কাজলা দিদির কি হয়েছিল

13 49
Avatar for shohid99
4 years ago

প্রিয় বন্ধুরা আমার প্রবন্ধটি শৈশবের পঠিত স্মৃতিকাতর কাজলা দিদি কবিতা নিয়ে।আমরা হয়ত সবাই কবিতাটি পড়েছি কিন্তু অনেকেই না বুঝেই মুখস্ত করেছি কারন আমাদের তাড়না ছিল শুধুই ৮টি লাইন শিখা। কবিতায় ছিল ছন্দ, আমরা ছিলাম অন্ধ। মুখস্থের ছিল তাড়না। তাইতো বুঝিনি কবির যন্ত্রণা। কাজলা দিদি কবিতাটি: 

বাঁশবাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই
মাগো, আমার শোলক-বলা কাজলা দিদি কই?
পুকুর ধারে, নেবুর তলে থোকায় থোকায় জোনাই জ্বলে,
ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না, একলা জেগে রই;
মাগো, আমার কোলের কাছে কাজলা দিদি কই?
সেদিন হতে দিদিকে আর কেনই-বা না ডাকো,
দিদির কথায় আঁচল দিয়ে মুখটি কেন ঢাকো?

খাবার খেতে আসি যখন দিদি বলে ডাকি, তখন
ও-ঘর থেকে কেন মা আর দিদি আসে নাকো,
আমি ডাকি, - তুমি কেন চুপটি করে থাকো?
বল মা, দিদি কোথায় গেছে, আসবে আবার কবে?
কাল যে আমার নতুন ঘরে পুতুল-বিয়ে হবে!
দিদির মতন ফাঁকি দিয়ে আমিও যদি লুকোই গিয়ে-
তুমি তখন একলা ঘরে কেমন করে রবে?
আমিও নাই দিদিও নাই কেমন মজা হবে!

ভুঁইচাঁপাতে ভরে গেছে শিউলি গাছের তল,
মাড়াস নে মা পুকুর থেকে আনবি যখন জল;
ডালিম গাছের ডালের ফাঁকে বুলবুলিটি লুকিয়ে থাকে,
দিস না তারে উড়িয়ে মা গো, ছিঁড়তে গিয়ে ফল;
দিদি এসে শুনবে যখন, বলবে কী মা বল!

বাঁশবাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই
এমন সময়, মাগো, আমার কাজলা দিদি কই?
বেড়ার ধারে, পুকুর পাড়ে ঝিঁঝিঁ ডাকে ঝোঁপে-ঝাড়ে;
নেবুর গন্ধে ঘুম আসে না- তাইতো জেগে রই;
রাত হলো যে, মাগো, আমার কাজলা দিদি কই? মূলভাব: বাঁশবাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই, মাগো আমার শোলক-বলা কাজলা দিদি কই?’ হারিয়ে যাওয়া বোনটিকে ফিরে পাওয়ার হৃদয় নিংড়ানো গভীর আকুতি আজও দাগ কেটে আছে সবার মনে। 

একটি  সার্থক কবিতাই যে কবিকে সাহিত্যের আসনে স্থায়ীভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম– কাজলা দিদি কবিতাটি এর অন্যতম প্রমাণ। এ কবিতাটি বিখ্যাত করেছিল কবি যতীন্দ্রমোহন বাগচীকে। 

কাজলাদিদি কবির মৃত্যুদিন ১ ফেব্রুয়ারি। কবিতাটির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে আমাদের শৈশবস্মৃতি। আমরা সবাই কম-বেশি এই কবিতাটি পড়েছি। সে কবিতাটি সব কালের পাঠকদেরই কাঁদায়। 
 
বর্তমানে এ কবিতাটি চতুর্থশ্রেণির ‘আমার বাংলা বই’ এর ৬৭ পৃষ্ঠায় অন্তর্ভুক্ত।কাজলাদিদি যতীন্দ্রমোহন বাগচীর একটি অসাধারণ শোকবিধুর কাব্যগাথা। 
যতীন্দ্রমোহন বাগচী ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দের ২৭ নভেম্বর পশ্চিমবাংলার নদীয়া জেলার জমশেরপুরের বিখ্যাত বাগচী জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা হরিমোহন বাগচী এবং মা গিরিশমোহিনী দেবী। বাগচী পরিবার ছিল তখনকার একটি মুক্তচিন্তার পাঠশালা। 

১৯১৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি মানসী, বঙ্গদর্শন, সাহিত্য, ভারতী, প্রবাসী, সাধনা, সবুজপত্র, মর্মবাণী, পূর্বাচল, যমুনা ইত্যাদি পত্রিকায় বিভিন্ন সময়ে তিনি লিখেছেন। ১৯৪৭ থেকে ১৯৪৮ পূর্বাচল পত্রিকার মালিক এবং সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। তাকে রবীন্দ্র পরবর্তী বাংলা সাহিত্যের একজন প্রধান সাহিত্যিক হিসেবে বিবেচনা করে হয়। 

গ্রামবাংলার শাশ্বত শ্যামল স্নিগ্ধরূপ তার রচনায় বিভিন্নভাবে প্রকাশিত হয়েছে। গ্রামীণ জীবনের সাধারণ বিষয় ও সুখ-দুঃখগুলোকে তিনি সহজ-সরল ভাষায় সহৃদয়তার সঙ্গে তাৎপর্যমণ্ডিত করে প্রকাশ করেছেন। এখানেই কবির পরম সার্থকতা। 

আমাদের সবুজশ্যামল বাংলার চিরন্তন সৌন্দর্য তার দৃষ্টি আর মননকে এড়িয়ে যায়নি। এক বোনহারা ভাইয়ের যে আকুতি- এ যেন পরম মমতায় লালিত আমাদের বাঙালি পরিবারিক জীবনের নিজস্ব কৃষ্টি ও সংস্কৃতি। হারিয়ে যাওয়া সেই দিদির নাম কাজলা। দিদিহারা একটা ছোট্ট মেয়ে, দিন রাত দিদিকে খুঁজে ফেরে। মায়ের আঁচল ধরে কত প্রশ্ন করে। মা দিদির কথায় আঁচলে মুখ লুকায়। 

যতীন্দ্রমোহন বাগচীর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলো হলো: লেখা, কেয়া, বন্ধুর দান, জাগরণী, নীহারিকা প্রভৃতি। কাজলা দিদি কবিতাটি কাব্যমালঞ্চ কাব্যগ্রন্থের। 
আজকের এই দিনে কাজলাদিদি কবি পরলোকগমন করেন। আমাদের এই শৈশব-কবির প্রতি রইলো গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি। 

31
$ 0.00
Avatar for shohid99
4 years ago

Comments

😍

$ 0.00
4 years ago

Oti uttom

$ 0.00
4 years ago

😍

$ 0.00
4 years ago

Besh valo likhechen ...

Apnake subscribe korlam.. back korben..

$ 0.00
4 years ago

wow just wow !!!please visite may profile

$ 0.00
4 years ago

Great

$ 0.00
4 years ago

very nice

$ 0.00
4 years ago

Wow Nice article

$ 0.00
4 years ago

Nice

$ 0.00
4 years ago

Nice writing

$ 0.00
4 years ago

Nice

$ 0.00
4 years ago

বাঁশবাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই মাগো, আমার শোলক-বলা কাজলা দিদি কই? পুকুর ধারে, নেবুর তলে থোকায় থোকায় জোনাই জ্বলে, ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না, একলা জেগে রই; মাগো, আমার কোলের কাছে কাজলা দিদি কই? সেদিন হতে দিদিকে আর কেনই-বা না ডাকো, দিদির কথায় আঁচল দিয়ে মুখটি কেন ঢাকো?

my favorite thanks for share it

$ 0.00
4 years ago