গল্পের নামঃ পরিনতি
পর্ব -১
বিয়ের পরদিন সকালে যখন চিৎকার করে কাদছিলাম,ব্যাপারটা সবার কাছে অস্বাভাবিক লাগলেও,আমার কাছে অনেক কষ্টের ছিলো।আমি বার বার চোখের পানি আর চিৎকার থামাতে চেয়েও ব্যার্থ হয়েছি।আপু কানের সামনে এসে,আস্তে করে বলছে
– কি হয়েছে তোর?এভাবে কান্নার কোনো মানে হলো?এমন ভাবে কাদছিস যেনো আমরা তোর মনের বিরুদ্ধে বিয়ে দিয়েছি।তোর কথা মতই তোর পছন্দ করা ছেলের সাথেই তো বিয়ে দিয়েছি,তাহলে?
– নিজেকে অনেকবার থামানোর চেষ্টা করেও পারলাম না।পাশ থেকে এক কাকী বললো
– আচ্ছা ও কাদছে যখন কাদতে দাওনা মন খুলে,যে কোনো কারণেই হয়তো কষ্ট পেয়ে কাদছে,কিছুক্ষন কাদলে হালকা লাগবে,তুমি তোমার কাজ করো যাও,ও কে ওর মতো থাকতে দাও।
তারপর আপু আর কিছু না বলে ওখান থেকে চলে গেলো।- পরিণতি
গতকাল রাতে পারিবারিক ভাবেই রিহান আর আমার বিয়েটা সম্পন্ন হয়।অনেকেই ভাবেন আমাদের বিয়েটা প্রেমের বিয়ে,রিহান ও হয়তো সেটাই ভাবে। কিন্তূ আমি বলবো এটা মিথ্যে।একটা নির্মম সত্য বুকে চেপে রেখে,কত সহজেই তিনবার কবুল বলে রিহানের স্ত্রী হয়ে গেলাম।ওরা হয়তো কোনোদিন জানতেও পারবেনা আমার ভেতরের কথা,আমি এভাবে কেনো কাদছি অনেকের কাছেই অজানা,বিশেষ করে আমার পরিবারের কাছে।বান্ধবীরা কিছুটা জানে, কিন্তূ এখন ওরাও ভাবে আমি রিহান কে ভালবেসে বিয়ে করেছি।আসলে কিছু সত্য একান্তই গোপন থাকে,কাওকে বলার অপশন থাকলেও বলার ইচ্ছেটা হয়তো থাকেনা।কিছু কষ্ট হয় ই এমন যা একান্তই নিজের,একান্তই গোপন।খুব কাছের বান্ধবীরাও হয়তো সেটা বুঝতে পারেনা,তাই কাওকে বোঝাতেও চাইনা।
কবুল বলার সময় যখন শেষবার আরিফের দিকে তাকিয়ে ছিলাম,তখন ও যেনো কি বলতে চাইছিলো, সবটা বুঝতে না পারলেও,যতটুকু বুঝতে পারলাম,আরিফ আমাকে কবুল বলতে নিষেধ করছিলো কিন্তূ এখন এসব বলার মানে কি?ওর সাথে তো আমার আগেই সব কথা হয়ে গেছে,নতুন করে এমনটা কেনো করছে?কাজী সাহেব বার বার কবুল বলতে অনুরোধ করছেন, কিন্তূ ভেবে পাচ্ছিলাম না কি করবো আর ভাবলেই বা কি হবে,বিয়ের এই পর্যায় এসে কবুল বলা ছাড়া আমার কোনো উপায় নেই।আমার চুপ থাকা দেখে,পাশ থেকে ভাবী আর বান্ধবীরা ধাক্কাচ্ছে আর বলছে হইছে আর নেকামি করে,কবুল বলতে দেরি করা লাগবেনা,সবাই জানে তুমি এই বিয়ের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত।তাই তাড়াতাড়ি কবুল বলে কাজী সাহেব আর আমাদের রেহাই দাও।তাছাড়া দুলাভাইয়ের ও মনে হয় কষ্ট হচ্ছে,এতদিনের অপেক্ষা আজ শেষ হবে।তোমার ও মনের মানুষ কাছে পাওয়ার আনন্দ আজ পরিপূর্ণ হবে।- পরিণতি
– আমি যে লম্বা ঘোমটার নিচে অঝোরে কেদে যাচ্ছি সেটা কেও জানেনা,কেও দেখেনা।আর যারা কাছে থেকে দেখছে তারা ভাবছে,বিয়ের দিন কনে না কাদলে খারাপ দেখায়,তাই আমি কেদে কেদে এটা বুঝাতে চাইছি,বিয়ে হওয়াতে আমার মন খারাপ।আসলেই যে আজ আমার মন খারাপ সেটা কি কেউ বুঝবে?নাকি আমার বলা মুখের কথা গুলোই তারা বিশ্বাস করে,খুশি থাকবে!জানিনা তবে সত্য এটাই আমি এই বিয়েতে মন থেকে একদম রাজি না।শুধু বাধ্য হয়ে,আরিফের কথা রাখতে গিয়ে এই বিয়েতে রাজি হওয়া।- পরিণতি
কাল রাতেই আমার আর রিহানের বাসর রাত গেছে।আমাকে যখন আমার বান্ধবীরা বাসর ঘরে দিয়ে আসলো দেখলাম ওই ঘরে অনেকেই বসে আছে,সাথে আরিফ ও।আমি ওকে দেখে যেনো জান জানে ফিরে পেলাম।সবাই জানে আরিফ আর আমি খুব ভালো ফ্রেন্ড কিন্তূ কেও কখনো এটা জানতে পারবে না ও শুধু আমার ফ্রেন্ড নয় আমার ভালোবাসা।আর ভালোবাসার মানুষের সামনে অন্য একজনের পাশে বসে আছি,যে কিনা আমার স্বামী।ভালোবাসার মানুষের সামনে অন্য একজনের সাথে বাসর ঘরে রাত কাটানো কতটা কষ্টের ,এটা একমাত্র ভুক্তভোগীরা ছাড়া কেউ উপলদ্ধি করতে পারবেনা।
কিছুক্ষন পর যখন ওরা আমাকে আর রিহান কে একা রেখে চলে যাচ্ছিলো,আমি আরিফ কে জড়িয়ে ধরে কাদতে শুরু করলাম,রিহান এই ব্যাপারটাই রাগ ও হলো বুঝলাম, কিন্তূ আমার কি বা করার ছিলো,আমি যে আজ একদম নিঃস্ব হয়ে গেছি।আরিফ নিজেকে আমার কাছ থেকে ছাড়িয়ে চলে গেলো।
রিহান আর আমি পাশাপাশি অনেক্ষন চুপ করে বসে ছিলাম।রিহান আমাকে জিজ্ঞেস করলো
– কি হয়েছে,মন খারাপ?
– আমি মাথা নাড়িয়ে না বললাম।
– তাহলে এভাবে কাদছো কেনো?
– আমি চুপ করে রইলাম।- পরিণতি
– তুমি তো বিয়ের আগে বলেছিলে,আমাকে বিয়ে করতে তোমার কোনো আপত্তি নেই,তাহলে এখন তোমার এতো মন খারাপ কেনো?তুমি কি আমার কাছে কিছু লুকাচ্ছো?
– আমি চুপ।
– দেখো ফারিয়া,তোমার এই চুপ থাকাকে কি আমি হ্যা ধরে নিবো?
– প্লিজ আমাকে একটু সময় দিবেন,আমি সব কিছু নিয়ে একটু ডিপ্রেসন এ আছি।একটু সময় পেলে সব কিছু গুছিয়ে নিবো।
– সময় চাও ঠিক আছে বাট আজ তো আমাদের বাসর রাত।এই সময়ের অপেক্ষায় তো আমরা এতদিন ছিলাম, আজ তোমার আপত্তি করার কারণটা আমি বুঝতে পারছি না,প্লিজ একটু বুঝিয়ে বলবে আমাকে?
– আমি শারীরিক ভাবে অসুস্থ,মেয়েলি প্রবলেম আছে প্লিজ…
– তুমি কি সত্যিই অসুস্থ?
– জী।
– আচ্ছা তাহলে রেস্ট নাও।
– হুম।