ভ্যাকসিন আবিষ্কার হওয়ার আগ পর্যন্ত বর্তমান বিশ্বের করোনা পরিস্থিতি কন্ট্রোলের সবচেয়ে কার্যকরী পদ্ধতি হচ্ছে আইসোলেশন। মানে আপনি যদি করোনা আক্রান্ত সব রোগীকে আলাদা রাখতে পারেন তাহলেই একমাত্র ভাইরাস ছড়ানো বন্ধ করা সম্ভব। সব করোনা রোগীকে আলাদা করতে হলে দেশের সবাইকে টেস্ট করতে হবে। এটা এখনও সম্ভব না কারণ এত পরিমান টেস্টিং ফ্যাসিলিটি, কিট বা সময় কোনটাই নেই। কিন্তু পুরো দেশ না হলেও করোনা আক্রান্ত স্টেট, শহর বা এলাকার সবাইকে টেস্ট করা গেলেও এটা কন্ট্রোলে আনা সম্ভব। কিন্তু তাতেও একটা বিশাল এমাউন্টের টেস্টিং কিট লাগবে।
সবার জন্য পর্যাপ্ত কিট ম্যানেজ করার আগ পর্যন্ত কম টেস্টিং কিট দিয়ে বেশি টেস্ট করার একটা সলিউশান হতে পারে "গ্রুপ টেস্টিং"। নাম দিয়েই কন্সেপ্টটার একটা আইডিয়া হওয়ার কথা। তাও বিস্তারিত বলছি।
এই কন্সেপ্ট অনুযায়ী যাদেরকে টেস্ট করা হবে তাদেরকে সমান সাইজের গ্রুপে ভাগ করা হয়। ধরুন কোনও এরিয়ায় যদি ১০০ জন মানুষ থাকে এবং তাদেরকে ১০ টি গ্রুপে ভাগ করা হয় তাহলে প্রতি গ্রুপে মানুষ থাকবে ১০ জন। এখন প্রতি গ্রুপের ১০ জন মানুষের স্যাম্পল নিয়ে মিক্স করে একটাই টেস্ট করা হয়। টেস্টের রেজাল্ট যদি নেগেটিভ আসে তাহলে সবার রেজাল্ট নেগেটিভ। আর যদি পজিটিভ আসে তাহলে গ্রুপের যেকোনও ১ জন বা ১০ জনই পজিটিভ হতে পারে। কার পজিটিভ সেটা বের করার জন্য তখন প্রত্যেককে পৃথকভাবে টেস্ট করা যায় অথবা সেই গ্রুপকে আবার ৫ জন করে দুইভাগ করা হবে। প্রতি ভাগের ৫ জনের স্যাম্পল একসাথে করে আবার টেস্ট করা হবে। একইভাবে এগুলোর মধ্যে কোনও গ্রুপের রেজাল্ট যদি নেগেটিভ আসে তাহলেতো সবাই ই নেগেটিভ আর পজিটিভ আসলে আবার ভাগ করে ছোট গ্রুপ করে টেস্ট করা হবে। এতে করে প্রথম পদ্ধতিতে (যেখানে গ্রুপ রেজাল্ট পজিটিভ আসলে সবাইকে আবার পৃথকভাবে টেস্ট করা হবে) ১০ জনের গ্রুপের প্রত্যেককে টেস্ট করার জন্য সর্বোচ্চ ১০ টি টেস্ট (যেখানে প্রত্যেকেই করোনা পজিটিভ) আর দ্বিতীয় পদ্ধতিতে সর্বোচ্চ ১৭ টি টেস্ট (যেখানে প্রত্যেকেই করোনা পজিটিভ) লাগতে পারে অথবা সর্বনিম্ন ১ টি টেস্ট (যেখানে প্রত্যেকেই করোনা নেগেটিভ) দিয়েই প্রত্যেকের রেজাল্ট জানা যেতে পারে। কিন্তু বাস্তবে টোটাল জনসংখ্যার দিক দিয়ে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এখনও অনেক কম। সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের দেশ যুক্তরাষ্ট্রে এই পার্সেন্টেজ এখন ০.১%। তারমানে যদি র্যান্ডমলি ১০ জন করে গ্রুপ করা হয় তাহলে সেই গ্রুপের সবাই করোনা পজিটিভ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক অনেক কম। একটি হিসেব অনুযায়ী যদি ধরা হয় দেশের ২% মানুষ এখন করোনা আক্রান্ত তাহলে সব জনসংখ্যা নিয়ে ১০ জন করে গ্রুপ করলে যে গ্রুপ হবে, তাতে গড়ে ৮২% গ্রুপের সবাই করোনা নেগেটিভ হবে। এবং বাকি ১৮% করোনা পজিটিভ গ্রুপের মানুষদেরকে পজিটিভ নেগেটিভ শনাক্ত করতে আলাদাভাবে টেস্ট করা লাগবে। এভাবে একই পরিমাণ কিট দিয়ে গড়ে প্রায় চারগুণ বেশি টেস্ট করা সম্ভব। এবং এই ক্যাপাবিলিটি আরও বাড়ানো সম্ভব যদি গ্রুপের সাইজ ১০ জন থেকে বাড়ানো যায়।
এই ধরণের টেস্ট প্রথম ডেভেলপ করেন রবার্ট ডর্ফম্যান, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে। সে সময়ে সেনাদের মধ্যে সিফিলিস সংক্রমণ আছে কিনা তা টেস্ট করার জন্য এই ধরণের গ্রুপ টেস্ট ব্যবহার করা হয়েছিলো। করোনা ভাইরাসেও এই টেস্ট এপ্লাই করার জন্য গবেষণা শুরু করেছে ইসরায়েল, নেব্রাস্কা এবং জার্মানির গবেষকরা। এবং নেব্রাস্কার পাবলিক হেলথ ল্যাব এটিকে ইতোমধ্যে এপ্লাই করা শুরু করেছে। মিক্সিং এর কারনে যদি টেস্টিং এর একিউরেসি না কমে যায় তাহলে এই টেস্টের কোনও নেগেটিভ দিক নেই। এবং আশার কথা হচ্ছে, ইসরায়েল ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি এবং জার্মানির গোয়েথ ইউনিভার্সিটির গবেষকদের মতে এই ধরনের স্যাম্পল মিক্সিং টেস্টের একিউরেসিতে এফেক্ট ফেলে না।
আশা করা যাচ্ছে অন্যান্য দেশও এটি শুরু করবে। বাংলাদেশেও এই বিষয় নিয়ে চিন্তা করা উচিত।