চেয়ারম্যানের_মেয়ে_যখন_রিক্সাওয়ালার_বউ

5 10
Avatar for soyed
Written by
4 years ago

#চেয়ারম্যানের_মেয়ে_যখন_রিক্সাওয়ালার_বউ

পর্ব ঃ- ১৫

চোঁখ খুলতেই দেখি তন্নি আমার মুখের সামনে মুখ দিয়ে বসে আছে।

এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।

আমি বললাম,কি দেখছো এমন করে.?

তন্নি বললো আমার ভবিষ্যত দেখছি।

আমি বললাম তোমার ভবিষ্যত আমার মুখে নাকি.?

তন্নি বললো হুম,,তুমিই তো আমার ভবিষ্যত।

তন্নির কথায় এক গাল হাসি হাসলাম।

তারপর যেই উঠতে যাবো তখন আবার ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দিলো।

আমি বললাম কি করছো তুমি.? পাগল হয়ে গেছো নাকি.?

তন্নি বললো এখনো সবাই ঘুমাচ্ছে। আমি ও ঘুমাতে চাই।

আমি বললাম,,ঘুমাবা। ঘুমাও,, তোমার রুমে যেয়ে যতো ইচ্ছা ঘুমাও।

তন্নি বললো রুমে গেলে কি আর ঘুম আসবে.?

ঘুম তো কেড়ে নিয়েছো তুমি। এখন একটাই উপায়,,তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরো।

আমি ঃ- পাগলামি করোনা তন্নি। অনেকবেলা হয়ে গেছে। কেউ দেখে নিলে এখনি সব শেষ হয়ে যাবে।

তন্নিঃ- কিছু শেষ হবেনা। তুমি চুপ করে শুয়ে থাকো। আমি তোমার বুকে শুবো।

তন্নি এমন পাগলামি করতে থাকলে বড় কোন সমস্যা হতে পারে।

সুতরাং,ওর কথায় কান দেওয়া যাবেনা।

তাই কিছুটা ধমকের সুরে বললাম,,এখন যদি এই রুম থেকে না যাও তাহলে কোনদিন আমার সাথে দেখা করতে পারবানা।

মনে হচ্ছে কাজ হয়েছে।

তন্নি কিছুটা বিষন্ন হয়ে সোজা হয়ে বসলো।

তারপর সরি বলে চলে গেলো।

এভাবে চলে গেলে সারাদিন মন খারাপ করে থাকবে।

আমি ওকে ডাক দিলাম।

ও দাড়ালো। তারপর ওকে শক্ত করে একবার জড়িয়ে ধরলাম।

তারপর কপালে একটা ভালোবাসার পরশ বুলিয়ে দিলাম।

তন্নি ওর রুমে চলে গেলো।

আর আমিও উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম।

এর ভিতরে আঙ্কেল ও উঠে গেছেন।

আঙ্কেলরা দুই ভাই এই বাড়িতে থাকেন।

তন্নির তো আম্মু নেই। তাই ওর ছোট কাকা কাকি এখানে থেকে তন্নির খেয়াল রাখে।

নাস্তার টেবিলে সবকিছু সাজানো হয়েছে।

আঙ্কেল নাস্তা করতে বললেন।

সবাই একসাথে নাস্তা করছি।

তন্নি আমার সামনের টেবিলে বসেছে।

কিছু সময় পর পর পা দিয়ে খোঁচা দিচ্ছে।

উফ,,আঙ্কেল বসা পাশে।

এই সময় এমন করলে কিভাবে হবে বলেন.?

এই মেয়েটা একটু বুঝার চেষ্টা করেনা।

যখন যা ইচ্ছা হবে,,যা মনে হবে তাই করবে।

আঙ্কেলঃ- কি হয়েছে বাবা.? কোন সমস্যা.?

আমিঃ- না আঙ্কেল। পা একটু ব্যাথা করছে তো। তাই বারবার নাড়াচ্ছি।

আঙ্কেল কে কিভাবে বলি যে,,সমস্যা তো তার মেয়েই।

নাস্তার টেবিলে সবার সাথে অনেক কথা হলো।

সবাই খুবই ভালো।

আমার সাথে এমন ব্যাবহার করছে যেনো আমি এই বাড়ির ছেলে।

এই সুবাদে আঙ্কেল আমার সবকিছুই জানলেন।

পারিবারিক অবস্হা সম্পর্কে সবই বললাম।

নাস্তা শেষ।

সবাই বসে টুকটাক কথা বলছে।

বাড়ি যেতে হবে আমাকে।

কিছু কাজ আছে।

অনেকদিন অফিসে যাইনা।

এখন তো সুস্হ। অফিসে যাওয়া দরকার।

তাছাড়া হাবিবার সাথে ও একটু দেখা করতে হবে।

আল্লাহ জানে মেয়েটার হঠাৎ কি হলো!

আঙ্কেলকে বলে চলে আসলাম।

আসার সময় আঙ্কেল একটা কার্ড দিলেন।

বললেন যে,,যেকোন সমস্যা হলে চলে আসবা।

মনে করবা আমি তোমারই কেউ।

কোন দ্বিধা করবানা।

সোজা এসে সবকিছু শেয়ার করবা।

বাড়ি চলে এসেছি।

সেদিন অফিস থেকে যে টাকা দিয়েছিলো তার থেকে যা ছিলো সব আম্মুর হাতে দিলাম।

আম্মু অনেক খুঁশি হয়েছে।

দুু,আ করলো অনেক।

মায়ের দু,আ সত্যিই অনেক দামী।

যেটার কখনো কোন বিনিময় হয়না।

হাবিবা নিজেকে অনেক বুঝিয়েছে।

কিছু সময়ের জন্য মনকে শান্ত রাখলে ও পরবর্তিতে আবার তার মন রিফাত রিফাত করছে।

রিফাত যে শুধুই তার ফ্রেন্ড,, এটা তার মন মানতে রাজি হচ্ছেনা।

কেমন যেনো অস্বস্তি লাগছে মনের ভিতর।

বিষয়টা কিছুতেই সে দমাতে পারছেনা।

একবার ভাবলো যে,,রিফাতের থেকে দুরে দুরে থাকবে।

কিন্তু সেটা ও সম্ভব না। এটা সে কিছুতেই পারবেনা।

রিফাত যে তার খুবই কাছের কোন একজন,,তার থেকে দুরে কিভাবে থাকবে.?

একটা সমাধান বের করতেই হবে। এভাবে ডিপ্রেশনে থাকা সম্ভব না। তাহলে আব্বু আম্মু চিন্তা করবে।

যা করবো ভেবে চিন্তে করতে হবে।

হাবিবা সমাধান খুঁজতে লাগলো।

বসকে ফোন করলাম।

দুদিন হলো অফিসের কোন খোঁজ খবর নিতে পারিনি।

বসঃ- কি অবস্হা তোমার.? সুস্হ হয়েছো.?

আমিঃ- জ্বী,আঙ্কেল। ইনশাআল্লাহ কাল থেকে অফিসে আসবো।

বসঃ- কাল তো বৃহস্পতিবার! তুমি একবারে শনিবার থেকে আসো। আর দুদিন রেষ্ট নিয়ে নাও।

যাক,ভালোই হলো। মনে মনে এটাই চেয়েছিলাম।

তবে এখন যেভাবেই হোক হাবিবার সাথে দেখা করতে হবে।

ও কেন কাল রাতে ঐভাবে চলে এসেছিলো সেটা জানতে হবে।

হাবিবাকে ফোন করে দেখা করতে বললাম।

হাবিবা আমার পাশে বসে আছে।

যায়গাটা খুব সুন্দর।

মনে হচ্ছে সারাদিন এভাবেই বসে থাকতে পারতাম!

হাবিবাঃ- কেন ডেকেছিস বল.?

আমিঃ- এভাবে কেন কথা বলছিস.? কি হয়েছে তোর.?

হাবিবাঃ- আমার আর কি হবে.? কেন ডেকেছিস সেটা বল.?( অন্যদিকে মুখ করে)

ওর আচরণে খুবই অবাক হলাম।

যে মানুষটা আমার সাথে কথা বলার জন্য সব সময় ব্যাকুল থাকতো সে এখন এমন করছে.?

গভীর কিছু লুকিয়ে আছে।

খুঁজে বের করতে হবে।

হাবিবার হাত দুটো আমার হাতে নিলাম।

কোন রিয়েকশন নেই।

এখনো অন্যদিকেই ফিরে আছে।

ওকে আমার দিকে ঘুরালাম।

কেন করছিস এমন.? কোন ভুল করলে বল আমাকে।

কোন ভুল করিসনি। তোর কথা বলা শেষ হলে আমি বাড়ি যাবো।

আমার কথা শেষ হয়নি। তুই আগে বল এমন কেন করছিস,তারপর বাড়ি যাবি।

আমাকে তোর কথা মতো চলতে হবে নাকি.? কি ভাবিস নিজেকে.?

এভাবে কেন বলছিস.? আমি কি দোষ করেছি সেটা না বললে বুঝবো কিভাবে.?

কোন দোষ করিসনি। তুই দয়াকরে আর কখনো আমার সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ করিসনা।

হাবিবার কথা শুনে মাথায় বাজ পড়লো।

মনে হলো পায়ের নিচের মাটি সরে গেছে।

এখনি হয়তো মাটির নিচে চলে যাবো।

হাবিবা মনে মনে ভাবছে,,একটু বেশি করে ফেলছি নাতো.?

আমি তো চাইনা যে,,ও কষ্ট পাক,,তাহলে এমন বিহেভ কেন করছি.?

আমি ওর হাত ছেড়ে দিয়েছি। বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি।

কোন নড়াচড়া নেই। যেনো কোন পাথরের মূর্তী আমি।

হাবিবাঃ- আমি কিছুদিনের জন্য বেড়াতে যাবো।

ভালোভাবে থাকবি। আমার কিছুই হয়নি। মাথাটা একটু খারাপ হয়ে গেছে। সেজন্য এমন করছি। ঘুরে এসে তোকে সবকিছু বলবো।

কোন কথা বললাম না। মাথার ভিতরে শুধু ওর বলা কথাগুলো বাজছে।

মাথাটা ধরেছে।

এখনি হয়তো পড়ে যাবো।

পুরো পৃথিবী উল্টো মনে হচ্ছে।

সবকিছু ঝাপসা নজর আসছে।

বুঝলাম চোঁখের কোনে পনি জমেছে।

নিজেকে শক্ত করলাম।

ধুলো পড়ার অজুহাতে মুছে নিলাম চোঁখটা।

হাবিবা চলে যাচ্ছে।

সোজা হেঁটে চলেছে।

একবারো পিছনে ফিরে দেখেনি।

মনে হচ্ছে আমার কলিজাটা ও ছিড়ে নিয়ে পালাচ্ছে।

এতো কষ্ট হচ্ছে।

চোঁখের পানি আর আটকাতে পারলাম না।

সে তার নিজ গতিতে টুপ টুপ করে পড়ছে।

হাবিবা নিজেকে ধিক্কার দিচ্ছে।

কিভাবে পারলাম আমি.?

কিভাবে ওর সাথে এতো খারাপ ব্যাবহার করলাম..?

আমি ওকে কথা দিয়েছিলাম কখনো খারাপ ব্যাবহার করবোনা! কখনো কষ্ট দিবোনা! বন্ধুত্বের সর্বোচ্চ মর্যাদা ওকে দিবো। তাহলে আজ কেন করলাম এমন.?

নিজের মনের কাছে নিজেকে ছোট মনে হলো।

অনেক ছোট।

তাকিয়ে থাকতে পারছিনা আর।

যতদুর হাবিবাকে দেখা যাচ্ছিলো তাকিয়ে ছিলাম।

হঠাৎ সে হারিয়ে গেলো। যেনো শূন্য ভেসে গেছে।

কিছু সময় সেখানে বসে থেকে বাড়ি চলে আসলাম।

মনে মনে ভাবছি, সবাই এক। কেউ কথা রাখেনা।

আমি তো ওর বন্ধু,,কোন ভুল করলে সেটা বলবে তো।

এমন কেন করলো আমার সাথে.?

জীবনে আর কখনো ওর সাথে কথা বলবোনা।

রাখবোনা কোন যোগাযোগ।

করবোনা কখনো দেখা।

ও ভালো থাকুক নিজের মতো করে।

একা একা ছাদে বসে আছি।

আকাশে চাঁদ উঠেছে।

পরিপূর্ণ একটা চাঁদ।

আহ! কি সুন্দর করে পুরো আকাশ আলোকিত করে রেখেছে।

আকাশজুড়ে একমাত্র তারই রাজত্ব।

নিজের ইচ্ছামতো ঘুরে বেড়াচ্ছে।

মাঝে মাঝে তারাদের সাথে ভাব জমাচ্ছে।

মন খুলে কথা বলছে।

সুখ,দুঃখ, হাসি,আনন্দ ভাগাভাগি করে নিচ্ছে।

কতো সুন্দর লাগছে তাদের এই বন্ধুত্বের বন্ধনকে।

পুরো আকাশ আজ নতুন সাজে সেজেছে।

ঠিক যেনো নব বধুর রুপে।

অনেকদিন হলো চাঁদের সাথে কথা বলিনি।

মিতালি জমাতে পারিনি।

মনের কথাগুলো তাকে বলতে পারিনি।

তাকে দেখে আমোদিত হইনি।

আজ মন খুলে কথা বলবো।

সব কষ্টের কথা তাকে বলবো।

(আপনাদেরকে একটা কথা বলি,,কখনো যদি মন খারাপ থাকে তাহলে একাকি আকাশের দিকে তাকিয়ে কষ্টের কথাগুলো বলবেন। দেখবেন মনন ভালো হয়ে যাবে। হালকা অনুভব করবেন)

অনেক রাত হয়েছে।

আজ সারাদিন তন্নির সাথে একবারো কথা বলা হয়নি।

তাই তন্নিকে ফোন দিলাম।

অনেক সময় কথা বললাম তন্নির সাথে।

তারপর ঘুমিয়ে পড়লাম।

যখন ঘুম থেকে উঠেছি তখন অনেকবেলা হয়ে গেছে।

ফোন হাতে নিতেই অনেকগুলো ম্যাসেজ।

সবগুলো তন্নির নাম্বার থেকে।

ম্যাসেজের কথাগুলো এমন......

চলবে-------

সমস্যার কারনে সঠিক সময়ে গল্প দিতে পারিনি।

তার জন্য দুঃখিত।

ভুল-ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

3
$ 0.00
Avatar for soyed
Written by
4 years ago

Comments

Golpo Ta valo....dhonnonad lekhok story ta lekhar jonno....ami ei platform a notun tai sokoler support asha korsi

$ 0.00
4 years ago

এই ধরনের গল্প মাঝে মাঝে পড়তে খুব ভালই লাগে। গল্পটার মাঝে অনেক মজা লুকিয়ে আছে। লেখককে অনেক ধন্যবাদ এই ধরনের পোস্ট লেখার জন্য। আপনি আরো লিখতে থাকেন।।

$ 0.00
4 years ago

tnx

$ 0.00
4 years ago

মানুষ পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ জীব হয়েও সব ক্ষমতা তাদের হাতে থাকে না। কিছু ক্ষমতা ঈশ্বরের হাতেও থাকে। আর চেয়ারম্যানের মেয়ে যখন রিক্সাওয়ালার বউ তখন এটি ঈশ্বরের দান।

$ 0.00
4 years ago

গল্পের নামটা কিন্তু অনেক আকর্ষণীয় এবং গল্পটাও অসম্ভক রকমের অনেক সুন্দর হয়েছে। নেক্সট প্লীজ লেখক

$ 0.00
4 years ago