#অভিনয়
আসলে এই পৃথিবীতে আমরা সবাই এক একজন বড় অভিনেতা। কেউ ভালোবাবে বেঁচে থাকার জন্য অভিনয় করে আবার কেউ শত কষ্টের মধ্যে থেকেও ভালো থাকার অভিনয় করে। তবে মানুষ কখনো তার নিজের মনের সাথে অভিনয় করতে পারে না। কারণ,একজন মানুষের মনই জানে সেই মানুষের সকল সুখ, দুঃখ, হাসি, বেদনা গুলোকে। তাই মনে শত কষ্ট রেখেও পুরো দুনিয়াকে দেখাতে হয় আমি ভালো আছি। এটা কি অভিনয় নয়? হ্যা এটাই অভিনয়,এটা বেঁচে থাকার অভিনয়।
তবে, এই সকল রকম অভিনয়ের গল্পের মাঝে আমার জীবনের অভিনয়ের গল্পের ধরণটা কিছুটা ভিন্ন। হাতে কলম আর টেবিলে রাখা আছে খাতা।তাই লিখতে বসে গেলাম আমার জীবনের অভিনয়ের গল্পটা।
সময়টা শীতকাল, পরিবারের সকলে মিলে কোথাও ঘুড়তে যাওয়ার চিন্তায় ছিলাম। অবশ্য আমি ঘুড়তে যাওয়াটা বেশি পছন্দ করতাম না। সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম কোন পাহাড়ী অঞ্চলে যাওয়ার। তাই আমি,আমার আম্মু,খালা,বোন,আর আমার কলিজার টুকরা ভাগ্নিকে নিয়ে রওনা দিলাম সিলেটের একটা পাহাড়ী অঞ্চল এর উদ্দেশ্যে। সন্ধ্যার মধ্যে পৌছে গেলাম সেখানে।তারপর সেখানকার একটা হোটেলে আশ্রয় নিলাম। দীর্ঘ সময় গাড়ীতে ভ্রমণ করে সবাই খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলো। তাই,রাতে সবাই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লো।
আমিও ঘুমোনোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, এমন সময় আমার রুমের দরজায় টোকা পড়লো। শীতের রাতে কম্বলের নিচ থেকে উঠতে কারই মন চায় না,তাই কিছুটা বিরক্তি নিয়ে দরজাটা খুললাম। দেখলাম আমার বোন (রিমি)এসেছে তার মেয়েকে (সারা)নিয়ে।
রিমি- ভাই তোকে রিরক্ত করার জন্য দুঃখিত।
আমি- আচ্ছা বল কি বলবি?
রিমি- কি করবো বল, এই তোর ভাগ্নিকে নিয়ে আর পারছি না।
আমি- কেন আমার লক্ষী মামুনীটা আবার কি করলো?
রিমি- কি করবে আবার, এই রাতে বায়না ধরতেছে ও আমার সাথে ঘুমাবে না, ও ওর শুভ মামার সাথে ঘুমোবে।
তৎক্ষণাৎ সারা বলে উঠল " হ্যা মামা আমি তোমার সাথেই ঘুমাবো "
আমি - ঠিক আছে মামুনি আমার কোলে আসো।
অতঃপর বোন চলে গেল সারাকে আমার কাছে দিয়ে, আর আমিও সারাকে গল্প শুনিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিলাম। কিন্তু সারাকে ঘুম পাড়াতে গিয়ে এখন আমার আর ঘুম আসছে না। কি করা যায়, ঘুম তো আসতেছে না।আমার আবার রাতে বাইরে বাইক নিয়ে ঘুড়তে খুব ভালো লাগে।কারণ, রাতটা থাকে একদম নিস্তব্ধ।আর আমি নিস্তব্ধ পরিবেশ বেশি পছন্দ করি। আর সেখানে শীতকাল হলে তো কথাই নেই।
বাইরে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে ঘুমন্ত সারাকে কোলে করে রিমির কাছে দিয়ে আসলাম। তারপর হোটেল থেকে রেন্ট এ একটা বাইক নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম শীতের রাতের নিস্তব্ধ পরিবেশ উপভোগ করতে। এগোতে লাগলাম হাইওয়ের দিকে।সামনে একটা চায়ের টং দেখা যাচ্ছে, চা খাওয়ার জন্য ওখানে থামলাম। চায়ের টং এ কিছু ভারতীয় পর্যটকদের সাথে দেখা হয়ে গেল। তাদের সাথে পরিচিত হলাম। তাদের সাথে কিছুক্ষণ আড্ডা দিলাম,তারা আমাদের বাংলাদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশের বেশ প্রসংশা করলো। বাংলাদেশের মানুষদের প্রশংসাও করলো। তাদের সাথে কথা বলা শেষ করে, সামনে এগোনোর জন্য বাইক চালু করলাম। তখনই ওদের মধ্যে একজন পর্যটক বলে উঠলো তারাও নাকি আমার সাথে শীতের রাতের স্নিগ্ধ পরিবেশ উপভোগ করতে ইচ্ছুক। তাদের কথা শুনে আমি বেশ খুশি হলাম এবং তাদের সবাইকে নিয়ে একসাথে হাইওয়ের দিকে রওনা দিলাম।
সবার বাইক একসাথে চলছে, ওদের মধ্যে একজন গান ধরেছে, কয়েকজন উল্লাসের ইঙ্গিতে একসাথে আওয়াজ তুলছে,সবকিছু মিলিয়ে খুব ভালোই একটা অনুভুতি হচ্ছিলো। এভাবেই পেরিয়ে যায় প্রায় মিনিট বিশেক। আশেপাশের পরিবেশ উপভোগ করতে করতে হঠাৎ আমার নজর কিছু একটায় আটকে গেল। সাথে সাথে বাইক থামিয়ে দিলাম, ভারতীয় পর্যটকরাও তাদের বাইক থামিয়ে দিল। তারা জিজ্ঞেস করলো, কি হলো কোন সমস্যা?
আমি নজরে পড়া বিষয়টা ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করছিলাম। তাদের বললাম আসলে ব্যাপারটা হলো,ঐ যে দেখো রাস্তার পাশের জঙ্গলের ভিতর একটা গাড়ী থামানো অবস্থায় দেখা যাচ্ছে,গাড়ী থেকে তিন চারজন মানুষ তড়িঘড়ি করে নামছে, এত রাতে ওরা এই জঙ্গলে কি করছে,বিষয়টা কিছটা সন্দেহের। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম বিষয়টা কাছে গিয়ে দেখার। আমরা আস্তে আস্তে এগোতে লাগলাম ওদের দিকে,ওদের গাড়ীর কিছুটা কাছে যেতেই যা দেখলাম,তা সাংঘাতিক।
ওরা ওদের গাড়ী থেকে একটি মেয়েকে নামালো,সম্ভবত মেয়েটি অজ্ঞান,ওরা মেয়েটিকে মাটিতে শোয়ালো।তারপর ওদের মধ্যে একজন বললো, মালটা তো বেশ সুন্দর, আয় ওকে মারার আগে মজা লুটে নেই।আমাদের আর বুঝতে বাকি রইলো না ওদের উদ্দেশ্য।আমরা যেহেতু সংখ্যায় ওদের থেকে বেশি ছিলাম তাই নির্ভয়ে বললাম,মেয়েটাকে কি করার কথা চলছে এখানে? আমাদের উপস্থিতি বুঝতে পেরে ওরা তাড়াতাড়ি ওদের গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যেতে লাগলো। পর্যটকরা মেয়েটির কাছে গেল আর আমি ওদের গাড়ির পেছনে দৌড়াতে লাগলাম,আমি জানি আমি ওদের ধরতে পারবো না। তবুও চেষ্টা করতে দোষ কি। ওদের ধরতে না পেরে পিছনের দিকে হাটা শুরু করলাম।
ফিরে এসে পড়ে থাকা মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আমি কিছুটা সময়ের জন্য পুরো স্তব্ধ হয়ে গেলাম,আমি নিজের চোখকে যেন কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। অবাক চোখে কিছুক্ষণ মেয়েটির দিকে তাকিয়ে ছিলাম। এ মুখ যে আমার খুব পরিচিত খুব খুব। আর কিছু ভাবার সময় নেই,রুহি কে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।ভারতীয় পর্যটকদের সাহায্যে ওকে কোলে করে আমার বাইকের পিছনে বসালাম,রুহির পিছনে আরেকজনকে বসালাম যেন রুহি পড়ে না যায়।
রাস্তায় কিছু স্থানীয়দের কাছ থেকে হাসপাতালের ঠিকানা জানলাম,রুহি কে নিয়ে চলে গেলাম হাসপাতালে। ডাক্তার রুহিকে কেবিনে নিয়ে গেলো।রুহি যেন সুস্থ হয়ে যায় আমি মনে মনে শুধু এই কামনাই করছি। আসলে এই পৃথিবীটা খুবই ছোট। আমি কখনো ভাবিনি যে রুহির সাথে আমার আবার দেখা হবে তাও আবার এই ভাবে।কাকতালীয় ভাবে হলেও উপরওয়ালার কি লীলা খেলা,আবারও আমাদের দেখা হয়ে গেল।
ওয়েটিং রুমে বসে আছি আমি সহ ভারতীয় পর্যটকরাও।তাদেরকে বলেছিলাম চলে যেতে কিন্তু তারা যেতে নারাজ। তারা বললো, মেয়েটা সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত তারা কোথাও যাবে না। আমিও তাদের কথায় আর দ্বিমত দিলাম না।পর্যটকদের মধ্যে সুহাসিনী নামের একজন মেয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলো " ভাইয়া আপনি কি এই মেয়েটাকে ব্যাক্তিগতভাবে চিনেন?
আমি বললাম আপনার এমনটা কেন মনে হলো?
সুহাসিনী বললো, না আসলে ঐ মেয়েটার এই অবস্থা দেখে আপনি যেমন অস্থির হয়ে পড়েছিলেন,অপরিচিত কারোর জন্য তো কেউ এমন অস্থির হয় না।
আমি বললাম, হ্যা ওকে আমি খুব ভালোভাবেই চিনি। ওর নাম রুহি। ও আর আমি একসাথে বিশ্ববিদ্যালয় এ পড়তাম।
ব্যাস এটুকুই। সুহাসিনী বলে উঠলো " উহু আপনাদের কাহিনী ব্যাস এটুকুই বলে মনে হচ্ছে না,দয়া করে বলেন না আপনাদের কাহিনী। পর্যটকরা খুবই ভালো মানুষ তাই আর তাদের না করলাম না।
আচ্ছা আমি আপনাদের সবকিছু সংক্ষেপে বলি শুনুন, আমি তখন সবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি। প্রথমদিন ভার্সিটির গেইটে ঢুকছিলাম এমন সময় একদল বড় ভাই আমাকে ডাক দিলো। আমি তাদের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম, তারা যথাযথ ভাবে বললো নাম কি?আমি বললাম, জ্বী শুভ।বড় ভাইরা আরও কিছু জিজ্ঞেস করে বললো কাঁধের ব্যাগটা মাথার উপরে রেখে নাচ করতে। আমি জানতাম বড় ভাইরা নতুন এলে এটা সেটা বলে উত্তক্ত করে তাই আমিও তাদের কথা মতো কাঁধের ব্যাগটা মাথায় নিয়ে নাচ করতে লাগলাম।এমন সময় আমার পাশ দিয়ে একটা মেয়ে যাচ্ছিলো।বড় ভাইয়ারা মেয়েটাকে ডাক দিয়ে তার নাম জিজ্ঞেস করলো।
রুহি- আমার নাম রুহি।
বড় ভাইয়ারা আমাকে দেখিয়ে বললো,রুহি বাবু এই যে ছেলেটা যেভাবে নাচ করতেছে তুমি ওর দেখাদেখি নাচা শুরু কর।
বড় ভাইদের কথা শুনে রুহি কোনো জবাব না দিয়ে চলে যাচ্ছিলো। রুহির চলে যাওয়া দেখে এক বড়ভাই ওর হাতটা টেনে ধরে বললো, কোথায় যাচ্ছিস রে তুই না নেচে?
সাথে সাথেই পটকা ফাটার মতো শব্দ হলো ঠাশ ঠাশ।বড় ভাইকে এত জোড়ে থাপ্পড় দিলো যে থাপ্পড়ের শব্দে আমার কানের পর্দা নড়ে উঠলো।
রুহি বলতে লাগলো " পুরুষ সেই যে নারীদের সম্মান করতে যানে, কাপুরুষ কখনো সম্মানের যোগ্য না বুঝলেন!
বড়ভাইগুলোকে কথাটা বলে আমার হাত ধরে টেনে ওর সাথে নিয়ে যাচ্ছিলো। ওর এই কান্ডে আমি যতটা না অবাক হলাম তার থেকে বেশি ভয় পাচ্ছিলাম।
আমার হাত টেনে ভার্সিটির মাঠ পর্যন্ত নিয়ে আসে। অতপর রুহি বলতে থাকে
রুহি- আপনি কি পুরুষ নাকি ভীতুর ডিম। ওরা আপনাকে এভাবে উত্তক্ত করছিলো আর আপনি চুপচাপ সেটা মেনে নিচ্ছিলেন।
আমি- আসলে অনেক আগে থেকেই শুনে আসছি এই বিরক্ত করার কথা তাই আর প্রতিবাদ করি নি।
রুহি-ও এই ব্যাপার
আমি- জ্বী, আচ্ছা আপনি যে বড় ভাইয়াটাকে থাপ্পড় দিলেন, সে যদি পরে আপনার কোনো ক্ষতি করে?
রুহি- সেটার কোন সম্ভাবনাই নেই কারণ আমার বাবা এই ভার্সিটির অধ্যক্ষ। এই কাপুরুষদের ভার্সিটি থেকে বের করার ব্যাবস্থা করতেছি।
আমি- ও তাই তো আপনার এতো সাহস।
রুহি- না এমনিতেও আমার অনেক সাহস। আচ্ছা আপনার নাম কি?
আমি- শুভ,
রুহি- খুব সুন্দর নাম।
আমি- ধন্যবাদ,আপনার নামটাও খুব সুন্দর।
রুহি- ধন্যবাদ, বন্ধু হবে?
আমি- হতে পারি, তবে আপনাকে আমার অনেক ভয় লাগে।
রুহি- ও তাই! সমস্যা নেই আস্তে আস্তে ভয় কেটে যাবে।
এভাবেই কেঁটে যায় কয়েকটা মাস, আমরা পরিণত হয়ে যাই খুব ভালো বন্ধুতে। কিন্তু যতই দিন যায় আমি ততই রুহির প্রতি দুর্বল হয়ে যাই। এটা বন্ধুত্বের দুর্বলতা না এটা ভালোবাসার দুর্বলতা। ওর সবসময়ের চাঞ্চল্যতা আমার মতো শান্ত ছেলেকেও চাঞ্চল্য করে তুলতো। ওর হাসি যেন ঐ আকাশের চাঁদ,ওর চোখের মায়া যেন সমুদ্রের গভীরতার চেয়েও বেশি।ওর ডান গালে ছোট্ট একটা তিল যেন ওর পাগলকরা চেহারাকে আরো মনোমুগ্ধকর করে তোলে। ওকে যখন কোনো ছেলে প্রেমের আবেদন জানাতো,আমি তখন চোখ বন্ধ করে উপরওয়ালার কাছে প্রার্থনা করতাম ও যেন ছেলেটার প্রেমের আবেদন ফিরিয়ে দেয়,আর ও তাই করতো। আমি তখন জিজ্ঞেস করতাম, কিরে ছেলেটাকে ফিরিয়ে দিলি কেন? উত্তরে ও বলতো " আমি এমন একজনকে চাই যে আমার রুপের না মনের প্রেমে পড়বে, কিন্তু এমন কাউকেই তো পাচ্ছি না। তখন খুব বলতে ইচ্ছে করতো " আমি আছি তো পাগলী, তোর মনের প্রেমে পাগল "
ওকে কখনো ভালোবাসার কথা জানানোর সাহস পাইনি। ভয় পেতাম এই ভেবে ও যদি আমাকে ভুল বুঝে আমার সাথে সব সম্পর্ক শেষ করে দেয়।
দেড় বছরের বেশি সময় হয়ে গেলো আমার আর ওর বন্ধুত্বের। যতদিন যাচ্ছে আমি ততই ওর প্রেমে পাগল হয়ে যাচ্ছি।কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না। ঠিক করলাম সামনের ভালোবাসা দিবস এ ওকে প্রপোজ করবো,তা যেভাবেই হোক। ভালোবাসা দিবসের আর মাত্র একমাস বাকি। কিন্ত আজকাল রুহি আমাকে আগের মতো আর সময় দেয় না। কোথায় যেনো যায়। হয়তো বা কোনো কিছুতে ব্যাস্ত।
এভাবে একদিন দুদিন যেতে যেতে ভালোবাসা দিবস ঘনিয়ে আসলো। কাল ভালোবাসা দিবস। আমি নিজেকে প্রস্তুত করছিলাম রুহিকে প্রপোজ করার জন্য। রাতে শুয়ে শুয়ে কালকে রুহিকে কিভাবে প্রপোজ করবো এ ব্যাপারে ভাবছিলাম এমন সময়ে রুহি আমাকে ফোন দিলো,
রুহি- কি করিস?
আমি- শুয়ে আছি।
রুহি- কাল সকাল দশটার দিকে ভার্সিটির পাশের রেস্টুরেন্ট এ আসতে পারবি?
আমি-হ্যা পারবো কিন্তু কেন?
রুহি- সারপ্রাইজ আছে।
আমি- ঠিক আছে।
রুহির সাথে কথা বলা শেষ করে আমি মনে মনে ভাবতে লাগলাম,রুহি কালকে আমাকে কি সারপ্রাইজ দিবে?রুহি কি আমাকে পছন্দ করে?করতেও তো পারে।কাল কিভাবে কি করবো এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলাম।
সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে শাওয়ার নিলাম,তারপর খুব সুন্দর করে সেজে এককথায় পরিপাটি হয়ে রওয়ানা দিলাম রেস্টুরেন্ট এর উদ্দেশ্যে।
এদিকে রুহি রিয়ানকে নিয়ে রেস্টুরেন্ট এ বসে আছে শুভর আসার অপেক্ষায়।
রিয়ান- কে এমন আসবে যার জন্য এত অপেক্ষা করছো?
রুহি- শুভর জন্য, ও আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু। আমি ওকে না জানিয়ে কোন কিছু করি না তবে আমাদের প্রেমের বিষয়টা ওকে এখনও জানাইনি। তাই আজকে জানিয়ে ওকে তাক লাগিয়ে দিবো।
দশটার বেশি বেজে গিয়েছে। এই ট্রাফিকজ্যাম এর কারণে এখনো পৌঁছাতে পারলাম না। রুহি বারবার ফোন দিয়েই যাচ্ছে।
রুহি- কিরে তুই কোথায়?
আমি- আর বলিস না,আমি তো সেই কখনই এসে পড়তাম কিন্তু এই ট্রাফিকজ্যাম এর কারণে আসতে পারছি না।
রুহি- দেখ আজকে একটা বিশেষ দিন,দয়া করে আজকে আর দেরি করিস না। আমি আর দশমিনিট তোর জন্য অপেক্ষা করবো। গুনে গুনে দশমিনিট বুঝেছিস?
আমি- ঠিক আছে।
কি করা যায় এখন, এখন একটাই উপায় গাড়ী থেকে নেমে দৌড়ে যাওয়া। যেই ভাবা সেই কাজ,দিলাম দৌড়। সাত থেকে আটমিনিট লাগলো রেস্টুরেন্ট এ পৌছাতে। আমাকে এভাবে দৌড়াতে দেখে না জানি লোকে কি বলেছে,প্যান্টের পকেটে হাঁত দিয়ে দেখলাম রুহির জন্য কেনা আংটি টা আছে কিনা! হ্যা আছে। টিস্যু দিয়ে মুখের ঘাম মুছতে মুছতে রেস্টুরেন্ট এর ভেতরে ঢুকলাম। ভেতরে ঢুকতেই রুহি আমাকে হাত দিয়ে ইশারা করলো,আমি ওর ইশারার জবাব স্বরুপ হাঁত দিয়ে আসছি বলে ইশারা করলাম। কিন্তু রুহির পাশে বসা ঐ ছেলেটা কে?দেখে তো চেনা চেনা লাগতেছে না।
ধীর গতীতে এগিয়ে গেলাম রুহির সামনে।
রুহি- এই তোর আসার সময় হলো? সেই কখন থেকে তোর জন্য অপেক্ষা করতেছি আমরা দুজন।
আমি- আরে ট্রাফিকজ্যাম এর জন্য দেরি হলো।
রুহি- কিরে তুই এত ঘামাচ্ছিস কেন?
আমি- দৌড়ে আসলে ঘামের বদলে কি মধু বের হবে? ট্রাফিক ছিলো তাই গাড়ি থেকে বের হয়ে দিলাম দৌড় আর এক দৌড়ে এখানে।
রুহি- তুই না আসলেই একটা পাগল।
আমি- তা তো আমি জানি, কিন্তু ওনাকে তো চিনতে পারলাম না?
রুহি- ও হচ্ছে রিয়ান। একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি করে।
আমি- ওহ্ খুব ভালো। কিন্তু ইনি তোর কি হয় আত্মীয়?
রুহি- আত্মীয়র থেকেও অনেক বেশি কিছু। আমার ভালোবাসার মানুষ।
রুহির কথা শুনে আমি নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারলাম না।
আমি- রুহি তুই কি আমার সাথে মজা করতেছিস?
রুহি- মজা কেন করবো? আসলেই ও আমার প্রেমিক আর আমি ওর প্রেমিকা। আরে এতদিন যে তোকে সময় দিতে পারি নি সেটার কারণই হলো রিয়ান।
রুহির কথা শুনে আমার মনে হলো আমার বুকের প্রত্যেকটা হাড় যেন দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে।অতি কষ্ট পেলে নাকি মানুষের বুকের বামপাশটা ব্যাথা করে যা আগে আমি বিশ্বাস করতাম না কিন্তু এখন ঠিকই বিশ্বাস করতেছি কারণ আমার বুকের বামপাশটায় যে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করছি।
রুহি- কেমন লাগলো তোর সারপ্রাইজ টা? পুরোই চমকে দিলাম না তোকে বল?
নিজের মনে যে কি চলছে তা একমাত্র আমিই জানি, নিজের কষ্ট লুকিয়ে রেখে এখন যে আমায় মিথ্যে হাসির অভিনয় করতে হবে তা আমি বুঝে গেছি।
আমি নিজেকে সামলে নিয়ে তথা মুখে মিথ্যে হাসি ফুটিয়ে বললাম " অসংখ্যা শুভ কামনা রে দোস্ত অসংখ্য শুভ কামনা তোদের জন্য"
রুহি- কি তোকে চমকে দিলাম নাকি আগে সেটা বল?
আমি- চমকে গিয়েছি মানে আমি তো পুরো অবাক,তুই যে আমাকে এতবড় একটা সারপ্রাইজ দিবি তা আমি কখনোই ভাবিই নি।
রুহি- ধন্যবাদ রে।
আমাকে এখন এখান থেকে যে করেই হোক বেড়িয়ে যেতে হবে। আমি জানি না আর কতক্ষণ নিজেকে সামলাতে পারবো তাই,
আমি- তোরা এই সুন্দর মুহুর্ত টা উপভোগ কর আমি ওয়াশরুম থেকে আসতেছি।
রুহি- ঠিক আছে।
ওয়াশরুমে গিয়ে আমি অনেক কাঁদলাম অনেক। যাকে বলে নিঃশব্দ কান্না। নিজেকে বোঝালাম যে রুহি আমাকে ভালোবাসে না এটা আর এমন কি ব্যাপার?ওর নিজের পছন্দ থাকতেই পারে। তবুও কথায় আছে না " মাথা মানে কিন্তু মন মানে না "
আমাকে এখন এখান থেকে চলে যেতে হবে যে করেই হোক। আমাকে কাঁদতে হবে মন খুলে কাঁদতে হবে এতে যদি কষ্ট কিছুটা কমে যায়।চোখের নোনতা জল ধুয়ে ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে রুহিকে হাঁত দিয়ে ইশারা করে বিদায় বলে রেস্টুরেন্ট থেকে বেড়িয়ে পড়লাম।
মোবাইলের রিংটনটা বেজে উঠলো। আম্মু ফোন দিয়েছে।
আমি- হ্যা আম্মু বলো।
আম্মু- বাবা শুভ তুই কোথায়? রুমেও নেই,পুরো হোটেলে তোকে খুঁজলাম কিন্তু কোথাও তো তোকে পেলাম না,কই তুই?
আমি- আম্মু আমি হাসপাতালে। আমার একজন বন্ধু অসুস্থ হয়ে পড়েছে তাই তাকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছি।
আম্মু- ও, আমরাও কি আসবো হাসপাতালে?
আমি- না এখন থাক,পরে এসো
আম্মু- আচ্ছা বাবা।
মায়ের সাথে কথা বলার পর ভারতীয় পর্যটকরা আবারও বায়না ধরলো আমার আর রুহির পুরো কাহিনী শোনার।
আমি আবার বলতে শুরু করলাম
চলবে..
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ধন্যবাদ।
0
7