তখন আমি কচি ছিলাম।
মুরগির রক্ত দিয়ে ক্রাশকে একটা চিঠি লিখে তাকে পটাতে সক্ষম হলাম।
ধুমছে প্রেম চলছে আমাদের।
একদিন গার্লফ্রেন্ড পাঞ্জাবী পড়ে দেখা করতে বললো।
আমি পাঞ্জাবী পড়ে একটা দৌঁড় দিলাম পার্কের উদ্দেশ্যে।
রাস্তার সবাই আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে।
পার্কের এক কোনে মারিয়া বসে ছিল।
আমাকে দেখেই সে চোখ বুঝে উল্টো ঘুরলো, বললাম....
-কি হলো, লজ্জা পেলে বুঝি?
--তুমি এটা কি পরে এসেছো?
-কেন পাঞ্জাবী!
--কুত্তা ওটা পাঞ্জাবী?
-গালি দেও কেন?
--নিজের দিকে তাকাও, ছিঃ তুমি এত নিচ।
আমি আহাম্মক হয়ে গেলাম।
আশ্চর্য এভাবে বকা দেওয়ার কি আছে?
আমি নিজের তাকাতেই শকড খেলাম। গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করব ভেবে সেই খুশির ঠেলায় পাঞ্জাবীর বদলে বড় বোনের সেলোয়ার-কামিজ পরে এসেছি।
আস্তাগফিরুল্লাহ!
একি হাল, কুমিড় কেটে আনলাম খাল।
ওদিকে সবাই আমার দিকে তাকিয়ে হাসাহাসি করছে।
আমি চোখ বন্ধ করে সেদিন এক দৌঁড়ে বাসায় চলে আসলাম।
রাগে, দুঃখে, শোকে ওয়াশরুমে গিয়ে চোখে সাবান মেখে কতক্ষণ হাউমাউ করে কাঁদলাম।
সেই সাবান চিবিয়ে চিবিয়ে নিজেকে গালি দিলাম, 'আমি এত বোকা কেন?
কিউ! হোয়াই, টেল মি।'
মারিয়া আমার সাথে রাগ করলো।
অনেক কষ্টে তার রাগ ভাঙাতে পারলাম।
সে আবার বলল....
--এবার দেখা করার সময় অবশ্যই পাঞ্জাবী পড়বা।
-আচ্ছা বাবু পড়ব।
--আর উল্টাপাল্টা হলে ব্রেকাপ।
-ওকে জানঠা..!
--কথাটা মনে রেখো।
-অবশ্যই মনে থাকবে। কিন্তু বাবু তুমি দেখা করার কথা বললে আমার হুশ থাকেনা।
--হাগুর কথাতো ঠিকই মনে থাকে।
-এরকম ছি মার্কা কথা বলো না।
--বাই রাখছি, বিকেলে এসো পার্কে।
আমি অতি আনন্দ হলাম।
আনন্দে আত্মহারা টাইপ অবস্থা।
আকাশে বাতাসে উড়ছি।
গেলাম পাঞ্জাবী পড় দেখা করতে।
এবার যাওয়ার সাথে সাথেই মারিয়া কান বরাবর চড় মারলো।
ঘুরান্টি দিয়ে পড়ে গিয়ে নিজের দিকে তাকালাম। পাঞ্জাবী পড়ছি ঠিকই পায়জামা পড়তে ভুলে গেছি। মারিয়া উল্টো ঘুরে ব্রেকাপ করে চলে গেলো।
কলারপাতা জড়িয়ে বাসায় আসলাম।
ব্রেকাপের ডিপ্রেশন আর পায়জামা না পড়ার লজ্জায় কুঁকড়ে গেলাম আমি৷
তেজপাতা গোল করে সিগারেট হিসেবে খেলাম। ইচ্ছে করেই কাঁশতে থাকলাম।
কোকাকোলার সাথে সেলাইন মিশিয়ে মাতাল হওয়ার ভং ধরে বিছানায় পড়ে রইলাম দু'দিন। মারিয়া বিহীন জীবন আমার পাতলা পায়খানাময়।
আমি অনেক একা হয়ে গেলাম।
চারদিকে অন্ধকার।
এদিকে মারিয়ার জন্মদিন ঘনিয়ে আসলো। ভাবলাম কিছু একটা গিফট দিয়ে ওর রাগ ভাঙ্গাবো।
মারিয়ার নীল শাড়ি অনেক পছন্দ।
ওর জন্য নীল শাড়ী কিনতে গেলাম।
কিন্তু দাম একটু বেশি।
বুদ্ধি করে ১৫০ টাকা ধরে কয়েকটা সুতি কাপড় কিনলাম।
অনেকদিন পড়তে পারবে।
মারিয়ার জন্মদিনের বিশাল আয়োজন করা হয়েছে।
আমি ওদের বাসায় যেতেই মারিয়ার সাথে চোখাচোখি হলো।
আমাকে দেখে সে খুশি হয়ে বলল....
--আমি জানতাম তুমি আসবে।
-আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না বাবু।
--আমিও বাবু কিন্তু আর ভুল করোনা কিন্তু।
-আসলে তোমার কথা মাথায় এলেই আমি কেমন জানি হয়ে যাই।
--হয়েছে থাক আর সাহিত্যিক হতে হবে না।
-তোমার জন্য গিফট নিয়ে এসেছি।
--ওয়াও, লাপ্পিউউ । কি এনেছো বাবু?
-তুমি নিজেই খুলে দেখো!
মারিয়া গিফট বক্স নিয়ে খুলল।
৩ টা কাপড় দেখে আমার দিকে ভ্রু-কুঁচকে তাকালো।
চোখেমুখে স্পষ্ট রাগের ছাপ।
আমি ঢোক গিলে বললাম....
--হয়েছে কি?
-এসব বুড়ি মানুষের কাপড় এনেছো কেন?
তুমি জানোনা আমার নীল শাড়ী পছন্দ?
--নীল শাড়ীর অনেক দাম, তাই ভাবলাম কয়েকটা কাপড় নিয়ে যাই।
বিয়ের পর এগুলো অনেকদিন পড়তে পারবা।
আর দামও কম!
মারিয়া কাপড় গুলো আমার মুখের উপর ছুড়ে মেরে বলল....
--গুষ্টি কিলাই তোর বিয়ের হারামজাদা।
তোর লগে ফাইনালি ব্রেকাপ।
আমার নরম মনে গরম ছ্যাঁকা দিয়ে মারিয়া চলে গেলো।
আসার সময় হোঁচট খেয়ে পড়ে গিয়ে পায়ে ব্যথা পেলাম৷
কলিজার ব্যথা আরো বড় ব্যথা।
নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করছি পারছিনা।
ইচ্ছে করেই বারবার চোখে হাত দিয়ে কান্না করছি। রাস্তার মানুষ আজ দেখুক এক ব্যর্থ প্রেমিকের আর্তনাদ।
মারিয়া কেন ছ্যাঁকা দিলো এর জন্য আমি করব প্রতিবাদ।
0
5