#একটি_ভালো_বাসার_বাস্তব_কাহিনী
ছেলেটির নাম রাফি আর মেয়েটির নাম অজান্তা
রাফি ছিল দূরন্ত আর বাউন্ডুলে একটি ছেলে।
সারাদিন ই বন্ধুদের সাথে আড্ডা আর বাইক নিয়ে ঘুড়ে বেড়াত।
বোনের বাড়িতে বেড়াতে এসে দেখা হয় অজান্তার সাথে।
সেই থেকেই অজান্তার পিছনে রাফির ঘুরা ঘুরি শুরু।
অজান্তা প্রায়ভেট আর স্কুলে যাবার সময় তার পিছু পিছু যায় তার সাথে কথা বলতে চায়। কিন্তু অজান্তা পাত্তা দিতনা রাফি কে।
নাছোড়বান্দা রাফি হাল ছাড়ে নি।
একদিন অজান্তা স্কুল থেকে ফিরার পথে রাফি বাইক নিয়ে হঠাৎ অজান্তার সামনে এসে অনেক জোরে জোরে চিৎকার করে I love u বলে
এ কথা শুনে অজান্তা রাস্তা থেকে বালু নিয়ে রাফির দিকে ছুরতে থাকে আর তখন রাফি বলে "দেখো দেখো পাগলি মেয়ে টা কি করে" বলেই বাইক নিয়ে দ্রুত চলে যায়।
আর অজান্তা বাসায় আসার পথে রাফির বোনের কাছে গিয়ে বিচার দিয়ে আসে।
এদিকে রাফির বোন তার বাবাকে রাফির কর্ম কান্ডের কথা বলে আর সব শুনে রাফি রে তার বাবা অনেক মাইর দেয়।
পরদিন রাফি অজান্তাকে বলে ""এসব কথা বাসায় বলে দিতে হয়"""??
এভাবেই দুটি বছর কেটে যায়....
প্রতি দিন ই অজান্তার পিছু পিছু ঘুরতো আর অজান্তা রাফির সাথে কুকুরের মতো আচরণ করতো।
তার পরেও রাফি হাল ছাড়ে নি।
অজান্তাদের পুকুরের ঘাটে প্রতি রাতেই এসে রাফি আর তার বন্ধুরা বসে বাদাম খেতো আড্ডা দিত আর দিনের বেলায় যখন অজান্তা পুকুর ঘাটে বসতো তখন কাকতালীয় ভাবে রাফির বসার জায়গাটাতেই অজান্তা বসতো।
আর এটা দেখে রাফি তার বন্ধুদের বলতো অজান্তা ও তাকে ভালোবাসে।এমনই অবুঝ ছিলো রাফি।
একদিন অজান্তা কোচিং থেকে বাসায় আসার পথে তার জুতো ছিরে যায় এমন সময় হঠাৎ বাইক নিয়ে রাফি হাজির,,,, বলে তোমার জুতো ছিরে গেছে?এই নাও আমার জুতো পায়ে দিয়ে বাসায় চলে যাও এই কথা বলেই রাফি জুতো খুলে অজান্তা কে দেয় তখন অজান্তা কিছু না বলে রেগে চলে যায় ।
এর মধ্যে অজান্তা রাফি কে নিয়ে স্বপ্ন দেখে..... স্বপ্ন টা এমন ছিলো যে রাফি কিসের একটা বোতল নিয়ে অজন্তা কে দৌড়াচ্ছে।
একই স্বপ্ন সে অনেক দিন দেখেছে।
অজান্তা রাফিকে অনেক ভয় পেতে থাকে।
বেশ কিছুদিন ধরে রাফি অজান্তার সাথে কথা বলতে চাচ্ছে। অজান্তার সাথে রাফির অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে। কিন্তু অজান্তা কিছুতেই রাফির সাথে কথা বলেনা।
রাফি অজান্তার বান্ধবীদের বলে যে অজান্তা যেন একটা মিনিট রাফির সাথে কথা বলে
কিন্তু অজান্তার এক কথা সে রাফি নামে কাউকে চিনে না রাফির সাথে কোনো কথা ও বলতে চায় না ।
অজান্তার আশেপাশের সবাই কে অনুরোধ করে বলে আজান্তা কে যেন একটু বুঝায় রাফির সাথে যেন একটা মিনিটের জন্য হলেও কথা বলে।
কিন্তু অজান্তা ওই একই স্বপ্ন বার বার দেখে অনেক ভয় পায় তাই সে রাফির সাথে কথা বলতে চায় নি আর ওর থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করতো।
অজান্তা কোচিং থেকে বাসায় ফিরছে এমন সময় রাফির একটা বন্ধু অজান্তাকে ডাক দিয়ে বলে "রাফি তোমার সাথে গুরুত্বপূর্ণ একটা কথা বলতে চায় প্লিজ রাফির সাথে একটু কথা বল"
কিন্তু অজান্তা বলে যে তার কথা বলার সময় নাই
ওই ঘটনার ২দিন পর রাফি বাইক এক্সিডেন্ট করে।খুবই খারাপ অবস্থা ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি।
কিন্তু রাফির এক্সিডেন্ট এর কথা শুনে অজান্তার খারাপ লাগেনি। কারন এমন এক্সিডেন্ট রাফির জন্য নতুন কিছু না। বাইক নিয়ে হাই স্পিডে টান দেওয়া আর এক্সিডেন্ট করা টা ছিলো রাফির জন্য খুবই সাধারণ বিষয়। আরো কয়েকবার বাইক এক্সিডেন্ট করে হসপিটালে ভর্তি হয় আর সুস্থ ও হয়ে ওঠে।
কিন্তু এবার আর অন্য বারের মতো হয় নি।
খুবই সিরিয়াস অবস্থা ছিলো রাফির। ৪দিন হসপিটালে ছিলো কিন্তু একবার ও সেন্স আসে নি।
অতঃপর হসপিটালেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে রাফি।
রাফির মৃত্যুর সংবাদ শুনে অজান্তার অনেক খারাপ লাগে । কিন্তু তার খারাপ লাগাটা বেড়ে যায় যখন মাইকে রাফির মৃত্যু সংবাদ প্রচার হচ্ছিল। তখন বার বার রাফির পাগলামী গুলো মনে হচ্ছিলো আর চোখ ভিজে আসছিল।
অতঃপর বিকেলে অজান্তা তার চাচীর সাথে রাফিকে দেখতে যায় ।
কাফন পড়ানো অবস্থায় খাটিয়াতে শুয়ে আছে রাফি।
কোনো�দিন ও অজান্তা রাফির দিকে ভালো করে তাকায় নি কিন্তু আজ রাফির দিক থেকে চোখ সরাতে পারছে না অজান্তা। এতোটাই নিষ্পাপ লাগছিলো রাফিকে অজান্তার ইচ্ছে হচ্ছিল রাফির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে।
হঠাৎ রাফির একটা বন্ধু এসে বলে "সেই তো আসছো কিন্তু রাফি বেঁচে থাকলে তো কখনোই আসতা না। শেষ পর্যন্ত রাফি ই জিতলো। তোমাকে এনেই ছাড়লো তার বাড়ীতে"।
তারপর অজান্তা তার চাচীকে নিয়ে বাসায় চলে আসে।
এখন অজান্তা এক মুহুর্তের জন্যে ও রাফিকে ভুলতে পারছে না।
একটা ই প্রশ্ন ঘুরছে মনে যে রাফি তাকে কি বলতে চেয়েছিল?
রাফির বন্ধুদের জিজ্ঞেস করে কিন্তু রাফির সেই না বলা গুরুত্বপূর্ণ কথা টা কেউ জানেনা।
রাফি হয়তো কথাটা কাউকে বলে নি।
আল্লাহ ও হয়তো চায়নি কথা টা কেউ জানুক।
অজান্তা এখন কাঁদে আর বলে "যদি আমি ১টা মিনি�ট রাফির সাথে কথা বলতাম তাহলে কী এমন ক্ষতি হতো???
অজান্তা এখন প্রায়ভেট বা স্কুলে যাওয়ার সময় রাফির বিরক্ত করাটা কে অনেক মিস করে।
বার বার পিছু ফিরে দেখে রাফি আসে কি না।
কিন্তু রাফি তো না ফেরার দেশে চলে গেছে সেখান থেকে আর কখনোই আসা সম্ভব নয়।
অজান্তা এখন রোজ নামাজ পড়ে রাফির জন্যে দোয়া করে "আল্লাহ যেন রাফিকে বেহেশ্ত নসিব করে�ন."
এ ছাড়া অজান্তা রাফির জন্যে আর কি ই বা করতে পারে???
বিঃদ্রঃ
গল্পটা সত্যি ঘটনা নিয়ে লেখা ।
সবাই এই পাগল ছেলেটির জন্যে দোয়া করবেন।
ঘটনা টা ২০১৭ সালের৷ আজকে এই ছেলেটার মৃত্যুবার্ষিকী সবাই দোয়া করবেন রাফির জন্য৷
khub sundor. but ektu kharap o laglo. mone holo real story. keep it up,