#বিড়ালচোখী
পর্ব-১৬
হুমায়রা, ইপ্সিতা আর সোনিয়া তিনজন মিলে কথা বলায় ব্যস্ত থাকে আর শোভন আয়াত নিজেদের মধ্যে কথা বলে।
কথা বলার এক পর্যায়ে হুমায়রা কে বলে,
"আচ্ছা আপু, এই ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় কাঠফাটা রোদে যেখানে দম নেওয়াটাই একরকম মুশকিল হয়ে দাড়িয়েছে, সেখানে গায়ে এত বিশাল বোরখা জড়িয়ে রেখেছ, আচ্ছা তোমার গরম লাগে না?"
,
"লাগে আপু। লাগবে না কেন? আমিও তো রক্ত মাংসে গড়া মানুষ। কিন্তু দুনিয়ার আগুনের প্রখরতার চেয়েও ৭০ গুন বেশি উত্তপ্ত হচ্ছে জাহান্নামের কালো আগুন। সেই গরমের তুলনায় এই গরম এমন আর কি বলো? বেপর্দা নারীদের জাহান্নামের আগুনের নিক্ষেপ করা হবে। জাহান্নামের সেই ভয়াবহতার কথা মনে পড়লে আমি কেপে উঠি। আর এই ভয় আমাকে বেপর্দা হতে উৎসাহিত করে না। সেই ভয়ই পরবর্তীতে এক পর্যায়ে আল্লাহর প্রতি আমার ভালবাসায় রুপ নেয়। এখন ৩৫ ডিগ্রি কেন, এর দিগুন তিনগুন তাপমাত্রা থাকলেও তার উত্তপ্ততা আমাকে আল্লাহর হুকুম থেকে দূরে করতে পারবে না।
একটি হাদিস বলি শুনো,
আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন:
«نَارُكُمْ جُزْءٌ مِنْ سَبْعِينَ جُزْءًا مِنْ نَارِ جَهَنَّمَ»، قِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنْ كَانَتْ لَكَافِيَةً قَالَ: «فُضِّلَتْ عَلَيْهِنَّ بِتِسْعَةٍ وَسِتِّينَ جُزْءًا كُلُّهُنَّ مِثْلُ حَرِّهَا»
“তোমাদের দুনিয়ার আগুন, জাহান্নামের আগুনের ৭০ ভাগের ১ ভাগ। তাঁকে প্রশ্ন করা হলো, এটা কি যথেষ্ট নয়? তিনি উত্তরে বলেন: এর সাথে আরো ৬৯ গুন যোগ করা হবে এবং প্রত্যেকটির গুণ এ আগুনের মতো।” (বুখারী, ৩২৬৫ ও মুসলিম, ২৮৪৩)
ইপ্সিতা হুমায়রার বলা কথা শুনে চুপ হয়ে যায়। ও তো পর্দা করে না, আর এত গভীর ভাবে কখনো ভাবেও নি এটা নিয়ে। ভাবতে যেয়ে ওর মন খারাপ হয়ে যায়।
সোনিয়াও পর্দা করে, বাট ফুল না তাই ওর ও খারাপ লাগা শুরু করে।
হুমায়রা হয়ত বুঝতে পারে তাই ওদের দুজনকে স্বাভাবিক করার জন্য অন্য টপিকস এ কথা বলা শুরু করেট্রাকে খুব ইজিলি উঠে যায় আরাফ, সমস্যা হয় যখন আয়েশা উঠবে, বোরকা পড়া আর একদিকে উঁচু, কীভাবে কি করবে বুঝতে পারতেছিল না আয়েশা। আরাফও ব্যাপারটা বুঝতে পেরে কি করবে ভাবতে থাকে, ভেবে কিছু যখন পায় না তখন পাশের একটা দোকানে টুল রাখা দেখতে পায়।"আপনি এটার উপর দাঁড়িয়ে উপরে উঠুন। তাহলে সমস্যা হবে না"বাট পড়ে গেলে।"আচ্ছা আমি দেখছি।"আরাফ নিজে ট্রাকে উঠে হাত বাড়িয়ে দেয় আয়েশার দিকে। "জানি আপনার আনইজি লাগবে বাট এছাড়া তো উপায় নেই।আমি পারব, আপনার চিন্তা করতে হবে না।" আয়েশা বলল।আরাফ আয়েশার কথা শুনে নিচে নেমে এসে দাঁড়ায়। আয়েশা একা উঠতে যায়, অনেক ট্রাই করার পর যখনই উঠবে তখনই বোরকায় পা আটকে পড়ে যেতে নেয়, সাথে সাথে পিছন থেকে ধরে ফেলে আরাফ। ঘটনার আকস্মিকতায় আয়েশা ফ্রীজড হয়ে যায়।অনেক সময় চুপ করে ওভাবেই থাকে আয়েশা, আর আরাফ মিটমিট করে হাসতে থাকে।যখন আয়েশা স্বাভাবিক হয় তখন তাড়াহুরো করে নামতে যায়আস্তে আস্তে নামুন আয়েশা, নাহলে পড়ে যাবেন।", ""ধন্যবাদ মি.আরাফ, আপনি না থাকলে তো নিচেই পড়ে যেতাম।" নিচে নেমে বলল।"আগেই তো বললাম, আমার হাত ধরে উঠুন, শুনেন নি।"আয়েশা চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে, তারপর অনেক ভেবে রাজী হয়ে যায়।এশা আকাশপথে করেই চলে আসে, তাই সবার আগেই পৌঁছে যায় সিলেটে। হোটেলে রুম বুকিং করে ফ্রেশ হয়ে ভাবতে থাকে আরাফের সাথে কি করে দেখা করবে কারণ আরাফ কোথায় উঠবে, কি করবে কিছুই ওর জানা নেই। "আরাফ তো ফেবুতেও ওতো এক্টিভ না যে সেখানে কোন আপডেট পাবো। এসে তো পড়লাম ভালো মত কিছু না জেনে, এখন যে কি করব! আয়াত ইপ্সিতার ফেবুতেও তো কিছু থাকতে পারে।"ভেবেই একটা শয়তানি হাসি দেয়।
.
আয়াতরা দীর্ঘ ৭-৮ ঘন্টা জার্নির পর সিলেটে এসে পৌঁছায়। আয়াত আরাফকে ফোন দিয়ে কোন হোটেলে রুম বুক করা আর কার নামে তা জেনে নেয়।
"আপনার ভাইয়া কে একটু জিঞ্জাসা করবেন যে তারা কতদূর আসছে? " পাশ থেকে হুমায়রা বলে উঠল।
হুমায়রার কন্ঠ শুনে সেদিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায় আয়াত।
,
"কি রে ভাইয়া, হুমায়রা আপু যা বলল সেটা না করে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?" ইপ্সিতা আয়াতকে উদ্দেশ্য করে বলল।
,
"তোমার ভাইয়ার তো আমার কথা শুনলে জ্বর উঠে যাবে।"
হুমায়রার কথায় আয়াত চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে থাকে আর ওদের কাছ থেকে দূরে যেয়ে কথা শেষ করে আবার ওদের কাছে এসে দাঁড়ায়।
"মিস চাশমিস, তোমার সমস্যা কী হা? সবসময় ঝগড়া করার মুডে থাকো। তোমার নাম হুমায়রা না রেখে ঝগড়াটে রাখা উচিত ছিল, সেটাই তোমার সাথে যায়।"
,
"আপনি আমাকে তুমি করে বলছেন কেন? আপনাকে কখন বললাম আমাকে তুমি করে বলতে? ফাজিল কোথাকার, ম্যাএসব নিয়ে পরে কথা বলা যাবে, অনেক ক্লান্ত তো সবাই, আমরা আগে হোটেলে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে নি, তারপর না হয় ঝগড়া করা যাবে হা।"
ইপ্সিতার জন্য ঝগড়াটা ও পর্যন্তই দীর্ঘ হয়। ওরা হোটেলের দিকে যখন রওনা হয় তখন সোনিয়া ইপ্সিতা কে ডাক দেয়।
"এই ইপ্সি, আয়াত আর হুমায়রা এত ঝগড়া কেন করে রে? ওরা দুজনকে কী আগে থেকেই চেনে?"
,
"আপু অনেক কাহিনী, সময় করে বলব।"
.
ট্রাকটা মালবাহী ছিল তাই বেশী জায়গা ছিল না খালি, তবুও আয়েশা আর আরাফ অনেকটা দূরত্ব নিয়ে বসে ছিল। আয়েশা ফোন হাতে নিল হুমায়রা কে কল দেওয়ার জন্য বাট দেখল ফোনের চার্জ শেষ হয়ে ফোন অফ হয়ে আছে, যদিও তখন আরাফ আয়াতকে বলে দিয়েছে ওদের যেতে হয়ত একটু লেইট হতে পারে তাই ফোন না দিলেও সমস্যা নেই। তবুও ভাবছিল একটু হুমায়রার সাথে কথা বলে ও কি করছে সেটা জানা যেত। ওখানে ওর চেনা তো শুধু সোনিয়া ই আছে বাট সোনিয়ার সাথে তো আবার শোভন আছে তাই একটু চিন্তা হচ্ছে ।
"আপনার সমস্যা হচ্ছে না তো আয়েশা?" আরাফের ডাকে ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে আসে আয়েশা।
,
"কিছু বললেন মি.আরাফ?"
,
"বললাম আপনার এভাবে যেতে সমস্যা হচ্ছে না তো?"
,
"না, ভালোই লাগতেছে আমার, প্রথম এরকম জার্নি করতেছি, অন্যরকম অনুভূতি, যেমন মাথার উপর খোলা আকাশ, প্রাকৃতিক স্নিগ্ধ বাতাস, সব মিলিয়ে ভালোই লাগছে। শুধু চাঁদটা মিসিং আকাশে।"
আয়েশার কথা শুনে আরাফের চোখ কপালে উঠে যায়, আয়েশা যে এরকম কিছু ভাববে ও তা ভাবে নি। ও ভাবছে হয়ত আয়েশার খারাপ লাগবে। আরাফ হেসে দেয়।
"আর একটা কথা বলি?" আরাফ জিঞ্জাসা করল।
,
"জ্বী, শিওর।"
,
"আপনার বৃষ্টি কেমন লাগে? না মানে আকাশে মেঘ দেখা যাচ্ছে, হয়ত বৃষ্টি আসবে।" আরাফ আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল।
,
"অনেক ভালো লাগে। বৃষ্টিকে অনেক কাছের মনে হয়। আর তাছাড়া আল্লাহ্ তা'আলা যখন অনেক খুশি হন তখন বৃষ্টি প্রবাহিত করেন পৃথিবীতে। জানেন আমার মন খারাপ থাকলে বৃষ্টি দেখলে মন ভালো হয়ে যায়।"
,
"হুমম বুঝলাম, বৃষ্টি আপনার অনেক পছন্দের। তার মানে এখন বৃষ্টি হলে আপনার খুব ভালো লাগবে? আকাশে তো ভালোই মেঘ জমেছে।" আরাফ আধশোয়া অবস্থায় বলল।
,
"খারাপ লাগবে না বাট ভালো ও লাগবে না। একটা অড সিচ্যুয়েশন তৈরী হবে, বাহিরে তো।"
আরাফ ভাবল আসলেই একটা অড সিচ্যুয়েশন তৈরী হবে, আরাফ আরও একটা জিনিস খেয়াল করল, তা হল আয়েশা ওর সাথে ফ্রী হচ্ছে দিন দিন যা আরাফের কাছে ভালো লাগল।
"মি. আরাফ আপনার বৃষ্টি কেমন লাগে? বৃষ্টিতে ভিজতে ভালো লাগে?" আয়েশা নিজ থেকে প্রশ্ন করায় আরাফের প্রচন্ড ভালো লাগা কাজ করে।
,
"আমার বৃষ্টি দেখতে খুব ভালো লাগে, ভিজতেও ইচ্ছে করে।"
,
"ভিজতে ইচ্ছে করে? ভেজা হয় না?"
,
"না, আসলে আমার কোল্ড অ্যালার্জি আছে তাই ঠান্ডা এগুলো এভয়েড করে চলার চেষ্টা করি।"
আয়েশা আর আরাফ এরপর চুপ করে থাকে, আরাফ আড়চোখে আয়েশা কে দেখে আর আয়েশা নিষ্পলক দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।
.
এরা তিনটা রুম বুকে করে নিজেদের জন্য। এক রুম শোভন, আয়াত আর আরাফের জন্য, তিনজন ছেলে একরুমে থাকতেই পারব। আর দুইটা রুম আয়েশা, হুমায়রা, ইপ্সিতা আর সোনিয়ার জন্য। ইপ্সিতা তা শোনার পরেই হুমায়রা কে রিকোয়েস্ট করে হুমায়রা কে ওর সাথে থাকার জন্য। হুমায়রা ও না করে না কারণ আয়েশা তো কাজই করবে রুমে বসে, ওর বই গুলো থাকলে না হয়ত পড়া যেত, তাও তো নেই, ব
0
8