বরগুনার বহুল আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার বাদী থেকে আসামি হয়ে যাওয়া আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ছয়জনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। নানা কারণেই মিন্নি বরাবরই আলোচিত এবং সমালোচিত হয়েছেন।
২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর রিফাত হত্যাকাণ্ডের দুই খণ্ডের ১২৩২ পৃষ্ঠার যে অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. হুমায়ূন কবির, তাতে মিন্নির কর্মকাণ্ডই বর্ণনা করা হয়েছিল ৩২ পৃষ্ঠাজুড়ে। জমা দেয়া ওই অভিযোগপত্রে কেন হত্যার পরিকল্পনা, কোথায়-কীভাবে তা করা হয়েছে, পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ও হত্যার আগে-পরে পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারীদের সঙ্গে মিন্নির যোগাযোগের বর্ণনা দেয়া হয়েছে।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের মূল কারণ ছিল নয়ন বন্ডের জন্মদিনে মিন্নির অংশগ্রহণ ও নয়নের মুখে মিষ্টি তুলে দেয়া। বরগুনা ইউটিডিসি সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে নয়ন বন্ড জন্মদিন উদযাপন করে। ওই অনুষ্ঠানে মিন্নি ছিলেন প্রধান মেহমান। জন্মদিনের ওই অনুষ্ঠানের ভিডিও করেন নয়ন বন্ডের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হেলাল শিকদার। ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, মিন্নি নয়ন বন্ডকে মিষ্টি খাইয়ে দিচ্ছেন। ভিডিওটি হেলাল শিকদার অনলাইনে ছেড়ে দিলে রিফাত শরীফ ক্ষুব্ধ হন।
২৪ জুন বেলা সাড়ে ১১টায় রিফাত শরীফ বরগুনা জিলা স্কুল মাঠে ডেকে নিয়ে এ বিষয়ে হেলাল শিকদারকে জিজ্ঞাসা করেন। একপর্যায়ে হেলালের একটি ওয়ালটন মোবাইল ফোন রিফাত শরীফ কেড়ে নেন।
পরে নয়ন বন্ড ওই মোবাইল ফোনটি মিন্নিকে উদ্ধার করে দিতে বলেন। মিন্নি ওই মোবাইল ফোনটি রিফাতের কাছ থেকে কেড়ে নিতে গেলে ঝগড়া শুরু হয়। এক পর্যায়ে মিন্নির গায়ে হাত তোলেন রিফাত। গায়ে হাত তোলায় ক্ষুব্ধ হয় মিন্নি। সেই ঘটনার প্রতিশোধ নিতেই নয়ন বন্ডের সঙ্গে মিন্নি রিফাতকে হত্যার পরিকল্পনা করে বলে তদন্তে উল্লেখ করা হয়।
জানা যায়, মিন্নি রিফাতকে বিয়ের আগে বিয়ে করেছিলেন নয়ন বন্ডকে। নয়ন বন্ড স্বামী থাকা অবস্থাতেই রিফাতকে বিয়ে করেন মিন্নি। রিফাত শরীফের সাথে মিন্নির বিয়ের পরের দিন মিন্নির বাবা কাজীকে ফোনে বলেন, মিন্নি ও নয়ন বন্ড কাল তার কাছে যাবে। আপনি ওদের ডিভোর্স করিয়ে দিয়েন।
মিন্নি ও নয়ন বন্ডের নামে একটি আপত্তিকর ভিডিও বিভিন্ন পর্নসাইটে ছড়িয়ে পড়ে। পর্নসাইট ছাড়াও ওই ভিডিওটির অংশবিশেষ (কাটপিস) সামাজিকমাধ্যম ইউটিউব ও ফেসবুকেও শেয়ার করা হয়।
গণমাধ্যমের খবরে উঠে এসেছে, মিন্নি বলেছেন, নয়নের সঙ্গে তার অনৈতিক সম্পর্ক ছিল এবং নয়ন মাঝে-মধ্যে দু’জনের একান্ত সময়ের ভিডিও ও ছবি ধারণ করতেন।
উল্লেখ্য, রিফাত শরীফ হত্যাকান্ডের পর নয়ন বন্ড বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।