গল্পঃ- বেস্ট ফ্রেন্ড যখন বউ
পর্বঃ- ২
বাসায় যাওয়ার পর, রুমে ঢুকে দেখে মারিয়া রুমে নেই। ওদিকে সেদিকে তাকিয়ে দেখছে! কিন্তু নেই। হঠাৎ পেছন থেকে কে যেন এসে একটা ধাক্কা মেরে বিছানার উপর ফেলে দিল! চেয়ে দেখে মারিয়া। অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো,
- এই তুই কোথায় ছিলে?
- কেন তোর পিছন পিছন।
- ইদানীং খুব দুষ্টু হয়ে যাচ্ছিস তুই!
- তো কি হয়েছে? তোর এত জ্বলে কেন?
- এই যে আমি তোমার হাসব্যান্ড,তুমি আমার ওয়াইফ। এখানে তুই তুই চলবেনা।
- ওরে আমার হাসব্যান্ড! রাত ১১টায় আসছে রুমে আবার আমাকে জ্ঞান দেই। কিভাবে পসিবল বস?
- শত হলেও আমি তোমার হাসব্যান্ড আমার কথা শুনবে আজ থেকে।
- এই একদম চুপ! কিসের হাসব্যান্ড? তুই আমার একমাত্র বন্ধু।
- তাহলে বিয়ে করলি কেন?
- আমি চাইনা তুই অন্য কাউকে বিয়ে করে আমায় ভুলে যা! সেজন্য চিরদিন আমার কাছে থাকার জন্যে বিয়ে করেছি।
- আচ্ছা ঠিক আছে! আমার ভীষণ খারাপ লাগছে আমি ঘুমাবো।
- কিসের ঘুম? আজকে রাতে ঘুমানো যাবেনা!
- তাহলে বসে বসে তোকে দেখব নাকি?
- তোর মোবাইলটা আমার হাতে! লুডু গেইম আছে তো?
- আমি কোন গেইম-টেইম খেলিনা তাই রাখিনা।
- আচ্ছা দে আমি ডাউনলোড করি! তারপর একসঙ্গে দু'জন বসে খেলব। তুই যদি হারিস তাহলে ট্রিট দিবে! আবার আমি যদি হারি তাহলেও ট্রিট দিবে।
- দোস্ত আমার হার্ড অ্যাটাক করবে! ডাক্তারকে ফোন দিয়ে বল রেডি থাকার জন্যে।
- সব কিছুতেই তোর ফাজলামো! ধ্যাত ভ্লাগেনা।
- আচ্ছা শোন আমরা দু'জন স্বামী-স্ত্রী। বাসর রাতে এসব লুডু গেইম না খেলে! কাজে লেগে যাই। শুধু শুধু সময় নষ্ট করার কি প্রয়োজন।
- কিসের কাজ? এখন রাত ১২টা বাজে! এত রাতে কিসের কাজ?
- তুই আসলে বুঝেও না বুঝার ভান করিস!
- আচ্ছা দোস্ত তোর হয়তো শরীর খারাপ ঘুমিয়ে পড়ো।
- কোথায় ঘুমাব? বিছানায় নাকি সোফায়!
- সোফায় ঘুমাবে কেন? আমার পাশে ঘুমা! আমরা তো বিবাহিত একে অপরের অর্ধাঙ্গিনী, তাহলে তুই সোফায় ঘুমাবে কেন?
- আচ্ছা ঠিক আছে গুড নাইট!
- ওকে গুড নাইট ২!
- ৪দিন পর জাফলং যাচ্ছি, তুই যাবি।
- ওয়াও সত্যি।
- হ্যাঁ সত্যি! সেখানে গিয়ে কিছু আঁকার চেষ্টা করব।
- আচ্ছা ঠিক আছে থ্যাংক ইউ।
মারিয়া আরিফের কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরে, আরিফের গালে আলতো করে চুমু খেয়ে বলে!
- কি যেন কাজের কথা বলেছিলে?
- এখন তাহলে বুঝতে পারছিস!
- বুঝবনা কেন? আমি অবুঝ নাকি?
- আচ্ছা তাহলে আমাকে তুমি করে বলো!
- আমি পারবোনা, তোকে তুই করে বলতে আমার ভাল লাগে।
- আচ্ছা একটা প্রশ্ন করি! তুই সঠিক উত্তর দিবে কিন্তু।
- আচ্ছা প্রশ্ন কর তাহলে।
- তুই রিলেশনে যাস নাই কেন?
- তোকে ভালোবাসি বলেই আমি আজ অব্ধি কারো সাথে রিলেশনে যাইনি।
- আমাকে ভালো বাসিস? বিষয়টা হাস্যকর লাগছে দোস্ত।
- যদি ভালো নাই বাসতাম তাহলে বিয়ে করেছি কেন?
- হ্যাঁ সেটাও ঠিক! আগে ভেবে দেখিনি তো।
- সালা তুই একটা আবুইল্লা মার্কা।
- এই গালাগাল আমিও কম জানিনা।
- গালি দিবে তো খবর আছে।
- ওরে আমার বাবুটা রে। তোমাকে কেন গালি দিব।
- হা.হা.হা! দোস্ত তোর কথায় শুধু হাসি পায়, এজন্যই আমি তোকে অনেক ভালোবাসি।
- আচ্ছা ঠিক আছে আর বলতে হবেনা। ঘুমা এখন!
- আচ্ছা তুই কোনদিন ভেবে দেখছিস, ?
- কি ভেবে দেখবো?
- এই যে আমাদের বিয়ে, তারপর ফুলসজ্জা, ভবিষ্যতে বাচ্চা-কাচ্চা হবে।
- বাস্তবে ভাবব দূরের কথা! সপ্নেও আমি কোনদিন ভাবিনি।
- যা সালা তোর সাথে আর কথা নেই।
- রাগ করো কেন? রাগ করলে আমাদের বাচ্চা-কাচ্চা আসবে জীবনে।
- দরকার নেই এসবের।
- ওগো রাগ করোনা। প্লিজ।
- আচ্ছা তাহলে একটি কবিতা শোনাও রাগ ভেঙে যাবে।
- আমি কবিতা আবৃতি জানিনা।
- তবুও বলতে হবে। কারন তোমার বউ'র অর্ডার।
- আচ্ছা বলছি.................
ওগো লক্ষীটি, তুমি রাগ কেন করো
রাগ করলে, তোমাকে খুব বাজে দেখায়,
আমি চাই তুমি সারাক্ষণ হাসিখুশি থেকো।
রোজ তুমাকে কবিতা শুনাবো, সঙ্গে গান,
ছাদের উপর বসে রাতেরবেলা একসঙ্গে
চাঁদ দেখব। প্লিজ প্লিজ প্লিজ রাগ করোনা।
তারপর মারিয়া বললো,
- এইটা বুঝি কবিতা?
- নয়তো কি?
- কবিতা নয়! আমার রাগ ভাঙাতে তোর বাহানা মাত্র।
- কি যে বলো তুমি। মাথায় ঢুকেনা।
- এখন একটি গান বল...! তাহলে রাগ অভিমান সব ধুলোয় মিশে যাবে।
- কোন গান বলব?
- তোর যে গান ভ্লাগে সেটা বল।
বন্ধু তুমি একা হলে আমায় দিয়ো ডাক,
তোমার সঙ্গে গল্প করব আমি সারারাত।
- এই থাম...
- কেন সুন্দর নয়?
- তুই রিপুন্দার ছন্দ বলছিস কেন?
- তুই রিপুন্দাকে চিনিস?
- কেন চিনব না। হেতে আমার বিশাল আকারের ক্রাশ।
- বাবা.............
- কিবে? কিতা হয়েছে তোর?
- না দোস্ত কিছুনা। ঘুমাবো ভাই। আগামীকাল আবার মেহমান আসবে তাদের প্রতি নজর রাখতে হবে।
- তুই কি এই বাড়ির চাকর নাকি?
- এই চাকর হতে যাবো কেন?
- তাহলে মেহমান আসবে! তাদের প্রতি তুই কেন নজর রাখবি।
- ওরে বাবা! আমার বন্ধু-বান্ধব আসবে আমি নজর রাখবনা।
- ওহ তাহলে এই কাহিনী! আচ্ছা গুড নাইট!
রাত ঘনিয়ে সকাল হলো, চারদিকে নানান পাখির নানান কিচিরমিচির শব্দ। মারিয়ার ঘুম ভেঙে গেল, ঘুম থেকে উঠে দেখে ঘড়িতে, ৭:৪৫ বাজে। চোখে হাত বুলিয়ে বুলিয়ে ওয়াশরুমের ভিতর গিয়ে, ফ্রেশ হয়ে এলো! তারপর আরিফ এর মাথার হাত বুলিয়ে ডাকতে শুরু করলো।
- এই আরিফ উঠো! সকাল হয়েছে।
বার বার ডাক শুনে আরিফ বললো,
- এই ঘুমাতে দাও প্লিজ! এখন উঠবো না।
- আরে বাবা ৮টা বেজে গেছে বাসার সবাই উঠে গেছে।
- ধ্যাত সকাল সকাল ঘুম ভাঙলো বাল।
- ছিঃ আরিফ কি অসভ্য তুমি।
- কি হয়েছে তোর?
- এই উঠো ফ্রেশ হয়ে এসো নাশতা করবো।
- এই তুই এত রোমান্টিক ভাবে কথা বলছিস কেন? ব্যাপার কী বলতো?
- ট্রাই করছি! তুই তুই করে সারাজীবন ডাকতে পারবোনা একদিন না একদিন তুমি করে বলতে হবে। তাই ট্রাই করছি মাত্র।
- তুইও পারিস। হা হা হা।
- আচ্ছা যা এখন ফ্রেশ হয়ে নে।
ওয়াশরুমে যে ঢুকল আর বের ওই হচ্ছে-না। প্রায় ২০ মিনিট শেষ হলো তারপর বের হলো। বের হবার পর মারিয়া বললো,
- এত সময় লাগে ফ্রেশ হতে?
- কেন? আমার কি তারাহুরো আছে নাকি? যে ৫মিনিটে ফ্রেশ হয়ে আসব।
- হইছে ভাব দেখাতে হবেনা! আস্তা একটা বলদ তুই।
- এই কি বললি তুই?.... এত বড় সাহস আমাকে বলদ বললি।
- চুপ থাক সালা।
আপনারা হয়তো হাসছেন! হাসব্যান্ড ওয়াইফ তুইতোকারি করছে, আবার সালা,সালি বলছে। ছোট বেলা থেকে আরিফ এবং মারিয়ার বন্ধুত্ব, কোনদিন ভাবেনি এভাবে তাদের বিয়ে হবে। সারাজীবন একসঙে কাটাতে হবে। সত্যি দু'জন খুব লাকী। নাশতা শেষ করতে করতে এতক্ষণে আরিফের বন্ধু-বান্ধব চলে এসেছে। রিয়াদ,আশিক,দ্বীপ।
রিয়াদের বয়স ২১ বছর চিকনা টাইপের ছেলে রিয়াদ এর বাসা ঢাকা ধানমণ্ডি, স্টাডির পাশাপাশি ছোট একটি কোম্পানিতে জব করে। আশিকের বয়স,২৪ । আশিক একটি প্রাইমারী স্কুলের র্টীচার। দ্বীপ এর বয়স ২৩, এখনো স্টাডি শেষ হয়নি। এবার অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে আছে। কোন চাকরি-টাকরি করছে না। বাবার অনেক টাকা পয়সা আছে, তাই আপাতত লেখাপড়ায় ব্যস্ত কোন কাজ করছে না। আরিফ ওর মা-র সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পরপরই আরো এক পার্টি চলে আসলো। মেয়েদের দল। সবার হাতে ফুলের তুরা। মারিয়া এবং আরিফ কাছে এসে, ফুলগুলো হাতে দিয়ে একে একে বলতে লাগলো, কংগ্রাচুলেশনস আরিফ এবং মারিয়া। নতুন দাম্পত্যের জীবন সুখের হউক। সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে, আরিফ এবং মারিয়া পাশাপাশি বসলো সোফায়। দলে দলে লোকজন এসে হাতে ফুলের তুরা দিয়ে, কংগ্রাচুলেশনস জানাচ্ছেন। মারিয়া আরিফের কাছে ফিসফিস করে বললো,
- বাহ তোর দেখি নাম-ধাম আছে আরিফ।
একটু ভাব নিয়ে আরিফ বললো,
- দেখতে হবে তো ছেলেটা কে?
- হইছে আর ভাব নিতে হবেনা।
বলেই মুখ মোচড় মেরে আরিফের কাছ থেকে চলে গেলো বান্ধবীর কাছে। তারপর বান্ধবীদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছে।
এদিকে আরিফের কাছে তার বন্ধুরা আসলো, তারপর তারাও আড্ডা দিতেছে। চারপাশে লোকজন খাওয়া দাওয়া নিয়েই ব্যস্ত আছে।
যাই হউক সবাই মিলে সারাদিন আড্ডা দিলো।
,
ফারিহা, জান্নাত, মায়া, স্নেহা, মারিয়া সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছে। কতদিন পর সবাই মিলে একসঙ্গে আজ আড্ডা দিচ্ছে। বেশ ভালো লাগছে। সবাই একই ক্লাসে পড়ে, ফারিহা মারিয়াকে বললো,
- দোস্ত তোর বিয়ে হয়ে গেলো, অথচ আমার বিয়ের খবর নেই।
- হাহাহা আপ্সুস হয় বুঝি তোর?
- হ্যাঁ কিছুটা!
- চিন্তা করিস না আন্টিকে বলে দেবো, তোকে বিয়ে দেওয়ার জন্য। কেমন দোস্ত?
স্নেহা বলে উঠলো,
- দোস্ত বাসররাতে তোকে আরিফ কি গিপ্ট দিলো?
- আর বলিস না এই সালা একটা বলদ কিছুই জানেনা।
- মানে?
- সারারাত নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে।
মারিয়ার কথা শুনে এবার সবাই হুহুহু করে হেসে দিলো।
আচ্ছা ফুলসজ্জা রাতে একটা মেয়ে তার স্বামীর কাছ থেকে কি চায়? উত্তর হবে ভালোবাসা। সারাজীবনের ভালোবাসা জমা রেখে দেয়। শুধু এই রাতে দেবে বলে। কিন্তু আরিফ তেমন কিছু দেয়নি। ছেলে হিসাবে আরিফ ভালো, কিন্তু সারাদিন ক্লান্ত ছিলো বলে হয়তো নার্ভাস ফিল হচ্ছিলো। সেই জন্যে ঘুমিয়ে পরেছিলো।
সারাদিন সবাই মিলে বেশ ভালো আড্ডা দিলো। দিনশেষে সবাই যার যার মতে বাসায় চলে গেল। আবার একটি রাত আজ রাতে কিছু হবে একটা এই আশায় বসে আছে মারিয়া।
রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবাই যার যার মতে ঘুমিয়ে পড়লো। আরিফ রুমে এসে মারিয়াকে বললো!
- এই তোমার জান্য একটি সারপ্রাইজ আছে! চোখ বন্ধ করো।
মারিয়া আরিফের কথা মতো চোখ বন্ধ করলো। দ্যান এক মিনিট পর আরিফ মারিয়াকে বললো,
- এবার চোখ খুলে দেখো।
মারিয়া চোখ খুলে দেখে আরিফ এক হাটু মাটিতে দিয়ে সামনে বসে আছে। হাতে স্বর্ণের আংটি। অবাক হয়ে মারিয়া বললো,
- ওয়াও, আমার হাতে পরিয়ে দাও।
আরিফ আংটি 'টা মারিয়ার হাতে পরিয়ে দিয়ে বলল,
- জীবনে যা কিছুই ঘটে যাক না কেন। এই আংটি হাত থেকে খুলতে পারবে না, প্রমিজ করো।
আনন্দিত হয়ে মারিয়া বললো,
- প্রমিজ করলাম।
- ওকে I Love you.
আবারো অবাক হয়ে মারিয়া তাকিয়ে আছে আরিফের দিকে। কিচ্ছুক্ষণ পর মারিয়া বললো,
- I Love you to.........
To be continue
ভুল হলে মাপ করবেন
বিঃদ্রঃ কেউ খারাপ মন্তব্য করবেন না!!
সবাই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বেন।