#বিবাহিত_ব্যাচেলর
#
#পর্ব_33+34
👇👇
বিপদ যখন আসে চারদিক থেকে আসে। এমন সময় আম্মুর রুমে আসার কি দরকার বা ছিলো?
জিদনির মা শুয়ে পরলো। জিদনি ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে। হাত-পাও কাঁপছে। একবার যদি তূর্য ধরা খায় তাহলে কি হবে? ভাবতেই কলিজা শুকিয়ে যাচ্ছে জিদনির ।
একটু পর চোখ মেলে জিদনির মা বলল,
-'এত কি ভাবছিস তুই? তোর বাবা আসলে সব ঠিক হয়ে যাবে। তোর এত ভাবতে হবে না।'
মা কিসের কথা বলছে মাথায় ঢুকছে না জিদনির । আনমনে বলল,
-'কি ঠিক হবে?'
-'কি আবার? তূর্যের সাথে তোর ডিভোর্স হয়ে যাবে। রূপক এর সাথে বিয়েটা হয়ে যাবে।'
-'মা সব কিছু কি এতই সহজ?'
-'সব সহজ না কিন্তু আমি যা বলেছি তা সহজ।'
জিদনির ফোনের ম্যাসেজ টোন বেজে উঠল । আচমকা চোখ পরলো স্কিনে। তূর্যের ম্যাসেজ,
-Tomader khater niche idur poce ache. Wakkkk thu gondho!! Amar bomi asche Ami kintu Ber hoye jabo ekhan theke.
খাটের নিচে ইঁদুর পচলে জিদনি কি গন্ধ পেতো না? আজাইরা কথা। জিদনির এখন তূর্যের উপর মেজাজ খারাপ হচ্ছে । তূর্যের জন্য আজাইরা বিপদে পরলো।
তূর্য আবার ম্যাসেজ করল,
-kichu toh ekta koro. Noytoh kintu Ami ekhan theke Ber hoye jabo.
জিদনির মেজাজটা চট করে খারাপ হয়ে গেলো। চিৎকার দিতে ইচ্ছা করছে। রাগটা দমিয়ে ম্যাসেজের রিপ্লাই করলো,
-'আম্মু যদি এখন আপনাকে এখানে দেখে তাহলে কি হবে বলেন? আমায় বিপদে না ফেললে ভালো লাগে না আপনার? চুপ-চাপ খাটের নিচে থাকেন। শুধু ইঁদুর কেন কুত্তা পচে থাকলেও ওখানে থাকতে হবে।'
-'ছিঃ জিদনি এভাবে বলো না। বাঁচাও আমায়। আমি বাড়ি যাবো। শ্বাশুড়ি আম্মাকে দুই মিনিটের জন্য রুমের বাইরে নেও।'
-'আমি কিভাবে আম্মু কে বাইরে নিবো আজব! ইঁদুরের সাথে আপনি পচে থাকেন আমার কিছু এসে যায় না।'
ম্যাসেজ টা সেন্ড করতে গিয়ে জিদনি দেখলো ফোনের ব্যালেন্স শেষ। হায়রে কপাল!
জিদনি এবার কাগজে লিখে খাটের নিচে ছুঁড়ে ফেলল। তূর্য বলল,
-'বাহ্! তোমার তো সেই বুদ্ধি। ফোনের টাকা শেষ হবার ভয়ে কাগজে লিখছো। আমার বউ হয়ে এত কিপ্টামি করলে চলে? আমার মত উদার মনের হও।'
জিদনির মা উঠে বসলো। জিদনি থমকে গেলো। ভয় মিশ্রিত কন্ঠে বলল,
-'ঘুম শেষ আম্মু?'
-'তুই কি লিখছিস আর খাটের নিচে ছুঁড়ে ফেলছিস?'
জিদনি কিছুক্ষন ভেবে চট করে বলল,
-'অনেক দিন লিখি না। হাতের লেখা পচা হচ্ছে । তাই ছিঁড়ে ফেলে দিচ্ছি।'
তূর্য ম্যাসেজ করলো,
-'মেয়ে মানুষের হঠাৎ বুদ্ধি। কি সুন্দর বানিয়ে মিথ্যা বলছো। আর তোমার বাবা ফিরে আসলে রূপকের সাথে তোমার বিয়ে দিবে তাই না? এতই সহজ? আমায় ডিভোর্স দিবা? তোমায় আগে খুন করবো তারপর নিজে মরবো।'
জিদনি ভয়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে আর তূর্য ম্যাসেজ করেই যাচ্ছে। আরে এই ছেলের মনে কি ভয় নেই? জিদনি জড়োসড়ো হয়ে টেবিলের কাছে বসে খাটায় আনমনে আঁকাচ্ছে।
জিদনির মা আবার শুয়ে পরলো। জিদনি বুঝতে পারছে না মা কেন একটু পর পর সজাগ হয়ে যাচ্ছে । ঘুমাতে আসছে ঘুমাবে।
ঘুম ঘুম চোখে জিদনির মা আবার বলল,
-'জিদনি তোর মোবাইলটা দে তোর বাবার কাছে ফোন দিবো।'
জিদনি নার্ভাস হয়ে বলল,
-'আমার ফোনে ব্যালেন্স নেই।'
-'আমার রুম থেকে আমার মোবাইলটা নিয়ে আয় তাহলে।'
-'আমি পারবো না।'
জিদনির মা ভ্রু কুঁচকে বলল,
-'পারবি না মানে?'
জিদনি কখনো মা-বাবার মুখের উপর না বলে নি। বা কথার অবাধ্য হয় নি। কিন্তু আজকাল বেপরোয়া হয়ে যাচ্ছে সব কিছুতে।
জিদনির কাছ থেকে কোন উত্তর না পেয়ে জিদনির মা খাট থেকে নেমে মোবাইল আনতে রুমে গেলো। জিদনি জোরে একটা শ্বাস ফেলে দরজার ছিটকানি লাগিয়ে দিলো। তূর্য তাড়াতাড়ি খাটের নিচে থেকে বের হলো। ঘেমে একাকার হয়ে গেছে তূর্য । চাপা কন্ঠে বলল,
-'ভাবছি আমারও ইঁদুরের মত খাটের নিচে পচে থাকতে হবে।'
জিদনি উদগ্রীব হয়ে বলল,
-'আপনার কি আক্কেল নেই? এখনো দাঁড়িয়ে আছেন?'
-'দাঁড়িয়ে থাকবো না তো কি বসে থাকবো?'
-'সব সময় ফাজলামি করার এনার্জি কোথায় পান আপনি? তাড়াতাড়ি চলে যান।'
তূর্য জিদনি কে আচমকা জড়িয়ে ধরে কপালে চুমো খেয়ে বলল,
-'এই তো যাচ্ছি। আমায় ডিভোর্স দেওয়ার কথা ভুলেও ভেবো না । সব শেষ করে দিবো।'
এই বলে বেরিয়ে গেলো তূর্য । জিদনি বারান্দায় দাঁড়িয়ে তূর্যের চলে যাওয়া দেখছে।
-'জিদনি কোথায় তুই?'
মায়ের কন্ঠে শুনে রুমে আসে জিদনি।
-'এই তো বারান্দায় ছিলাম।'
মায়ের সাথে বসে মায়ের কথা শুনছে জিদনি । এখন কিছুই ভালো লাগছে না। সব কিছু এলোমেলো মনে হচ্ছে । এর শেষ কি হবে?
দেখতে দেখতে পনেরোটা দিন কেটে গেলো। তূর্যের পাগলামী বেড়েই চলেছে।
জিদনি ভেবেই পাচ্ছে না কি করবে ? তূর্য কে না করতেও পারছে না,ফিরিয়ে দিতেও পারছে না।
আজকে দেশে ফিরবে জিদনির বাবা । এখন মোটামুটি সুস্থ প্রায় । ধীরে ধীরে সম্পূর্ন সুস্থ হয়ে যাবে কিন্তু সময় লাগবে।
জিদনির মনে আনন্দের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে । বাবা তো এখন সুস্থ । অনেক দিন পর মনটা ফুরফুরে লাগছে জিদনির। জিদনির সব আত্মীয়-স্বজনরা আবার এসেছে।
জিদনি ওর বাবা কে দেখেই জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো। জিদনির বাবা মুচকি হেসে জিদনির মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো । চিন্তা ভাবনার অনেকটাই অবসান ঘটেছে জিদনির । বাড়িতে আনন্দের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে । অনেক দিন পর সবাই মন খুলে হাসছে। পরিবারের একটা মানুষের অসুস্থতা পুরো পরিবারকে তছনছ করে দিতে পারে।
রাতে সবাই মিলে বসে গল্প করছে। অনেক দিন পরে গল্পের আসর। মায়ের মুখে হাসি,বাবার মুখে হাসি ।ব্যাস আর কি চাই?
জিদনির মোবাইলে রিং বেজে উঠল । তূর্যের ফোন । ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বলল,
-'তোমার বাবা এখন সুস্থ । মেয়ে ফিরে পেয়েছে। তবুও মামলা করার খুব বেশী প্রয়োজন ছিলো?'
জিদনি বিস্ময়ের সুরে বলল,
-'মানে?'
-'মানে তুমি ভালো করেই জানো।'
-'সত্যি আমি কিছু জানি না কিসের মামলা?'
জিদনি ভেবে পাচ্ছে না। বাবা তো দুপুরে বাড়িতে ফিরলো। আর এখন রাত। মামলা করলো কখন?
-'জিদনি তোমায় খালু ডাকছে।'
রূপকের কথা শুনে কান থেকে ফোন নামিয়ে ফেলল জিদনি।
রূপক আবার বলল,
-'কি হয়েছে থমকে গেলে কেন? কার সাথে ফোনে কথা বলছিলে?'
জিদনি কোন উত্তর না দিয়ে বাবার কাছে গেলো। তূর্য কিসের মামলার কথা বলছে ? জিদনির মাথা ঘুরাচ্ছে। জিদনির ফুফু, খালা ,মামা ,চাচা সবাই সেখানে বসা। জিদনির বাবা বলল,
-'রূপকের সাথে বিয়েতে তোর কোন আপত্তি আছে?'
জিদনির মুখ চুপসে গেলো । মাথা নিচু করে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আছে। জিদনির মা বলল,
-'কিরে কথা বলছিস না কেন?'
বাবা-মায়ের মুখের উপর না বলার অভ্যাস নেই জিদনির । কিন্তু এখন কি বলবে? জিদনির বাবা আবার বলল,
-'চুপ করে থাকলে কি চলবে ? চুপ থাকা তো সম্মতির লক্ষন।'
জিদনি মনে সাহস সঞ্চয় করে বলল,
-'আব্বু আমি আসলে এখন এসবের জন্য প্রস্তুত না। আর হাজার হোক ডিভোর্স তো আগে হতে হবে।'
-'ডিভোর্স নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না। আর এখানে প্রস্তুতির কিছুই নেই।'
রূপকের মা বলল,
-'তোকে জোর করে বিয়ে করেছে । এখানে ডিভোর্সের কি আছে?'
জিদনি চুপ করে আসে। কারো কথার কোন উত্তর দিচ্ছে না। বাবার কাছে কি একবার জিজ্ঞেস করবে মামলার কথা ? দ্বিধা-দ্বন্দে ভুগছে জিদনি ।
জিদনির বাবা আবার বলল,
-'এখানে জিদনির মত না থাকার কিছুই নেই। তবুও আমার দায়িত্ব আমি জিজ্ঞেস করে নিয়েছি।'
রাতে না খেয়েই শুয়ে পরলো জিদনি। রূপকের সাথে বিয়ের কথা ভাবলেই তূর্যের জন্য বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠে । বাবা-মা কে কি বলবে ?
জিদনি তূর্যের কাছে ফোন দিলো। তূর্যের ফোন অফ। জিদনির চিন্তা আরও বেড়ে গেলো। কিসের মামলা? কি বলেছে তূর্য । ধুর! কিছুই বুঝতে পারছে না জিদনি ।
অনেক বার তূর্যের ফোনে ট্রাই করছে কিন্তু ফোন অফ। তূর্যের ফোন অফ কেন থাকবে? এত প্যারা নিতে পারছে না জিদনি । দুই চোখ গড়িয়ে পানি পরছে।জীবনের অনেক বড় সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
চলবে..
..
#পর্ব_34
সারা রাত ঘুম হয় নি জিদনির । একটু পর পর অকারনে ঘুম ভেঙে যাচ্ছে । বার বার মনে পরছে তূর্যের কথা। হাজার বার বারন করা সত্ত্বেও তূর্য বেহায়ার মত ফোন দিতো। শূন্যতা অনুভব করছে জিদনি । তূর্যের জন্য শূন্যতা। তূর্যের জন্য শূন্যতা এতদিন অনুভব করে নি কারন তূর্য যে সব সময় পাশে ছিলো। তাই মানুষটার গুরুত্ব বুঝতে পারে নি। বুঝতে পারে নি তাঁর জন্য শূন্যতা।
এভাবেই রাত'টা কেটে গেলো। বাইরে এখনও আবছা অন্ধকার। সকাল হচ্ছে কেবল। জিদনি গিয়ে বারান্দায় দাঁড়ালো। কৌতূহলি মনে আশেপাশে উঁকি ঝুঁকি মেরে দেখছে তূর্য কে দেখা যায় কিনা। মাঝে মাঝে বারান্দায় আসলেই তূর্যের দেখা মিলতো। তূর্য মামলার কথা বলেছে। তূর্য কে কি পুলিশে ধরেছে? নাকি কোন বিপদ হলো? নানা রকম প্রশ্ন ঘোরপাক খাচ্ছে জিদনির মাথায়। তূর্য এভাবে যোগাযোগ অফ করে রেখেছে এই ফাকে যদি রূপকের সাথে বিয়ে হয়ে যায়? পরিবারের মানুষকে না বলবে কিভাবে ভাবতে পারছে না জিদনি।
বারান্দা থেকে জিদনি সোজা ওর মায়েক রুমে গেলো। মা কেবল ফযরের নামাজ পড়ে উঠলো।
-'কিরে তুই এত সকালে? চোখ ফুলে আছে লাল দেখাচ্ছে। সারা রাতে কি ঘুমাস নি।'
জিদনি গম্ভীর সুরে বলল,
-'ঘুমিয়েছি।'
-'কেমন যেন অস্বাভাবিক লাগছে তোকে। রাতে চুল বেনী করে ঘুমাস নি? কেমন এলোমেলো উস্কখুস্ক হয়ে আছে চুল।'
-'আমায় নিতে এত ভাবতে হবে না।'
-'কি হয়েছে তোর বল তো।'
-'কি হবে আর আমার। আম্মু আমি সোজা কথা বলি তোমরা জানো তোমাদের মুখের উপর আমি না বলতে পারি না। এর মানে এই না এই সুযোগটা তোমরা কাজে লাগিয়ে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করবা।'
জিদনির মা ভ্রু কুঁচকে বলল,
-'কি বলতে চাস সোজাসুজি বল।'
-'আমি রূপক কে বিয়ে করতে পারবো না তুমি বাবা কে বলো।'
-'ফালতু ন্যাকামো কথা কম বল। তোর জন্য কি এখন রাজকুমার আনতে হবে?'
-'রাজকুমার হোক আর ভিখারী হোক বাট রূপক না। আর আমার ডিভোর্স হয়নি এখনো ,বিয়ে যেভাবেই হোক।'
এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলে রুম থেকে বের হয়ে গেলো জিদনি । মাকে কিছু বলার সুযোগ দিলো না।
তূর্যের ফোন এখনও বন্ধ। কেমন অস্থিরতা কাজ করছে জিদনির। এক বার তূর্যের খোঁজ নিলে ক্ষতি কি তাতে? বাসায় বসে তো আর খোঁজ নেওয়া সম্ভব না। জিদনি সাত-পাঁচ না ভেবে রওয়ানা হলো। উদ্দশ্য তূর্যের সন্ধান মিলানো। জিদনি কি করতে যাচ্ছে তা জিদনি নিজেও জানে না। শুধু এই মুহূর্তে তূর্যের সন্ধান মিলাতে হবে এটাই মাথায় কাজ করছে। রেডী হয়ে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় মায়ের সাথে দেখা হয়ে হলো। সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে যেতে পারলে ভালো হতো। দেখা যখন হয়ে যাচ্ছে তখন আর কি করার! জিদনির মা কিছু বলার আগেই জিদনি স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,
-'আমি একটু শপিংএ যাচ্ছি।'
জিদনির মা চমকে গিয়ে বলল,
-'শপিংএ যাচ্ছিস মানে?'
-'আমি শপিংএ যেতে পারি না?'
-'না তোর বাসা থেকে বের হওয়ারই দরকার নেই। যা লাগে বল আমি নিজে গিয়ে এনে দিবো।'
মায়ের এমন আচরনে বিরক্ত হচ্ছে জিদনি । মায়ের কথা কেয়ার না করে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে । সব কিছু তে বিরক্তি কাজ করে। কারও কথা শুনতে ইচ্ছে হয় না।
জিদনির এরকম আচরনে জিদনি মা কিছুটা অবাক হয়ে গেলো।
-'জিদনি বোধ হয় বিয়েতে রাজি না। ওর ইচ্ছের বিরুদ্ধে...'
জিদনির মায়ের কথা শেস না হতেই থামিয়ে দিলো জিদনির বাবা। বলল,
-'সব সময় সন্তানের মত অনুযায়ী কাজ করা যায় না। আমরা যেটা করতে যাচ্ছি এমন তো নয় যে সেটা ওর জন্য খারাপ। আর বিয়ে এখানেই হবে ওর মত থাকুক আর না থাকুক। বিয়ের পর সব ঠিক হয়ে যাবে । আর বিয়ের কাজ টা যত দ্রুত সম্ভব সেরে ফেলা ভালো । ঘরোয়া ভাবে কালকে বিয়েটা হয়ে গেলে কেমন হয়? পরে না হয় বড়সড়ো আয়োজন করব।'
জিদনির মা কিছুক্ষন চুপ থেকে বলল,
-'এভাবে হুট-হাট বিয়ে? তাছাড়া ওঁদের তো ডিভোর্স হয়নি।'
ডিভোর্সের কথা শুনে চেঁচিয়ে উঠলো জিদনির বাবা।
-'জোর করে জিদনি কে কবুল বলিয়েছে,সিগ্নাচার দেওয়া হয়েছে। সেখানে ডিভোর্স টা কি জরুরী?'
-'না ব্যাপারটা কেমন জানি বেমানান লাগে।'
-'এ ব্যাপারে আর কোন কথা বলো না। কালকে বিয়ে হবে এ পর্যন্তই। আর তূর্য এখন পুলিশের তাড়ার উপর আছে। কোন জামেলা করার সুযোগ নেই।'
জিদনির মা আর কোন কথা বললো না।
.
হাঁটতে হাঁটতে জিদনি তূর্যের বাড়ির কাছে চলে গেলো। এভাবে তূর্যের বাসায় যাওয়া কি ঠিক হবে? গিয়েও বা কি বলবে? কেমন দ্বিধায় পরে গেলো জিদনি। বাড়ির গেট পর্যন্ত এসে আর ভিতরে যাওয়ার সাহস হচ্ছে না।
-'মামি তুমি?'
পিছনে ফিরে তাকায় জিদনি। অস্ফূট স্বরে বলল,
-'দিগন্ত।'
জিদনি ধীর পায়ে দিগন্তের কাছে গিয়ে দিগন্তের মাথায় হাত রেখে বলল,
-'তোমার মামা কোথায়?'
-'তোমার বাবা তো ইয়া বড় মামলা দিয়েছে। মামা বাসায় থাকে কি করে?'
তাহলে এই জন্য তূর্য জিদনির উপর রাগ করেছে। অথচ জিদনি এর কিছুই জানে না।
জিদনি বলল,
-'কোথায় গিয়েছে বলতে পারো?'
-'আমি তোমায় বলবো আর তুমি থানায় গিয়ে বলে দিবে। তোমায় আমার চেনা আছে। পালিয়ে এসে আমায় কি বিপদেই না ফেলেছিলে।'
দিগন্তের কথা যুক্তি সংগত। জিদনি কথা না বাড়িয়ে বলল,
-'আমি যে এখানে এসেছি তা কাউকে বলো না হুম..'
জিদনি হতাশ হয়ে বাসার দিকে রওয়ানা হলো। এসবের কিছুই তো জিদনি জানে না। এগুলোর সব রূপকের বুদ্ধি। বুঝতে বাকী নেই জিদনির । নয়ত জিদনির বাবা জিদনি কে না জানিয়ে কেন মামলা দিবে? রূপকের উপর চরম মেজাজ খারাপ হচ্ছে জিদনির ।
বাসায় গিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো জিদনি।
-'কি শপিং করলে?'
শোয়া থেকে উঠো বসলো জিদনি । রূপক কে দেখে মেজাজটা আরও খারাপ হয়ে গেলো। ঝাঁঝালো গলায় বলল,
-'এত সব দিয়ে আপনার কি দরকার?'
-'তুমি আমার হবু বউ আমার দরকার না তো কার দরকার? শপিংএ গিয়েছিলে নাকি তূর্য কে খুঁজতে গিয়েছিলে?'
-'ড্যান্স করতে গেছি। ফালতু বক বক না করে যান এখান থেকে ।'
-'জিদনি আমাদের কাল বিয়ে হচ্ছে ।'
তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো জিদনি । মুখটা আরও ফ্যাকাশে হয়ে গেলো। স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে যেন।
রূপক আবার বলল,
-'জানতাম তুমি অবাক হবে। তোমায় অবাক করার জন্যই এত আয়োজন।'
বলেই মুচকি হাসলো রূপক। হাসি টা যেন জিদনি কে উদ্দেশ্য করে অহংকারের হাসি। মনের বাসনা পূর্ন হওয়ায় গৌরবের হাসি।
জিদনি কিছু না বলে মুর্তির মত বসে থাকলো। কতক্ষন পর জিদনি ওর বাবার কাছে গেলো।
-'বাবা কালকে নাকি বিয়ে?'
-'হ্যাঁ। কেন কি হয়েছে?'
-'মা তোমায় কিছু বলে নি?'
-' কি বলবে?'
-'বাবা আমায় উল্টো পাল্টা কিছু করতে বাধ্য করো না। আমি কিছুতেই বিয়েটা করতে পারবো না।'
হুংকার দিয়ে উঠে জিদনির বাবা । বলল,
-'বিয়ে করতে পারবি না তো ফিরে আসলি কেন? থেকে যেতি তূর্যের কাছে।আসলি কেন আমাদের কাছে? নাটক করেছিস এতদিন?'
জিদনি মাথা নিচু করে বলল,
-'বাবা আমি একবারও তূর্যের কথা বলে নি।'
-'চুপ কর তুই। তোর বিয়ে করতে প্রবলেম কোথায়? তুই যদি ফ্যামিলি চাস,বাবা-মা চাস তাহলে বিয়ে করতে হবে। নয়ত চলে যা যেথায় ইচ্ছা । তোর জন্য আমার কত অপমান সহ্য করতে হচ্ছে । তোর জন্য আমার মান-সম্মান সব শেষ।'
বাবার মুখে এসব কথা শুনে অবাক হয়ে গেলো জিদনি । এসবে জিদনির কি দোষ? জিদনি কিভাবে মান-সম্মান শেষ করল? পরিবারের প্রতি টা মানুষের কাছে বোজা হয়ে গেলো।
জিদনি চোখ ভিজে যাচ্ছে । কান্না চাপিয়ে বাবার কাছ থেকে উঠে আসলো। রুমে এসে তূর্য কে ফোন করলো। এখনও সুইচ অফ। যদি সুইচ অনও হত তাহলেও বা কি করত? কি বলত? তূর্য আমার বিয়ে আমায় নিয়ে যাও' এটা বলত? এটা বলার মত সম্পর্ক কি তূর্যের সাথে আছে?
👇👇
চলবে..
0
5