🌼একগুচ্ছ কদম🌼
🌼 🌼
🌼 🌼
-গুড মর্নিং স্টুডেন্ট আমি আপনাদের নিউ টিচার রিদানশ চৌধুরী। কিছুদিন আপনাদের ক্লাস নিবো আমি। আশা করি আপনারা কিছু হলেও শিখতে পারবেন । আজকে আপাতত সবার সাথে পরিচয় পর্ব সেরে ফেলি ।
-তোমার নাম কি
– জান্নাত ইসলাম
-তুমি
-সাজি আহমেদ
-তুমি
-মোহো চৌধুরী
একে একে সবার নাম জেনে রিদিতার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় । রিদিতা ওকে খেয়ালই করেননি।
-হে ইউ কাঁপছো কেনো এভাবে নাম কি তোমার
– ( মাথা উঁচু করে বললাম ) রি রিদিতা খান
-এভাবে তুতলাচ্ছো কেনো কথা বলতে পারো না নাকি !
-ক ক কথা বলতে পারব না কেন আ আমি একটু অ অসুস্থ তাই কথা বলতে সমস্যা হচ্ছে।
-ওহ আচ্ছা।
আরো কিছুক্ষণ ক্লাস নিয়ে বের হয়ে যায় রিদানশ।ওকে বেরূতে দেখে রিদিতা মোহো কে জিজ্ঞেস করে !
-তোর দাভাই এখানে কিভাবে আসলো সে এখানে আবার কেনো এসেছে আর কি ক্ষতি করবে আমার ( বলেই বেরিয়ে যায় রিদিতা )
করিডোরে আসতেই কে যেন টেনে একটা ক্লাসরুমে নিয়ে আসল !
-কে কে আপনি ছাড়ুন আমাকে
-ছাড়ুন বলছি
-কেনো ছাড়ব কদম ফুল
-আ আপনি ছা ছাড়ুন আমাকে ( বলেই নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করতে লাগলাম )
-পাগল করে ছেড়েছো তুমি আমাকে আর বলছো তোমাকে ছাড়তে ( বলেই আমার চুলের মুঠি শক্ত করে ধরে গলায় মুখ ডুবিয়ে শ্বাস নিতে লাগল )
-আপনি একটা পাগল বদ উন্মাদ আপনি কেনো এসেছেন আমার জীবনে আবার ।
-হ্যা হ্যা পাগল আমি বদ উন্মাদ আমি তোর জন্য শুধু তোর জন্য কদম ফুল কেন আমাকে ছেড়ে ওই সৌহার্দ্য কে ভালোবাসলি বল না আমি একটা ভুল করেছিলাম তুই আমাকে কেন নিজের মতো করে গড়ে তুললি না আমার ভুল কেনো শুধরে দিলি না কদম বল আমাকে এর শাস্তি যে তোকে পেতেই হবে ( বলেই পাগলের মতো করতে লাগলো ওকে দেখে আমার ভয় লাগতে শুরু করে )
-ছাড়ুন আমাকে আপনি আবার কেনো এসেছেন আমার জীবনে কি চাই আপনার !
-তোকে চাই আমার তোকে তোকে তুই আমাকে ভালবাসলেই আমি কারো কোনো ক্ষতি করব না সত্যি।
-আপনার মতো জানোয়ার কে আর যাই হোক ভালোবাসা যায় না ( বলেই নিজেকে ছাড়িয়ে দৌড়ে চলে আসলাম ) ।
সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলাম। পিছন থেকে কে যেন কাঁধে হাত দিতে ভয় পেয়ে গেলাম তাকিয়ে দেখি সাজি আর জান্নাত।
সাজি : কিরে তুই এখানে আর তোকে আমরা সারা ভার্সিটি খুঁজছি ।
আমি : আচ্ছা মোহো কোথায় ওকে দেখছি না যে ?
জান্নাত : ও চলে গেছে !
আমি : চলে গেছে মানে কোথায় গেছে ( ভ্রু কুঁচকে জিগ্যেস করলাম )
সাজি : তুই ওকে ওভাবে বলায় ওর খারাপ লেগেছে তাই চলে গেছে।
আমি : ইশ্ আমি কি ভুলটাই না করলাম ও নিশ্চিত রাগ করেছে চল দেখি মহারানী কোথায় আছে ।
চললাম ৩জনে মোহো কে খুঁজতে । হঠাৎ একটা পিচ্চি এসে আমার হাতে একটা চিরকুট ধরিয়ে দিয়ে গেলে !
সাজি : কিরে তোকে আবার কে দিলো চিরকুট ?
জান্নাত : আহ্ ওকে পড়ে দেখতে তো দিবি !
সাজি : আচ্ছা পড় ।
আমি চিরকুট টা খুলে পড়তে শুরু করলাম “মনে আছে ৪বছর আগে এক শ্রাবনে কদম ফুল দিয়ে তোমাকে বলেছিলাম ভালোবাসি আমার কদম ফুল জবাবে তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলে কেনো কদম কেনো চলে গেলে উত্তর যে দিতে হবে তোমাকে ” চিরকুট টা পড়তেই রিদিতা কাঁপতে লাগলো কোনো কিছু না বলেই দৌড়ে গাড়িতে উঠে বেড়িয়ে পড়লো আর আড়ালে কেউ একজন বলে উঠল এখনি এতো ভয় পাচ্ছো কদম 🌺 সামনে যে আরো অনেক কিছু হবে পারবে তো সহ্য করতে !
চৌধুরী বাড়িতে ঢুকেই মোহো চিল্লাতে লাগলো আর বলতে লাগলো !
-দাভাই দাভাই আবার কেনো এসেছিস তুই আর কি চাইছিস তুই বল তোর জন্য আবার আমার সাথে রিদিতার সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাবে আমাদের বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যাবে আবারো
-কি হয়েছে কি মোহো ( মোহোর বাপি )
-তোমার ছেলে আবার রিদির লাইফে এসেছে কেন এসেছে তোমার ওই সাইকো ছেলে।
-ব্যস মোহো ব্যস যা হয়েছিল তাতে তোমার ওই রিদির দোষ ছিল ওর জন্য আ আমার ছেলে হসপি ….
-বাপি স্টপ । কি হয়েছে মোহো বল আমি কি তোর বান্ধবীকে কিছু বলেছি বলিনি তো তাহলে এতো চিল্লাছিস কেনো ( ভ্রু কুঁচকে জিগ্যেস করলেন )।
-তুই আর ওর জীবনে যাবি না বলে দিলাম ।
-সেটা আমি বুঝে নিবো ( বলেই মুচকি হেসে বেড়িয়ে গেলাম ) ।
প্রায় রাত বারোটা এমন সময় রিদিতার মনে হলো কেউ ওকে দেখছে কিন্তু ও চেয়েও চোখ খুলতে পারছিল না। ও কোনো রকম উঠেই বেলকনিতে গেল যেতেই ওকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো রিদানশ ।
-আ আবার কেন এসেছেন আপনি !
-কেন এমন করেছিলে কদম সত্যি কি আমার কোন দোষ ছিল তোমাকে ভালোবাসতাম আমি এখনো বাসি কিন্তু তুমি কি করে আমার জায়গা অন্য কাউকে দিয়ে দিলে কদম 🌺
“যদি আমার জন্য আসো তো আমার জন্যেই আসবে তার ভিতর যেন অন্য কেউ না থাকে ”
Part- 03
-বলেছিলাম আমাকে নিয়ে খেলতে এসো না কিন্তু তোমরা দুভাই বোন আমার জীবন নিয়ে খেললে যে ছেড়ে কিভাবে দেই ( একা একা বসে কথা বলেছে রিদানশ চোখ তার রিদিতার রুমে ভাবছেন ওর রুমে কিভাবে চোখ আজকে সকালেই রিদানশ রিদিতার পুরো বাড়িতে সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছে )
চলুন জেনে আসি ৪বছর আগে কি হয়েছিল !
“” এই রিদি রিদি জানিস আজকে দাভাই আসবে কানাডা থেকে আমার যে কি খুশি লাগছে জানিস না ( মোহো )
-তোর দাভাই আসছে আমি কি করবো ( ভ্রু কুঁচকে রিদি )
-তুই নাচবি যা নাচ
-হুহ বাসায় যেতে হবে আমার ভাইয়া অফিস থেকে এসে পড়বে রে !
-তোর ওই ভাইকে তুই এতো ভয় পাস কেন আমিতো পাই না।
-তুই পাবি কেন ভাবিজি ( বলেই হাসতে লাগলাম )।
-যাহ তোর ভাই তো বুঝেও না বুঝার ভান করে ( চোখ দুটো ছলছল করতে লাগলো ) ।
-আচ্ছা মেরি মা এখন কান্না বন্ধ কর ।
-ভাইয়া চলে আসছে চল চল নিচে যাই ( বলেই দৌড়াতে লাগলাম )
-আচ্ছা চল ।
নিচে গিয়েই দেখি একটা লম্বা ফর্সা ইয়াং ছেলে দাঁড়িয়ে আছে । চোখে কি মায়া যে তাকাবে ওই মায়াতেই পড়ে যাবে তার দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলাম কখন যে মোহো ডাকতে লাগল বুঝতে পারলাম না !
-আমার ভাইকে দেখে প্রেমে পড়ে গেলি না কি হুম হুম ( বলেই ধাক্কাতে লাগলো আমাকে আর আমি লজ্জা পেয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলাম )
-মোহো মাই সিস ( রিদানশ )
-দাভাই ( বলেই জড়িয়ে ধরলাম ) ।
-কেমন আছিস। আমি চলে এসেছি এইবার তোকে শশুর বাড়ী পাঠিয়ে দিব ওকেহ ( কোনোমতে দৌড়ে উপরে চলে গেল আর এদিকে আমি হাসতে হাসতে বসে পড়লাম আর মোহো চিল্লাতে লাগলো ) ।
নিচে ওই মেয়েটি কে একদম মায়াবী লাগে । মেয়েটি জন্য মনে কিছু নিষিদ্ধ অনূভুতি জাগছে।এই কি তাহলে আমার একগুচ্ছ কদম হবে । ও কি আমার নিষিদ্ধ ভালোবাসার মানুষটি হবে । উফফফ কি ভাবছি আমি এগুলা পাগল হয়ে যাব।
-রিদি কোথায় ছিলে তুমি ( রিদির ভাই মাহিত খান )।
-ভা ভাই মোহোর বাসায় গিয়েছিলাম ( বলেই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলাম )।
-রিদি কোন ক্লাসে পড়ো তুমি
-ভাই কেনো ক্লাস ১০ এ
-তোমার পরিক্ষা সামনে মনে আছে তোমার বাহিরে ভাবা বন্ধ কর ।
-আ আচ্ছা ভাই
-যাও
রুমে গিয়ে শুয়ে পরলাম ভাবতে লাগলাম অচেনা মানুষটিকে নিয়ে।কেন এতো কাছের মনে হলো। তাকে নিয়ে ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকালে উঠে স্কুলের জন্য রেডি হতে লাগলাম আজকে মোহো আসবে না । আজকে ওর ভাইয়া ওকে দিয়ে আসবে আর আমার ভাইয়ের সময়ই নেই । বলে দেখি ভাইয়াকে যদি নিয়ে যায় !
-ভা ভাই
-বল
-আমাকে আজকে দিয়ে আসবি স্কুলে
-গাড়ি নিয়ে চলে যা আমার কাজ আছে
-আ আচ্ছা ভাই ( চোখ দুটো ছলছল করে ওঠলো মাথা নিচু করে বেড়িয়ে আসলাম )
-দাভাই ওই দেখ মোহো এসে পড়েছে !
-কোথায় ?
-ওই যে।
-(গাড়ি থেকে নামছে কি মায়াবী সেই মুখ চোখ নাক লাল হয়ে আছে মনে হচ্ছে কান্না করেছে।)
-কিরে তোর চোখমুখ লাল কেন কান্না করেছিস ( বলেই আমার মুখ টেনে দেখতে লাগল )।
-আরে না কান্না করবো কেনো বাদ দে এসব ।
-চল তোকে দাভাই এর সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।
-চল ।
-দাভাই এটা রিদিতা আমার বেষ্টু ।
-হেলো কদম সরি রিদিতা কেমন আছো ।
-আলহামদুলিল্লাহ ভালো ভাইয়া । আপনি কেমন আছেন।
-আলহামদুলিল্লাহ ভালো যাও তাহলে তোমরা ক্লাস শুরু হয়ে যাবে ।
-হ্যা চল মোহো ।
“বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল করেছ দান
আমি দিতে এসেছি শ্রাবনের গান!!
মেঘের ছায়ায় অন্ধকারে রেখেছি ডেকে তারে
এই যে আমার সূরের ক্ষেতের প্রথম সোনার ধান”
আজ এনে দিলে , হয়তো দিবে না কাল _
রিক্ত হবে যে তোমার ফুলের ডাল!!
( দেবেশী চক্রবর্তী )
মনে মনে গুনগুন করতে লাগলো রিদানশ। তাকিয়ে আছে রিদিতার যাবার পথে । ভাবছে এই দৃষ্টিতেই যে তার সর্বনাশের শুরু। কি মায়া সেই চোখে । সেদিন থেকে রিদানশের মনে একটু একটু করে রিদিতার জন্য অনূভুতি জাগতে শুরু করে। অপরদিকে রিদিতার মনেও জাগতে শুরু করে রিদানশের জন্য অনূভুতি কিন্তু বুঝতে পারে না। রিদিতার মধ্যে পরিবর্তন আসতে শুরু করে যা রিদিতার ভাই মাহিত খেয়াল করে এবং একদিন রাতে তাকে ডেকে নিয়ে যায়।
-ভাই ডেকেছিলে ?
-হ্যা তোমার পড়াশোনার কি খবর !
-ভালো ভাই
-ইদানিং শুনলাম তোমার পড়াশোনার অবনতি হচ্ছে জানতে পারি কেন?
-ভা ভাই আমি তো ঠিকঠাক মতোই পড়ছি ( বলেই মাথা নিচু করে বসে আছি )
-কালকে থেকে সম্পূর্ন ভাবে তোমার বাহিরে যাওয়া নিষেধ। স্কুলে আমি দিয়ে আসব তোমাকে। অন্যদিকে মন দেয়ার চেষ্টা করো না কারো জন্য ভালো হবে না। আমি তোমাকে ছোট থেকে নিজের সন্তানের মতো বড় করেছি আমি চাই না তুমি কোন ভুল করো । বাপি বাহিরে থাকে আর তোমার সম্পূর্ন দায়িত্ব আমাকে দিয়ে গেছে তুমি কোন ভুল করলে তার দায় সম্পূর্ণ আমার উপর আসবে। তুমি কোন ভুল করলে তার ব্যর্থতা আমার হবে তুমি কি বুঝতে পারছো আমি যা বলেছি ?
-হ্যা হ্যা ভাই আমি বুঝতে পেরেছি আমি তোমার মাথা নিচু হতে দিবো না ভাই ।
-যাও ঘুমিয়ে পড়ো ।
রিদিতা যাবার পরে মাহিত বেলকনিতে এসে দাঁড়ায় ভাবতে থাকে তার ছেলেবেলা !!
ছোট বেলায় রিদিতাকে জন্ম দিতে মাম্মা মারা যায় তখন মনে হয়েছিল কেন আমি বোন চেয়েছিলাম কিন্তু বাপি বুঝিয়েছিল জন্ম মৃত্যু আল্লাহর হাতে । সেই ১২ বছর বয়স থেকে রিদিতাকে একটু একটু করে বড় করতে থাকি ।
রিদিতাকে কখনো সামনে ভালোবাসা দেয়নি । আড়ালে ওর খেয়াল রেখেছি । আর বাপি সেই কলেজে থাকতেই আমাদের এখানে রেখে বাহিরে সেটেল হয়ে যায়। মাসে মাসে টাকা পাঠিয়ে তার দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। রিদিতা কখনো বাপির ভালোবাসা পায়নি । ও নিজেও আমার মতোই একা । কলেজ লাইফে ভালোবেসেছিলাম একজনকে সে ভালোবাসেনি আমায় বেসেছে আমার কাছেরই অন্য কাউকে। তাকে ভালোবেসে আর কাউকে ভালোবাসতে পারিনি ।
“আমরা কাউকে এতটাই ভালোবাসে ফেলি
যতটা ভালবাসে ফেললে অন্য কাউকে
ভালোবাসার ইচ্ছটাই মরে যায়
সারাজীবনের জন্য মরে যায় 🖤”
চলবে…….
0
2