গল্প : #ক্লাসমেট_যখন_বউ
#পর্বঃ০১
আজ আমার বিয়ে। দুই পরিবারের সম্মিতিতেই ঘরোয়া ভাবে বিয়ের সম্পন্ন হলো। কিন্তু এখনো পর্যন্ত আমার বরের সাথে দেখা হয়নি।
দুজনে আলাদা রুমে বসে কবুল বলেছি, সিগনেচার করেছি।আমিতো তবুও জানি আমার বর কে কিন্তু আমার বর নাকি আমার ফটো পর্যন্ত দেখেনি।
মায়ের পছন্দ চোখ বুজে লক্ষী ছেলের মত বিয়েতে রাজি হয়ে গেছে। সবার কাছ থেকে বিদায় নেওয়া শেষ করে কাঁদো কাঁদো আমি যখন বরের গাড়িতে চেপে বসলাম তখন প্রথম বার ও আমাকে দেখলো আর দেখেই বললো।
(রাজু) রাইমা তুমি এখানে? এর মানে কি?
(রাইমা) আমিই তো এখানে থাকবো আর কে থাকবে?
(রাজু) বউয়ের সাজে তুমি তার মানে কি তুমি আমার বউ
(রাইমা) জি হ্যাঁ আমিই তোমার বউ। কেন সিগনেচার করার সময় নামটা দেখনি? জান্নাতুল ফেরদৌস রাইমা।
(রাজু) ও মাই গড!সেই রাইমা যে তুমি,, আমি তো ভাবতে ও পারিনি। আমি তো ভেবেছিলাম,,,,,
(রাইমা) কি ভেবেছিলে???
(রাজু) ভেবেছিলাম হয়তো অন্য কোনো রাইমা,,,,,,
(রাইমা) বিয়ের আগে তো তোমাকে আমার ফটো দেখাতে চেয়েছিলো। দেখলেন না কেন তখন? দেখলেই তো চিনতে পারতে।
(রাজু); আমি তো,
(রাইমা) থাক এখন আর কিছু বলে ড্রাইভার এর সামনে সিনক্রিট করতে হবে না যা বলার বাড়িতে গিয়ে বলো।
(রাজু) ওকে ফাইন,
এমন টাই ছিলো, বিয়ের পরের প্রথম কনভারমেশন আমাদের। আপনারা হয় তো একটু কনফিউজড কি ঘটছে তা নিয়ে। চলুন তাহলে ব্যাপারটা আপনাদের বুঝিয়ে বলি।
আমাদের অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ হলো ও আমি আর রাজু কিন্তু পর্ব পরিচিত।সেই ভার্সিটি থেকে আমাদের পরিচয়।
শুধু পরিচয় বললে ভুল হবে আমরা ছিলাম একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী। পড়াশুনায় আমরা দুজনেই খুব ভালো ছিলাম। কখনো রাজু ফাস্ট হলে আমি সেকেন্ড হতাম। আবার কখনো আমি ফাস্ট হলে রাজু হয়ে যেত সেকেন্ড।
একজনের জন্য অন্যজনের ফাস্ট পজিশন পাওয়া হতো না।তাই আমরা কেউ কাউকে সহ্য করতেই পারতাম না। একেবারে যাকে বলে দা--কুমড়া সম্পর্ক ছিলো আমাদের।
শুধুমাত্র পড়ালেখার দিক দিয়ে আমি ওর শত্রু। কিন্তু আমাদের বন্ধুত্বের জন্য সবাই হিংসা করে। আর আমাদের বন্ধুত্বের জন্য সবাই একটু ভয়ও পায়।
কিন্তু এই মানুষটার প্রতিই আমার একটা ভাল লাগে জন্ম নেয়। যেটার কাহিনী আমি আপনাদের পরে শোনাবো।
আমি আমার নতুন বাড়িতে মানে শ্বশুর বাড়িতে পৌঁছে গেছি। ফুল দিয়ে মিষ্টি খাইয়ে খুব সুন্দর ভাবে আমাকে বরন করা হয়।
এর পর আমার শাশুড়ি মা তার ছেলেকে আদেশ দেন আমাকে কোলে করে ঘুরে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
(রাজু) মা এসব তুমি কি বলছো? আমি ওকে কোলে নিতে যাব কেন? এটা কোনো ভাবেই সম্ভব নাহ।।।।
(রাজুর আম্মু) সম্ভব না মানে,,, তোর বউকে তুই কোলে নিবি নাতো কি অন্য কেউ নিবে। তাড়াতাড়ি কোলে নে বলছি।
মা কড়া আদেশ দিলেন যে নিতেই হবে নতুন বউকে কোলে এটাই নাকি বাড়ির নিয়ম। বেচারা আর কি করবে আমার কাছে এগিয়ে এসে বললো।
(রাজু) কাঁধে হাত রাখো কোলে নিতে হবে তোমাকে।
আমি ওর কথা মত ওর কাঁধে হাত রাখলাম। তার পর ও আমাকে কোলে নিয়ে বাধ্য ছেলের মত ঘরে নিয়ে গেল।
এই কোলে নেওয়ার মাঝে ছিলনা কোন ভালোবাসা,
ছিল শুধুই একটা দায়সারা ভাব।
রুমে নিয়ে ধপ করে বিছানায় নামিয়ে দিল আমাকে।
(রাইমা) উফ ব্যাথা পেলাম তো,, একটু আস্তে নামাতে পারলে না?
(রাজু) ইস শখ কত। শোনো মেয়ে আমি জানতাম না যে তুমি আমার বউ হবে। জানলে,,,,,,,,,,,,
(রাইমা) জানলে বুঝি বিয়ে করতে না?
(রাজু) তোমার কি মনে হয়? যে মেয়ে পুরো ভার্সিটি জীবনে আমার চক্ষুশূল ছিলো তাকে আমি বিয়ে করতাম? আমাকে কি পাগলা কুত্তায় কামড়াইছে?
(রাইমা) তাহলে বিয়ের আগে আমার ফটো দেখলে না কেন? তাহলেই তো বুঝতে পারতে।
(রাজু) আমি কি আর জানতাম যে দেশে এত মেয়ে থাকতে মা তোমাকে খুঁজে আনবে আমার বউ হিসাবে? আমি ফটো দেখে নি কারণ,,,,,
(রাইমা) কি কারণ?
(রাজু) কারণ আমার গার্লফ্রেন্ডের সাথে ব্রেকআপের পর আমি খুব বেশি আপসেট ছিলাম।মন মেজাজ কিছুই ভালো ছিল না। সেই সময় মা জোরাজুরি করে বিয়ের জূ। তখন রাগ করে বলে দেই যে তোমার যাকে পছন্দ তাকেই আমি বিয়ে করতে রাজি আছি।দেখারও প্রয়োজন নেই।
(রাইমা) এতে আমার কি দোষ বলো?
(রাজু) আমি না হয় জানতাম না যে আমার কার সাথে বিয়ে হতে যাচ্ছে। কিন্তু তুমি তো জানতে। তাহলে তুমি কেন রাজি হলে বিয়েতে?
(রাইমা) আমার রাজি হওয়ার পেছনে যথেষ্ট কারণ আছে সেটা তুমি ধীরে ধীরে বুঝতে পারবে। এখন ওসব বুঝবে না তুমি।
(রাজু) অত বুঝে কাজ নেই আমার। বিয়ে তো হয়েই গেছে।কি আর করা সারাজীবন তোমাকেই সহ্য করা লাগবে।
(রাইমা) হাহাহা 😀 কি গো ভয় পাচ্ছো নাকি?
(রাজু) আমি কেন ভয় পেতে যাবো?
(রাইমা) ভয় পেয়ো না গো। আমি তোমায় কোন প্যারা দিব না।দেখে নিও।
(রাজু) হুম দেখা যাবে।
(রাইমা) হ্যাঁ দেখো তুমি।
(রাজু) আচ্ছা আমি খুব ক্লান্ত।বড্ড ঘুম পাচ্ছে আমি ঘুমালাম। তুমি ও ঘুমিয়ে যাও।
হায়রে কপাল আমার এই ছিল আমার বিয়ের প্রথম রাত। অন্যদের বিয়ের প্রথম কতই না রোমান্টিক হয় আর আমার? যাই হোক প্রথম রাগ দেখালে ও পরে মেনে তো নিয়েছে।
বাকিটা এখন আমার কাজ সময়ের সাথে সাথে ওর মন জয় করে নেয়ার দায়িত্ব টা আমারি। আমি চেঞ্জ করে এসে বিছানায় এসে দেখি ঘুমন্ত অবস্থায় রাজু কে খুব নিষ্পাপ মায়াময় লাগছে। ওর মায়া ভরা শিশু সুলভ নিষ্পাপ চেহারার প্রেমে পড়ে গেলাম আমি। খুব ইচ্ছে করলো ওর কপালে চুমু খেতে কিন্তু যদি ঘুম ভেঙে যায় তাই ভেবে আর চুমু দিলাম না। আস্তে করে ওর পাশে গিয়ে শুয়ে পরলাম। বিছানায় শুয়ে এ পাশ করছি ঘুম আসছে না। কি যে করি । চলুন আপনাদের কে আমার আর রাজুর ভার্সিটি জীবনের মজার গল্প শোনাই,,
,, শুনবেন ঠিক আছে যদি লাইক কমেন্ট বেশি বেশি করেন তাহলে আগামী পর্ব তাড়াতাড়ি পাবেন আর যদি লাইক কমেন্ট না করেন তাহলে আর দিবো না পরের পর্ব,,,
চলবে,,,,,,,
0
4