একটি অসাধারণ গল্প

2 17
Avatar for Amelia2
3 years ago

#গল্প_অনন্যময়ী

#পর্ব_৩

#হিমু

,

,

অনন্যময়ী কখনও ওর বাবার জন্য বায়না করেনি। রিয়ান মাসে দুইবার বাসায় আসে।মেয়ের সাথে দেখা করে হোটেলে রাত কাটিয়ে চলে যায়।ওই একটা দিনের পর আর কখনও রিয়ানের সাথে আমার শারীরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি।আর প্রশ্নও আসেনা।আমি কখনও রিয়ানকে রাতে থাকার জন্য বলিওনি।নারী, পুরুষ যারা অতীতে স্বামী-স্ত্রী ছিলো, কোনো এক ভুলে তাদের মধ্যে একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছিলো সেটার পুনরাবৃত্তি আমি চাইনা বলেই রিয়ানকে কখনও রাতে থাকতে বলিনি।

একদিন সকালে মেয়েকে তৈরি করছিলাম স্কুলের জন্য, হঠাৎ করে কেউ বাসার দরজায় নক করলো।দরজা খোলার পর দেখতে পাই রিয়ান এসেছে। বসতে বললাম ওকে।

" কি ব্যাপার তুমি এখন? অসময়ে? "

" আসলে কথাটা কিভাবে বলবো বুঝতেছিনা। নীরা মানে আমার স্ত্রী কাপড়ে পেঁচিয়ে পড়ে গিয়েছিলো।আমাদের বাচ্চাটা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। "

আমার শুনে খুবই খারাপ লাগলো।একটা বাচ্চা যার ভূমিষ্ঠ হওয়ার কথা ছিলো কিন্তু সে পৃথিবীর আলোই দেখতে পেলোনা। এর থেকে দুঃখজনক আর কি হতে পারে!

" তোমার স্ত্রী এখন কেমন আছে? "

" ওর মানসিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। রুম থেকে বের হয়না।আলো জ্বালেনা। শুধু কান্না করে। "

" ইশ! এখন কি করবে? "

" সেজন্যই তোমার কাছে আসা। "

" বুঝলাম না। "

" চিকিৎসকের কাছে গিয়েছিলাম।সে বলেছে নীরা একটা মানসিক ট্রমাতে আছে। দ্বিতীয়বার বাচ্চা নিলে সেটা দূর করা সম্ভব।কিন্তু...! "

" কিন্তু? "

" নীরার যেই অবস্থা এই মুহূর্তে ওর সাথে ওই সম্পর্কে লিপ্ত হওয়া সম্ভব নয়। "

" সুতরাং? "

" আমি অনন্যময়ীকে কয়েকটা দিনের জন্য আমার সাথে নিয়ে যেতে চাচ্ছি। "

আমার বুকটা ধক্ করে উঠলো। এ কি বলছে রিয়ান? আমি অনন্যময়ীকে ছাড়া এক মুহূর্ত কল্পনা করতে পারিনা।সেখানে আমার সন্তান যে কিনা রিয়ানেরও সন্তান সেখানে আমি কি করে বাঁধা দিতে পারি? কিন্তু পারি।সেই অধিকার আমার আছে।আর অনন্যময়ীর এই যাওয়াটা যদি চিরজীবনের জন্য হয়? না আমি আর কিছু ভাবতে পারছিনা।

" রিয়ান আমাকে একটু সময় দেও। অনন্যময়ীকে স্কুলে দিয়ে আসতে হবে। "

" হ্যাঁ চলো।আমিও সাথে যাচ্ছি। "

" না। তার দরকার নেই। "

" কেন আমি গেলে কি সমস্যা? "

" এমনিই।তুমি ক্যাফে নাইন্টিতে ওয়েট করো।ঘন্টা তিন পর আমি সেখানে আসবো। "

অনন্যময়ীকে স্কুল গেটে পৌঁছে দিয়ে আমি রেস্টুরেন্টে চলে যাই। সেখানে গিয়ে দেখলাম রিয়ান অপেক্ষা করছে।আমি ওর সামনের চেয়ারটাতে গিয়ে বসলাম।

" তো কি জানি বলছিলে? "

" অনন্যময়ীকে আমার দরকার।"

" কিন্তু অনন্যময়ীর তো তোমাকে দরকার নেই। "

" এভাবে বলছো কেন? "

" অনন্যময়ী তোমার সাথে যাবেনা। "

" কেন যাবেনা? কয়েকটা দিনের জন্য যদি অনন্যময়ী আমার সাথে যায় তাহলে কি সমস্যা? নীরা একটু সুস্থ হলে ওকে নিয়ে আসবো। "

" না রিয়ান সেটা সম্ভব নয়। "

" ও আমারও বাচ্চা। আমার অধিকার আছে। "

" ঠিকাছে লিগ্যাল নোটিশ নিয়ে আসো পারিবারিক কোর্ট থেকে। আমি অনন্যময়ীকে যেতে দিবো। "

আমি চলে এলাম।আমি জানি রিয়ান সেটা পারবেনা।কেননা অনন্যময়ী কখনওই রিয়ানের কাছে যাবেনা। ৭ বছরের বাচ্চা যারা বাবাকে ছাড়াই বলতে গেলে বড় হয়েছে, তারা অনেক কিছুই বোঝে।আর অনন্যময়ী তাদের মধ্যে একজন।কখনও বাবার জন্য বায়না করেনা। রিয়ান যে দুইদিন আসে অনন্যময়ীর যতটুকু কথা বলার দরকার ততটুকু বলে। যা জিজ্ঞাসা করে ঠিক ততটুকুর উত্তর দেয়।

কিন্তু রিয়ান সত্যিই লিগ্যাল নোটিশের জন্য কোর্টে গেলো।অনন্যময়ী অপ্রাপ্ত বয়সের বাচ্চা।তাই ও আমার কাছেই থাকবে।এটাই কোর্টের আদেশ। তাও শুধু জানার জন্য অনন্যময়ীকে জিজ্ঞাসা করা হলো, " তুমি কার কাছে যেতে চাচ্ছো? "

অনন্যময়ীর উত্তর ছিলো, " মা। "

রিয়ান দুইমাস আর অনন্যময়ীর সাথে দেখা করতে আসেনি।

একদিন মা কল দিয়ে বললো সে অসুস্থ। ওইদিন অফিসে জরুরি জানিয়ে ছুটি নিয়ে মেয়ের স্কুলে যাই।ওকে নিয়ে কুমিল্লা চলে যাই। ৪ ঘন্টা পরে বাসায় গিয়ে দেখলাম মা কাজ করছে।

" মা, তুমি না বললা অসুস্থ? "

" আগে ফ্রেশ হয়ে নে।তারপর সব বলছি। "

অনন্যময়ী আর আমি ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিলাম। এরপর মা জানালো আমার জন্য একটা সম্বন্ধ এসেছে।ছেলের বিয়ে হয়েছিলো।ডিভোর্স হয়ে গেছে। আমি যেনো একবার দেখা করি। আমি কোনো কথা বললাম না।পরেরদিন সকালে না বলে চলে এলাম। আমি আমার বাচ্চার জন্য একাই যথেষ্ট। অনন্যময়ীর জন্য আমি অন্ধকার তৈরি করতে চাইনা।যদি স্বামী নামক লোকটা আমার বাচ্চার জন্য ক্ষতিকর হয়? বলা তো যায় না! বিশ্বাস একটা বড় জিনিস যেটা সবার প্রতি করা যায়না।

আমার মেয়েটার বয়স এখন ১৬ হয়েছে।রিয়ান বাসায় আসলে সৌজন্যের জন্য যতটুকু কথা বলা উচিৎ ও বলে।আমি কখনও রিয়ান সম্পর্কে ওর কাছে খারাপ কিছু বলিনি। তাও রিয়ানকে অনন্যময়ী পছন্দ করেনা।

একদিন রিয়ান অনন্যময়ীকে ওর বাসায় যাওয়ার জন্য বলে।অনন্যময়ী সেদিন বলেছিলো,

" আপনি আমার বাবা ভালো কথা। বাসায় আসবেন। আপত্তি করবোনা।এর থেকে বেশি কিছু আশা করবেন না। "

রিয়ান আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো আমি নাকি এসব ওর মাথায় ঢুকিয়েছি। অনন্যময়ী প্রতিবাদ করলো।

" আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে।আমার মা এর একটা ডায়েরী আছে। সেই ৭ বছর বয়স থেকে আমি সেটা মায়ের অজান্তে পড়ি।প্রতিটা দিনের ঘটনা সেখানে লেখা আছে।মা ঘুমিয়ে যাওয়ার পর তা আমি পড়ি। আমাকে বড় করার জন্য কি কি ত্যাগ স্বীকার করেছে সব লেখা আছে।কত নোংরা চোখ থেকে নিজেকে রক্ষা করেছে তা লেখা আছে। সেই ৭ বছর বয়সে আমি কিছুই বুঝতাম না।যা তখন আমার কাছে অস্পষ্ট, এখন সেগুলো আমার কাছে স্পষ্ট। "

রিয়ান সবগুলো কথা চুপচাপ শুনছিলো।একটাও কথা বলেনি। অনন্যময়ীর শেষ একটা কথা হয়তো রিয়ানকে অনেক বেশি আঘাত করেছে।

" শুনলাম আপনাদের নাকি আর কখনও বাচ্চা হবেনা। আপনার স্ত্রী নাকি কোনো একটা দুর্ঘটনায় মা হওয়ার ক্ষমতা হারায়। আপনি ভালো আছেন তো? "

4
$ 0.15
$ 0.15 from @TheRandomRewarder
Avatar for Amelia2
3 years ago

Comments

This is a wonderful story.

$ 0.00
3 years ago