নীলপদ্ম

22 56
Avatar for Chomok15
4 years ago

ফুলের বিছানায় একে অপরকে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে রয়েছে দুজন মানব-মানবী। রাতের নিরবতায় এবং স্নিগ্ধতায় সুখ কুড়াতে ব্যস্ত তারা। শ্বাসের উষ্ণতা বাড়ছে, একে অপরের সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে, এই মিলনের মাঝে নেই কোনো অশ্লীলতা, আছে কেবল কিছু যন্ত্রণা, কিছু ভালোলাগা, কিছু শান্তি, কিছু নেশা, কিছু কাঙ্খিত মুহুর্তের অবয়ব দৃশ্য আর অজস্র ভালোবাসা। অন্ধকার রাতের গভীরতার আড়ালে ভালোবাসার পূর্ণতা ঘটছে, মিলনের দরজায় কড়া নাড়ছে হৃদয় এবং তার প্রেয়সী। প্রেয়সীর কপালে আলতো ঠোঁটের পরশ দিয়ে হৃদয় বলে,

- ভালোবাসি, খুব ভালোবাসি প্রেয়সী তোমায়।

হঠাৎ করে মনে হতে লাগলো হৃদয়ের পাশে থাকা মানুষটি হাওয়ায় মিলিয়ে যাচ্ছে, হৃদয় এবং তার প্রেয়সীর ফুলে ফুলে সজ্জিত রুমটি যেনো ধীরে ধীরে বদলে অন্ধকার কালকুঠরীর রুপ নিতে লাগলো। হৃদয়ের হাতে শক্ত করে ধরে থাকা হাতটি ও যেনো হাওয়ায় মিশে যাচ্ছে। চোখের নিমিষেই তার প্রেয়সী উধাও হয়ে গেলো। হ্রদয়ের বিছানাতে পড়ে রয়েছে শুধু পাঁচটি নীলপদ্ম। হৃদয় দৌড়াচ্ছে, হন্যে হয়ে খুজছে তার প্রেয়সীকে। কিন্তু তার চিহ্নটুকু যেনো হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। একটা সময় হাল ছেড়ে হাটু গেরে “প্রেয়সী”, “প্রেয়সী” বলে চিৎকার করতে থাকে হৃদয়। হাতের মুঠোতে এখনো রয়েছে সেই নীলপদ্মগুলো। নীলপদ্মগুলো ধীরে ধীরে শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। হৃদয়ের চোখজোড়াও বন্ধ হয়ে আসছে। সব আবছা আলোয় মিলিয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে এই বুঝি তার প্রেয়সী তাকে ডাকছে, তাকে ডাকছে।

হঠাৎ লাফ দিয়ে বিছানায় শোয়া থেকে উঠে যায় হৃদয়। কপালে তার বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছে, গলা যেনো শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে। বিছানার সাইড টেবিল থেকে গ্লাসটি নিয়ে ঢকঢক করে পানিটুকু খেয়ে নিলো সে। ঘড়ির কাঁটাটি ৪টার ঘর ছুই ছুই করছে। আশেপাশে চোখ বুলিয়ে দেখলো সে তার রুমেই রয়েছে, তাহলে কি এসব কেবলই স্বপ্ন ছিলো। হতে পারে, বিগত দু বছর ধরে এরুপ স্বপ্ন যে তাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। চোখের কোনায় পানি জমতে লাগলো, ভালোবাসার মতো নির্মম বেড়াজলে আজ সে জর্জরিত। না জানে কবে মুক্তি হবে তার, কবে খুজে পাবে তার প্রেয়সীকে। আনমনেই বলতে থাকে,

- কোথায় প্রেয়সী? তুমি কোথায় হারিয়ে গেলে?

প্রেয়সীর কথা ভাবতে ভাবতেই অতীতের পাতা উলটাতে লাগলো সে।

তিন বছর আগে,

প্রচন্ড বেগে গাড়ি চালাচ্ছে হৃদয়। পুরো নাম শেখ হৃদয় আহসান। শেখ গ্রুপের এম.ডি সে। শহরে কম বয়সী ব্যবসায়ীদের একজন। চিটাগাং হাইওয়ে তে এত জোরে গাড়ি চালানোটা মোটেই ভালো কিছু নয়। কিন্তু গাড়ির ব্রেক যে কিছুতেই কাজ করছে না। আজ একটা মিটিং এর জন্য তাকে ইমার্জেন্সি চিটাগাং যেতে হবে। তাই অফিসে মিটিং সেরে অফিস থেকে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো সে। প্রথমে বুঝতে না পারলেও হঠাৎ অনুভব করলো গাড়ির ব্রেকটা আজ কাজ করছে না। তাই গাড়ির গতি কোনো মতেই কমানো যাচ্ছে না। হাইওয়েতে প্রচুর বাস এবং ট্রাকের আনাগোনা। প্রতিটির বেগ অত্যাধিক। মাথা যেনো কাজ করতে চাচ্ছে না হৃদয়ের। সকাল অবধিও গাড়িতা ভালোই ছিলো কিন্তু এখন ব্রেক নষ্ট হবার কি মানে এটাই মানায় আসছে না। মৃত্যুকে যেনো চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছে সে। হঠাৎ সামনে ট্রাক আসতে দেখে সেটাকে ক্রস করতে যায় হৃদয়। কিন্তু ভাগ্যের নির্মমতা গাড়ি ব্যালেন্স হারিয়ে রাস্তার পাশে এক্সিডেন্ট করে। হৃদয়ের সামনে সব কিছু যেনো অন্ধকারে ছেয়ে যায়।

হৃদয় যখন চোখ খুলে তখন সে হাসপাতালের কেবিনে, চোখ খোলার পর ও সে কেবল অন্ধকার ই দেখতে পায়। হৃদয়কে যখন ডাক্তার জিজ্ঞেস করে,

- এখন কেমন লাগছে মি. হৃদয়?

প্রতিউত্তরে হৃদয় বলে,

- এখন কি অনেক রাত? আপনারা রুম অন্ধকার করে রেখেছেন কেনো?

- মি. হৃদয় এখন সকাল ১০টা বাজে, আর রুম একদম আলোকিত। আপনি কি আমায় দেখতে পাচ্ছেন না?

- ডাক্তার আমি কিছুই দেখতে পাচ্ছি না, আমি কিছুই দেখতে পারছি না।

হৃদয়ের কথাটি শোনামাত্র নূর বেগম কান্নায় ফেটে পড়েন। স্বামী গত হবার পর ছেলেই তার সব কিছু ছেলেটিও যদি এভাবে অন্ধ হয়ে যায় তবে কি হবে। হৃদয় একা হাতে ব্যবসা, ঘর সব সামলেছে। কিছুদিন পর তার বিয়ে, এখন এই বিপদ কিভাবে সামাল দিবে! বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে বুঝা যায় এক্সিডেন্টের কারণে হৃদয়ের চোখের কর্ণিয়ায় আঘাত পায়। কিছু সেল ও ড্যামেজ হয়ে গেছে। ডাক্তাররা তাকে দেশের বাহিরে পাঠিয়ে দেবার কথা বলে। নূর বেগম কোনো চিন্তা ছাড়াই রাজী হয়ে যান হৃদয়কে বিদেশে পাঠানোর জন্য। অ্যামেরিকার ক্যালিফোর্ণিয়াতে হৃদয়কে পাঠানো হয়। ক্যালিফোর্ণিয়ায় একজন বন্ধু থাকায় তার থাকার ব্যবস্থা খুব সুন্দর করাই হয়ে যায়। হৃদয়ের অসুস্থতার খবর গোপন রাখার জন্য চিকিৎসার সময়কালীন থাকার জন্য একটি এক রুম, হল এবং কিচেনের খুব ছোট ফ্লাট ভাড়া করে দেয় হৃদয়কে। হৃদয় চিকিৎসাকালীন সময় সে একা একাই সেখানে থাকতে চেয়েছে। কোনো পরিচিত লোক তার আশেপাশে ছিলো না। তার ভাড়ি ওয়ালি ছিলেন দেশি, তাই হৃদয়ের বন্ধু রাফিন তাকে হৃদয়ের দেখভালের দায়িত্বটি ও দেয়। মহিলা ছিলেন বৃদ্ধা এবং একা একজন মানুষ। তার কোনো আত্নীয় স্বজন কেউ ই ছিলো না। তাই তার থেকে ভরসাবান কাউকেই রাফিন খুজে পায়নি। এভাবেই শুরু হয় হৃদয়ের অন্ধত্ব জীবন।

দিন যেতে থাকে একটা সময় হৃদয় যেনো হাপিয়ে উঠেছিলো, ঠিক তখনই তার জীবনে একজনের আগমন ঘটে। হৃদয়ের বাড়িওয়ালি বৃদ্ধা হবার কারণে হৃদয়ের দেখভাল তিনি করতে পারতেন না, তাই তার ভাতিজি যে কিনা ক্যালিফোর্ণিয়ার এক ভার্সিটিতে পরতো তাকে পার্টটাইমের কথা বলে হৃদয়ের দেখভালের দায়িত্ব দেয়। মেয়েটি পার্টটাইম কিছু ডলার কামাবার জন্য রাজী ও হয়। প্রথম প্রথম হৃদয়ের মুডের সাথে তাল মিলানো প্রায় যেনো অসম্ভব ছিলো তার কাছে। ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে একটা ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়। হৃদয় যখন তার নাম জিজ্ঞেস করতো তখন সে বলতো,

- যেদিন তুমি দেখতে পাবে সেদিন আমাকে আমার নাম বলব। ততদিন না হয় আমি অচেনা ব্যাক্তি হয়েই থাকি তোমার কাছে। একজন অজানা মানুষ যার সবকিছুই তোমার অজানা থাকবে। অনেকটা চিঠির বন্ধুর মতো।

মেয়েটির সবকিছুই যেনো মন ছুয়ে যেতে থাকে হৃদয়ের। একটা সময় সে তার প্রেমে পড়ে যায়। প্রেম গাড় হতে হতে কখন যে ভালোবাসায় পরিণত হয় বুঝতেও পারে না তারা। দেখতে দেখতে ছ মাস কেটে যায়। আবেগের বশে মেয়েটিকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসে হৃদয়। প্রথমে খুব দ্বিধায় পড়ে যায় মেয়েটি, কারণ মা-বাবা দেশে, স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে এসেছে তাও ফুফুর সাহায্যে। বিয়ের ব্যাপারটি তো ছেলেখেলা নয়। হৃদয়কে সে ফিরিয়ে দিলেও হৃদয়ের অবিরাম ভালোবাসাকে সে ফিরিয়ে দিতে পারে না। তারা একটি মসজিদে গিয়ে ধর্মীয়ভাবে বিয়ে করে নেয়। হৃদয় তখন মেয়েটির আসল পরিচয়টুকু জানতে চায় না। বিয়ের দিন তাকে হৃদয় বলে,

- আমার অপারেশন এবং তোমার এক্সামের পর আমরা দেশে যাবো এবং তোমার বাবা-মার কাছে অফিসিয়ালি আমি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাবো। আমি লুকিয়ে নয় সবার সম্মুখে আপন করে নিতে চাই প্রেয়সী।

- আমার নাম প্রেয়সী নয় আমার আসল নাম……

- আমি জানতে চাই না, যেদিন আমি আমার দৃষ্টি ফিরে পাবো আমি সেদিন ই তোমার জানতে চাই। তোমাকে চিনতে চাই প্রেয়সী।

- যদি সেদিন দেখো আমি একটি খুব কুৎসিত নারী তখন? তখন কি এই ভালোবাসার কমে যাবে? আরেকটিবার কি ভেবে দেখা উচিত ছিলো না?

- আমি তোমাকে ভালোবেসেছি তোমার শারীরিক সৌন্দর্যকে না, তুমি যেমন ই হও না কেনো আমি আজীবন তোমায় ভালোবাসবো, আজীবন।

ভালোবাসার আবেগে দুজনই তাদের দাম্পত্য জীবন শুরু করে। দেখতে দেখতে আরো ছয় মাস কেটে যায়, হৃদয়ের অপারেশনের সময় ও ঘনিয়ে আছে। অপারেশনের আগ মূহুর্তে হৃদয় তার প্রেয়সীকে শুধু একটা কথাই বলে,

- আমি চোখ খুলে সবার আগে তোমায় দেখতে চাই প্রেয়সী। সবার আগে তোমায় দেখতে চাই। কথা দাও তুমি আমার ফিরা অবধি অপেক্ষা করবে?

- কথা দিলাম, কথা দিলাম।

এই কথোপকথন টুকুই ছিলো তাদের শেষ কথা, হৃদয়ের চোখ ভালো হবার পর সে প্রেয়সীকে দেখতে অবধি পায় না। মেয়েটি যেনো হাওয়ায় মিলিয়ে গেছিলো। সেই ফ্লাটটি যেখানে তারা থাকতো সেখানে ফিরে গিয়ে মেয়েটির কোনো চিহ্ন অবধি পাওয়া যায় না। শুধু বিছানায় পাঁচটি নীলপদ্ম ছিলো যা প্রতিদিনের মতো মেয়েটি হৃদয়ের জন্য এনে রেখেছিলো। সারা শহর খুজে মেয়েটি এই ফুল প্রতিদিন হৃদয়ের জন্য আনতো। কারণ এটা হৃদয়ের পছন্দের ফুল ছিলো। মেয়েটিকে খুজতে বাড়ি ওয়ালির কাছে গেলে দেখে বাড়িওয়ালি বাড়ি বিক্রি করে চলে গেছে। বিয়ের সময় মেয়েটির পিতার নাম শুধু শুনেছিলো মো. আলতাফ হোসেন। কিন্তু সেই নামের অজস্র মানুষ সারা বাংলাদেশে। মেয়েটি সম্পর্কিত কিছুই হৃদয় জানতো না, তাই ক্যালিফর্ণিয়াতে চাইলেও সে কোনো ক্লু খুজে পায় নি। আজ দুটা বছর হন্যে হয়ে তাকে খুজছে অথচ তার কোনো চিহ্ন সে খুজে পায় নি। রাফিনের সামনেও কোনোদিন মেয়েটি আসে নি, বিধায় রাফিন ও তাকে দেখেনি। মোট কথা মেয়েটি যেনো হাওয়ায় উবে গেছে, যাকে খুজে পাওয়া হয়তো এ জীবনে হৃদয়ের দ্বারা সম্ভব নয়____

সকাল ৯টা,

ডাইনিং টেবিলে নূর বেগম এবং হৃদয় মুখোমুখি বসে রয়েছে। নূর বেগমের মুখ ভার, ছেলেকে বিয়ের জন্য রাজী করাতে পারছেন না। তার ইচ্ছে হৃদয়ের বাবার বন্ধুর মেয়ে নিশাতের সাথে হৃদয়ের বিয়ে দিতে, বিয়েটি তিন বছর আগেই ঠিক ছিলো কিন্তু হৃদয় সুস্থ হয়ে আসার পর থেকে কিছুতেই বিয়েতে সম্মতি দিচ্ছে না। সে নাকি তার প্রেয়সীকে বিয়ে করেছে এবং তাকেই তার বউ হিসেবে মেনে নিয়েছে। মেজাজ অত্যন্ত খারাপ নূর বেগমের, না পেরে ছেলেকে বলেই দেয়,

- আমার আর ভালো লাগছে না হৃদয়, মানুষের ধৈর্যের একটা সীমা থাকে। আমার বয়স হয়েছে আমাকে……

- আমার ও ধৈর্যের লিমিট আছে, সেটাকে ভাঙ্গতে যেয়ো না মা। আমি ছেলে হিসেবে তোমার কথা মেনে আসলেও এটা মানতে পারবো না। সরি, আমার লেট হচ্ছে আমি বেরোচ্ছি।

শক্ত কন্ঠে কথাগুলো বলেই উঠে গটগট করে হাটা দিলো হৃদয়। নূর বেগম ভ্রু কুচকে হৃদয়ের যাওয়ার দিকেই তাকিয়ে রইলেন। তার হাত যে বাধা, ছেলে যে তার নাছোড়বান্দা।

অফিসে পৌছে মার রাগ প্রতিটি স্টাফদের উপর ঝাড়তে লাগলো হৃদয়। মায়ের সাথে বেয়াদবি করার মত ছেলে সে নয়। আজ সারাটাদিন ঘায়েল বাঘের মতো সবার সাথে হুংকার দিয়ে বেরাবে এটা যেনো সবার জানা। তাই সবাই প্রায় ভয়ে শিটিয়ে আছে। মিটিং রুমে প্রজেক্ট ডিরেকটরের দেরি হওয়াতে বিগত পনেরো মিনিট বসে থাকার পর সবার উপর ইচ্ছে মতো রাগ ঝেড়েই বেরিয়ে যেতে নিলেই এক চেনা কন্ঠ শুনতে পায়,

“মে আই কাম ইন?”

কন্ঠটি শুনে যেনো স্তব্ধ হয়ে যায় হৃদয়। দরজার দিকে তাকাতেই…………………

চলবে

9
$ 0.00
Avatar for Chomok15
4 years ago

Comments

Nice article by you my friend

$ 0.00
4 years ago

Thanks my dear friend

$ 0.00
4 years ago

i can't read this, but i'm visiting anyways. =)

$ 0.00
4 years ago

Thanks a lot, you can subscribe for keeping in touch

$ 0.00
4 years ago

already did!

$ 0.00
4 years ago

❤️

$ 0.00
4 years ago

Golpo ta onek valo legeche apu. Next part er opekkhay roilam. Good job.

$ 0.00
4 years ago

Thanks ..keep in touch !

$ 0.00
4 years ago

Beautiful article dear.💝💝

$ 0.00
4 years ago

Wonderfully written article dear

$ 0.00
4 years ago

Good story dear.

$ 0.00
4 years ago

Thanks, keep in touch

$ 0.00
4 years ago

Interesting story

$ 0.00
4 years ago

Thanks a lot

$ 0.00
4 years ago

Nice article dear...

$ 0.00
4 years ago

Thanks for going through the story

$ 0.00
4 years ago

Wow wonderful article

$ 0.00
4 years ago

Thanks my friend, keep supporting

$ 0.00
4 years ago

Ok dear you are most welcome

$ 0.00
4 years ago

❤️

$ 0.00
4 years ago