সিগারেটের ধোঁয়াটা যখন ছাড়িস, মনে হয় পুরোটা গায়ে বুকে পিঠে মেখে নিই। ঠোঁটের কাছে গিয়ে গন্ধটা শুঁকি, তুই হয়তো জানিস না, যে কোনো পারফিউমকে মাত দিতে পারে তোর ওই সিগারেটের গন্ধটা....
তারপর তোকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে ইচ্ছে করে অনেকক্ষণ ধরে, তোর চুলটা ঘেঁটে নাকে নাক ঘষতে ইচ্ছে করে। মেয়েরা জানিস তো যৌনতার থেকেও বেশি উপভোগ করে কাছের মানুষটার আদর....
চোখ বন্ধ করে ভাব জাস্ট বাইরে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি, চারিদিকে লোডশেডিং, আমাদের মাথার কাছে এক টুকরো লাল মোমবাতি জ্বলছে, তুই কিন্তু এক মুহূর্তের জন্যও ছাড়বি না আমায়। আমি কিন্তু অন্ধকারকে ভয় পাই না, গভীর অন্ধকারে তোর গায়ের মিশমিশে গন্ধটা আমায় বড্ড টানে....
বরং আমি ভয় পাই অন্ধকারের ভেতর তোকে হারিয়ে না ফেলি...
যাকগে, হালকা শীত পড়বে আমাদের ঘরে, আমরা একটা নরম উষ্ণ রাত গায়ে মেখে দুজনেই দুজনের মুখোমুখি বসবো....
আমার মূল্যহীন শরীরটাকে তোর কালো ছায়ায় ঢেকে দিস প্লিজ, যেভাবে সকালের কুয়াশা ঢাকে ঘাসকে....
আমরা দুজনেই দুজনের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকবো অনেকক্ষন, দুই চোখ বেয়ে আবেগ গড়িয়ে পড়বে। আমরা দুজনেই একটা চাদরের মধ্যে পায়ে পা ঠেকিয়ে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে বসবো, আগুন জ্বালবো ঘরের কোনায়, তুই আমার হাতটা সেঁকে নিজের গালে ধরে থাকিস কয়েক মিনিট....
ব্যাকগ্রাউন্ডে একটা পুরোনো দিনের গান চালাবো, "অভি না যাও ছোড়কে, দিল অভি ভরা নেহি" কি চলবে তো?
জানি না, আমি আর বেশিদিন বাঁচবো কিনা! তবে ক্যান্সারের থার্ড স্টেজে এসে যত বেশি মৃত্যুকে উপলব্ধি করছি, ততবেশি মৃত্যু আমার কাছে সুন্দর হয়ে উঠছে....
যত বেশি করে মৃত্যুর কাছাকাছি পৌঁছে যাচ্ছি, ততই আমি জীবনকে উপভোগ করতে শুরু করেছি, ততই বেশি আমার নিজেকে ভীষণ হালকা মনে হচ্ছে....
এখন আমি মাকে রান্নাঘরে বসে তরকারি কাটতে দেখি, আগে তো মায়ের হাতে মেখে দেওয়া ভাত খাওয়ারও সময় হতো না আমার। এখন বাবা অফিস যাওয়ার সময় আমি বাবার হাতে রুমাল তুলে দিই, বাবার কপাল বেয়ে গড়িয়ে পড়া ঘাম দেখলে কেমন যেন মায়া লাগে লোকটার প্রতি...
এখন যতই আমার মৃত্যুদিন এগিয়ে আসছে, আমি আমার প্রতিটা কাছের মানুষের জন্মদিন মনে রাখতে শুরু করেছি, কারোর জন্মদিন যেন মিস না হয়....
এখন আমি তোকে আর একটু বেশি করে জড়িয়ে ধরতে শুরু করেছি, আগে যেমন কথায় কথায় তোর থেকে দূরে সরে যাওয়ার কথা বলতাম। এখন তোর থেকে দূরে সরে যাওয়ার কথা ভাবলেও বুক কেঁপে ওঠে....
দেখ না, আমার ক্যানসার হয়ে ভালোই হয়েছে, আমরা লিভইন করতাম বলে তোর মা আমায় অলক্ষ্মী বলতো, আর আমার মা তোকে সহ্য করতে পারতো না....
কিন্তু আমার ক্যানসার হওয়ার পর গতকাল তোর মা আমার বাড়িতে এসেছিল আমাদের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে....
জানিস তো কাকিমা কি বললো আমার মাকে!
কাকিমা বললো "আমার লক্ষ্মী বৌমাকে সাজিয়ে গুছিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমার ঘরে পাঠিয়ে দিন"
আমার মা তোর মায়ের হাত ধরে গতকাল কেঁদে ফেলেছে....
তারপর ওরা দুজনে আমাদের ছাদে উঠেছিল, আমার সাজানো বাগান দেখছিল কাকিমা
আমার মা হুট করে চোখের জল মুছতে মুছতে বললো কাকিমাকে,
"আমার মেয়েটা হয়তো বেশিদিন বাঁচবে না, কিন্তু আপনার মতো শাশুড়ি পেলে ও যে কটা দিন বাঁচবে, সেই কটাদিন ওর জীবনে আশীর্বাদ হিসেবে ঝরে পড়বে। ও প্রতিটা মুহূর্তে এক একটা জীবন বাঁচতে পারবে"......
আমি চাকরি করতে করতে হাঁপিয়ে উঠেছিলাম, আমি একটা সংসার চেয়েছিলাম। একটা সময়ের পর মানুষ যে কোনো ভালোবাসার বন্ধনে সবচেয়ে বেশি স্বাধীনতা খুঁজে পায়, আমি ভালোবাসায় পরাধীন হয়ে স্বাধীন হতে চেয়েছিলাম.....
ভালোই হলো, আমার ক্যান্সার হয়ে! আমি একটা সংসার পেলাম, আমি অলক্ষ্মী মেয়ে থেকে লক্ষ্মী বৌমা হয়ে উঠতে পারলাম....
https://read.cash/@Zayed500/we-love-muhammad-096b43f2