লিডিং ইওরসেল্‌ফ নিয়ে আলোচনা করতে গেলে প্রথমেই প্রশ্ন আসে “লিডারশীপ কি?” সহজ ভাষায় বলতে গেলে, লিডারশীপ মূলত বিশ্বাসযোগ্যতা। এটি একটি স্কিল। ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে,

“Leadership is not about a title or a designation. Leadership is practiced not so much in words as in attitude and in actions.”

লিডারশীপ বলতে শুধু অন্যকে লিড করা বোঝায় না, নিজের সেলফকে লিড করার মাধ্যমেও এই গুণটি ফুটে উঠে।

কাজী এম আহমেদের মতে, নিজের সেলফকে লিড করা বা লিডিং ইওরসেল্‌ফের ৩টি প্রধান অংশ রয়েছে যার প্রথমটি হল Clarity বা স্বচ্ছতা। অর্থাৎ নিজেকে লিড করার আগে বা লিডার হওয়ার আগে সর্বপ্রথম নিজের মূল্যবোধকে পরিষ্কার করতে হবে। নিজের মূল্যবোধ, বিশ্বাস ঠিক না রাখলে নিজেকে লিড করা সম্ভব নয়। দ্বিতীয় অংশটি হল Integrity বা সততা। কোনো শর্ত পালনে অঙ্গীকারবদ্ধ হলে তা অবশ্যই পালন করতে হবে। অর্থাৎ কথার খেলাফ করা যাবে না। সর্বশেষ অংশটি হল Courage বা সাহস। যেকোন প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হলে সাহস থাকা জরুরি, নাহলে অ্যাকশন নেওয়া সম্ভব হয় না। নিজেকে লিড করার আগে এই ৩টি গুণের চর্চা করতে হবে। নিজের মধ্যে এই ৩টি গুণের বিকাশ না ঘটলে সেলফ লিডারশীপ কঠিন হয়ে পড়বে।

এখন প্রশ্ন আসতে পারে যে, “লিডার বলতে শুধু কোনো প্রতিষ্ঠানের সিইও বা ম্যানেজারকে বুঝায় নাকি?” আসলে লিডারশীপ কোনো পদবির সাথে সম্পর্কিত নয়। কেউ জুনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার হয়েও একজন আদর্শ লিডার হতে পারেন, আবার কেউ সিইও হয়েও লিডার না হতে পারেন। এ সম্পর্কে ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে,

“Leadership is about behavior and influence, not about position.”

আরেকটি প্রশ্ন যা লিডারশীপের সাথে জড়িয়ে আছে তা হল, “কেউ by born leader হতে পারে নাকি?” অর্থাৎ, জন্ম থেকেই কেউ লিডার হওয়ার ক্ষমতা নিয়ে আসে নাকি? আসলে কেউই জন্ম থেকে লিডার হওয়ার ক্ষমতা, সাহস কিছুই নিয়ে আসে না। দীর্ঘদিনের চর্চার ফলে একজনের মধ্যে লিডার হওয়ার গুণগুলোর বিকাশ ঘটে। কিন্তু যখন কেউ লিডার হওয়ার পথে সফলতা পায় না, তখনই সে ধরে বসে যে মানুষ জন্ম থেকেই লিডার হওয়ার ক্ষমতা নিয়ে আসে। তার জন্ম থেকে এই ক্ষমতা নেই, তাই সে লিডার হতে পারলো না। এটি আসলে মানুষের মানসিকতার সমস্যা। কাজী এম আহমেদ মানুষের এই ভ্রান্ত ধারণা পরিবর্তনের জন্য “Mindset” নামক একটি বইয়ের কথা বলেছেন। লিডারশীপের সাথে এই বইটির নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

কাজী এম আহমেদ এমন ৪টি বিহেভিয়ারের কথা বলেছেন যা লিডার হওয়ার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই ৪টি বিহেভিয়ার তাকেও ব্যক্তিগতভাবে তাকেও লিডার হওয়ার পথে সহায়তা করেছে। এই বিহেভিয়ার গুলো চর্চার মাধ্যমে শাণিত করতে পারলে একজন ব্যক্তির পক্ষে সফল লিডার হওয়া সম্ভব। এই বিহেভিয়ার ৪টি হলঃ

১। Integrity বা সততাঃ লিডার হতে হলে একজন মানুষকে অবশ্যই সৎ পথে চলতে হবে। তার মূল্যবোধ ঠিক রাখতে হবে। একজন লিডার যদি সৎ না হন, তাহলে সে অন্যদের সামনে সঠিক উদাহরণ রাখতে পারবেন না, অন্যদের প্রভাবিত করতে পারবেন না।

২। Looking forward বা ভবিষ্যতের চিন্তা করাঃ একজন লিডার হতে হলে তাকে অবশ্যই স্বপ্নদর্শী হতে হবে। নেতিবাচক মনোভাব পরিহার করে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করতে হবে। তাকে বিশ্বাস করতে হবে, ভবিষ্যতে অবশ্যই সফলতা হাতছানি দিচ্ছে। আমাদের দেশে এক্ষেত্রে রিভার্স সাইকোলজি ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমনঃ কর্মীদের কাজে মনযোগী করার জন্য “এই কাজটা করতেই হবে” না বলে “এই কাজটা না করলে কোম্পানি বন্ধ হয়ে যাবে” বলা হলে কর্মীরা আরো বেশি সিরিয়াস হয়। কারণ এদেশের মানুষ রিভার্স সাইকোলজিতে বিশ্বাসী।

৩। Competence বা জ্ঞানঃ লিডার হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকতে হবে। তা না হলে যেমন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়া সম্ভব নয়, তেমনি কোন প্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জ করাও সম্ভব নয়।

৪। Influence বা প্রভাবিত করাঃ উপরের তিনটি গুণ থাকার পরেও যদি কারোর মধ্যে অন্যকে মোটিভেট করার ক্ষমতা না থাকে, তাহলে সে একজন লিডার হতে পারবেনা।

এখন প্রশ্ন আসতেই পারে যে, “একজন ইন্ট্রোভার্টের পক্ষে লিডার হওয়া সম্ভব কিনা?” উত্তর হচ্ছে, অবশ্যই সম্ভব। এমন অসংখ্য ইন্ট্রোভার্ট আছেন যারা সফল লিডার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে এক্সট্রোভার্টদেরও ছাড়িয়ে গেছেন। ইন্ট্রোভার্টদের জন্য একটি বইয়ের কথা কাজী এম আহমেদ বলেছেন। বইটি হল “The power of introverts.” এই বইটি একজন ইন্ট্রোভার্টকে নিজের সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা পোষণ করতে সহায়তা করবে।

কাজী এম আহমেদের প্র্যাকটিকাল পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে লিডার হওয়ার জন্য সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল “clarity of purpose” বা কোন উদ্দেশ্যের স্বচ্ছতা। ফজলে হাসান আবেদ কিংবা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের যেকোনো কাজের উদ্দেশ্যের স্বচ্ছতা ছিল বলেই তাঁরা এত সফল হয়েছেন। এ সম্পর্কে কাজী এম আহমেদ কয়েকটি বইয়ের কথা উল্লেখ করেছেন। যেমনঃ

“7 habits of highly effective people” – এই বইটিতে বিশেষ করে মূল্যবোধের উপর জোর দেওয়া হয়েছে।

“The leadership challenge” – এই বইটিতে মানুষের লিডারশীপ বৈশিষ্ট্য নিয়ে গবেষণা করে তাকে ৫টি বিহেভিয়ারে ভাগ করে ৪০টি পরিমাপকের কথা বিস্তারিত বলা আছে, যা কাজী এম আহমেদের ভাষ্যমতে উনি অন্য কোন বইতে পাননি।

“360 Degree Leader” – এই বইটিতে বলা হয়েছে একজন মানুষ যে কারো থেকে, যেকোন কিছু থেকেই প্রভাবিত হতে পারে।

“Total leadership” – এই বইটিতে বিশেষ কয়েকটি বিষয়ের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। লিডার হওয়ার ক্ষেত্রে প্রথমত নিজের জীবনকে লিড করার কথা বলা হয়েছে এই বইটিতে। এরপর একজন ব্যক্তির জীবনে তার পরিবার কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তার জীবনে মন খুলে কথা বলার মতো কোনো বন্ধু আছে নাকি সেইদিকে দৃষ্টিপাত করা হয়েছে। অতঃপর ক্যারিয়ার গড়া নিয়ে নিজের দৃষ্টিশক্তিকে প্রখর করার উপর জোর দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া কাজী এম আহমেদ ৪টি বইয়ের কথা বলেছেনঃ The 5 dysfunctions of a team, The Alchemist, Peak, Four Agreements – এই বইগুলো তার জীবনকে সরাসরি প্রভাবিত করেছে।

এখন মনে হতে পারে যে উপরোক্ত বইগুলো সব ওয়ের্স্টান কালচারে লিখা, তা ইর্স্টান কালচারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে কিনা? অবশ্যই কালচারভেদে কিছু পরিবর্তন আসবে, কিন্তু মূলকথা একই। আর তা হল, একজন লিডার হওয়ার আগে সর্বপ্রথম একজন মানুষের মতো মানুষ হয়ে উঠতে হবে। তারপর নিজের পাশাপাশি অন্যকে লিড করাতে মনোনিবেশ করতে হবে।

2
$
User's avatar
@Dipubiswas07 posted 3 years ago

Comments

Why negative?

$ 0.00
3 years ago

Good article dada

$ 0.00
3 years ago

It's very informative article I appreciate it please help me friend I have not increase my point you are power user then if you upvote then my point is increase please help

$ 0.00
3 years ago

My point is nagative (-229) dear

$ 0.00
3 years ago

Same problem I am suffering this problem

$ 0.00
3 years ago

Same

$ 0.00
3 years ago