ডিভোর্সি_মেয়ে

0 1
Avatar for soyed
Written by
3 years ago

#ডিভোর্সি_মেয়ে

#real_life_story💔

#পর্ব_৬

!

!

কেবলই ঘুমের জন্য চোখটা লেগে আসছিলো ঠিক সেই সময় ফজরের আযান শুনতে পেলাম। ঘুম আর হলো না উঠে বসে পড়লাম তারপর পাশে নাজীফার দিকে তাকালাম মেয়েটা ঘুমিয়ে আছে কি সুন্দর করে। হয়তো কোন ভাল স্বপ্ন দেখছে গরীবের বাস্তবে স্বপ্ন দেখা বারণ কিন্তু ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখতে বারণ কোথায়?

ঘুমটা ভাঙতে ইচ্ছে করলো না কিন্তু তবুও ওকে ডাকা উচিৎ একসাথে ফজরের নামাজটা পড়ার জন্য। যেই ভাবা সেই কাজ ওকে ডাকলাম আস্তে করে কিন্তু ওর কোন সাড়াশব্দ নেই আমি আরও দুইবার ডাকলাম কিন্তু ও একটু নড়েচড়ে আবারও ঘুমিয়ে পড়লো।

আমি উঠে ড্রয়িং রুমে এলাম দেখলাম নাজীফার মা উঠে পড়েছেন আমাকে দেখে উনি বললেন,

: কি ব্যাপার রুম্পা তুমি উঠে পড়েছো নামাজ পড়বে নাকি?

: জ্বি!

: তা নাজীফাকে ডেকে আনলে না মা?

: জ্বি আন্টি আমি ওকে ডেকেছি কিন্তু ও উঠেনি।

: ওহ্ আচ্ছা। আর বলো না মেয়েটা এত ঘুম পাগল যে উঠে নাই। যাই হোক, চল আমরা দুজনে নামাজটা পড়ে নেই।

: আচ্ছা ঠিক আছে।

তারপর আমরা দুজনে নামাজ পড়ে নিলাম। আমি নামাজ পড়ে রুমে এলাম এখনো নাজীফা ঘুমিয়ে আছে আমি ওর পাশে শুয়ে পড়লাম। কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি খেয়াল করিনি নাজীফার ডাকে আমার ঘুম ভাঙলো।

: এই রুম্পা উঠ এই রুম্পা..

আমি তাকিয়ে দেখি ও কোমরে দুই হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আমি উঠে বসলাম তারপর বললাম,

: নাজীফা তুমি কখন উঠলে? আসলে শুয়ে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে,,

ও আমাকে থামিয়ে বলল,

: আমি তো সেই কখন উঠেছি কখন থেকে তোকে ডাকছি। এই দাঁড়া দাঁড়া তুমি বলেছিস কেন?😒

: ও আচ্ছা সরি।

: আচ্ছা ঠিক আছে হইছে হইছে এখন তাড়াতাড়ি উঠ তো" বলে ও বাইরে চলে গেল।

আমি উঠে বাইরে ড্রয়িং রুমে এলাম দেখলাম নাজীফার মা আর নাজীফা গোছগাছ করে কোথাও যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে।

: আন্টি আপনারা কোথাও যাচ্ছেন?

আন্টি টিফিন বক্সটা চৌকিতে রাখতে রাখতে বললেন,

: হুম মা। আমাদের প্রতিদিনের যা কাজ এই সকালে বেরিয়ে যায় আর রাত সন্ধ্যার সময় বাসায় আসি।

: কোথায় যান আপনারা আন্টি?

নাজীফা চৌকি থেকে সাইড ব্যাগটা নিয়ে কাঁধে রাখতে রাখতে আমার কাছে এসে বলল,

: গার্মেন্টসে,, গার্মেন্টসে কাজ করি আমরা দুজনে আমি আর মা আর নাফিস বাসায় থাকে। গরীব মানুষ কি করবো বল,,ও হ্যাঁ মা বলছিলো গার্মেন্টসে ম্যানেজারকে বলে তোকে একটা কাজ দিতে বলবে। কি রে করবি তো নাকি?

আমার চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো আমি আন্টির দিকে তাকালাম আন্টি আমার কাছে এসে আমার কাঁধে হাত রেখে বলল,

: কি হলো মা করবে কাজ?

আমি দুহাত দিয়ে চোখ মুছে বললাম,

: হুম আন্টি করবো আমি।

ঠিক তখনই দরজা খুলে নাফিস ঢুকে এলো ওর হাতে পানির পাত্র পানি নিয়ে আসতে গিয়েছিল।

: এই তো নাফিস চলে এসেছে আচ্ছা রুম্পা মা আমাদের এখন যেতে হবে দেরি হয়ে যাচ্ছে। আমি ম্যানেজারকে বলবো যাতে একটা কাজ পাওয়া যায় কিনা নাজীফা চল দেরি হয়ে যাচ্ছে।

: আচ্ছা চল মা নাফিস আপুর খেয়াল রাখব ঠিক আছে। আর রুম্পা তোর কিছু প্রয়োজন লাগলে নাফিসকে বলবি ওকে।

: আচ্ছা ঠিক আছে।

: নাফিস আর রুম্পা তোমরা দুজনে কিন্তু খাবার খেয়ে নিবে ঠিক আছে। আর রুম্পা তুমি একা একা বা এখান থেকে বেরোবে না কোথাও তাহলে সমস্যা হতে পারে। তুমি তো ঢাকা শহর ঠিকমত চেনো না তাই না ঠিক আছে?

: আচ্ছা আন্টি।

তারপর ওরা দুজনে চলে গেল নাফিস দরজা বন্ধ করে দিল সারাদিন আমি আর নাফিস গল্প করেই কাটিয়েছি। সন্ধ্যার সময় নাজীফারা বাসায় ফিরে এলো আন্টি বললেন কাজ ঠিক হয়ে গেছে কাল থেকে যেতে হবে।

বেশ ভালই চলছিল এভাবে আমি গার্মেন্টসে কাজ পেয়েছিলাম রোজ তিনজন একসাথে যেতাম আর তিনজনে একসাথে বাসায় ফিরে আসতাম। আর নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে বলতাম আল্লাহ হয়তো আমি এবার সুখের দিশা পেয়েছি তুমি যা করো বান্দার ভালোর জন্যই করো। হাজারো শুকরিয়া হে পরওয়ারদেগার তোমার দরবারে।

💔

আরো দুই মাস চলে গেল এভাবেই গার্মেন্টসে কাজ করে ভালই চলছে আমার প্রথম মাসের বেতন ৫হাজার টাকা পায়।প্রথম মাসের বেতনের ১হাজার দিয়ে আমার দুটো জামা কিনি যেহেতু পরার তেমন কিছুই ছিল না শুধুমাত্র আমার পরনে একটা শাড়ি ছিল আর নাজীফার দেওয়া একটা জামা। সেও তো গরীব কোথায় পাবে ১হাজার টাকা আন্টিকে দিয়েছিলাম প্রথমে নিতে আপত্তি জানালেও জোর করে দিয়েছি। এতদিন ধরে উনাদের টাকায় খেয়েছি আমার তো দেওয়া প্রয়োজন তাই আর ৩হাজার টাকা ছিল। ১৫শত টাকা দিয়ে একটা বোরকা কিনি যেহেতু অনেক মানুষের মধ্যে চলাফেরা করতে হয়। বোরকা পরা থাকলে কিছুটা স্বস্তিবোধ লাগে অনেকের খারাপ দৃষ্টি থেকে রক্ষা পায়।

আর বাকি ছিল ২হাজার টাকা সেটা দিয়ে পরের মাস চলেছিলাম তারপর ২য় মাসের বেতন পায়। এভাবেই চলছিল তারপর একদিন সন্ধ্যায় আমরা তিনজন একসঙ্গে বাসায় ফিরছিলাম গল্প করতে করতে।

গার্মেন্টস বেশি দুরে নয় নাজীফাদের বাসা থেকে ২০মিনিট হেঁটে যেতে হয়। আমি নাজীফা আর আন্টি হেটে হেটে আসছি কিছুক্ষণ পর মনে হলো কেউ আমাদের পিছু পিছু আসছে আর আমাদের উপর নজর রাখছে।

আমরা তিনজনই দাঁড়িয়ে গেলাম আর তিনজনই নিজেদের মুখোমুখি তাকিয়ে একসাথে পিছনে ফিরে তাকালাম। কিন্তু আজব ব্যাপার কাউকে দেখতে পেলাম না আমরা আবারও সামনের দিকে হাটতে লাগলাম। ৫মিনিট হাটার পর আবারও একই ঘটনা ঘটলো এবার একটু দূরে একজনকে দেখা গেল।

এটার বোঝার আরেকটি কারণ হলো আমরা যে গলিতে থাকি সেখানে সন্ধ্যার সময় সচরাচর কেউ থাকে না। আমরা তিনজনই দাঁড়িয়ে আছি এক জায়গায় আর ওই লোকটা আমাদের দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো।

নিজেদের মধ্যে ফিসফিস করে বলছি,

আন্টি: এই দাঁড়া তো দেখি এই ছেলেটা কখন থেকে আমাদের উপর নজর রাখছে। একবার দেইখা লই কেডা এইডা যদি এমন তেমন হয় আমরা তিনজন আছি উরাধুরা মাইর শুরু করে দিবো বুঝছিস।

নাজীফা: মা দেখো, আবছা আলোয় ভাল দেখা যাচ্ছে না তবে জঙ্গি টাইপের মনে হচ্ছে। তোমরা রেড়ি থাকো এমনতেমন হইলে উরাধুরা দৌড় দিবো ঠিক আছে।

আমি: আচ্ছা তোমরা এত ভয় দেখাও কেন?

: তুই চুপ থাক ঢাকা শহর দুইদিনে কিছু চেনা যায় না তাই তুই কিছু জানিস না। তুই বোরকাটা উচু করে ধরে রাখ দে দৌড় বললেই দৌড় শুরু করবি বুঝলি।

লোকটি আমাদের একদম কাছে চলে এসে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আমরাও তিনজন ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে লোকটির দিকে লোকটি সাদা পান্জাবি পড়ে আছে মাথায় সাদা টুপি আর মুখে হালকা দাড়ি। আবছা আলোয় ভাল বোঝা না গেলেও কিছুটা দেখা যাচ্ছে কিছুটা জঙ্গি জঙ্গি টাইপের লোক।

তারপর নিরবতা ভেঙে আন্টিই বলা শুরু করলেন,

: কি ব্যাপার আপনি আমাদের পিছু নিয়েছেন কেন?

: না আসলে আমি আপনাদের এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন যেতে দেখি তাই....

লোকটি আর কিছু বলতে পারলো না তার আগেই নাজীফা বলতে লাগলো

: কিহ্হহ্! তারমানে আপনি আমাদের এইভাবে প্রতিদিন ফলো করেন? মা দেখো আমরা তো কিছুই খেয়াল করিনি উনি আমাদের পিছু পিছু প্রতিদিন ফলো করেন।

: না আসলে তেমন কিছু না ওই...

আন্টি: কি আপনি আমাদের এভাবে পিছু পিছু আসেন কেন কি মতলব আপনার বলেন তো শুনি?

: আমি আসলে উনার সাথে কথা বলতে চাই( আমাকে ইশারা করে)

এটা শুনে আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি লোকটির দিকে আর আন্টি আর নাজীফা তাকিয়ে আছে আমার দিকে। তারপর নাজীফা আমার থেকে চোখ সরিয়ে লোকটির দিকে তাকিয়ে বলল,

: ওর সাথে আপনার আবার কি কথা?🤨

এবার আন্টিও বললেন,

: হুম বলেন কি কথা?

আমি এখনো অবাক হয়ে লোকটির দিকে তাকিয়ে আছি কিছু বলছি না লোকটি আমার দিকে তাকিয়ে বললো,

: আমি উনাকে বিয়ে করতে চাই!!

আমি এবার কথা বললাম,

: কিন্তু আমি চাই না। কারণ আমি আপনাকে চিনি না আপনিও আমাকে চিনেন না কখনো আমাকে দেখেনওনি হঠাৎ করে কোথা থেকে এসে বলছেন আপনি আমাকে বিয়ে করবেন!

লোকটি এবার বিনয়ের সুরে বললেন,

: কে বলেছে চিনি না আমি আপনাকে ১মাস ধরে চিনি।

আমরা তিনজনই একসাথে বলে উঠলাম,

___কিভাবে চিনেন!?!!?

.

.

............. চলবে💔

(

1
$ 0.00
Avatar for soyed
Written by
3 years ago

Comments