Uploaded pic

7 32
Avatar for Arowa
Written by
4 years ago

খাবার টেবিলে বসে আব্বা গম্ভীর মুখে জিজ্ঞেস করলেন, 'ফেসবুকে তোমার সাথে একটা মেয়ের ছবি দেখলাম। মেয়েটা কে?'

আমি আয়েশ করে একটা মুরগির রান চিবাচ্ছিলাম, আব্বার কথা শুনে খাবার গলায় আটকে গেল। কাশতে কাশতে বললাম, 'কই, কোনো ছবি তুলি নি তো। আপনি কোথায় দেখলেন?'

'কোথায় আবার দেখবো? ফেসবুকেই দেখেছি। কে মেয়েটা?'

ফেসবুকে কেবল একটা মেয়ের সাথেই আমার ছবি আছে, মেয়েটা হলো মেঘা। বুঝলাম ওর ছবিই দেখেছেন আব্বা। আমতা আমতা করে আব্বাকে বললাম, 'ওটা, আমার বন্ধু।'

'বন্ধু? বন্ধুর সাথে কেউ এভাবে ছবি তোলে?'

মুখ শুকিয়ে গেল। কি বলবো ভাবছি, এর মধ্যেই আম্মা বাঁচিয়ে দিলেন। আব্বাকে বললেন, 'আপনি খান তো। এখন যুগ এমনই, বন্ধু-বান্ধবরা ওভাবেই ছবি তোলে। পিয়াল, খাওয়া শেষ কর। ওভাবে আর তুলবি না ছবি, কেমন?'

আমি কোনোরকমে তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করে উঠে পড়লাম। রুমে যাওয়ার সময় শুনলাম আব্বা আম্মাকে বলছেন, 'তোমার ছেলেটা নষ্ট হয়ে গেছে।'

রুমে এসে তাড়াতাড়ি মোবাইলটা হাতে নিয়ে ফেসবুকে ঢুকলাম। প্রোফাইলে ঢুকে মেঘার আর আমার ছবিটা দেখলাম আবার। হ্যাঁ, ঠিকই তো আছে, একমাস আগে ওর সাথে ব্রেকআপের পর যেভাবে 'অনলি মি' করে রেখেছিলাম ছবিটা, তেমনি আছে এখনো। তাহলে আব্বা আমার ছবিটা কিভাবে দেখলেন?

হতে পারে মেঘাই আবার আপলোড করেছে ছবিটা, কোনোভাবে আব্বা সেটা দেখেছেন। মেঘার প্রোফাইল দেখা দরকার, কিন্তু দেখতে পারছি না। ব্রেকআপের পরপরই ও ব্লক করে দিয়েছে আমাকে। আমার কোনো ফেক আইডিও নেই যে ওটা দিয়ে খোঁজ নিবো। সবচেয়ে ভালো আইডিয়া যেটা মনে হলো, অর্পাকে ফোন দেয়া।

অর্পা মেঘার বন্ধু, আমাদের রিলেশনের সময় ওর সাথেও বেশ ভালো খাতির হয়ে গিয়েছিলো আমার। কিন্তু ব্রেকআপের পর এতোদিন আর কোনো যোগাযোগ ছিলো না। আজ এতোদিন পর আমার ফোন পেয়ে তাই বেশ অবাক হয়েই ও জিজ্ঞেস করলো, 'পিয়াল ভাই। আরে এতোদিন পর, ভুলে ফোন দিলেন নাকি?'

'আরে না, তোমাকে কি করে ভুলি বলো। আচ্ছা অর্পা, বলো তো, মেঘা কি আমাদের কোনো ছবি আপলোড করেছে রিসেন্টলি?'

'না তো। কেন?'

'নাহ। এমনি।'

ফোনটা রাখতে যাবো, সে সময়ই মনে হলো, আজই তো সুযোগ, এতোদিন তো কতো ফোন করতে চেয়েছি অর্পাকে, কিন্তু সাহস হয়নি। ওকে ফোন করতে চাইতাম কেবল একটাই কারণে। মেঘার খোঁজ নেয়ার জন্য। ব্রেকআপের পর মেঘার সাথে যোগাযোগের আর কোনো উপায়ই ছিলো না আমার।

কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলাম, 'মেঘা কেমন আছে?'

'ভালো।'

'কোনো রিলেশনশিপে যায়নি আর?'

'না। মনে হয় খুব মিস করে আপনাকে, যদিও কখনো মুখে বলেনি। আপনিও তো ওকে খুব মিস করেন, তাই না?'

'জানি না।' বলেই ফোনটা রেখে দিলাম। মেঘার সাথে ব্রেকআপটা হয়েছিলো খুব তুচ্ছ কারণে। কিন্তু ব্রেকআপের পরদিন থেকেই প্রতিদিন মিস করতাম মেঘাকে, কতবার চিন্তা করেছি ওর সাথে সব মিটমাট করে ফেলি। কিন্তু আমার সাহস হয়নি ওর সাথে আবার যোগাযোগ করার।

বিছানায় এলিয়ে দিলাম নিজেকে। খুব খারাপ লাগছিলো। মেঘার কথা মনে হওয়ায় বাবার ছবি দেখার বিষয়টা মাথা থেকে চলে গিয়েছিলো একদম। আবার মনে পড়তেই চিন্তায় পড়ে গেলাম।

আমার আব্বা প্রচন্ড সেকেলে রাগী ধরনের মানুষ। কোনো মেয়ের সাথে সম্পর্ক তো দূরে থাক, কারো সাথে কথা বলেছি জানতে পারলেও তিনি ভয়ঙকর রেগে যান। ক্লাশ টেনে থাকতে একবার পাশের বাসার এক আপুর সাথে ছাদে বসে গান শুনতে দেখে কি মারটাই না দিয়েছিলেন, ভাবলে এখনো বুক কেঁপে ওঠে। আজকেও অল্পের উপর দিয়ে বেঁচে গেছি, যদিও ছবিটাতে তেমন কিছুই ছিলো না। আমি আর মেঘা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ছিলাম, আমাদের মাঝে এক ফুট দূরত্ব ছিলো- এটুকু দেখেই কি ভয়ানক রেগে গেলেন তিনি। আমাদের ক্লোজ ছবিগুলো দেখলে কি করতেন, কে জানে।

কিন্তু ছবিটা তিনি দেখলেন কি করে? বাবার ফেসবুক খুলে দিয়েছি এক সপ্তাহের বেশি হয়নি, ফেসবুকে কেবল আমাদের ফ্যামিলির কয়েকজনের সাথে তাকে অ্যাড করে দিয়েছি, আর কয়েকটা খবরের পেজে লাইক দিয়ে দিয়েছি তার আইডি থেকে। আমার আইডিতে অ্যাড করিনি তাকে। লাইক কমেন্ট শেয়ারের মতো বেসিক জিনিসগুলোও তিনি জানেন না- আমার আইডি খুঁজে সেটাতে ঢুকে 'অনলি মি' করা একটা ছবি কিভাবে দেখলেন তিনি? আরো ভালোমতো খোঁজ নিতে হবে ব্যাপারটা।

পরদিন ক্যান্টিনে বসে চা খাচ্ছি, হঠাৎ দেখলাম মেঘা আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। সরাসরি জিজ্ঞেস করলো, 'তুমি কাল অর্পাকে ফোন দিয়েছিলে?'

'হ্যাঁ।'

'কেন?'

'এমনিই। কোনো কারণ ছিলো না।'

'আমি জানি কি কারণ। আমার খোঁজ নিতে চাও তো আমাকেই তো সরাসরি ফোন দিতে পারতে।'

আমি অবাক হয়ে বললাম, 'তুমি যে বলেছিলে, আর কখনো যেন যোগাযোগের চেষ্টা না করি?'

মেঘা রেগে বললো, 'তুমি একটা হাদারাম। এমন একটা হাদারামকে নিয়ে আমি সংসার করবো কি করে?'

বাসে চড়ে বাড়ি ফিরছি বিকেলবেলা। খুব ফুরফুরে লাগছে আজকে। আজ সারাদিন মেঘার সাথেই ঘুরেছি, এতো এতো ছবি তুলেছি আমরা, সবগুলো টাইমলাইনে পোস্টও করেছি সাথে সাথে। ওর সাথে আমার ব্রেকআপের কারণটাও ছিলো আসলে এই ছবি পোস্ট নিয়েই। আমি আমাদের কোনো কাপল পিক আপলোড করতে চাইতাম না ফেসবুকে, ভয় হতো কেউ হয়তো ছবিগুলো বাবাকে দেখিয়ে দেবে। কিন্তু মেঘা ভুল বুঝতো আমাকে, ভাবতো আমাদের সম্পর্ক নিয়ে আমি খুব একটা 'সিরিয়াস' না,তাই আপলোড করতে চাই না ছবিগুলো। আজ আমার সিরিয়াসনেস বোঝাতে সবগুলো ছবিই আপলোড করে দিলাম, অবশ্যই 'ফ্রেন্ডস' করে, তাহলে আব্বা আর ছবিগুলো দেখতে পাবেন না। কিছু অন্তরঙ্গ ছবিও দিলাম,থাক না আজকের কিছু স্মৃতি তুলে রাখা। ছবিগুলো অবশ্য 'অনলি মি' করে রাখা, কেউ দেখতে পারবে না আমি ছাড়া।

বাবার ছবি দেখার রহস্যেরও সমাধান করে ফেলেছি। ছবিটা ফেসবুকেই আপলোড করা হয়েছিলো, তবে অন্যভাবে। অর্পা কিছুদিন ধরেই নাকি প্রেমের গল্প লিখে বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করছে। আমাদের ছবিটা ওর কাছে ডাউনলোড করা ছিলো, মেঘার অনুমতি নিয়েই কোনো একটা গল্পের সাথে ও দিয়ে দিয়েছে ছবিটা। মেঘার কাছ থেকে কথাটা শুনে সব কিছু পরিষ্কার হয়ে গেল আমার কাছে। তার মানে আব্বার কোনো ফ্রেন্ডই হয়তো লাইক দিয়েছিলেন গল্পটাতে, আর তার জন্য আব্বার নিউজফিডেও চলে এসেছে গল্পটা, সাথে ছবিটাও। যাক,শান্তি। মেঘাকে বললাম এরপর থেকে অর্পাকে যেন আমাদের কোনো ছবি ব্যবহার করতে না দেয়।

বাসে বসে এসবই ভাবছি, এসময় এক ফোন এলো। আমার বন্ধু মাহিমের ফোন। ফোন ধরতেই ও বললো, 'দোস্ত, পরশুদিন যে ফাইলটা আমাকে দিয়েছিলি ফেসবুকে, ওটা ওপেন হচ্ছে না। আবার দে তো ফাইলটা।'

'আচ্ছা, দিচ্ছি।' বলেই মোবাইল চেক করতে বসলাম ফাইলটার জন্য। এসময়ই একটা কথা মনে পড়তেই মুখটা শুকিয়ে গেল।

পরশুদিন মাহিম ফোন করে একটা ফাইল দিতে বলেছিলো ম্যাসেঞ্জারে, কিন্তু আমার মোবাইলের কি না কি সমস্যার জন্য ফাইলটা আপলোড হচ্ছিলো না। বাধ্য হয়েই বাবার পিসিতে বসলাম। বাবা নিজের পিসি থেকেই ফেসবুক চালান। বাবার আইডি থেকে লগআউট হয়ে আমার আইডিতে ঢুকে মাহিমকে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম ফাইলটা। এরপর কি একটা কাজ মনে পড়তে ফেসবুক লগআউট না করেই পিসি অফ করে উঠে পড়ি আমি।

বাবাকে ফেসবুকে লগইন লগআউটের বিষয়টা বোঝাইনি আমি, এমনকি তার নিজের পাসওয়ার্ডও তিনি জানেন না। তার মানে এতোদিন তিনি সরাসরি ওয়েবপেজের শর্টকার্ট থেকেই ফেসবুকে ঢুকে পড়তেন। আর আমি যেহেতু লগআউট হইনি, তার মানে এ দুদিন থেকে তিনি আমার আইডি চালাচ্ছেন।

হায় হায়। এর মানে তিনি আমার আর মেঘার ছবি কোনো গ্রুপ থেকে না, আমার টাইমলাইন থেকে দেখেছিলেন। নিশ্চয়ই হোমপেজে আমার নাম আর ছবি দেখে ওখানে ঢুকে সরাসরি আমার টাইমলাইনে চলে গিয়েছিলেন। আজও কি তিনি আমার টাইমলাইনে ঢুকবেন? ছবি আপলোড করেছি ঘণ্টাখানেক হয়ে গেছে, আর আব্বা আজকে বাসায়। এতো এতো ক্লোজ ছবি, দুএকটা দেখে আমার নিজেরই লজ্জা লাগছিলো। আব্বা ঐ ছবিগুলো দেখলে কি করবেন? নাহ, ভাবতে পারছি না আর।

তাড়াতাড়ি মোবাইলটা বের করলাম, ছবিগুলো ডিলেট করতে হবে, এখনই। ফেসবুকে ঢোকার আগেই আব্বার ফোন চলে এলো।

আমি কাঁপা কাঁপা হাতে ফোন ধরে বললাম, 'হ্যালো। আব্বা।.'

'কোথায় তুই?'

'জ্বি, বাসায় আসছি।'

'হ্যাঁ, তাড়াতাড়ি আয়। বন্ধুর সাথে কিভাবে ছবি তুলতে হয়, সব কড়ায় গন্ডায় শেখাবো আজকে তোকে

10
$ 0.00
Avatar for Arowa
Written by
4 years ago

Comments

কাশতে কাশতে বললাম, 'কই, কোনো ছবি তুলি নি তো। আপনি কোথায় দেখলেন?'

$ 0.00
4 years ago

Onkk beautiful article likhecen apu. Asole mon chuye gelo apnar article er proti ta word. Onkk onkk dhonnobad for your nice article. Erokom r o sundor sundor article er jonno opekkhai thaklam apu

$ 0.00
4 years ago

subcribe তুমিও যদি করো তাহলে লাইক কমেন্ট করবো যদি তুমিও কর,,,,,,, পাশে আছি পাশে থেকো

$ 0.00
4 years ago

গল্পটা অনেক সুন্দর লেগেছে। সত্যি এমন বাস্তববাদী গল্প পড়ে অনেক উপকৃত হলাম। আশা করি আমাকে একটু সাপোর্ট দিবেন।

$ 0.00
4 years ago

ভালো লাগলো 😘 Ami ai site a new sobai help koro amai 😢

$ 0.00
4 years ago

Onek valo lagce Apu.. Thanks ato sondor article share korar jnne...

$ 0.00
4 years ago