গার্লফ্রেন্ডকে হাজার বার বলেছি মেডিকেলে পরীক্ষা দেওয়ার কোন দরকার নেই,কে শুনে কার কথা,সুষ্মিতা পরীক্ষা দিবে মানে পরীক্ষা দিবে,এটাই তার শেষ কথা।
দুনিয়া উল্টে গেলেও তার সিদ্ধান্তের পরিবর্তন হবেনা।
আমি শেষমেশ বললাম বাবু,জান,কলিজা,আমাদের রিলেশনের দোহাই তুমি পরীক্ষা দিওনা।ধরলাম তুমি চান্স পেলে তারপর?
মেডিকেলে চান্স পেলে তোমাকে দিনরাত পড়তে হবে,বাবু তোমার অনেক কষ্ট হবে।তুমি শুকিয়ে কঙ্কাল হয়ে যাবে।না বাবু আমি এটা কোনভাবেই মেনে নিতে পারবো না।মনে মনে ভয় হতে লাগলো কারণ সুষ্মিতা পড়াশোনায় তুখোর মেধাবী আর মেধাবীদের বেশিদিন ধরে রাখাও যায়না।আজ আমার হাতে তো কাল অন্যকারো।সারাজীবন বইয়ের পাতায় পড়ে এসেছি, স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন,আহ!!আজ বুঝলাম কবি আসলে কি বুঝিয়েছেন,গার্লফ্রেন্ড থাকার চেয়ে গার্লফ্রেন্ড ধরে রাখা অনেক কঠিন।মনে মনে ভাবতে লাগলাম,আচ্ছা সুষ্মিতাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে কেমন হয়,পকেট থেকে মানিব্যাগটা বের করলাম,দুইটা পাঁচ টাকার নোট,তারমধ্যে একটা ছেঁড়া।নাহ বিয়ের করারও তো সামর্থ্য নেই।
সুষ্মিতা ঢাকা মেডিকেল কলেজে চান্স পেল,আমার মাথার উপর আকাশ ভেঙে পড়লো।আমি চেয়েছি সুষ্মিতা আমার সাথে ঢাবিতে পড়বে,দুজন একসাথে হাত ধরাধরি করে ক্যাম্পাস লাইফ পার করবো,তা আর হলোনা।
আজ সুষ্মিতার সাথে দেখা করার কথা,বিকেল তিনটাই।
মেয়েটা মেডিকেলে চান্স পেল কি গিফট দেওয়া যায় তা নিয়েই ভাবতে লাগলাম,ডিকেল গিফট বক্স এ গেলাম,যাদের প্রেমিকা মেডিকেলে পড়ে তারা সাধারণত এখান থেকে রংবেরঙের গিফট নিয়ে থাকে।
~ভাই খেলনা কঙ্কাল এটার দাম কতো?
-স্যার ২২৮০ টাকা।
~এতো দাম?
-জ্বি স্যার,এটা জার্মানির প্রোডাক্ট দামটা একটু বেশি।চায়নার একটা প্রোডাক্ট আছে ওটা মাত্র ৫৮০ টাকা,ওটা দেখাই?
~থাক,জার্মানির প্রোডাক্টই দেন ৬০০ টাকা রাখেন।
-সরি স্যার।২২০০ টাকার কম রাখা যাবেনা,সীমিত লাভ।আপনি কয়েকটা দোকান ঘুরে দেখুন।
~ভাই একটা খেলনা কঙ্কালের এত দাম কেমনে হয়,আজকাল দেশের যে অবস্থা,মানুষদের কঙ্কালের ও তো এতদাম নেই।আই মিন খবরের কাগজ খুললেই খুন আর খুন।ইদানিং ধর্ষণের খবর নামেও আলাদা পাতা আছে।খবরের কাগজ খুলতেই ভয় লাগে খুন,ধর্ষণ,সরকারি প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা লোপাট ইত্যাদি।আচ্ছা যাই হোক আপনি কিছু মেডিকেলের বই দেখান।
-স্যার কঙ্কাল দিবেন না?
~না ভাই এই দামে গার্লফ্রেন্ডকে কঙ্কাল উপহার দেওয়া ঠিক হবেনা,গার্লফ্রেন্ডের সাথে ছাড়াছাড়ি হতে বেশিদিন নেই।আপনি বরং ভালো দেখে একটা ঘড়ি দেখান,গার্লফ্রেন্ড সারাদিন পড়াশোনা করে।ঘড়ির দিকে চোখ পড়লেই আমার কথা মনে পড়বে।
-স্যার এই ঘড়িটা ভালো হবে,রোলেক্সের ঘড়ি, অরিজিনাল রোলেক্সের দাম লাখ টাকা,এটা চাইনিজ ভার্সন মাত্র ১২৮০ টাকা।
-ভাই চাইনিজ ভার্সন গার্লফ্রেন্ড হবে? কঙ্কাল, ঘড়ি দুইটাই বাদ আপনি বরং কয়েকটা কবিতার বই দেখান,প্রেম ভালোবাসার নয়,মেয়েদের বিশ্বাস নেই বয়ফ্রেন্ড থেকে গিফট পাওয়া প্রেমের কবিতা পড়ে তারা অন্যের সাথে প্রেম করে।আপনি আধ্যাত্মিক লাইনের কবিতার বই দেখান,যা পড়ে কিছু বুঝা যায়না,বড়দের নক দেওয়া লাগে।আরে মধুসূদন টাইফের কবিতা।
~সরি স্যার কবিতার বই শেষ হয়ে গেছে।আপনি কয়েকটা উপন্যাস দেখুন।
-আমার গার্লফ্রেন্ডের অত সময় নেই,পরে দেখা যাবে গিফটের উপর তিন স্তরের ধুলো জমে গেছে।উপন্যাস হলো একটা লাইনকে কাগজের পর কাগজে মলাট বদ্ধ করা।কবিতা ই ভালো,একটা উপন্যাসকে কয়েকটা লাইনে প্রকাশ করা।
হঠাৎ দূর থেকে খেয়াল করলাম সুষ্মিতা আসছে,আমি আড়ালে চলে গেলাম।সুষ্মিতা নিশ্চয় অন্য কারো জন্য গিফট নিতে এসেছে।সুষ্মিতা দোকানের মধ্যে প্রবেশ করলো,আমি দূর থেকে তাকিয়ে রইলাম।
~ভাই ছেলেদের কিছু বিদেশি ব্যান্ডের ঘড়ি দোখান তো।(সুষ্মিতা)
-ম্যাম এটা ইতালির রক্স ব্যান্ডের,দামটা একটু বেশি ৪২০০ টাকা আর এটা দুবাইয়ের এক্সকে ব্যান্ডের,দাম ৪৮০০ টাকা।
~আচ্ছা এক্সকে ব্যান্ডের ঘড়িটা দিন।আর কিছু স্টাইলিশ চশমা দেখান।
-এই নিন,সবগুলো সানগ্লাসই চমৎকার।দাম ও খুববেশি না।
~ওকে।আর কি নেওয়া যায়,আচ্ছা আজকাল কোন কোন উপন্যাস চলতেছে?দেখানতো কিছু
-ম্যাম হুমায়ুন,সাদাত,সমরেশ,ছফা তাদের উপন্যাস দেখতে পারেন।
~ আচ্ছা এগুলো রাখেন,আপনি বরং আরিফ আজাদের "বেলা ফুরাবার আগে" বইটা দিন।
আমি সুষ্মিতার পেছন পেছন অনুসরণ করতে লাগলাম,অসতর্ক থাকলে যা হয় অল্পের জন্য ড্রেনের মধ্যে পড়তাম।
সুষ্মিতা MAN ফ্যাশনে ঢুকলো,এখানে
ছেলেদের ভালো মানের টি-শার্ট,প্যান্ট,ব্লেজার
কোট টাই পাওয়া যায়।সুষ্মিতা ইচ্ছামতো কেনাকাটা করলো।তারপর বাসায় চলে গেল।আমিও মন খারাপ করে বাসায় চলে এলাম,সুষ্মিতার জন্য গিফট কেনা হলোনা।এগিয়ে বিকেলে সুষ্মিতার সাথে দেখা করার কথা। যাবোনা।এই সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নেই,শুধু শুধু সময় নষ্ট করে লাভ নেই।
বিকেল থেকেই সুষ্মিতা কল দিয়েই যাচ্ছে,আমি ফোন তুললাম না,সন্ধ্যায় টেক্সট দিল।
"আরমান আমি তোমার বাসার সামনে,প্লিজ নিচে নাম"
একপ্রকার বাধ্য হয়ে নিচে নামলাম,মেয়ে মানুষ বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থাকলে,ব্যাপারটা মোটেও ভালো দেখায়না।
সুষ্মিতার সামনে দাঁড়ালাম।সুষ্মিতা আমাকে দেখেই এগিয়ে এলো,মেয়েটা শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।আর বলতে লাগলো আরমান আমার উপর রেগে আছ?
~না,আমি খুবই খুশি,তুমি মেডিকেলে চান্স পাইছ।
-আমি জানি তুমি আমার উপর রেগে আছ।ছোটবেলা থেকেই বুকের মধ্যে একটা স্বপ্নই লালন করে আসছি,একদিন মেডিকেলে পড়বো,ইয়া বড় ডাক্তার হবো,অসহায় মানুষকে সাহায্য করবো।আরমান তুমিতো নিশ্চয় জানো,আমার বাবার সামান্য টাইফয়েড হয়েছিল।উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবে মারা গেছেন।আরমান শুনছোতো আমার কথা।
~হুম শুনছি বলে যাও।
-আমাদের দেশ চিকিৎসা ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আছে। ধনিদের বেশিরভাগই উন্নত চিকিৎসার জন্য পাশের দেশ ভারতে চলে যায়,আর কিছু এ দেশের ডাক্তারদের দরবারে আসে।
মধ্যবিত্তরা দুরারোগ্য কিছু না হলে সাধারণত ডাক্তারের কাছে আসেনা।তাদের কাছে অসুখ মানেই ভয়ানক কিছু,জ্বর সর্দি কাশ সামান্য ব্যাপার।
মধ্যবিত্তদের কাছে ডাক্তার মানেই হাজার টাকার অংক।
হাজার টাকা দিয়ে লাইনে দাঁড়াও তারপর এই টেষ্ট সেই টেষ্ট।
হাজার টাকা দিয়ে টেস্টগুলো করানোর পর আবারও টাকা দিয়ে লাইনে দাঁড়াও টেস্টের রিপোর্ট দেখাও।ডাক্তার সাহেব ভালোমতো রিপোর্ট দেখে বললেন রিপোর্ট পজিটিভ।এবার আসে ওষুধ লিখার পালা,এক পৃষ্ঠার মধ্যে শত শত ওষুধ লিখে রাখে,এটা রাতে খাওয়ার আগে ওটা দুপুরের খাওয়ার পর। ফার্মেসিয়ালাকে বলবেন,ওষুধের ব্যান্ড যাতে পরিবর্তন না করে।ঠিক আছে আজ আসুন,১৫ দিন পর আবার একবার দেখিয়ে যাবেন।এইসব কারনে মধ্যবিত্তরা জটিল কোন রোগ ছাড়া ডাক্তারের কাছে আসেনা।
কোন রোগই সাধারণ নয়,যেকোনো রোগ সামান্য থেকে শুরু তারপর আস্তে আস্তে ডালপালা ছড়াতে থাকে,একসময় ব্যক্তিকে মৃত্যুর দুয়ারে নিয়ে যায়,সেজন্য আমাদের উচিত প্রাথমিক অবস্থাতেই ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া।এবার আসি আসি গরীবদের প্রসঙ্গে।
গরীব মানুষ ঠিকমতো ভাতই খেতে পারেনা,ডাক্তারের কাছে আসা,সেটাতো স্বপ্ন।গরীবের ক্যান্সার হলেও মোড়ের দোকানের ফার্মেসি ভাইদের কাছে আসে তারপর বিস্তারিত সমস্যা উপস্থাপন করে।ফার্মেসিওয়ালা কিছু ওষুধ দেন।
আরমান শুনছো আমার কথা?
~ভাল্লাগছে না। আর কিছু বলার থাকলে তাড়াতাড়ি বলো।মেডিকেলে চান্স পেতে না পেতেই পটর পটর।
সুষ্মিতার মন খারাপ হয়ে গেল।কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো।
-আন্টি আঙ্কেল কেমন আছে?অনেক দিন উনাদের দেখিনা।
~উনারা আছে,ভালোই আছে।তুমি মেডিকেল চান্স পেয়েছ তারা জানে।তোমাকে আর বাসায় গিয়ে বলার দরকার নেই।ঠিক আছে সুষ্মিতা বাসায় ফিরে যাও।
-আরমান এই জিনিসগুলো তোমার জন্য।
সুষ্মিতা গিফটগুলো দিয়ে চলে যাচ্ছে।
সুষ্মিতা?
তাকাল
থ্যাংকস।
সুষ্মিতা আবারও কাছে এলো।
তোমার পাশে আর কিছুক্ষণ থাকি?
~ওকে থাক।
আচ্ছা চল তোমাকে বাসা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসি।
রিকশার মধ্যে মেয়েটা আমার বাম হাত শক্ত করে ধরে ছিল,আর দু-চোখ মুছতে ছিল।মেয়েটার মন একদম নরম,অল্পতেই কান্না করা স্বভাবের মেয়ে। সুষ্মিতা
বারবার একটা কথাই বললো,আমাকে ভুলে যাবেনা তো?আমি সুষ্মিতাকে বাসা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে চলে আসলাম।আসার সময় বেশ খারাপ লাগলো।
সুষ্মিতার মন মানসিকতা খুবই ভালো।ওর সাথে প্রথম পরিচয় আন্তকলেজ বিতর্ক প্রতিযোগিতায়,ও ছিল বিপক্ষ দলের দলনেতা।আমি ছিলাম পক্ষ দলের দলনেতা।
আমার দল বিতর্ক প্রতিযোগিতায় জয়লাভ করে।অনুষ্ঠান শেষে ওর সাথে যখন দেখা হয়,তখন একটা কথা বলি,আপনি তো হেরে গেলেন?
মেয়েটার উওর ছিলো,
"যারা হারতে জানে তারাই একদিন জয়লাভ করে আর যাদের জয়লাভ করাই নেশা তারা একদিন হেরে যায়, আর দাঁড়াতে পারেনা"।
সুষ্মিতার কথায় কষ্ট পেলাম,তৎক্ষনাৎ কিছু বলিনি।অনেক দিন পার হলো হঠাৎ কলেজ ক্যাম্পাসে সুষ্মিতার সাথে দেখা,সুষ্মিতা গার্লস কলেজে পড়ে।প্রয়োজন ছাড়াতো আমাদের কলেজে আসার কথা না,
স্বাভাবিক কথাবার্তা চলতে লাগলো।কথাবার্তার একপর্যায়ে বললাম,তোমার ঐ দিনের কথায় বেশ কষ্ট পেলাম।সুষ্মিতা সরি বললো।এপর্যন্ত।
কলেজের ফাস্ট ইয়ার শেষ হলো,দ্বিতীয় বর্ষে সুষ্মিতার সাথে বিজ্ঞান মেলায় দেখা,ওও মজার মজার জিনিসপত্র তৈরি করে বিজ্ঞান মেলায় উপস্থাপন করলো।জেলা প্রশাসক ওর তৈরী করা জিনিসপত্র দেখে খুবই খুশি হলেন এবং সুষ্মিতার দলকে বিজয়ী ঘোষণা করেন।
সেই বিজ্ঞান মেলা থেকেই ওর প্রতি দূর্বল হয়ে পড়ি।কিন্তু অবাক করা কান্ড হলো,আমাদের বাসার ঠিকানায় একটি চিঠি আসলো,তাও আবার আমার নামে।চিঠি গিয়ে পড়লো আব্বুর কাছে,উনি পড়লেন।পড়া শেষ হওয়ার পর বললেন,তেমন কিছু না,এরপর আম্মুকে পড়তে দিলেন,আম্মু চিঠিটা পড়লেন তারপর আমার হাতে দিয়ে বললেন,ধর তোর চিঠি,সুষ্মিতা নামে কোন এক মেয়ের।পড়,কি নির্লজ্জ মেয়ে!আমার ছেলেকে প্রেমপত্র লিখে।
0
9