আমি শুধু তোমাকেই চেয়েছি
পর্বঃ১৭
সুমাইয়া
গাড়িতে বসে আছে সাজ্জাদ, তিতলি আর কনিকা। কনিকা তো তখন থেকে বকবক করছে,,,কিন্তু তার দিকে তিতলির বিন্দু মাত্র খেয়াল নেই। সে আপন মনে বাইরে তাকিয়ে আছে মন খারাপ করে। যা সাজ্জাদের চোখ এড়ায় নি। তাই সাজ্জাদ তিতলির মন ভালো করার জন্য বলল,
সাজ্জাদ: কেউ কি আমার সাথে আইসক্রিম খেতে যাবে?(আড়চোখে তিতলির দিকে তাকিয়ে)
তিতলি বুঝতে পেরেও কোন উত্তর দেয় নি। কিন্তু কনিকা লাফিয়ে বলে উঠলো,
কনিকা: ভাইয়া তুই আইসক্রিম খেতে নিয়ে যাবি? জানিস আমার আর তিতলির একই ফ্লেবার পছন্দ। এই তিতলি চুপ করে আছিস কেন?
তিতলি: কিছু না। আমি আইসক্রিম খাবো না। তোদের ইচ্ছে হলে খা।
সাজ্জাদ: ওকে বুঝতে পেরেছি।
সাজ্জাদ আইসক্রিম কিনে কনিকাকে ধরিয়ে দিলো। আর কনিকাকে বাসায় ড্রপ করলো। যাওয়ার আগে কনিকা সাজ্জাদকে বলল,
কনিকা: এই ভাইয়া! তুই এখন তিতলিকে নিয়ে কোথাও ঘুরে আয়। মেয়েটার মন ভালো না। বুঝতে পেরেছিস?
সাজ্জাদ কিছু না বলে মুচকি হেসে তিতলিকে নিয়ে চলে যায়। তিতলির মন খারাপ থাকার কারণে আর ভালো করে দেখেনি কোথায় যাচ্ছে! গাড়ি থামায় তিতলি একবার সাজ্জাদের দিকে তাকিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখে এটা সেই জায়গা যেখানে তিতলি আর সাজ্জাদ দুজনেই মন খারাপ হলে আসে। তিতলি অবাক চোখে সাজ্জাদের দিকে তাকায়। সাজ্জাদ চোখের ইশারায় তিতলিকে নামতে বলে। তিতলি সাজ্জাদের কথা মতো নেমে দাড়ায় আর সাজ্জাদও গাড়ি লক করে আসে। তিতলির কাছে এসে ওর হাত ধরে নদীর পাড়ে নিয়ে আসে। নদীর পাড়ে সারি সারি কাশফুল ফুটে আছে। একপাশে বহমান নদী,,,, এ যেন এক প্রকৃতি অন্যতম সুন্দর অংশ। শুধু সাদা আর সবুজের সমারোহ। তিতলি মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে। আর তার দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে সাজ্জাদ। হঠাৎ সাজ্জাদের দিকে তাকিয়ে তিতলি লজ্জা পেয়ে গেলো তার চাহনি দেখে। তিতলিকে লজ্জা পেতে দেখে সাজ্জাদ হেসে দিলো।
সাজ্জাদ: যাবে আমার সাথে ওই নদীর পাড়ে হাত ধরে পা ভিজাতে??
তিতলি:(মুচকি হেসে) হুম যাবো!
সাজ্জাদ তিতলির হাত ধরে পানিতে পা ভিজিয়ে হাটতে লাগলো। অনেকক্ষন দুজনেই চুপ ছিলো,,,,, কিন্তু প্রকৃতি তার ছন্দ দিয়ে পরিবেশটা মুখরিত করে রেখেছে সাথে আছে আরো দুটি যন্ত্রের শব্দ যা একে অপরের কাছাকাছি আসায় এক ভিন্ন ছন্দের সৃষ্টি করেছে। আর তা হলো সাজ্জাদ আর তিতলির হৃদযন্ত্র। নিরবতা ভেঙে সাজ্জাদ বলতে লাগলো,
সাজ্জাদ: মিসেস ওয়াইফ! আপনার মন ভালো হয়েছে?(তিতলির দিকে পাশ ফিরে তাকিয়ে)
তিতলি:(সাজ্জাদের দিকে তাকিয়ে) হুম! একটু খারাপ আছে।
সাজ্জাদ: তা কি করলে আমার মিসেস এর মন ভালো হবে?
তিতলি কিছু না বলে শুধু হাসলো। কিন্তু সে হয়তো জানেনা সাজ্জাদ তাকে তার চেয়েও বেশি জানে। সাজ্জাদ তিতলিকে কিছু না বলে দোড়ে গিয়ে একগুচ্ছ কাশফুল নিয়ে এলো। এসে তিতলির দিকে তাকিয়ে হাটু গেড়ে তিতলির সামনে বসে পড়লো। তিতলি সাজ্জাদের কান্ড দেখে অবাক হয়ে গেছে। সাজ্জাদ তিতলির দিকে ফুলগুচ্ছ বাড়িয়ে দিয়ে বলতে লাগলো,
সাজ্জাদ: আমি তোমাকে তোমার চাইতেও বেশি জানি প্রিয়। হয়তো তা তোমার আড়ালে। তোমার ওই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়ে অবাক হওয়া! তোমার ওই ফুলের সুবাস নেওয়া, সকালে ঠান্ডা হাওয়া গায়ে জড়িয়ে নেওয়া,, প্রতিটি বিষয় আমাকে মুগ্ধ করে। আমি তোমার সাথে সেই সকল মুহূর্ত উপভোগ করতে চাই। দেবে কি আমায় অনুমতি??? চাই তোমার সাথে সকাল হওয়া দেখতে! দুজনে মিলে আল্লাহর ইবাদতে মশগুল হতে চাই! দেবে আমায় অনুমতি?? আমি তোমার ভালোবাসা নয় বিশ্বাস অর্জন করতে চাই। ভালোবাসা তো এমনেই দেবে। আমি তোমাকে খুব করে চাই। হবে আমার? আমি_শুধু_তোমাকেই_চেয়েছি। তোমাকেই চাই,,,,তোমাকেই চাইবো! দেতখন থেকে তিতলি ওই কাশফুলগুলো বুকের সাথে জড়িয়ে রেখেছে আর মুচকি মুচকি হাসছে। সাজ্জাদ তিতলিকে আড় চোখে তাকিয়ে দেখে গাড়ি চালানো শুরু করলো। গাড়িতে কেউ কোন কথা বলে নি। হয়তো বলতে চায় নি। কিন্তু দুজনের নিরবতা বলে দিচ্ছে অনেক কথা যা তারা মুখে না বলেও বুঝে নিচ্ছে। তিতলির বাড়ির সামনে এসে সাজ্জাদ তিতলির দিকে তাকালো। কিন্তু তিতলি তখনও ভাবলেশহীন ভাবে বসে আছে। তা দেখে সাজ্জাদ মৃদু হাসলো। সাজ্জাদ কিছু বলতে যাবে তার আগেই তিতলি বলে উঠলো,
তিতলি: ধন্যবাদ। (মুচকি হেসে)
সাজ্জাদ:(একটু হেসে) আমি এভাবে ধন্যবাদ নিই না।(দুষ্টু হেসে)
তিতলি:(অবাক হয়ে) মানে?
সাজ্জাদ: মানে আমার রিটার্ন গিফট চাই, তবেই ধন্যবাদ গ্রহণযোগ্য হবে।
তিতলি খুব ভালো ভাবেই বুঝলো সাজ্জাদ কোন জিনিষের কথা বলেছে! তাই চোখ বুঝে সাজ্জাদের গালে চুমু দিয়েই গাড়ি থেকে নেমে এক দোড়ে বাসায় চলে গেলো। আর সাজ্জাদ এখনো হা করে তিতলির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। ধ্যান ভাঙে তিতলির মেসেজে,
" আমার দিকে না তাকিয়ে সাবধানে গাড়ি চালিয়ে বাড়ি যান। সবাই অপেক্ষা করছে। পরে কথা হবে।"
তিতলির মেসেজ দেখে সাজ্জাদ হেসে দিলো। আর মনে মনে বলল,
সাজ্জাদ: রাতের তো এমনেই খুব কস্টে ঘুমাতাম কিন্তু এখন তো তা হারাম করে দিলা তিতলি জান!!(বুকে হাত দিয়ে, মাথা সিটে এলিয়ে দিয়ে)
বলেই সাজ্জাদ গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেলো।
,
,
,
তিতলি ঘরে ঢুকতে না ঢুকতে তার বাবা সামনে হাজির। মুখে খুবই অদ্ভুত হাসি। যার কোন মানে তিতলি খুঁজে পাচ্ছে না। তাই বনিতা না করে তিতলি জিজ্ঞাসা করলো,
তিতলি: বাবা তুমি এখানে?
বাবা: সাজ্জাদ ভিতরে আসেনি?
তিতলি:(ভ্রু কুচকে) মানে? উনি কেন আসবে?
বাবা: হইছে আর নাটক করা লাগবে না। আমি দেখেছি তুই সাজ্জাদকে চুমু দিয়ে দোড় দিয়েছিস!(দুষ্টু হেসে)
তিতলি:(হা করে) বিশ্বাস করো তোমার সাথে আমার চেহারার মিল আছে দেখে বিশ্বাস করেছি তুমি আমার বাবা! নয়তো জীবনেও বিশ্বাস করতাম না।
বাবা: আহা! বলনা!(করুন সুরে)
তিতলি: মাম্মা!মাম্মা! (চিৎকার করে) দেখো তোমার হাসবেন্ড আমাকে জ্বালাচ্ছে। কিছু করো। প্লিজ!
তিতলি তার মাকে ডাকতে ডাকতে নিজের রুমে চলে গেলো। আর তিতলির বাবা বলছে,
বাবা: যাহ! চলে গেলো?(আহাম্মকের মতো)
,
,
,
,
,
সাজ্জাদ বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে তিতলিকে ফোন দিলো। আর ফোন পেয়ে তিতলির মুখে হাসি ফুটে উঠলো যেনো ও সাজ্জাদের কলের অপেক্ষায় ছিলো।
,,
,,
,,
(চলবে),,,,
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।
0
4