ইতিহাস পর্যালোচনা করলে এটি সুস্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হয় যে, বাঙালির ভাগ্য পরিক্রমা চিরদিন ঘড়ির কাঁটার উল্টোদিকে ঘুরেছে। ভাগ্য বিপর্যয় বারবার দাসত্বের আকারে তাদের ললাটলিখন হয়ে আবির্ভূত হয়। ১৭৫৭ সালে পলাশীর ময়দানে লর্ড ক্লাইভের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ বাহিনীর সঙ্গে মরণপণ যুদ্ধে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলা শোচনীয়ভাবে পরাজিত হন। যদিও এ পরাজয়ের অন্যতম কারণ ছিল সিরাজউদ্দৌলার সেনাপতি মীর জাফর আলি খাঁ ও তার অনুচরদের বিশ্বাসঘাতকতা। এ যুদ্ধে পরাজয়ের মধ্য দিয়েই বাংলার স্বাধীনতার সূর্য প্রায় দু শ’ বছরের জন্য অস্তমিত হয়ে যায়। এর পরের ইতিহাস ইংরেজ শাসকদের অত্যাচার, অনাচার, নির্যাতন আর বঞ্চনার নির্মম ইতিহাস। কিন্তু বাঙালি জনগণ কখনোই ওই ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণকে মেনে নেয়নি। এর বড় আকারে প্রকাশ ঘটে ১৮৫৭ সালে। এ সময় জনতার অসন্তোষ সিপাহী বিদ্রোহের আকারে রূপ নেয়, যদিও তা চূড়ান্ত সফলতার মুখ দেখতে পায়নি। পরবর্তীতে বাংলার বীর সন্তান তিতুমীর, টিপু সুলতান ও হাজী শরীয়তুল¬াহ প্রমুখের প্রতিরোধ সংগ্রাম, চট্টগ্রামের বিপ্লবী মাস্টারদা সূর্যসেন প্রমুখের সশস্ত্র প্রতিবাদ।বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনকে রাজনৈতিক রূপ দেয়ার জন্য গঠিত হয় ভারতীয় কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ। এ দুটি দলের মাধ্যমে চলে রাজনৈতিক প্রচেষ্টা এবং অসহযোগ আন্দোলন। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারতবর্ষ দু ভাগ হয়ে পাকিস্তান ও হিন্দুস্তান নামে দুটো স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্ম হয়। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে ভারতবর্ষের পূর্ব ও পশ্চিম এর দুটো অংশ নিয়ে গঠিত হয় পাকিস্তান। কিন্তু পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে দূরত্ব ছিল প্রায় দেড় হাজার মাইলের মতো। স্বাধীন হয়েও পূর্ব পাকিস্তান ধীরে ধীরে পশ্চিম পাকিস্তানের কলোনি হয়ে ওঠে, এখানকার বাঙালিরা আগের মতোই রয়ে গেল বঞ্চিত। পরিবর্তন হলো না তাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার।