাবে হাসছো কেন? আমার কান্না দেখে তুমি হাসছো?

- আরে হাসবো না কি করবো? এ মেয়ে কি আমার বউ হবার যোগ্য? আরে বিয়ে করেছি কয়দিন পর তালাক দিয়ে দিবো।

- কি বলছো এসব?

- সত্যি বলছি। এই সেই মেয়ে যার জন্য আমার মা -বাবা হারিয়ে আমি এতিম হয়েছি । যার বাবার জন্য আমার বাবা মা-সুসাইড করেছিল। এখন সেই প্রতিশোধই নিচ্ছি।

- রাজ এটা তাহলে রাফিয়া বিনতে অধরা ? যে কি না অধরা হিসেবে এ বাড়িতে আছে?

- হ্যাঁ এই সে রাফিয়া বিনতে অধরা! যার জন্য আমি আমার সব হারিয়েছি। একটা রাতও যার জন্য আমি ঘুমাতে পারি না।

তোমরা তো কোনদিন আমাদের গ্রামে যাওনি! তাহলে শোন আজ থেকে ১২ বছর আগের ঘটনা। আমি আর রাফিয়া বিনতে অধরা দু'জনেই ভালোবাসাটা কিছু বুঝতে শিখেছি। পাড়ার একটা স্কুলে আমি , আর অধরা পড়তাম। অধরার বাবার সাথে আমার বাবার খুব সখ্যতা ছিল। অধরা যখন জন্ম নেয় তখন থেকেই বাবা -মা অধরার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করে রাখে।

-পাশাপাশি বাসা থাকার সুবাধে আমি আর অধরা সারাদিন একসাথে খেলা করতাম। অনেক ঝগড়া করতাম। আবার ক্ষানিক পরেই, মিলে যেতাম।

এভাবেই আমাদের ছোটবেলার দিনগুলো অতিবাহিত হতে লাগলো। দিনগুলো ছিল স্বপ্নের মতো সুন্দর।

- একদিন অধরা আমাকে বললো,' রাজ চলো না আমরা জামাই বউ খেলি?''

- জামাই বউ খেলে কিভাবে?

-অ্যামা তুমি জানো না জামাই -বউ কিভাবে খেলে?

- না, তো জানি না। মাকে জিজ্ঞেস করতে হবে।

- আরে আমিই বলছি। শোন আমি নতুন শাড়ি পরবো। তুমি আমার ঘোমটা তুলে আমার দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকাবে। আমি লজ্জা পাবো। আর তুমি বলবে ওরে আমার লজ্জাবতী বউটা। আমি তোমাকে ওগো বলে ডাকবো। টিভিতে দেখেছি। আর মাটি দিয়ে সুন্দর করে ঘর বানাবো। যেভাবে এখন বানিয়ে খেলি। তারপর বালু দিয়ে তোমার জন্য রান্না করবো। সেগুলো তুমি খাবে।'"

-পাগল হইছোস বালু কেন খাবো? আর তোকে বউ ডাকলে আমার সত্যি সত্যি বিয়ে হয়ে যাবে? পরে বউ পাবো না।''

- তোমার কি আমাকে ছাড়া আরো বিয়ে করার ইচ্ছে আছে? এই জন্যই তো বলি নিশি আমাকে কেন বলে, ''সময় হলে বুঝাবো আমি কি করতে পারি?'' আর তুমি তো সত্যি সত্যি খাবে না তো। '

- তারপর কতো বার আমরা দু'জনে জামাই বউ খেলছি হিসেব নেই। সেই ছোট্টবেলা থেকেই ছোট্ট মনে বিন্দু বিন্দু ভালোবাসার উদ্রেক হয়। অধরাদের বাসায় কিছু রান্না হলেই অধরা প্লেটে করে লুকিয়ে আনতো পুকুর পাড়ে। সেখানে বসিয়ে নিজ হাতে খাইয়ে দিতো। যখন বলতাম তুমি খেয়েছ? তখন বলতো তুমি খাইয়ে দিবে বলে খায়নি। তখন অধরাকেও খাইয়ে দিতাম। মা-বাবা অধরা আর আমার পাগলামী দেখে হাসত। অধরাকে অন্য কোন ছেলের সাথে কথা বলতে দেখলে অনেক রাগ হতো। এখনো মনে আছে একদিন অধরার সাথে সিফাত জামাই বউ খেলতে চেয়েছিল। আর অধরাও আমার সাথে রাগ করে তার সাথে খেলতে রাজি হয়েছিল। যখন শুনতে পায় এ কথা তখন অধরাকে গিয়ে চড় দেয়। অধরা আর কিছু বলেনি আমাকে। কান্না করতে করতে বাসায় গিয়েছিল। এর পর একটানা চারদিন কথা বলিনি। অধরা কথা বললেও পাশ কেটে চলে গিয়েছি। চারটা দিন শুধু অধরার দেওয়া মেয়ে পুতুলটার সাথে কথা বলেছি।

- পুতুল দু'টো দুজনে মেলায় থেকে কিনেছি। কিনার পর আমার পুতুলটা অধরাকে দিয়ে বলেছিলাম,' এই নাও পুতুল রাতে তো তোমার সাথে কথা বলতে পারি না। এছাড়া যখনি আমার কথা মনে পড়বে তখন এই পুতুলের সাথে কথা বলবে। মনে হবে তুমি আমার সাথে কথা বলছো। এই পুতুলটাকে সাথে নিয়ে ঘুমাবে মনে হবে আমাকে নিয়ে ঘুমাচ্ছো। এ পুতুলকে কখনো কষ্ট দিবে না তো?

- অধরা তখন ছোঁ মেয়ে আমার হাতের পুতুলটা তার হাতে নিয়ে বললো,' বাহ্ পুতুলটা তো খুব সুন্দর! ঠিক তোমার মতো। আমি কখনো পুতুলটাকে কষ্ট দিবো না। সবসময় নিজের কাছেই রাখবো। কিন্তু?

- কিন্তু কী?

- তুমি আমাকে পুতুল দিলে। তাহলে আমার মেয়ে পুতুলটা তুমি নাও। আমার সাথে যখন কথা হবে না তখন তুমি পুতুলটার সাথে কথা বলবে। আর মনে রেখো আমাকে যেমন সারাদিন বকা দাও, তেমনি পুতুলটাকে দিয়ো না বকা। পুতুলকে বকা দিলে পুতুল কান্না করবে।কথা দাও পুতুলকে বকবে না? আরেকটা কথা পুতুলটাকে বুকে নিয়ে ঘুমাবে? '

- আরে না। বুকে নিয়েই ঘুমাবো । এসব ভাবতে ভাবতে অধরার কথা খুব মনে পড়ে।

চারদিন পর সকালে ঘুম থেকে উঠার পর বুঝতে পারি গায়ে জ্বর উঠেছে। আগেরদিন বৃষ্টিতে ভিজে গোসল করার ফল এটা । মা জলপট্টি দিয়ে চলে গেছে আমি তাকাতে পারছি না রাজ।

- এদিকে অধরা বাসায় এসে মাকে বললো,' আন্টি রাজ কোথায়?''

- মা বললো, ' আর বলিস না মা কাল বৃষ্টিতে ভিজে ফুটবল খেলছে। আর আজকে জ্বরে কাতরাচ্ছে!

- কি বলো এসব? আগে বলবে না। অধরা দৌড়ে আমার পাশে এসে বসে। মাথা থেকে জলপট্টি সরিয়ে হাত রাখতেই রাজ বললো,' ছুঁবে না আমায়!

- তোমার জ্বর আমাকে বলোনি কেন?''

- কি বলবো? তুই সিফাতের বউ। সিফাতের কাছে যা।

- রাজ প্লিজ তুমি এভাবে বলো না তোমার না জ্বর?আমাকে ক্ষমা করে দাও এর পর আর কোনদিন খেলবো না সিফাতের সাথে।

- ক্ষমা করতে পারি এক শর্তে!

- কি শর্ত?

- ১০০ বার কান ধরতে হবে।

- এতোবার? কিছু কম করলে হয় না?

- হয় তবে ৫ টা পাপ্পি দিলে কান ধরতে হবে না।

- ছিঃ পচা কথা বলো না।

- তোর ইচ্ছা। শুনেছি পাপ্পি দিলে নাকি জ্বর কমে যায়। তাই তোকে বললাম।

- সত্যি বলছো? পাপ্পি দিলে জ্বর কমে যায়?

- আমি তো তাই শুনেছি। এখন ভেবে দেখো আমার জ্বর তুমি পাপ্পি দিয়ে সারিয়ে দিবে না কান ধরে উঠবস করবে?

- আচ্ছা দিচ্ছি। এই বলে অধরা রাজের কপালে পাপ্পি দিয়ে দেয়। পাপ্পি দিয়ে অধরা আর রাজের দিকে তাকাতে পারে না। লজ্জার চোখ মুখ অস্ত যাওয়ার পূর্বে সূর্য যে রূপ ধারণ করে অধরার মুখটাও তেমন বর্ণ ধারণ করে। অধরা ভয়ে ভয়ে রাজের কপালে হাত দিয়ে দেখে রাজের জ্বর কমেনি আরো জ্বর বাড়ছে। কি হলো কমেনি তো?

- তোমার পাপ্পি ঠিকমতো দিতে পারো নি? আবার দাও। এখন দশটা দিতে হবে নয়ত জ্বর আরো দ্বিগুণ বাড়বে।

- সত্যি তো দশটা দিলে জ্বর কমে যাবে?

- কমবে না মানে আলবৎ কমবে। ওহ্ অধরা জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে।

- অধরা রাজের গালে মুখে গুনে গুনে দশটা পাপ্পি দিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বুঝতে পারলো রাজ তাকে মিথ্যা বলেছে।

অধরা রাগে অগ্নি শর্মা হয়ে বললো,' তুমি খুব পচা মিথ্যা বলে আমাকে দিয়ে পাপ্পি দেওয়ালে। জ্বর তো কমেনি আরো বেড়েছে। তুমি সত্যিই খারাপ।

- হ্যাঁ আমি খারাপ আমি মরে গেলেই ভালো হবে। কেউ অন্তত কারো বকা শুনবে না। সিফাত তো আছেই ভালো। চলে যা তুই সিফাতের কাছে। খারাপের কাছে কেন আছছিস? আর শোন আমি কি জানতাম পাপ্পি দিলে জ্বর ভালো হয় না? সিজান ভাইয়াকে বলতে শুনেছি। সিজান ভাইয়া সিনহা আপুরে বলতো, আপুর পাপ্পিতেই নাকি সিজান ভাইয়ার জ্বর ভালো হয়েছে। সিনহা আপুরে তুই বলিস যে সিজান ভাইয়া বলছে কি না? আর প্লিজ চলে যা। আমি মরলেই তোর কি?আমার জ্বর হয়েছে খুশি তো তুই?

- রাজের মুখে মরার কথা শুনে অধরা ছোট্ট চোখে কোথায় থেকে যেন জল এসে ভর করে। অধরা তার চোখের পানি মুছতে মুছতে বলে, ''তুমি ভুল বুঝো না। আমার খুব রাগ হয়েছিল। আমি আর কোনদিন সিফাতের সাথে কথা বলবো না। আমি প্রমিজ করছি তোমাকে।আর তুমি, অপরী, কণা, এবং নিশি এদের সাথে কথা বলো না। ওদের হাব-ভাব ঠিক নাই। আর হ্যাঁ মরার কথা বলো না আমার কান্না পায়। তুমি মরে গেলে আমার কি হবে? আরেকটা কথা বাসায় পায়েস রান্না করছে মা। আমি তোমার জন্য নিয়ে আসবো কেমন? এখন আসি তাহলে।

- অধরা চলে যায়! রাজ চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকে।

এ দিকে সারা গ্রামে রাজ আর অধরা ছোটাছুটি করে। দেখতে রাজ আর অধরা অনেক কিছুই বুঝতে শিখে যায়। এরই মাঝে সময় চলে যায় দু'বছর।

একদিন বিকেলে অধরা রাজকে বলে,' রাজ চলো না শাপলা তুলতে যায়? পদ্মপুকুরে নাকি অনেক শাপলা ফুটেছে।

- রাজ অধরাকে নিয়ে শাপলা ফুল তুলতে যায়। পুকুরের মাঝখান থেকে ফুল তুলে আনার সময় অধরা নৌকা থেকে পড়ে যায়। রাজ কোনরকম অধরাকে সাতয়ে ডাঙায় তুলে শুইয়ে দেয়। অধরাকে শুইয়ে দিয়ে রাজ অধরাকে ডাকতে থাকে, এই বলে,' এই অধরা কি হয়েছে কথা বলছো না কেন? কথা বলো। অধরা তবুও কোন কথা বলছে না।

- রাজের খুব কান্না পাচ্ছে। চিৎকার করে অধরাকে বলছে, ' এই অধরা আমি আর তোমাকে কোনদিন বকা দিবো না। তুমি যা বলবে তাই করবো। কি হলো কথা বলছো না কেন? তোমার কিছু হয়ে গেলে আমি কাকে নিয়ে বাঁচবো? আমি যে তোমাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি?'' ও আল্লাহ আমার অধরাকে ভালো করে দাও। আমি যে ওকে বড্ডবেশি ভালোবাসি। ওকে ছাড়া আমি কাকে নিয়ে বাঁচবো?

- অধরা রাজের মুখে ভালোবাসি কথা শুনে বললো,' সত্যি তুমি আমাকে ভালোবাসি? এই কথাটা শুনার জন্য কতোক্ষণ ধরে ভং ধরে আছি।''

- অধরার কথা শুনে রাজ তার গালে ঠাস করে চড় বসিয়ে দেয় আর বলে,' ভালোবাসি শুনার জন্য এমন পাগলামী করে কেউ?'

- পাগলামী না করলে কি তুমি বলতে আমাকে ভালোবাসো?

- রাজ অধরাকে আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে জড়িয়ে ধরে।

- এই কি করছো মানুষ দেখবে তো?

- দেখুক। তার আগে বলো আমাকে কখনো ছেড়ে যাবে না তো? বড্ডবেশি ভালোবাসি তোমায়!

- হুম ছেড়ে যাবো না। আমিও তোমায় বড্ডবেশি ভালোবাসি।

- দিনগুলি ভালোই কাটতেছিল। একদিন হঠাৎ অধরার বাবা বললো,' সামনে অধরার বার্থডে তাই ভাবছিলাম কাজি ডেকে অধরা আর রাজের বিয়েটা দিয়ে বন্ধুত্বটাকে আরো মজবুত করি। কি বলো তুমি?

- কিন্তু বন্ধু রাজ তো ছোট অধরাও ছোট!

- আরে বন্ধু বিয়েটা শুধু কাজি পড়িয়ে দিবে। প্রাপ্ত বয়স্ক হলে সম্পূর্ণ আইনী প্রক্রিয়ার বিয়ে হবে। তুমি কি বলো?

- আচ্ছা তাহলে অধরার বার্থডেতে কাজি ডেকে গোপনে বিয়ে পড়িয়ে রাখবো।

- রাজ আর অধরার বাবার কথা অনুযায়ী রাজ আর অধরার বিয়ে পড়িয়ে দেয় কাজি। যেদিন অধরার বিয়ে হয় সেদিন

চলবে''''''''''

বিঃদ্রঃঅসুস্থতার জন্য গল্প দিতে লেট হচ্ছে।

1
$ 0.00
Avatar for Hasan16
3 years ago

Comments