গল্প : বিয়ে ছাড়া বউ
পার্টঃ ৩
সকালে মনের আনন্দে ঘুমিয়ে আছি । কেউ মনে হয় আমার গায়ে ধাক্কা দিচ্ছে । একটা চোখ হালকা খুলে দেখি সুলতানা ধাক্কা দিচ্ছে আর ডাকছে ।
-কি হয়েছে (আমি ঘুমের ঘোরে)
-ওই ওঠো । (সুলতানা)
-আর একটু পর (আমি)
- আরে ওঠো তো সকাল হয়ে গেছে (সুলতানা)
-হুমম একটু পর (আমি)
-ওই তোমার না আজকে অফিসে প্রথম দিন যাবেনা । (সুলতানা)
কথাটা শুনেই তড়িঘড়ি করে উঠে পরলাম ।
-হুমম যাবো কয়টা বাজে দাড়াও আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি । (আমি)
-এখনও অফিসে যাওয়ার অনেক সময় আছে (সুলতানা)
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি এখনও ৭ টা বাজতে ১০ মিনিট বাকি আছে । আর অফিস ১০ টায় ।
-এখনও তো ৭ টা বাজে নাই এতো সকালে ডাক দিলে কেনো (আমি)
-অফিসে যাবা ঠিক আছে কিন্তু সকালে নাস্তা না করেই যাবে নাকি সেই জন্য যাও গিয়ে বাজার করে আনো (সুলতানা)
-এটা তো তুমিও আনতে পারতা । (আমি)
-হুমম কিন্তু কথা কি ছিলো তুমি বাজার করবা আর আমি রান্না করবো যাও তাড়াতাড়ি গিয়ে বাজার করে আনো (সুলতানা)
-হুমম যাচ্ছি (আমি)
মুখ ধুয়ে বাজারে চলে গেলাম ।কি কিনবো সেটাই ভাবছি । আসার সময় তো বললো না কি বাজার করতে হবে । নিজের যতো দূর পর্যন্ত জ্ঞ্যান আছে বাজার করলাম । একটা মাছ নিয়ে গেলে কেমন হয় ।
-মামা রুই মাছ কতো (আমি)
-৪০০ টাকা কেজি
আরে শালা বলে কি এর আগে বাসায় থাকতে একবার কিন ছিলাম ২০০ টাকা কেজি নিছিলি এখানে তো ৪০০ টাকা থাক দরকার নেই আমার ।
-কি মামা দিবো (দোকানি)
-না মামা লাগবে না রেখে দেন । (আমি)
-৩৫০ টাকা নিবেন (দোকানি)
-না
-আচ্ছা ৩০০ টাকা দেন নিয়ে যান অনেক ভালো মাছ এর থেইকা কম দামে আর পাইবেন না বুঝছেন (দোকানি)
আমি কি মাছ কিনতে আসছি না কাপড় কিছু বুঝতে পারছি না ।
-আচ্ছা দেন । (আমি)
মাছ আর বাজারের ব্যাগ নিয়ে বাসার দিকে হাঁটা দিলাম । বাড়িতে একটু ফোন দেই ঢাকায় আসার পরে ফোন দেওয়া হয় নাই।
-হ্যালো আম্মু (আমি)
-এই কে বলছেন (আম্মু)
-আম্মু আমি পারভেজ (আমি)
-না আমার ছেলে তো এতো সকালে ঘুম থেকে উঠে না তুমি নিশ্চয় চোর আর সেটটা চুরি করে আনছো(আম্মু)
-ধুর আম্মু ফাইজলামি বাদ দাও তো (আমি)
-হুমম তা এতো সকালে উঠেছিস যে (আম্মু)
-তোমার ছেলে এখন চাকরি করে বুঝছো আর চাকরিতে যেতে হবে তাই (আমি ভাব নিয়ে)
-থাক আর ভাব নিস না কয়দিন টিকবি সেইটা ভাব (আম্মু)
-হুমম দেইখো (আমি)
-তা অফিস তো মনে হয় আরও পরে এতো সকালে কি করছিস (আম্মু)
-ওই বাজার করতে আসছি নাস্তা বানাতে হবে তো । (আমি)
-তা কি কি বাজার করছিস । (আম্মু)
-অনেক কিছুই রুই মাছ কিনছি (আমি)
-রুই মাছ কে রান্না করবে । (আম্মু)
-কে আবার আমি করবো (চাপা ভাব নিয়ে)
আম্মু দেখি কথাটা শুনে অপাশ থেকে হালকা কাশি দিলো ।
-কি হলো আম্মু কাশি দিলে যে যক্ষা হয়নি তো আবার । (আমি)
-হয়নি তবে এবার হবে তোর কথাটা শুনে (আম্মু)
-কেনো
-শোন তোর আব্বু যা টাকা দিছে সেইটা এই ভাবে নষ্ট করিস না (আম্মু)
-আমি আবার নষ্ট করলাম কখন (আমি)
-ওই যে মাছ টা কিনছিস তুই রান্না করতে পারবি না শুধু শুধু নষ্ট করার থেকে যেখান থেকে কিনেছিস সেই খানে ফেরত দিয়ে আয় (আম্মু)
-ধুর (বলেই ফোনটা কেটে দিলাম)
এটা কেমন কথা নিজের ছেলেকে একে বারেই বিশ্বাস করে না আল্লাহ কই যাবো আমি । তারপর বাজারের ব্যাগটা নিয়ে বাসায় চলে এলাম । দেখি সুলতানা রান্না ঘরে সব কিছু গোজগাজ করছে ।
-কি বেপার এতো দেড়ি হলো কেনো আসতে । (সুলতানা)
-ওই আম্মুর সাথে ফোনে কথা বলছিলাম । (আমি)
-হুমম তাড়াতাড়ি দাও রান্না করতে হবে নাহলে আবার অফিসে যাওয়া দেড়ি হয়ে যাবে। (সুলতানা)
-হুমম এই যে । (আমি)
তিন্নি ওটা নিয়ে রান্না ঘরে চলে গেলো । আমিও রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে নিলাম । গিয়ে দেখি এখনও হয়নি ।
-কোনো সাহায্য লাগলে বলো (আমি)
-থাক তোমাকে সাহায্য করতে হবে না (সুলতানা)
-তা রান্না হয়ছে (আমি)
-হুমম প্রায় । (সুলতানা)
রান্না শেষে দুজনেই খেতে বসলাম । খাবারটা কিন্তু সেই রকম হইছে ।
-ওয়াও অনেক সুন্দর রান্না করতে পারো তো তুমি তা কে শিখিয়েছে । (আমি)
-আম্মু (সুলতানা)
তারপর দুজনেই খেয়ে দেয়ে বেড়িয়ে পড়লাম অফিসের উদ্দেশ্য ।
-তুমি চাইলে তোমার অফিস পর্যন্ত এগিয়ে দিতে পারি (আমি)
-থাক লাগবে না আর শুনো বাসায় আমরা যেমনই থাকি না কেনো বাসার বাইরে কিন্তু কেউ কাউকে চিনি না ঠিক আছে সুতরাং তুমি তোমার মতো যাও আমি আমার মতো । (সুলতানা)
বলেই একটা রিকশা নিয়ে চলে গেলো । এ কেমন মেয়ে দয়া মায়া বলতে কি কিছু নেই নাকি । পৌছে দিলে কি এমন মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যেতো । তারপর আমিও একটা রিকশা নিয়ে অফিসে চলে এলাম । এই প্রথম মনে হয় আমি ঠিক সময়ে অফিসে এসেছি । তারপর গিয়ে সোজা নিজের কেবিনে বসলাম । পাশের কেবিনে তাকাতেই যেনো অবাক । সৌভাগ্য নাকি দুর্ভাগ্য জানি না কারণ আমার পাশের কেবিনে আর কেউনা সুলতানা । সুলতানাও হয়তো আমাকে দেখে কিছুটা অবাক হয়েছে । আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে কাজ শুরু করে দিলো । এমন ভাব করছে যেনো আমাকে চিনেই না । আমি তো এক ভাবে ওর দিকে তাকিয়ে আছি আর ওর এমন আচরণের কথা ভাবছি।
-কি বেপার কাজ করছেন না কেনো ।
কথাটা শুনে সামনে তাকাতেই দেখি বস ।
-Good Morning Sir (আমি)
- হুমম অফিসে প্রথম দিন আর আসতে আসতেই অন্য কেবিনে চোখ কেনো । (বস)
-না মানে স্যার (আমি)
-চুপচাপ নিজের কাজে মনোযোগ দিন এর পর যদি আবার দেখি তাহলে কিন্তু চাকরি থেকে বের করে দিবো । (বস )
-সরি স্যার আর হবে না । (আমি)
- হুমম বসুন । (বস)
নিজের কেবিনে বসে পড়লাম । আড় চোখে তাকিয়ে দেখি সুলতানা মিট মিট করে হাসছে । খুব রাগ হচ্ছে ওর উপর । আমিও আর সেদিকে খেয়াল না করে কাজে মনোযোগ দিলাম । ওর দিকে আর একবারও তাকায়নি । অফিস ছুটির পরে নিজের মতো বাসায় চলে এলাম । কিছুক্ষন বাদে সুলতানাও আসলো । এখনও ওর উপর রাগটা আছে ।
-কি বেপার এমন মুখ ফুলিয়ে বসে আছো কেনো । (সুলতানা)
-অফিসে আমার সাথে ওমন ব্যবহার করলে কেনো । (আমি)
-কি করলাম । (সুলতানা)
-যে ভাবে ছিলে মনে হলো আমাকে চিনোই না (আমি)
-আমি তোমাকে বলেছিলাম বাসার বাইরে আমরা কেউ কাউকে চিনি না সুতরাং এখানে রাগ করার কোনো মানেই হয়না । এখন সরো রান্না করতে হবে । (সুলতানা)
সুলতানা রান্না করতে চলে গেলো । রান্না শেষে দুজনে খেয়েই শুয়ে পড়লাম । আজকে আর ওর সাথে তেমন একটা কথা বলিনি ।
(গল্পের পরবর্তী পার্ট অামার প্রোফাইল এ দেওয়া হয়েছে এখনি পড়ে অাসতে পারেন অাশা করি অাপনাদের ভালো লাগবে যদি ভালো লেগে থাকে থাহলে প্লিজ কমেন্ট করবেন অার নিয়মিত গল্প পেতে অবশ্যই ফলো করবেন...ধন্যবাদ)
দেখতে দেখতে ১০ দিন পার হয়ে গেছে । এই কয়দিনে সুলতানাকে অনেক আপন ভেবে নিয়েছি । বলতে গেলে ভালোবাসি ভাবছি এই বিয়ে ছাড়া বউ এর থেকে সত্যি সত্যি বউ হলে কেমন হয় । কিন্তু সুলতানা এখনও আগের জায়গায় আছে । জানি না ও আমাকে ভালোবাসে নাকি ওর মনে অন্য কেউ আছে । রাতে ঘুমানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি ।
-সুলতানা একটা কথা জিজ্ঞাসা করি (আমি)
-কি
-আচ্ছা তুমি কি কাউকে ভালোবাসো (আমি)
-হঠাৎ এই প্রশ্ন (সুলতানা)
-না এমনি জানতে চায়ছিলাম আছে নাকি কেউ (আমি)
-ঘুমিয়ে পড়ো অনেক রাত হয়েছে । (সুলতানা বলেই অন্য পাশ হয়ে শুয়ে পড়লো)
আমিও আর কোনো কিছু না বলে ঘুমিয়ে পড়লাম ।
চলবে..,....
0
15