#গোধূলীর_প্রেম
#পর্ব-৬
#Nirzana(Tanima_Anam)
-জানেন আমি আপনাকে বিয়ে করিনি।তবুও আপনি নিজেকে আমার বর ভাবছেন।বিষয়টা খুব কমপ্লিকেটেড।
-কি সব বলছো??
-হুহ ঠিকই বলছি।আমি কবুল বলেছি আবার বলিনি।যেমন ধরুন আমি মুখে মুখে বললাম আমি আপনাকে স্বামী বলে মেনে নিয়েছি কিন্তু মনে মনে মানলাম কখনো বানাতাম না..।আপনি একটা মিথ্যে ছলনা করে রঙ্গনের সাথে আমার বিয়েটা ভেঙ্গে দিলেন আবার নিজে মহান সেজে আমাকে বিয়ে করলেন।আপনি আমাকে একটুও সন্মান করেন না অথচ বলেন ভালোবাসেন!!ওহ্য়ন মুচকি হাসি দিয়ে গরম দুধের মগটা অর্নীর দিকে এগিয়ে দিলো।মেয়েটা জ্বরের ঘোরে হয়তো আবল তাবল বকছে....।মেয়েটা যখন ঝালে লাফাচ্ছিলো সায়ন তখন ইচ্ছে করেই তাকে পানি দিচ্ছিলো না।অর্নী রাগে গজগজ করতে করতে টেবিলে রাখা গরম স্যুপ ভর্তি বাটিটা সায়নের গায়ে ছুড়ে মারে।
-যদি ভেবে থাকেন আপনি সব সময় আমাকে এটা ওটা করে টর্চার করবেন আর আমি সব সময় মুখ বুজে মেনে নিবো তাহলে ভুল করছেন।
এবার সায়ন রেগে গিয়ে অর্নীকে তুলে নিয়ে গিয়ে ওয়াশরুমে পানি ভর্তি বার্থটব টার মধ্যে চুবিয়ে দিয়ে আসে।মোটামুটি ঘন্টা খানিক ওয়াশরুমে বন্দী থাকায় জ্বরটা বেঁধেছে.....
সায়ন একটু ভুরু কুচকে অর্নীকে জবাব দেয়।
-আচ্ছা হটাৎ আমাকে কেয়ার টেকার বানানোর কথা মাথায় এলো কেন অন্যকিছুও তো ভাবতে পারতে,না মানে তোমার কল্পনায়??
-বা রে স্বামী তো একজন মেয়ের কেয়ার টেকারের মতোই যেমন ধরুন মেয়েদের দুঃখ কষ্ট সন্মান অসম্মান ভালোলাগা মন্দ লাগা সুবিধা অসুবিধা সব কিছু তো স্বামীই দেখবে।একটা মেয়ের সব দিকে খেয়াল রাখা তো স্বামীরই কর্তব্য তাহলে হলো তো কেয়ার টেকার??য
সায়ন অর্নীর হাতে দুধের গ্লাসটা ধরিয়ে দিয়ে অর্নীর পাশে বসে
কিছুক্ষন অর্নীর দিকে তাকিয়ে থেকে বলতে শুরু করে
-আজকাল তুমি বড্ড গুছিয়ে কথা বলতে পারো যা আগে পারতে না।তুমি বড্ড অচেনা হয়ে গেছো
অর্নী সায়নের দিকে বাঁকা চোখে তাকায়।তারপর একদমে দুধটুকু খেয়ে মগটা সায়নের দিকে এগিয়ে দেয়
-আমি আগেও গুছিয়েই কথা বলতাম এখনও বলি এটা নতুন কিছুই না।স্কুলে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় আমিই ফার্স্ট হতাম।
-ঔষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড় না হলে জ্বরের ঘোরে কতোই না নতুন নতুন কথা আবিষ্কার করবে আল্লাহ্ ভালো জানে!
-অদ্ভুত তো আমার জ্বরটা বেশি হলেও আমি ঠিক আছি অন্তত বিলাপ,প্রলাপ কোনোটাই করছি না!
অর্নী এইটুকু বলেই বিছানায় ধপ করে শুয়ে পড়ে।
-যদি বলি বকছো....আমার জানা মতে তুমি বরাবরই স্কুলে ব্যাকব্রেঞ্চারস্ ছিলে।পড়াশোনাটাই কখনো ঠিক মতো করো নি আর তো বিতর্ক।আর কতোই মা মিথ্যা বলবা।তুমি তো এই ক বছরে ছোট খাটো মিথ্যার জাহাজ হয়ে গিয়েছো!!
অর্নী রাগে গজগজ করতে করতে আবার উঠে বসে...
-পৃথিবীর যতো রকম আজগুবি কথা আপনার মুখে।ভালো করে গিয়ে শুনে আসুন আমার স্কুলে তারপর কথা বলবেন।যতোসব.....
এইটুকু বলেই অর্নী বিছানায় শুয়ে পড়ে।আপাতোতো তাদের কথা বার্তা এখানেই শেষ।
সায়ন মোবাইলটা হাতে নিয়ে বারান্দায় চলে যায়।তারপর একটা খুব পরিচিত কাউকে ফোন করে বেশ ধীরে ধীরপ কথা বলতে শুরু করে
"হুহ হয়ে গেছে এবার ওদেরকে ছেড়ে দাও।আর শোনো যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব ওকে দূরে কোথাও পাঠিয়ে দাও।নেক্সট টাইম যেন আমাদের ধারের কাছেও ওকে না দেখি।আর শোনো আমি অর্নীর ডিটেইলস চাই।যেমন ধরো ও কেন আমার সাথে ওমন করলো,বা এতো বছর ও কেমন লাইফ লিড করেছে বা ওর ব্যাকগ্রাউন্ড সব কিছু জানতে চাই...ডিটেইলস"
কথাগুলো বলেই সায়ন ফোনটা রেখে দেয়।এদিকে অর্নী চলে গেছে গভীর ঘুমে।
সায়ন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে একি নিষ্পাপ এই মুখ।কতো চেনা এই মানুষটা অথচ এই চিরচেনা মানুষটাই কখন কিভাবে এতো অচেনা হয়ে উঠলো তা সে নিজেও জানে না।
সকাল সকাল অর্নী ঘুম থেকে উঠে গুটি গুটি পায়ে হাটা ধরে রান্না ঘরের দিকে।তারপর দুই মগ কফি বানিয়ে চলে আসে সায়নের কাছে।সায়ন তখন সোফায় হেলান দিয়ে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।অর্নী সায়নের কাছে এসে সায়নকে বেশ মিষ্টি করে ডাক দেয়।সায়ন উঠে বসে অর্নীর হাতে কফি দেখে চোখ দুটো রসগোল্লা হয়ে যায়।
-তোমার হাতে কি??
-কি আবার কফি!
-কার জন্য?
-আপনার জন্য.....
-ওওও বাট তুমি!!
-হুহ নিন.....
কথাটা বলেই সায়নের দিকে কফি ভর্তি মগটা এগিয়ে দেয়।সায়ন মুচকি হাসি দিয়ে অর্নীর হাত থেকে কফি মগটা নেয়।
তার কফি মগটায় চুমুক দিতেই সায়নে নাক কান দিয়ে ধোয়া বেরোবার অবস্থা দেখা যায়।
কফিতে কফির বদলে গোল মরিচ মেশানো।সাথে অবশ্য যতোরকম মরিচ হাতের কাছে পেয়েছে তাও মিশেয়ে দিয়েছে।
সায়ন ঝালে একে বারে নাজে হাল অবস্থা।এদিকে অর্নী হেসে হেসে কুল কিনারা পাচ্ছে না।
সায়ন লাল লাল চোখে অর্নীর দিকে তাকায়।অর্নী কোনো রকমে হাসি থামিয়ে সায়নকে বলতে শুরু করে...
-টিট ফর ট্যাট!!!ও ব্যাই দ্যা ওয়ে
বলেছিলাম না আপনি আমার কাছ থেকে সেটাই পাবেন যেটা আপনি ডিজার্ভ করেন।ওহ্ এই নিন পানি খান।
ব্যাপারটা সেখানেই শেষ হয়ে যায়।সায়নও অর্নীকে এই ব্যাপ্যার নিয়ে কিছুই বলে না।সন্ধ্যার দিকে সায়ন অর্নীরকে বেশ ঝাঝালো কন্ঠে জানিয়ে দেয় অর্নীকে যেতে হবে তার সাথে।
অর্নী প্রথমে বেশ অবাক হয়।
তারপর সায়নকে প্রশ্ন করতেই সায়ন সরাসরি জানিয়ে দেয়...
-বিয়ে হলে মেয়েদের তো শ্বশুড় বাড়িতে যেতেই হয় তাকেও যেতে হবে এবার।তার শ্বশুড় বাড়ি।
অর্নী প্রথমে রাজি না হলেও পরে সায়নের চাপে রাজি হয়ে যায়....
এবার হয়তো তার জন্য নতুন কিছু অপেক্ষা করছে.....
চলবে.....
(প্রথমে ভেবেছিলাম গল্পটা আর লিখবো না পরে ইনবক্সে বকা খেয়ে আবার লিখা শুরু করলাম।দয়া করে জানাবেন গল্পটা কেমন হয়েছে।ধন্যবাদ)
★
0
4