ভালোবাসার চেয়ে বন্ধুত্ব অনেক দামী

0 3
Avatar for soyed
Written by
3 years ago

ভালোবাসার চেয়ে বন্ধুত্ব অনেক দামী

.

.

.

- এমা তুই রান্না করতে পারিস? (আবির)

- কেন পারবো না…? হুম.? (তিথি)

- না মানে কোনদিন দেখিনি তো তাই।

- আবির তুই না সেই আগের মতই বোকা রয়ে গেলি। একটু ও চেঞ্জ হইলি না। ছোট ছোট বাচ্চা মেয়েরা ও এখন রান্নাবান্না পারে।

- কেমন পারে সেটা আমার ভালো করে জানা হয়ে গেছে।

- আবির তুই আমার রান্না একবার খেলে জীবনেও ভুলতে পারবি না।

- তো দে খাই আর আজীবনের মত তোর রান্নার কথা মনে রাখি।

- নুডুলসটা রান্না করেছি শুধু আমার জন্য। আমার বাবা বললেও দিতাম না শুধু তোরে দেখাবার জন্য এই নুডুলস তোকে খেতে দিচ্ছি।

.

আবির নুডুলস খায় আর হাসে। তিথি কিছুটা চিন্তিত। হাসার কারন কি। ভালো না হলে তো এত তাড়াতাড়ি শেষ করার কথা না। তাহলে কি আমার সাথে চিট করছে।

.

- তিথি তোর হাতের রান্না এত্ত ভালো আগে জানতাম না। আজীবন ঠোটে লেগে থাকবে।

- তাহলে রান্না করার সময় কি বলছিলি?

- আমার কথাটা মনযোগ দিয়ে শোন।

- কি বলবি তাড়াতাড়ি বল।

.

- আসলে হয়েছে কি আজকে আমি ব্রেকফাস্ট করিনি তাই তোদের বাসায় এসে দেখি তুই নুডুলস রান্না করতেছিস। আর তুই তো জানিস নুডুলস আমার প্রিয় খাবারের মধ্যে একটা ভাবলাম নুডুলস দিয়ে ব্রেকফাস্ট করলে মন্দ হয় না তাই একটা বুদ্ধি বের করে তোকে বোকা বানালাম। এখন দেখ কে বোকা আর কে চালাক।

.

- কিহহহহ!! এত্ত বড় চিটিংবাজি আমার সাথে। কুত্তা তুই দাড়া।

- হা হা হা হা হা হা হা। মেয়েদের একটাই সমস্যা কিছু হলেই কুত্তা বলে। বিশেষ করে বন্ধুদের

.

- বের হ আমার বাসা থেকে।

- আচ্ছা গেলাম ভালো থাকিস। বাই

- আজিব তো আমি এমনিতেই বলছি বোকা। আচ্ছা তুই একটুতেই এত রাগ করিস কেন?

- আজ একটা জিনিস বুঝলাম।

- কি বুঝলি?

- কোনো কিছুই স্থায়ী না। বিশেষ করে হাসি।

- একটু আগে তোর সাথে কত হাসলাম আর এখন সেই হাসির মুড নাই।

- আবির তুই আমার কথা সিরিয়াসলি নিলি নাকি??

- আরে নাহ!! কেন জানি হঠাৎ করে হাসি চলে গেলো। মানুষের জীবনটা এরকমই হঠাৎ করে হাসি আসে আবার হঠাৎ করে চলে যায়।

.

- তুই আসলেই পাগল। কি এমন হলো যার জন্য তোর মন খারাপ?? আচ্ছা চল আমরা বাইরে যাই। বাইরে গেলে মনটা ফ্রেশ হবে।

- আচ্ছা।

.

একটা জায়গায় রোজ আবির আর তিথি যায়। নদীর পাড়ে একটা গাছ আছে সেই গাছের নিচে। গাছের নিচে না বসলে তাদের দিন কাটেই না। মনোরম পরিবেশ,নদীর ঢেউ। কোকিলের মিষ্টি মধুর ডাক। বসন্ত ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে কিন্তু আগের মত নেই। দিন যাচ্ছে প্রকৃতি রূপ শেষ হয়ে যাচ্ছে। যাই হোক আবির আর তিথি সেই গাছের নিচে বসলো। আজ আবিরের মন খুব খারাপ।

.

অবশ্য না জানলে বুঝবেন না। তারা একে অপরের খুব ক্লোজ বন্ধু। আবিরের জীবনে কি হয়েছে না হয়েছে সব তিথি জানে আর তিথির জীবনে কি হয়েছে না হয়েছে সব আবির জানে। ছোট্টবেলা থেকে দুইজনে একসাথে বড় হইছে। আবিরের বাবা নেই শুধু মা,এক বোন আর আবির। তিথির মা-বাবা ভাই বোন সবাই আছে।

.

বন্ধু মানে এটাই একজনের মনের কথা আরেকজন জানা। এমন বন্ধুত্ব হাজারে একটা পাওয়া যাবে কি না আল্লাই জানে। বিপদেআপদে যাকে ডাক দিলেই কাছে পাই তাকে জীবনের সঙ্গী ভাবাটা কি বোকামি? হ্যা জীবনসঙ্গী ভাবাটা বোকামি। বন্ধুত্বের মাঝে কাউকে জীবনসঙ্গী ভাবাটাও ভুল তাতে বন্ধুত্বটা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। কিন্তু আমি যেন কিভাবে নিজের অজান্তেই তিথিকে ভালবেসে ফেলেছি নিজেই জানি না এটাই হয়তো প্রকৃত ভালোবাসা হয়তো বা না। আচ্ছা তিথি কি আমাকে ভালোবাসে? মনের মধ্যে অনেক কথা বয়ে বেড়াচ্ছে। আচ্ছা এটা কি আবেগ না কি সত্যি সত্যিই ভালবাসা? কেন জানি মনে হয় তিথিকে না পেলে আমার জীবনটাই ব্যর্থ। আসলেই এমন একটা মেয়ে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। আমার যা আছে তা নিয়েই সন্তুষ্ট আছি কিন্তু যদি তিথিকে পেয়ে যাই তাহলে আমার আর কিচ্ছু লাগবে না। আপনারা ভাবতে পারেন আমার টাকা-পয়সা,বাড়ি গাড়ি আছে। জ্বী না আমার টাকা নাই। বাড়িও নাই। সেটাও ভুল হ্যাঁ টাকাও আছে বাড়িও আছে তবে বিলাসবহুল বাড়ি-গাড়ি, কাড়িকাড়ি টাকা-পয়সা নেই। আমার মা আছে বাবা নেই বোন আছে আর একজন মনের মত মানুষ যাকে নিয়ে দিনরাত স্বপ্ন দেখি। তিথিকে নিয়ে এসব স্বপ্ন দেখাটা ভুল কারণ তিথি আমার বন্ধু আর লাইফে একজন বন্ধু থাকা খুবই প্রয়োজন। ভালোবাসা আজ আছে তো কাল নেই আর বন্ধুত্ব থাকবে আজীবন।

.

প্রতিদিনই দেখা হয় তিথির সাথে। আমি একটু কথা বেশি বলতাম। যার কারনে তিথি মাঝেমধ্যে আমাকে পাগল বলতো। আমার কাছে ভালোই লাগতো তাই বেশি বেশি কথা বলতাম। তিথির কাছে পাগল কথাটা শুনলে অনেক ভালো লাগে। সেদিন যখন তিথির সাথে দেখা হয় আমার গলা শুকিয়ে গেছে কিভাবে বলব যে আমি তোকে ভালবাসি। তিথির সাথে দেখা হলেই অনবরত ঝগড়া হত কিন্তু সেদিন তার উল্টাটা হলো। মুখ দিয়ে কথাই বের হচ্ছে না। আমাকে চুপ থাকতে দেখে তিথি বললো

.

- অই আবির কথা বলিস না কেন? আজ এত চুপচাপ কেন? (তিথি)

- এমনি রে… আজ মুড অফ আছে। (আবির)

আমি নিজের ইচ্ছাই মুড অফ করে রাখছি যাতে ও একটু হলেও বুঝতে পারে। তারপর তিথি যা বলে

- জানিস আবির আজ না আমাকে পাত্র পক্ষ দেখতে আসছিল।

- ওকে আমি গেলাম তুই থাক।

- অই দাড়া পাগল।

তিথির বিয়ের কথা শুনলেই কেন জানি মাথায় রক্ত উঠে। অবশ্য আমার যাওয়ার কথা শুনে তিথি কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছে যে আমি তিথিকে ভালবাসি।

- পাত্রপক্ষ আমাকে দেখে পছন্দ করেছে।

- এসব বলার জন্য বুঝি আমায় দাড় করাইলি??

- আরে আগে শুন না তারপর যা বলার বলিস।

.

আমি রাগ দেখিয়ে সেখান থেকে চলে আসছি। তিথির বিয়ের কথা শুনলে মাথায় রক্ত উঠে। তারপর আমার ফোনে তিথির অনেক কল আসে কিন্তু আমি ধরিনি শেষে তিথি বাধ্য হয়ে আমার বাসায় আসে।

.

- আবির দরজা খোল তা নাহলে দরজা ভেঙে ফেলবো।

- আরে বাবা খুলতেছি দাঁড়া। হ্যা কি বলবি বল? এইভাবে পেত্নীর মত তাকিয়ে আছিস কেন?

- খুন করবো আমি।

- কাকে খুন করবি? আর শুন এসব খুনখারাবির মধ্যে আমি নাই মাফ কর।

- তোরে খুন করবো আমি।

- হে হে হে হে, এতদিন তুই আমাকে পাগল বলতি আজ থেকে আমি তোকে পাগল বলবো।

- অই তুই এইভাবে রাগ করে চলে আসলি কেন?

- এমনি আসছি রে বাদ দে।

- কিচ্ছু বাদ দিবো না। বাবা তোর সাথে কথা বলতে চায় তুই কখন দেখা করতে পারবি?

.

কথাটা শুনে কেমন জানি লাগতেছে তিথির বাবার আমাকে কি প্রয়োজন? হয়তো কোনো প্রয়োজন আছে তাই। মনের মধ্যে অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।

- কি হলো কখন দেখা করবি?

- হ্যা, কাল সকালে।

- আচ্ছা ঠিক আছে আমি গেলাম আর তুই সারাদিন এই ঘরের ভিতর কি করিস? একটু বাইরে হাটাহাটি কর দেখবি মনটা ফ্রেশ লাগবে।

- আচ্ছা করবো এখন তুই যা।

.

তিথির বাবার সাথে দেখা করার কথাটা শুনার পর রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। কিছুতেই ঘুম আসছে না। কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে গান শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকাল বেলা নাস্তাটা কোনোমতে সেরে তিথির বাসায় গেলাম। দেখলাম সবাই একসাথে বসে কি নিয়ে আলাপ করতেছে আমি যাওয়াতে সবাই চুপ। তিথির মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে কিছু একটা হয়েছে। আমি কিছু বলার আগেই চাচা বললো 'আবির' বাবা তোমাকে একটা কথা বলবো। আমি হাসিমুখে বললাম বলুন কি বলবেন। সামনে মাসের ১২ তারিখ তিথির বিয়ে আর তিথির সবচেয়ে ভালো বন্ধু তুমি আর এই বিয়েতে তোমাকে সবকিছু মেন্টেন করতে হবে। পারবে না বাবা?

.

সবকিছু যেনো আমার কাছে অন্ধকার লাগছে। এক মুহুর্তে আমার হাসিমাখা মুখটা অন্ধকারে পরিণত হয়ে গেলো কিন্তু এইটা আমি কাউকে বুঝতে দেইনি। উপরের ফিটফাট ভিতরের চুরমার হয়ে যাচ্ছে। কেউ আমার অবস্থাটা না বুঝলেও তিথি ঠিকই বুঝেছে। আমি চাচাকে বলে দিলাম আপনি কোনো চিন্তা কইরেন না আমি তিথির বিয়ের সবকিছু মেন্টেন করবো। তারপর তিথি ডাক দিলো গেলাম।

.

- আবির কেউ না বুঝলেও আমি ঠিকই বুঝেছি?

- কি বুঝেছিস?

- তুই আমাকে ভালোবাসিস তাই না?

- আরে আমরা একে অপরের বন্ধু তাছাড়া আর কিছু না।

- আমার দিকে তাকিয়ে কথা বল।

- বন্ধুত্বের মাঝে প্রেম- ভালোবাসা এসব নেই। ভালোবাসা আজ আছে তো কাল নেই কিন্তু বন্ধুত্ব আজীবন থাকে। আমি তোর বন্ধু এখনো আছি মরার আগ পর্যন্ত বন্ধুই থাকবো। হয়তো আগের মত আর তোকে পাবো না। ঝগড়া করার জন্য পাবো না। আর কেউ পাগল বলে ডাকবে না। বেঁচে থাকুক আবির আর তিথির মত বন্ধুত্ব।

.

১২ তারিখ আসলো বিয়ে হলো। চলে গেলো তিথি রেখে গেলো তার প্রাণপ্রিয় বন্ধু আবিরকে। স্যালুট এইসব বন্ধুদের যারা প্রেম- ভালোবাসার চেয়ে বন্ধুতটাকে গুরুত্ব দেয়। যারা নিজের জীবন বিসর্জন দিয়ে বন্ধুর জীবনটাকে গুরুত্ব দেয়। স্যালুট তাদের প্রতি যারা ভালোবাসাকে নয় বন্ধুত্বে বিশ্বাসী।

* সমাপ্ত*

1
$ 0.00
Avatar for soyed
Written by
3 years ago

Comments