রাস্তায় আড্ডা দিয়ে বাসায় এসে দেখি ফুপু বাসায় বসে আছে।ফুফুকে কেমন আছো জিজ্ঞেস করতেই এক হাড়ি কথা শুনালো।
ফুপুর কথা শুনে মেজাজ গরম হয়ে গেলো। নিজের রুমে চলে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলাম। কিছুক্ষণ পর দেখি দরজা নক করার শব্দ।দরজা খুলে দেখি এ আর কেউ না আমার ফুপু।
ফুপু তার নিজের বাসায় যাবে যাওয়ার আগে আমাকে তার বড় মেয়ে আইরিন আপুর বিয়েতে যাওয়ার জন্য বলে গেছে।আমি শুধু মাথা নেড়ে তার কথার উত্তর দিচ্ছি।
ফুপু যাওয়ার পর আম্মুকে বলে দেই এই বিয়েতে আমি যাবো না।আম্মু বলে তোমার আব্বুকে বলো আমাকে না।আমি ধুর বলে নিজের রুমে চলে গেলাম।
আমার নাম সিয়াম।বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি পেরিয়েছি অনেক দিল হলো আজও চাকুরী খুঁজে বেড়াই।আমার বড় ফুপু তার মেয়ের সাথে আমার বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল ছোট বেলায় কিন্তু আজ আমার যে অবস্থা কে মেয়ে দিবে আমাকে।
বিয়ের আগের দিন বাসার সবাই ফুপুর বাসায় যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে।আব্বুকে আমি বলি বিয়েতে যাবো না।আব্বু আমাকে বকা দিয়ে বলে বিয়েতে যেতে হবে।বিয়েতে অনেক কাজিন আসবে। সবার এক কথা জিজ্ঞেস করবে আমাকে চাকুরী হয় না কেন।আমিও তো চেষ্টা করি না হলে কি করবো।
কিছু উপায় না দেখে বিয়েতে গেলাম।সবার থেকে একটু দূরে থাকার চেষ্টা করলাম।কিন্তু দূরে আর কতক্ষণ।
আমি তারাতাড়ি বিয়েতে খেতে বসে যাই।মনে মনে ভাবি খেয়েই বাসায় চলে যাই।খাবার টেবিল এ আমার সোজা একটা মেয়ে বসে।মেয়েটির চোখ আমার চোখ এ এক পলক তাকিয়ে দেখার পর আমার কাছে মেয়েটি ভালো লাগে।যেই রকম সুন্দর তেমনি তার মিষ্টি হাসি।এই রকম মেয়ে জীবন এ থাকলে আমি তার চেহারা দেখেই বাকি জীবন কাটিয়ে দিতে পারবো।
আমি খেয়ে উঠে আম্মুকে দেখালাম মেয়েটিকে।আম্মু বলে মাশাল্লাহ সুন্দর। আম্মু বলে তুই তো এখনো চাকরি পাও নাই কি বলবো আমি। আমি আম্মুকে বলি তুমি আগে সব খোঁজ নাও আমি বাকিটা দেখছি।আম্মু মেয়েটির সম্পর্কে খোঁজ নেয়। মেয়েটির নাম নীলা। মেয়েটি অনার্স ২য় বর্ষে বোটানি ডিপার্টমেন্ট এ জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে।
আম্মু তো মেয়ের পরিবার এর সব কথা জেনে খুশি। মেয়ে অনেক ভাল। কিন্তু সমস্যা হলো আমার চাকুরি। আমি মেয়েটিকে দেখার পর প্রতিজ্ঞা করি আমাকে চাকরি পেতেই হবে।এই মেয়েকে আমি চাই আমার জীবন সঙ্গী হিসেবে।
আমি এর পর বিয়ের বাড়ি থেকে এসে পুরো দমে চাকরি পড়াশোনা করি এর ৬ মাস পর একটা সরকারি চাকরি হয় আমার।
আম্মু মেয়েটির পরিবার এর কাছে আমার খালাম্মার মাধ্যমে প্রস্তাব দেয়। এরা মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি কিন্তু মেয়েকে তার স্বপ্ন পূরণ করতে সাহায্য করতে হবে।
আমি তাদের কথায় এক মত পোষণ করি।
বাসার সবাই বিয়ের জন্য প্রস্তুত নিচ্ছে।আজ আমি নিজেই আমার ফুপুর বাসায় যেয়ে বিয়ের দাওয়াত দিয়ে আসি।
বিয়েতে নীলার কথার মতো সব কিছু হয়।নীলা আর আমি ভালো বন্ধু হয়ে যাই।স্বামী হওয়ার আগে ভালো বন্ধু হতে হয়।একজন বন্ধু আরেক বন্ধুর মনের কথা বুঝতে পারে।আমি নীলার অনেক কাছের একজন হতে চেয়েছি যাতে ও আমাকে সব কথা শেয়ার করতে পারে।
নীলা আমার বিয়ে ধুমধাম হয়।বিয়ের দিন ফুপু বলে আমাকে সেই চাকরি পেলি আগে পাইলে তো হতো।আম্মু সেই দিন বলে উঠে ও চাকরি আগে পেলেও আপা আপনার মেয়েকে আনতাম না আমার ছেলের বউ করে।নীলা যোগ্য আমার ছেলের বউ হিসাবে।
নীলা আর আমাকে এক জায়গায় বসায়।যখন কাজি সাহেব কবুল বলতে বলে নীলাকে তখন নীলা আমার হাত ধরে বলে আমাকে ছেড়ে দিবে না তো কোন সময়। তখন আমি নীলাকে বলে যত ক্ষন আমার শ্বাস চলবে ততক্ষণ তুমি আমাকে সব সময় তোমার পাশে পাবা।তখন নীলা হেসে কবুল বলে।ওই একটা হাসি কোটি টাকা দিয়েও পাওয়া যায় না।এরপর আমাকে যখন কবুল বলতে বলে কাজি সাহেব তখন নীলা আমাকে একটা চিমটি দেয় আর আমি তারাতাড়ি কবুল বলে দেয়।তারপর মোনাজাত করে বিয়ের কাজ সম্পূর্ণ করে কাজি সাহেব।
এরপর নীলা পুরো সময় আমার হাত ধরে রেখে ছিল।
#গল্পঃকবুল।
0
5