সেরে উঠার পরও করোনার ধকল

0 7
Avatar for skshuvo
2 years ago

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে শারীরিকভাবে সেরে ওঠার পরও নানা ধরনের সমস্যায় ভুগছেন রোগীরা। অনেকের ক্ষেত্রে উপসর্গ হালকা, কারোর গুরুতর। যত দিন যাচ্ছে, তত জানা যাচ্ছে করোনাভাইরাস সংক্রমণ মানবদেহে কত দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে। পুরোপুরি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতেও বেশ খানিকটা সময় লেগে যাচ্ছে অনেকের। তাই করোনা থেকে সেরে ওঠার পরও চাই সতর্কতা ও যত্ন।

করোনা–পরবর্তী কী কী সমস্যা ভোগাতে পারে

* হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরও মাঝেমধ্যে অনেকের শ্বাসকষ্ট হতে পারে। সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা বা সামান্য পরিশ্রমে হাঁপিয়ে উঠতে পারেন। বিশেষ করে, যাঁরা নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) থেকেছেন, তাঁদের শ্বাসক্রিয়া আবার স্বাভাবিক হতে বেশ সময় লেগে যাচ্ছে।

* করোনা সেরে যাওয়ার পরও কয়েক সপ্তাহ কাশি থাকতে পারে।

* অবসাদ আর ক্লান্তি থেকে যায় দীর্ঘদিন। হাসপাতালের বিছানায় দীর্ঘদিন শুয়ে থাকার কারণে দেহের পেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, পেশি দুর্বল হয়ে পড়ে। হাঁটা–চলায় ও দৈনন্দিন কাজকর্মে সমস্যা দেখা দেয়।

* খাবারে অরুচিও থেকে যায় বেশ কিছুদিন। এমনকি খাবার গিলতে, চিবুতে সমস্যা হতে পারে। যাঁরা আইসিইউতে ছিলেন বা গলায় টিউব দেওয়া হয়েছিল, তাঁদের এই সমস্যা বেশি হয়। খাবার আটকে যাচ্ছে বলে মনে হয়। কণ্ঠস্বরেও কারও কারও সমস্যা হয়। কণ্ঠ ফ্যাসফ্যাসে হয়ে যায়, কথা বলতে অসুবিধা হয়।

* করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর বড় সংখ্যক রোগীর মানসিক বিপর্যস্ততা দেখা দেয়। মনোযোগ ও চিন্তাশক্তির সমস্যা, স্মৃতি হারানো, বিষণ্নতার মতো সমস্যা হতে পারে।

* ওজন কমতে পারে। আগের ওজনে ফিরে যেতে সময় লাগতে পারে।

কীভাবে স্বাভাবিক হবেন

হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার দুই সপ্তাহ পর পুরোদমে সামাজিক মেলামেশা ও কাজে যোগদানে কোনো বাধা নেই। তবে পুরোপুরি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। আগের ফিটনেস ফিরে পেতে সময় লাগবে। তাতে ঘাবড়াবেন না।

করোনা সংক্রমণ–পরবর্তী শারীরিক দুর্বলতার নাম পোস্টভাইরাল সিনড্রোম বা পোস্টভাইরাল ফ্যাটিগ সিনড্রোম। এ সময় ভীষণ রকম ক্লান্তি, অবসাদ ও দুর্বলতা, কোনো কিছু ভালো না লাগা, নিজের যত্ন ঠিকভাবে নিতে না পারা ও কোনো কিছুতে মনোযোগ দিতে না পারার মতো সমস্যা দেখা দেয়, যা সপ্তাহ থেকে মাস পর্যন্ত গড়াতে পারে।

তাই করোনা নেগেটিভ হওয়া বা হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়া মানেই সব অসুস্থতার অবসান নয়। করোনার পরও চাই যত্ন আর সতর্কতা। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একটি দিকনির্দেশনাও দিয়েছে।

১. সম্ভব হলে একজন পুষ্টিবিদের সাহায্যে ক্যালরি চার্ট করে সঠিক ও সুষম খাবার গ্রহণ করুন। প্রচুর পানি ও তরল খাবার খান। যাঁদের খাবার গিলতে সমস্যা হচ্ছে, তাঁরা অল্প অল্প করে বারবার খাবার খাবেন, কখনো শুয়ে বা আধশোয়া হয়ে খাবেন না। খাওয়ার পর আধা ঘণ্টা সোজা হয়ে বসে থাকবেন। প্রথমেই সলিড খেতে অসুবিধে হলে তরল ও আধা তরল দিয়ে শুরু করুন। বিপাকক্রিয়া আবার সচল করতে প্রোটিন ও পুষ্টিকর খাবার খাবেন বেশি করে। অনেকেরই মুখে ঘা হতে পারে, তার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শে মলম ব্যবহার করুন। খাওয়ার আগে–পরে মুখ পরিষ্কার করুন ও ব্রাশ করুন।

২. করোনা সংক্রমণ–পরবর্তী ফুসফুসে জটিলতা দেখা দিতে পারে, যাকে পোস্ট কোভিড পালমোনারি ফাইব্রোসিস বলা হয়। হাসপাতালে যাঁদের অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়, তাঁরাই পোস্ট কোভিড ফাইব্রোসিসের শিকার হওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে আছেন। পালমোনারি ফাইব্রোসিসের উপসর্গ হতে পারে শ্বাস নিতে কষ্ট, শ্বাস নিতে গেলে বুক ভার, বুকের হাড়ের পেছনে ব্যথা বা চাপ, ওজন হ্রাস, অক্সিজেন সেচুরেশন ৯০-এর নিচে নেমে যাওয়া ইত্যাদি। আবার করোনার কারণে ফুসফুসে যে নিউমোনিয়া হয়, তার ক্ষতিগ্রস্ততায়ও দীর্ঘদিন শ্বাসকষ্ট থাকতে পারে। এই শ্বাসকষ্ট থেকে সেরে উঠতে বাড়িতে পজিশনিং আর গ্রেডেড ব্রিদিং এক্সারসাইজ করতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শে স্টেরয়েড বা অন্য কোনো ইনহেলার ব্যবহার করা যাবে। কখনো পুনরায় এক্স-রে বা সিটি স্ক্যান করা লাগতে পারে। প্রয়োজন হতে পারে ইকোকার্ডিওগ্রাফির। তাই শ্বাসকষ্ট বেশি হলে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

৩. করোনা থেকে সেরে ওঠার সময় অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা, যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, হৃদ্‌রোগ ইত্যাদির দিকে খেয়াল রাখতে হবে। স্টেরয়েড ওষুধের ব্যবহার আর খাবারদাবারের পরিবর্তনের কারণে রক্তে সুগার ওঠানামা করতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শে ইনসুলিন বা ওষুধের মাত্রা বারবার ঠিক করে নিতে হবে। রক্তে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতা হতে পারে। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বেশ কিছুদিন অ্যান্টিকোয়াগুলেন্ট বা রক্ত তরল করার ওষুধ, প্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক ও ইনহেলারগুলো সঠিক নিয়মে ব্যবহার করতে হবে।

৪. যাঁদের কণ্ঠস্বরে বা কথা বলতে সমস্যা হচ্ছে, তাঁরা কথা বলার মধ্যে বিরতি নিন। খুব জোরে বা ফিসফিস করে কথা বলার চেষ্টা করবেন না। কথা বলতে গিয়ে হাঁপিয়ে উঠলে বেশি না বলাই ভালো। বারবার পানি পান করবেন।

৫. সঙ্গে সঙ্গেই সব কাজ করা যাবে, এমন আশা করবেন না। হাসপাতাল থেকে ছুটির পরও আরও ১৪ দিন বিশ্রামে থাকা ভালো। এমন কোনো কাজ করবেন না, যাতে বেশি ঝুঁকে বা অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয় বা উঁচু থেকে কিছু পাড়তে হয়। নিজের দৈনন্দিন কাজ, যেমন গোসল, জামাকাপড় বদলানো দিয়ে শুরু করুন। ধীরে ধীরে কাজের পরিধি বাড়ান। বিভিন্ন কাজের মধ্যে বিরতি নিন। ফিটনেস এক্সারসাইজ করতে ধাপে ধাপে ফিজিওথেরাপিস্টের সাহায্য নিতে পারেন।

৬. রাতে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমাবেন। দিনেও বিশ্রাম নিতে পারেন। ঘুমের ওষুধ এড়িয়ে চলাই ভালো। অনেকেরই ঘুমের সমস্যা হয়, সে ক্ষেত্রে স্লিপ হাইজিন মেনে চলুন।

৭. মানসিক সমস্যা, অ্যাংজাইটি, বিষণ্নতা, স্মৃতি হারানো বা মনোযোগে সমস্যা হতে পারে। মন প্রফুল্ল রাখতে চেষ্টা করুন। গান শোনা, বই পড়া বা মনকে প্রফুল্ল করে এমন কিছু করুন। বন্ধুবান্ধব ও আপনজনদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন। ধীরে ধীরে নিজের পছন্দের কাজ বা শখগুলো শুরু করুন। ধূমপান ও কফি এড়িয়ে চলুন। মনোযোগ ফিরে পেতে ধাঁধা, শব্দজট সমাধান অভ্যাস করুন।

1
$ 0.00
Avatar for skshuvo
2 years ago

Comments