১.
মুত্তালিব হোসেন এর বয়স গত মাসে ৬৬ পার হল। এখন সে দাদু হয়েছে। তার নাতি রিপনের ১০-১১ বছর। বয়সে কম হলে হবে কি? রাগ অনেক। কথায় আছে ছোট সাপের বিষ বেশি। তেমনই রিপন বয়সে ছোট। কিন্তু একটুতেই রেগে যায়।তার রাগ তার দাদু ছাড়া কেউ ভাঙাতে পারেনা। তাদের সম্পর্ক টা অনেকটা আগুন-পানি এর মত। পানি যেমন আগুন নেভায়, তেমন রিপনের দাদু রিপনের রাগ ভাঙায়। রিপনের রাগও যেন আগুন। রিপন সবার উপর রাগ করলেও তার দাদুর উপর রাগ করতে পারেনা। তার দাদু মানুষটাই মজার। রিপনকে মজার মজার গল্প বলে। তার দাদুর গল্প শুনলেই রিপনের রাগ ভেঙে যায়। রিপনের এই পৃথিবীতে সবচেয়ে ভালো বন্ধু তার দাদু। রিপনের মন খারাপ হলেও তার দাদুই তার মন ভালো করে। একদিন রিপন স্কুল থেকে ফিরে খুব কাঁদছিল। কেউ জিজ্ঞেস করলেও কিছু বলছিল না। পরে তার দাদু তাকে আলাদা একটা ঘরে গিয়ে বলল,''কি হয়েছে দাদুভাই। আমাকে বল''
''দাদু আমার স্কুলে আজ স্যার আমায় বকেছে।''
'' দুষ্টুমি করলে তো বকবেই। এতে কাঁদার কি আছে? ''
''আমি কিছু করিনি। তাও বকেছে। ''
''হা হা হা। তাহলে তো তোর স্যার কাঁদবে যে তিনি একজন নির্দোষ ছেলে বকা দিয়েছে। হা হা হা''
দাদুর যুক্তি রিপনের খুব ভালো লাগল। সে কাঁদা থামিয়ে বলল ''একদম ঠিক''। তাই বলে সেও তার দাদুর হাসিতে যোগ দিল।
২.
একদিন মুত্তালিব হোসেন খুব অসুস্থ হল। তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলো। তার পরিবারের সবাই খুব চিন্তিত হয়ে উঠল। ডাক্তার বলেছে যে তার দাদুর ক্যান্সার হয়েছে। সে আর বেশিদিন বাঁচবেনা। এই শুনে সকলেই কেঁদে ফেলল। রিপন কাঁদতে কাঁদতে তার মায়ের কাছে গিয়ে বলল,''মা ক্যান্সার কি?''
তার মা বলল যে সেটা একটা রোগ। রিপন বলল,''তাহলে তো দাদু ওষুধ খেলেই ভালো হয়ে যাবে। ডাক্তার কাকু কেন বলল যে দাদু বাঁচবেনা?''
রিপনের মা অনেক কষ্টে ছেলেকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল যে ''ঠিক বাবা। তোমার ডাক্তার কাকু ভুল বলেছে। তোমার দাদু ঠিক সুস্থ হয়ে যাবে। '' এই বলেই তার মা আঁচলে মুখ ঢাকল।
তার ঠিক দুই দিন পর মুত্তালিব হোসেন রিপন কে দেখতে চাইল। সে রিপন হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকা অবস্থায় বলল,''দাদুভাই তুই বেশি রাগ করিস না। রাগ নিয়ন্ত্রণ করবি। আমি যদি মরে যাই তবে তোর আগুনের মত রাগ কে ভাঙাবে?''
''তুমি মরবে কেন দাদু? মা বলেছে যে তুমি সুস্থ হয়ে যাবে। ''
''ওরে পাগল, কেউই যে চিরদিন বাঁচেনা। সকলকেই তো একদিন মরতে হবেই। ''
''দাদু তুমি মরবেনা। তুমি মরে গেলে আমার মন ভালো করবে কে? আমার রাগ ভাঙাবে কে?''
''বাঁচা -মরা কি আমি নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, দাদুভাই? বাঁচা-মরা যিনি নিয়ন্ত্রণ করে তিনি কিন্তু রাগ পছন্দ করেন না। তাই তুই আমাকে কথা দে যে তুই রাগবিনা!''
''আমি কথা দিলাম, দাদু। কিন্তু তুমি প্লিজ মরোনা। প্লিজ। '' এই বলেই চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করে দিল রিপন। তার দাদুই এবার আর তাকে থামাল না। কারণ সে মারা গেলে কে থামাবে রিপনের কান্না?
Very hurt touching story... Thanks for sharing this story....