রবিবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বৃহস্পতি ও শুক্রবার ট্রাম্পকে দুইবার সম্পূরক অক্সিজেন দেওয়া হয়েছে। তাকে ডেক্সামেথাসন ওষুধও দেওয়া হয়েছে। চিকিত্সকরা আরো জানান, শুক্রবারের সকালের পর থেকে ট্রাম্পের জ্বর নেই এবং পাঁচদিনের কোর্সের রেমডিসিভিরের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার পর তার যকৃত ও কিডনি স্বাভাবিক কাজ করছে।
চিকিত্সক ব্রায়ান গারিবাল্ডি জানান, অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়াতে ট্রাম্পকে ডেক্সামেথাসন ওষুধ দেওয়া হয়েছে। গতকাল তিনি প্রথম ডোজ গ্রহণ করেছেন। আপাতত এই ওষুধ চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। মার্কিন প্রেসিডেন্টকে পরীক্ষামূলক রেজেনেরন ফার্মাসিউটিক্যালের পরিক্লোনল অ্যান্ডিবডি ককটেল দেওয়া হয়েছে। ঐ ওষুধটি শরীরে ভাইরাসের বিস্তার হ্রাস করে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে সহায়তা করে। পাশাপাশি জিংক, ভিটামিন ডি, ফ্যামোটিডিন, মেলাটোনিন ও অ্যাসপিরিন দেওয়া হচ্ছে তাকে। গারিবাল্ডি জানান, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অবস্থা এখন ভাল। তিনি চলাফেরা করছেন। তাকে খাবার খেতে ও পান করতে দেওয়া হবে। সোমবার হোয়াইট হাউজে নিয়ে চিকিত্সা অব্যাহত রাখা হবে।
শনিবার রাতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প টুইটারে ভিডিও বার্তায় বলেন, শারীরিক অবস্থা এখন ভালো, তবে সামনের দিনগুলোতে ‘আসল পরীক্ষা’। ট্রাম্প বলেন, আমাকে সুস্থ করতে সবাই প্রাণান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আশা করি, শিগিগরই প্রচারণার কাজে ফিরতে পারব। যেভাবে শুরু করেছিলাম সেভাবেই শেষ করতে পারব।’ তিনি বলেন, ‘আমাকে ফিরতেই হবে, কারণ যুক্তরাষ্ট্রকে আবারও মহান করতে হবে।’ গতকাল চিকিত্সকদের ব্রিফিংয়ের আগে ওয়ালটার রিড মিলিটারি মেডিক্যাল সেন্টারে ট্রাম্পেরকাজ করার একটি ছবি প্রকাশ করা হয়েছে, যেখানে তিনি একটি সাদা শার্ট পরে আছেন। এ সময় তার পরনে কোনো টাই ছিল না।
শনিবার হোয়াইট হাউজের চিকিত্সক সিন কনলে বলেন, প্রেসিডেন্টের শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে ভালো হলেও শঙ্কামুক্ত নন। আবার হোয়াইট হাউজের চিফ অব স্টাফ মার্ক মিডোজ জানিয়েছেন, এখনো সুস্থতার পথে এগোননি ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত ২৪ ঘণ্টায় ট্রাম্পের অবস্থা বেশ উদ্বেগজনক মনে হয়েছে এবং আগামী ৪৮ ঘণ্টা আরো সংকটপূর্ণ হতে পারে। তিনি বলেন, প্রকাশ্যে যা জানানো হয়েছে তার চেয়েও ট্রাম্পের শারীরিক অবস্থা খারাপ।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজে ভালো দাবি করলেও তাকে ডাক্তারের পরামর্শ অনুসরণ করে চলার পরামর্শ দিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। যিনি করোনায় আক্রান্ত দীর্ঘ সময় হাসপাতালে চিকিত্সা নিয়েছিলেন।
গত বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ও তার স্ত্রী মেলানিয়ার শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়। এরপর ২৪ ঘণ্টা পার হওয়ার আগেই তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হাসপাতালে যেতে রাজি ছিলেন না। উপদেষ্টাদের পীড়াপীড়িতে শেষ পর্যন্ত হাসপাতালে যেতে রাজি হন তিনি। এরপর টানা দুই রাত ধরে হাসপাতালে আছেন ট্রাম্প। হোয়াইট হাউজের তথ্য অনুযায়ী ট্রাম্পকে আরো কিছুদিন সেখানে থাকতে হবে।
ট্রাম্পের বয়স এখন ৭৪ বছর এবং তিনি শারীরিকভাবে স্থূলদের ক্যাটাগরিতে পড়েন, এসব অবস্থা কোভিড-১৯-এর জন্য ঝুঁঁকিপূর্ণ বলে মনে করা হয়। তাকে এখন পর্যন্ত পরীক্ষামূলক কিছু ওষুধ এবং রেমডিসিভির দেওয়া হয়েছে। শন কনলি নিশ্চিত করেছেন যে, ট্রাম্পকে এখনো পর্যন্ত অক্সিজেন দেওয়া হয়নি। এদিকে ট্রাম্পের পর হোয়াইট হাউজে ও তার প্রশাসনের বেশ কয়েক জনের শরীরে করোনা ধরা পড়েছে। সর্বশেষ ট্রাম্পের ব্যক্তিগত সহকারী নিকোলাস লুনা নামের এক কর্মকর্তা আক্রান্ত হয়েছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অসুস্থ হওয়ায় এশিয়া সফর সংক্ষিপ্ত করছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। তিনি মঙ্গোলিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া সফর না করেই জাপান থেকে রবিবার দেশে ফিরছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৩ নভেম্বর জো বাইডেনের মুখোমুখি হবেন ট্রাম্প। নির্বাচনের ঠিক আগে অসুস্থ হয়ে পড়ায় তার নির্বাচনি প্রচারণাও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তবে শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে ট্রাম্পের সুস্থতা কামনায় সমাবেশ হয়েছে। ওয়ালটার রিড হাসপাতালের বাইরেও জড়ো হয়েছে তার সমর্থকরা। এদিকে নির্বাচনের আগে সুপ্রিম কোর্টে ট্রাম্পের এক জন নতুন বিচারক নিয়োগ দেওয়া নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। ট্রাম্প অসুস্থ হওয়ার পর কয়েকজন সিনেটরের শরীরেও করোনার সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এ কারণে শিগিগরই সিনেটে অধিবেশন শুরুর সম্ভাবনা ক্ষীণ বলে জানা যায়।