কৃষিকাজ হলো একটি পেশা। আদিম যুগ থেকে মানুষ বেঁচে থাকার জন্য দুবেলা দুমুঠো অন্নের আশায় শুরু করেছিল চাষবাস। সেই থেকে বাংলার কৃষকের হাতেখড়ি। আমাদের দেশ প্রধানত কৃষি নির্ভর দেশ।
এদেশের এক-তৃতীয়াংশ আয়ের উত্স হলো কৃষি। এই দেশের উর্বর মাটিতে বীজ বোনা মানে গোলা ভর্তি ফসল ঘরে তোলা। দক্ষ কৃষকের হাতের যাদু আর উর্বর মাটির সংস্পর্শের ফলে সোনার ফসল ফলে।
[bad iframe src]
উল্লেখযোগ্য ফসল গুলোর মধ্যে রয়েছে- ধান, পাট, গম ও বিভিন্ন সবজি। আগে আমাদের দেশের ৮০% লোক ছিল কৃষিজীবী। তবে শিল্প বিপ্লবের পর খানিকটা কমে এসেছে কৃষিকাজ। মানুষ হয়েছে শহরমুখী। বর্তমানে পেশায় কৃষিজীবীদের হার শতকরা ৬৫ ভাগ।
কৃষি নির্ভরতা:
ভারতের প্রায় ৭৫ শতাংশ লোক গ্রামের বাসিন্দা যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। এই দেশের প্রেক্ষাপটে কৃষির গুরুত্ব নিম্নরূপ:
ক) কৃষি একটি দেশের খাদ্যের যোগান দিয়ে খাদ্যসমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
খ) এটি দেশের জাতীয় আয় বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
গ) কৃষিজ পণ্য বৈদেশিক বাণিজ্যকে অক্ষুন্ন রেখে বৈদেশিক মুদ্রার্জনে সহায়তা করে।
ঘ) কৃষি মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে বেকার সমস্যা সমাধানে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে।
ঙ) এটি মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর বাসস্থানের উপকরণ যোগান দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
চ) কৃষিজাত পণ্য শিল্পের কাঁচামালের যোগান দিয়ে শিল্পকে সচল রাখতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
ছ) এটি কৃষকশ্রেণির লোকেদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে ব্যাপকভাবে সহায়তা করে।
জ) এটি শিল্পখাতে শিল্পজাত পণ্যসামগ্রীর বৃহৎ বাজার সৃষ্টিতে বিশেষভাবে সহায়তা করে।
ঝ) কৃষির উপজাত জ্বালানি সরবরাহ করে মানুষের প্রাকৃতিক গ্যাস ও জ্বালানি তেলের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে দেয়।
ঞ) সর্বোপরি, এটি সম্পদ ও মূলধন গঠনের একটি অন্যতম প্রধান উৎস হিসেবে কাজ করতে পারে।
ট) এটি রাজস্ব আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস হিসেবে কাজ করে।
কৃষকদের বর্তমান অবস্থা:
অতীতকালে আমাদের দেশে যখন জনসংখ্যা কম ছিল তখন আমাদের দেশে প্রচুর চাষযোগ্য জমি ছিল সাথে উর্বর জমিও ছিল, সেইজন্য ফসল ফলত খুব ভালো। বর্তমানে কৃষকরা তাদের পরিশ্রমের ফল পায় না।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে উর্বর জমিতে নগরায়নের ফলে কৃষিজমির সংখ্যা কমে যাচ্ছে। বিভিন্ন কীটনাশক সার ব্যবহারের ফলে জমির উর্বরতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কোনো বছর অনাবৃষ্টির জন্য ঠিক মত ফসল হয়না।আবার কখনো বন্যার ফলে চাষের সমস্ত ফসল নষ্ট হয়ে যায়।
জাতীয় অর্থনীতিতে কৃষি ও কৃষক:
যেহেতু আমাদের অর্থনীতির মূল অবকাঠামো কৃষির উপর দন্ডায়মান, সে কারণেই জাতীয় অর্থনীতিতে কৃষি ও কৃষকের ভূমিকা অপরিমেয়। কৃষি উৎপাদন কম হলে যে শুধু খাদ্য ঘাটতি দেখা দেবে তাই নয়, সেই সাথে যেসব শিল্প, কৃষিভিত্তিক কাঁচামালের উপর নির্ভরশীল সেসব শিল্প কারখানায় উৎপাদন ব্যহত হবে।
একই সাথে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি হবে আকাশচুম্বী। কৃষি উৎপাদন ব্যহত হলে অভ্যন্তরীণ ও বর্হিবাণিজ্য থমকে দাঁড়ায়। অপরদিকে কৃষি উৎপাদন ভালো হলেই দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা হয়ে ওঠে। তাই এ ক্ষেত্রে কৃষকের ভূমিকাই মূখ্য।
যে দেশের অর্থনীতি কৃষির উপর অনেকটাই নির্ভরশীল, সে দেশের জাতীয় আয়ে কৃষির ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বলে শেষ করা যাবে না। আমাদের দেশে শিল্পের কাঁচামাল থেকে শুরু করে খাদ্য দ্রব্যসহ প্রায় সকল উৎপাদিত দ্রব্যের উৎসই হলো কৃষি। এই দেশের কৃষিজাত বিভিন্ন পণ্য বিদেশে রপ্তানি করে আমাদের দেশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে।
কৃষকদের সমস্য:
ভারতের কৃষি নানা সমস্যায় জর্জরিত, যার ভুক্তভোগী হচ্ছে এদেশের কৃষকরা। এসব সমস্যা অতিক্রম করে কৃষি কাজ চালিয়ে যেতে তাদের অনেক কঠিন সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। নিম্নে আমাদের দেশের কৃষকদের কিছু প্রধান সমস্যা তুলে ধরা হলো।
মূলধনের অভাব: বর্তমানে দেশের অধিকাংশ কৃষকই গরীব, ফলে তারা প্রায়ই কাজ করতে গিয়ে মূলধন সংকটে পড়ছেন। ফলে সঠিক সময়ে মূলধনের অভাবে সঠিক কাজটি না করতে পেরে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
প্রশিক্ষণের অভাব: কৃষিতে ফলন বাড়ানোর জন্য দক্ষ কৃষকের বিকল্প নেই। আমাদের দেশের বেশিরভাগ কৃষকই অশিক্ষিত এবং অদক্ষ। এমনকি তাদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও নেই।
কৃষি উপকরণের অভাব: এদেশের কৃষকরা এখনও পুরাতন যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা প্রয়োজনীয় আধুনিক যন্ত্রপাতি ও বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির অভাবে অনেক পিছিয়ে যাচ্ছেন।
সেচ ব্যবস্থার অপ্রতুলতা: শুকনো মৌসুমে কৃষকরা ইরি ধান চাষের জন্য প্রয়োজনীয় সেচ দিতে পারেন না। ফলে ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ: প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে প্রতি বছর আমাদের দেশের অনেক ফসল নষ্ট হয়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হন কৃষকরা।
ত্রুটিপূর্ণ বাজার: আমাদের দেশের কৃষিজাত দ্রব্যের বাজার ব্যবস্থা ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় কৃষকরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্ছিত হন।
সংরক্ষণ ব্যবস্থার ত্রুটি: আমাদের দেশে উদ্বৃত্ত ফসল সংরক্ষণের সুব্যবস্থা অপ্রতুল হওয়ার কারণে প্রতিবছরই অনেক ফসল নষ্ট হয়ে কৃষকরা ক্ষতির মুখে পড়ছে।
উপসংহার:
কৃষি এদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে অপরিসীম ভূমিকা রাখছে। অথচ এদেশের কৃষকের অবস্থা এখনও বেশ খারাপ। তাদের সামাজিক মর্যাদা নেই বললেই চলে। এই জন্য শিক্ষিত নাগরিকের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো প্রয়োজন।
যে শিক্ষিত জনগোষ্ঠী শহরে বসে কৃষকের ভাগ্য নির্ধারণ করেন তাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নই দেশের উন্নয়ন। কৃষি ও কৃষকদের উন্নয়নে গৃহীত পদক্ষেপই জাতীয় অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে পারে। তাই এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে।
বাংলাদেশ সোনার ফসলের দেশ।