হৃদয়স্পন্দন পর্ব (১)

0 2
Avatar for soyed
Written by
3 years ago

সাদিয়া চাকরি থেকে রিজাইন নিয়ে বাসায় যাচ্ছে।

এইপর্যন্ত পাঁচটা চাকরি থেকে রিজাইন নিয়েছে। কারন যেই চাকরিতেই জয়েন করে না কেনো। তাদের পোষাক থাকে খারাপ। যেমন টপ, প্যান্ট, লেহ্যাঙ্গা, এছাঁড়াও সার্ট। মেয়েদের এরকম পোষাক দেখে সব ছেলেরা কেমন ফেল ফেল চোখে তাকিয়ে থাকে। দেখে মনে হয় চোখ দিয়েই গিলে খেয়ে ফেলবে।

আর এদিকে সাদিয়ার পোষাক হচ্ছে ঢিলেঢালে বোরখা। সে অন্য মেয়েদের মতো স্টাইলিস ভাবে চলাফেরা করতে পছন্দ করে না। সাদিয়া যখন রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাই, তখন মনে হয় ৬০বছরের কোনো বুড়ো মুরব্বি দাদি হেঁটে যাচ্ছে।

অফিসে বোরখা পরে যেতে নিষেদ করাই সাদিয়া প্রতিটা চাকরি থেকে রিজাইন নিয়েছে

এছাঁড়া সাদিয়া বাসা থেকেও কোনো প্রয়োজন ছাঁড়া বের হয় না। তার যতই কাজের চাপ থাকুক না কেনো, পাশাপাশি নামাজটাকে ঠিকই ধরে রাখছে।

এবার আসি মূল ঘটনায়, সাদিয়া বাসায় গিয়ে ভাবছে, 'যে করেই হোক একটা চাকরি আমাকে খুজে বের করতেই হবে। কারন বাবার ঔষুদের টাকা, সংসারের যাবতিয় খরচ আমাকে চালাতে হয়। এভাবে চলতে থাকলে তো না খেয়ে মারা যাবো। ছোট বেলাই মা মারা যাওয়ার পর থেকে বাবা আমাকে কোলে পিঠে করে বড় করেছে, কখনো মাকে হারানোর কষ্টটা আমাকে বুঝতে দেই নি। আমার দিকে তাকিয়ে বাবা দ্বিতিয় বাঁর বিয়েটা পর্যন্ত করে নি। কয়েকদিন আগে থেকে বাবা প্যারালাইজড হয়ে ঘড়ে পরে আছে। বাবার সারাজিবনে এতো একটা সঞ্চয় করতে পারে নি। রিক্সা চালিয়ে সংসার সাথে আমার পড়ালেখা করাতেই সব টাকা শেষ হয়ে যেতো।

এখন ঘড়ে বাবার জমানো যা টাকা আছে তা দিয়ে ২-৩দিনের মতো চলে যাবে। কিন্তু পরে কিভাবে চলবে? যেখানেই যাই অনেক কষ্টে ইন্টারভিউ দিয়ে চাকরিটা হয়ে গেলেও, তাদের এমন পোষাক যখন আমাকে পরে আসতে বলা হয় তখনই চাকরি থেকে রিজাইন নিতে হয়। দেখা যাক কালকে সকালে এক জায়গায় ইন্টারভিউ দিতে যাবো। শুনেছি ওইখানে যারা কাজ করে সবাই নাকি খুব ধার্মিক। সবাই নাকি পর্দা করে চলে।

এমন সময় বাবা রুম থেকে আমাকে ডাক দিলো, 'মা সাদিয়া, সাদিয়া... আমি দৌড়ে বাবার রুমে গেলাম, এবং বললাম, 'কিছু কি লাগবে বাবা। বাবা বললো, 'মারে তোর চাকরির কি অবস্তা? আমি নিচের দিকে মুখ করে বললাম,'ভালো না বাবা, বোরকা পরে অফিসে যেতে নিষেদ করেছে। অফিসের স্যার বলছে, যেনো আমিও অন্যদের মতো টাইট ছোটখাটো কাপর পরে অফিসে যাই। তাই আমি রিজাইন নিয়ে চলে আসছি। বাবা কাঁদো কন্ঠে বললো, 'মা রে, আর কতো চাকরির পিছনে দৌড়াবি বল, আমিই "বা" আর কয়দিন বাচবো। তারথেকে ভালো আমাদের এই বাড়িটা বিক্রি করে তোকে বিয়ে দিয়ে দেই। তাহলে তুই অনেক সুখে থাকতে পারবি।

আমি বাবার কাছে গিয়ে বাবার চোখের পানি মুচে দিয়ে বললাম, 'না বাবা, আমি তোমাকে ছেঁড়ে কোথাও যেতে চাই না।

অপেক্ষা করো, দেখবে আল্লাহ্ একদিন ঠিকই আমাদের এই দূর্দষা দূর করবে। তুমি শুধু আমার জন্য দোয়া করো।

বাবা বললো, 'হ্যারে মা, আমার দোয়া তোর সঙ্গে সবসময় থাকবে। আমি গিয়ে একটা প্লেইটে করে বাবার জন্য খাবার নিয়ে আসলাম। আমি বললাম, 'বাবা, হ্যা করো, আমি তোমাকে খাইয়ে দিচ্ছি। তখন বাবা বললো, 'মা, তুই খেয়েছিস। আমি হ্যা সূচক মাথা নাড়ালাম। তাকিয়ে দেখি বাবার চোখে পানি, বাবা হয়তো "বা" বুঝতে পারছে আমি খাই নি। কিভাবে খাবো? ভাত যা ছিলো, তা সকালের জন্য রেখে দিয়েছি। কারন আল্লাহর দেওয়া সৃষ্টি কোনো কিছুই অপচয় করা উচিৎ না। এখন খেলে সকালে না খেয়ে ইন্টারভিউ দিতে যেতে হবে। তাই এখন পানি খেয়ে থেকে গেলাম। বাবাকে খাইয়ে আমার রুমে চলে আসলাম।

শুয়ে আছি আর ভাবছি, মানুষ কিভাবে এতো ছোটখাটো কাপড় পরে রাস্তায় বের হয়। তাদের কি লজ্জা সরম বলতে কিছু নেই। আর আমাদের ইসলামের দৃষ্টিতে স্টাইলিস ফ্যাশন কাপড় অনুকারন করা সম্পূর্ণ হারাম। আমরা মেয়েদের কাপড় হবে ঢিলেঢালা, আরামদায়ক কাপড় ও সাইজের। অবস্যই সেটা টাইট ও নক্সাদার ঝলেমলে হবে না। বোরখা হচ্ছে আমাদের সুন্ধর্যটাকে ঢাকার জন্য, আর সেটাই যদি অন্য একটা সুন্দর্যের উৎসাহ দেই তাহলে কিভাবে হবে।

আচ্ছা কালকে যেই ইন্টারভিউটা দিতে যাবো সেখানেও কি অন্য কম্পানির মতো সর্টকার্ট স্টাইলিস কাপড় পরে যেতে বলবে...? কে জানে। ভাবতে ভাবতে ঘুমের রাজ্যে পারি জমালাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে অল্প খাবার আমি খেয়ে বাকিটা বাবাকে খাইয়ে দিয়ে ইন্টারভিউ দিতে চলে গেলাম।

রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় দেখলাম, একটা ছেলে বাইক চালাচ্ছে, পিছনে একটা মেয়ে বসে আছে। মেয়েটা ছেলেটার দিকে বাঁর বাঁর চেপে বসছিলো। আর ছেলেটার বাইক বাঁর বাঁর হার্টব্রেক করছিলো। তাদের এই কান্ডো দেখে আমি অনেকটা লজ্জাবোধ করলাম।

একটা মেয়ে কিভাবে বিয়ের আগে একটা পর পুরুষের সাথে মিলামেশা করতে পারে? কালকেও নিউজ দেখলাম যে দু'টা মেয়ে ধর্ষনের শিকার হয়ছে। তারা নিজেদের দোষেই ধর্ষনের শিকার হয়ে থাকে। কুকুরের সামনে যদি রুটি নিয়ে বসে থাকেন, তাহলে তো কুকুর রুটিটাকে আপনার কাছ থেকে চিনিয়ে নেওয়ার অপচেষ্টা করবেই। কিন্তু আপনি যদি রুটিটাকে কিছু একটা দিয়ে ঢেঁকে নিয়ে যান, তাহলে কখনো সেই কুকুরের নজর রুটির দিকে যাবে না। এটাই স্বাভাবিক, (উদাহারন মাএ)

অবশেষে অফিসে এসো পৌছালাম। একটা জিনিস আমার খুব ভালো লাগে সেটা হলো, রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় আমার দিকে কোনো মানু্ষ ফিরেও তাকায় না। কারন হচ্ছে আমার পরনে আছে ঢিলেঢালা একটা বোরখা, যা একটা মেয়ের সুন্দর্যটাকে খুব সহজেই ঢেঁকে ফেলতে সাহায্য করে।

ভালোভাবেই ইন্টারভিউ দেওয়া শেষ হলো, এই কম্পানির এম.ডি. একজন ছেলে, দেখে ভালোই মনে হলো। আর দেখতেও বেশ হ্যান্ডসাম গুড লুকিং। যখন আমার মুখ থেকে মুখোসটা খুললাম তখন ওই ছেলেটা আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে ছিলো। হয়তো "বা" ভাবছে আমার মতো একটা সুন্দর চ্যাহারার মেয়ে এরকম কাপড় কেনো পরেছি। ইন্টারভিউ শেষে ওনি আমাকে বললেন, 'কালকে থেকে চাকরিতে জয়েন করতে। তখন আমি বললাম, 'স্যার, আমার কিছু কথা ছিলো, যদি কিছু মনে না করেন...তখনই স্যার বললো, 'মনে করার কি আছে, আপনি বলেন...? তখন আমি একটু খুশি হয়ে বললাম, 'ইয়ে মানে, আসলে আমি অন্য মেয়েদের মতো স্টাইলিস কাপড় পরে অফিসে আসতে পারবো না, সবসময় এই ঢিলেঢালা বোরখা পরে আসবো, যদি আপনাদের কোনো সমস্যা না থাকে।

আমার কথা শুনে স্যারের ঠোটের কোনে একচিলতে হাঁসি এনে বললো, 'না, না, আমাদের কোনো সমস্যা নেই। আপনি বোরখা পরে আসবেন এটাতো আরো ভালো কথা। এরকম মেয়ে আমার কম্পানিতে চাকরি করবে এটা আমার পরম ভাগ্যেরর ব্যাপার। স্যারের কথা শুনে অনেক খুসি হলাম, কারন অন্য কম্পানিতে যেই কাপড়ের জন্য রিজিইন নিতে হয়ছে, আর আজকে সেই কাপড়ের জন্য এই কম্পানিতে আমার সম্মান বেঁড়ে গেলো।

চলবে...

1
$ 0.14
$ 0.14 from @TheRandomRewarder
Avatar for soyed
Written by
3 years ago

Comments