আড়াল

0 6
Avatar for soyed
Written by
3 years ago

part-1

মায়ের মৃত্যুর ঠিক দুই দিন পর রাত প্রায় ১১:৩০ রুমের দরজায় কেউ জেনো আস্তে আস্তে করে ধাক্কা দিচ্ছে।দরজা খুলতেই ময়না খালা তারাতারি করে আমার রুমে ঢুকে যায়। সাধারণত ময়না খালা আমাদের আউট হাউজে থাকে। সারাদিন ঘরের সব কাজ করে আর রাতে সেখানে থাকে। কিন্তু আজ এখনও আউট হাউজে যায় নি তিনি। কী হয়েছে খালা কিছু প্রয়োজন? কথাটা জিজ্ঞাসা করতেই তিনি চারপাশ টা একটু ভালো করে দেখে নিলো। তারপর আমার দিকে এগিয়ে এসে খুব আস্তে আস্তে কানের কাছে এসে বললো তোমার সাথে দরকারী কথা আছে বুবুজান। আচ্ছা বলুন তাহলে। খালা এবার একটু চুপচাপ। কী যেনো ভাবছে। আচ্ছা খালা বলেন তাহলে কী বলবেন। রাত তো অনেক, খালা এবার কিছু না ভেবেই সোজাসাপ্টা বলে দিলো বড়োমনিরে তোমার আব্বায় মারসে। আমার মাকে খালা বড়োমনি বলে ডাকতো কারন আমার চাচিদের ঘরেও তিনি মাঝে মাঝে কাজ করতে যেতেন। তাই চাচি কে ছোটমনি বলে ডাকে। ময়না খালার কথাটা শুনে আমি রেগে যাই। এই রাতে তিনি আমার রুমে এসে আমাকে বলছে যে আমার বাবা নাকি আমার মাকে খুন করেছে। যেটা অবিশ্বাস্য আর ভিত্তিহীন।মায়ের ২ দিন আগেই মৃত্যু হয়। ঘুমেই মারা যান। ডাক্তার বলেছে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু। এখানে ময়না খালা এসে কী যা তা বলছে। আপনি কী সব বলছেন খালা। আপনি হয়তো ক্লান্ত আপনি যেয়ে বিশ্রাম করুন। উনি আমার কোনো কথাই শুনতে চাচ্ছেন না। অনেক বুঝিয়ে তারপর উনাকে উনার ঘরে পাঠাই। উনার যাওয়ার পর কথাগুলো মাথায় কেমন জানি ঘুরপাক করছিলো। বাবা মাকে খুব ভালোবাসতেন, আর মায়ের মৃত্যুর পর তো বাবা পুরাই মানসিকভাবে ভেঙে গেছেন। না না আমি শুধু শুধু বাজে কথা ভাবছি। রাতে আর তেমন এই কথা নিয়ে ভাবিনি, ঘুমিয়ে পরি। সকালে রান্না ঘরে যেয়ে দেখি ময়না খালা নেই। সকালের নাস্তা ও বানানো হয় নি। কিন্তু প্রতিদিন ৯ টা বাজার আগেই খালা সব তৈরি করে রাখতেন। হয়তো কাল রাতে দেরিতে ঘুমিয়েছে তাই এখনও সময় করে উঠতে পারেননি। আমি নাস্তা বানিয়ে সব রেডি করে বাবাকে ডাকতে যাই। বাবা ইদানীং খুব অন্যমনস্ক থাকেন। মনে হয় যেনো তার আশেপাশে কী হচ্ছে তার খবর থাকেই না। বাবার রুমের দরজা খোলা। ভেতরে যেয়ে দেখি বাবা চেয়ারে বসেই ঘুমিয়ে আছেন। বাবাকে ডেকে উঠিয়ে ফ্রেশ হতে পাঠাই। এদিকে আমিও ময়না খালাকে দেখতে আউট হাউজে যাই। আউট হাউজ তালা দেওয়া কেউ নেই ভেতরে। তাহলে খালা গেলো তো গেলো কোথায়! বাসায় এসে দেখি বাবাও খাবার টেবিলে বসে আমার জন্য অপেক্ষা করছে। সাধারণত আমি, বাবা, মা আর ময়না খালা একি সাথে নাস্তা করতাম। বাবা ময়না খালার কথা জিজ্ঞাসা করে। আমি বলে দেই তিনি বাসায় নেই হয়তো মেয়ের বাসায় গেছে। উনার মেয়ের বাসা আমাদের এখান থেকে ১ মাইল দূরে। সব কিছু গুছিয়ে নিজের রুমে চলে যাই বাবাও হাটতে বের হয়। ছোটখাটো মিলাদ পড়াবে সেই জন্য বোধহয় চাচার বাসায় গিয়েছে। এদিকে দুপুর হবে হবে ময়না খালার কোনো খবর নেই। শেষে নিজেই সব করে বাবাকে খাবার দিয়ে দুপুর বাদে বিকেলে বের হই। উদ্দেশ্য ময়না খালার মেয়ের বাসা। রুপা আপার বাসায় যাওয়ার পর জানতে পারি খালা কাল রাতে ৮ টায় সেখান থেকে বেরিয়ে পরেছিলো। তাহলে খালা গেলো কোথায়! আমার কালকে রাতের কথায় কী তিনি কষ্ট পেয়েছিলেন? কিন্তু আমি তো তেমন কিছু বলিনি। বাসায় ফিরে আউট হাউজের ডুপ্লিকেট চাবি মায়ের ড্রয়ার থেকে বের করি। মার কাছেই সব কিছুর চাবি থাকতো। আউট হাউজের তালা খুলে ভেতরে ঢুকি। ঘরের সব কিছুই ঠিক ঠাক আছে। কিন্তু খালার রুমের খাটের উপর চাদর নেই। আর কার্পেট টাও মিসিং। হঠাৎ কী হলো! খালা বা কোথায়? ভাবতে ভাবতেই আউট হাউজ থেকে বের হয়ে গেলাম। সেদিন পুরো রাত ঘুম হয়নি। পরের দিন রুপা আপা আমাদের বাসায় আসে তার মায়ের খবর পেয়েছি কিনা জানতে। মিলাদের সময় ছিলো , আমি কোনো রকম সব জোগাড় করেই রুপা আপার সাথে পাশের থানায় চলে যাই। খালার ছবি আর প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে মিসিং ডায়রি করে আসি। উনারা বলে উনারা খুজবে খালাকে। কিন্তু আমার কাছে সব কিছুই খুব অগোছালো লাগছিলো। পরের দিন সকালে পুলিশ বাড়িতে আসে। আমাদের সবাইকে বেশ কিছু প্রশ্ন করে আর আউট হাউজের চাবিটা নিয়ে যায় সেটা চেক করতে। উনারা পুরো ঘর খুজে তেমন কিছু পায়নি। কিন্তু আউট হাউজের পাশের কুয়াতে নাকি দড়ি বাধা দেখে।

চলবে....

1
$ 0.00
Avatar for soyed
Written by
3 years ago

Comments