বেশিরভাগ ছেলেদের মুখেই এই কথা বলতে শুনা যায়, আসোলে কথাটার কতটুকু সত্যতা আছে আমার জানা নেই, কেননা আমি অনেক মেয়েকেই দেখেছি বেকার ছেলের সাথে সম্পর্কে জড়াতে, নিজের টিউশনির টাকা দিয়ে বিএফ এর ম্যাচ ভাড়া দিতেও দেখেছি, খুজঁলেই এরকম অনেক সম্পর্ক দেখা যাবে ছেলেটা গরীব আর বেকার তবুও মেয়েরা নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসে, বছরের পর বছর ভালোবাসার মানুষটার জন্য অপেক্ষা করে অনেক মেয়েরা, কিন্তু কিছু ছেলেরা যখন ভালো চাকরী পায় তখন মেয়েদের ছুরে ফেলে দিতে দ্বিধাবোধ করেনা, ভুলে যায় এই মেয়েটাই তার বেকার আর অসহায় সময় পাশে ছিলো, আমার পরিচিতো একজনের কথা বলি, ছেলেটা নেশা করে কিন্তু মেয়ে প্রথমে জানতোনা, সম্পর্কের কয়েক বছর পর জানতে পারে, তারপরেও ছেলেটাকে ছেড়ে যায়নি, আমি একদিন জিজ্ঞেস করেছিলাম কেনো ছেলেটাকে ছাড়ছেনা।মেয়েটা বলেছিলো,তোর একটা আঙ্গুলে ঘা হলে নিশ্চই আঙ্গুলটা কেটে ফেলবিনা, কিভাবে চিকিৎসা করে ভালো করা যায় তা করবি, আমার ভালোবাসার মানুষটাও আমার অংশ, তাকে কিভাবে ছেড়ে দিবো তার খারাপ অভ্যাশের জন্য?কিভাবে অন্ধকার নেশার জগৎ থেকে তাকে ফিরিয়ে আনা যায় সেই ব্যবস্থাই করবো।
মেয়েটার এইরকম উত্তরে আমি একদম বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম এবং অনেক কিছুই শিখেছিলাম, সত্যিকারের ভালোবাসলে আসোলেই ভালোবাসার মানুষটার যতই দোষ থাকুক কিন্তু তাকে ছেড়ে দিতে পারেনা প্রেমিকারা।
সমাজে তিন ধরনের মেয়ে আছে।
১.গরীব ছেলেকে ভালোবেসে কিন্তু বিনিময় প্রতারনা পেয়ে বাবা মায়ের পছন্দে বিয়ে করে।কিন্তু তবুও এরা উপাধি পায় মেয়েরা লোভী।
২.গরীব ছেলেকে ভালোবাসে কিন্তু বাবা মাকে কষ্ট দিতে পারবেনা তাই নিজের পছন্দকে বিসর্জন দেয়। এইরকম মেয়েরাও লোভী উপাধি পায়
৩.এরা দুই ধরনের মেয়েদের অবস্থা দেখে নিঃস্বার্থ ভাবে কোনো ছেলেকে ভালোবাসেনা।কেননা তারা কোনো ছেলেকেই বিশ্বাস করেনা।তাই টাকার জন্য ভালোবাসে।ছেলেদের টাকা খেয়ে ছেড়ে দেয়। এদের কাছে ভালোবাসার কোনো মূল্য নেই আর দিনশেষে এরাই ভালো থাকে।
এবার ব্যাখ্যায় আসি.....
১. নাম্বার মেয়েদের অবস্থা যা হয়।
একটু আগে যেই ঘটনার কথা বল্লাম ওটা দিয়েই বুঝাই।
মেয়েটার নাম অধরা আর ছেলেটার নাম আসিক।আমি ভেবেই নিয়েছিলাম অধরার ভবিষ্যৎ জীবনটা খুব সুন্দর হবে।কিন্তু তাদের সম্পর্কের যখন চাঁর বছর হলো তখন থেকেই আসিক বদলাতে শুরু করলো।অন্য বিভিন্ন মেয়েদের সাথে অধরার গোপনে প্রেম করতো।অধরা জানলে ক্ষমা চাইতো আর অধরাও ক্ষমা করে দিতো।টাকা লাগলে অধরা আসিককে টাকাও দিতো। আসিকের বাবা ছিলনা।মা সংসার চালাতো অনেক কষ্টে।অধরা আর আসিকের সম্পর্কের যখন পাঁচ বছরে পা দিলো তখন আসিক ভালো বেতনের চাকরি পেলো।হঠাৎ করেই ফেজবুকের পাসওয়ার্ড বদলে ফেল্লো।অধরা আর আসিকের সব কাপোল পিক আসিকের আইডি থেকে ডিলেট করে দিলো।অধরা বুঝতে পেরেছিলো যে,ভালো সময় আসাতে আসিক হয়তো বদলে যাচ্ছে।একটা সময় বুঝতে পারলো আসিক অন্য মেয়েদের সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছে।তাদের সম্পর্কের পাঁচ বছরের অনেক সময় আসিক অধরার সাথে প্রতারনা করেছে তাই অবশেষে অধরা আসিক কে ছেড়ে দেয়। আসিকো আর অধরার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেনি।কিন্তু আসিক তাদের বন্ধুমহলে আড্ডা দেয়ার সময় বলে,অধরা নাকি টাকার লোভে বড়লোক ছেলেকে বিয়ে করবে তাই আসিকরে ছেড়ে চলে গেছে।আমি এরকম অনেক সম্পর্ক দেখেছি।প্রেমিকারা যতই তাদের প্রেমিকদের জন্য সেক্রিফাইজ করুক কিন্তু তবুও দিনশেষে সব প্রেমিকারাই লোভী উপাধিটা পায়।
২ এর মেয়েদের উদাহরন দেই...বাবা,ভাই এর পরিচয়ের সর্বপ্রথম পরিচয় হলো তারা ছেলে বা পুরুষ। একজন বাবা এবং ভাই চায় তাদের মেয়ে,বোন ভালো থাকুক তাই তাদের মেয়ে,বোনকে গরীব বা বেকার ছেলের সাথে বিয়ে দিতে নারাজ।কিন্তু যখন সে প্রেমিক আর তার প্রেমিকার বাবা ভাই মেয়েটাকে বেকার প্রেমিকের কাছে বিয়ে না দিয়ে বড়লোক ছেলের কাছে বিয়ে দেয় তখনো মেয়েটাই লোভী।
হ্যা সমাজে কিছু লোভী মেয়ে আছে কিন্তু তাদের সংখ্যা খুবই কম।তবে যেই মেয়েরা সত্যি ছেলেদের টাকা দেখে ভালোবাসেনা তারাও কেনো লোভী উপাধিটা পাবে?মেয়েগুলো নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসার পরেও কেনো প্রতারনার স্বীকার হবে??
আচ্ছা মেয়েরা আসোলেই লোভী?নাহ মেয়েরা ভালোবাসার কাঙাল।কিন্তু ছেলেরাই নাম দিয়েছে মেয়েরা নাকি লোভী।দেখা যায় আসোল লোভীতো ছেলেরাই।কেননা একজন ছেলে যখন বাবা তখন সে বড়লোক ছেলে খুজে মেয়েকে বিয়ে দেয়ার জন্য। একজন ছেলে যখন ভাই সেও বোনের জন্য বড়লোক ছেলে খুজে।মেয়ে বা বোন গরীবের সাথে সম্পর্ক করলে মেনে নেয়না।
তো মেয়েরা কিভাবে লোভী হলো আমার জানা নেই।
আমি বলবো মেয়েরা তোমরা তোমাদের প্রেমিকরে ভালোবাসার আগে নিজেকে ভালোবাসো।নিজের বাবা মাকে ভালোবাসো।বাবার খেয়ে অন্য ছেলের জন্য নিজেকে কেনো বিলিয়ে দেবে কষ্টের দুনিয়ায়।মেয়েগুলো অনেক বোকা।প্রেমিকজাত তাদের ছেড়ে দিলেও প্রেমিকদের ঘৃণা করতে পারেনা।প্রেমিকারা নিজেদেরকেই দোষারোপ করে।তারা ভেবে নেয় তাদের নিজেদের মাঝেই ভালোবাসার কমতি ছিলো তাই তাদের প্রেমিকরা ছেড়ে গেছে।বোকা মেয়েরা বুঝেনা আসোলে ওইসব ছেলেরা তাদের ভালোবাসার যোগ্য ছিলনা তাই ভালোবাসার মূল্য দিতে পারেনি।
তোমাদের জন্য ভালো হয়েছে ওদের আসল রূপ চিনতে পেরেছো।মিথ্যে আশায় থেকে অবহেলা পেয়ে প্রতিদিন মৃত্যু যন্ত্রণা সহ্য করার চেয়ে সত্যিটা মেনে নিয়ে একদিন মরার যন্ত্রণা সহ্য করে তাকে ভুলে যাওয়াই অনেক ভালো।এখন নিজের জন্য ভাবো।
বাবা মা মরে গেলেও একটা সময় সন্তানেরা সেই শোকটা কাটিয়ে ওঠে।প্রেমিকরা তো বাবা মায়ের চেয়েও বেশি আপন না যে,তাদের চলে যাওয়ায় তোমরা থেমে যাবে।নিজেকে দোষ দেয়া বন্ধ করো।ভুলে যেওনা দশমাস অনেক কষ্ট সহ্য করে একটা সন্তান জন্ম দেয়ার ধৈর্ধ এবং ক্ষমতা দুটোই আমাদের আছে।নিজেকে নিজেরি সামলাতে হবে।আমরা দুর্বল নই।প্রেমিকরা ছেড়ে গেলে কেনো নিজেরা ভেঙে পরো?আমরা নারী এটা আমাদের দুর্বলতা নয় এটা আমাদের গর্ভ।আমরা মায়ের জাতি।বলতে দাও যারা লোভী বলে।কিছু দুষ্ট লোকের কথায় কিছুই আসে যায়না।যেসব ছেলেরা উপাধি দিয়েছে মেয়েরা লোভী তাদের কথায় নিজেদের মনোবল হারাবেনা এবং নিজেদের কখনও দোষী ভাব্বেনা।
মনে রাখবে ভালো কারো আগমনের জন্যই খারাপরা আমাদের জীবন থেকে বিদায় নেয়।আর খারাপরাই মেয়েদের লোভি উপাধিটা দিয়েছে নিজেদের দোষ ঢাকতে।কিন্তু তারা হয়তো জানেনা শাক দিয়ে কখনও মাছ ঢাকা যায়না।
পৃথিবীতে দুইরকম ছেলে আছে। একদল ছেলে আছে তারা ভালোবাসার নামে প্রতারণা করে ছেড়ে দেয়।আর এরাই মেয়েদের নামে এটা সেটা বলে বেড়ায়। আরেকদল ছেলে আছে এরা প্রতারণার স্বীকার মেয়েদেরকে আপন করে নিতে দ্বিধা করেনা বরং মেয়েদের সম্মান করে।
খারাপ ছেলে যেমন আছে তেমনি ভালো ছেলেও আছে।ভালো খারাপ মিলিয়েই আমাদের সমাজ।শুধু কিছু সময় মানুষ চিন্তে ভুল হয়ে যায়।
একটা মেয়ে যখন মা হয় তখন নিজে মাছ মাংসের বড় পিছ টা না খেয়ে স্বামী সন্তানের জন্য রেখে দেয়।দামী শাড়ি গহনা পরতে মন চাইলেও সন্তানের আগামী মাসের স্কুলের বেতনের কথা ভেবে নিজের ইচ্ছাকে বিসর্জন দেয়। একটা মেয়ে যখন বান্ধবীদের দামী ড্রেস পরতে দেখে তার নিজের সেটা পরার ইচ্ছা জাগলেও বাবার ইনকামের কথা ভেবে চুপ থাকে।দামী ড্রেস দিতে পারেনা তাই বাবাকে কখনও অভিযোগ করেনা।তবুও নাকি মেয়েরা লোভী।কিন্তু সত্যি বলতে একটা ছেলের চেয়ে একটা মেয়েই সবচেয়ে বেশী খারাপ পরিস্থিতির সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে কোনো অভিযোগ ছাড়াই।
0
7