গল্প:: পাগলি বউ
,
আজকেও অফিস থেকে ফিরতে লেট। বাড়ি গেলে আবার সেই। প্রতিদিনের মতো বৌয়ের সাথে ঝগড়া তর্ক মান অভিমান। ধুর ভাল্লাগেনা।
,
না আমি এই মেয়েটাকে আমার ভালোবাসাটা বোঝাতে পারি না নিজের ব্যস্ততাকে কমাতে পারছি। মাঝখান থেকে বর পাগলি একটা মেয়ে অকারণেই আমাকে ভুল বুঝে রোজ কান্না করে যাচ্ছে।
,
যাইহোক বাসায় ফিরে কলিং বেল চাপতে যাবো। বুকটা ধুকফুক করছে । জানি দরজা খুললেই ঝগড়া শুরু হয়ে যাবে। তার যতো রাগ আমার ওপরে ঝাড়বে। সারাদিন হিসেব করে রাখা ১০১ টা অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে করবে। শেষমেষ নিজেই কেদে দিয়ে বলবে, বাবু সরি। আমি তো তোমাকে অনেক লাভ করি তাইতো তোমাকে সারাক্ষণ কাছে পেতে মন চায়। এটা কি আমার দোষ বলো?
,
মেয়েটা পারেও বটে। যেমন ঝগড়াটে তেমনি আবেগী।
,
কলিং বেল চাপতেই দরজা টা খুলে দিলো। মনেহলো যেন দরজার পাশেই দাড়িয়ে আমারর জন্য অপেক্ষা করছিলো।
,
-- পুরো ১১ মিনিট লেট। সেই আদাঘন্টা আগে থেকে এই। দরজার পাশে দাড়িয়ে আছি। কই। কোনোদিন তো দেখলাম না ১০ মিনিট আগে বাসায় ফিরলে উল্টা রোজ লেট করে বাসায় ফিরো। আজ আবার ১১ মিনিট লেট। কেন? কিসের জন্য? সত্যি করে বলো কই গেছিলা?( সাদিয়া)
,
সাদিয়া মানে আমার বৌয়ের কথাগুলো আমি শুনতে শুনতে চুপচাপ রুমের ভেতরে ঢুকলাম। এ আর নতুন কি? বললাম না রোজই এসব আমাদের ভেতরে চলে।
,
--- কি হলো? আমার কথা কানে গেলো না? ওওও বৌয়ের কথা শোনার সখ তো আর এখন নাই। পুরোনো হয়ে গেছি। বুড়ি হয়ে যাচ্ছি। অফিসে কতো সুন্দরী যুবতী মেয়েদের সাথে কাজ করেন আপনি। তারপর বাড়ি এসে কি আর এই বুড়িকে ভালো লাগে? বিরক্ত তো লাগবেই।
--- বোন তোর পায়ে ধরি প্লিজ আমার অফিসে কোনো মেয়ে নাই। এমন বদনাম দিসনা আমারে। আমি সারাজীবন একটা মেয়ের পিছেই ঘুরেছি। সেটা একমাত্র তুমি।
-- হ্যা সেটাই তো সেদিন যদি তোরে পাত্তা না দিতাম তাহলে আজ আর আমার এতো কষ্ট পেতে হতোনা। কুত্তা বিয়ের আগে তো কতো কি বলে পটাইছিলি মনে পড়েনা? বলেছিলি দিনরাত ছায়ার মতো হয়ে আমার পাসে থাকবি। মিথ্যুক। এখন তো রাতেই তোরে কাছে পাইনা দিনে তো তোর ছায়াও দেখিনা।
-- প্লিজ থামো এবার। চলো দুজনে মিলে কিছু খেয়ে নিই। আমার খুজ খিদে পাইছে।
-- খাবোনা আমি। খিদে নাই আমার। তুই খেয়ে নে। সারাদিন খুব পরিশ্রম করছিস এখন পেট ভরে খেয়ে শান্তিতে ঘুমা।আমি ঘুমাতে যাচ্ছি। খবরদার আমারে ডাকবি না। আর বৌও বলবি না জানোয়ার। আমি তোর বৌ না। তোর বৌ নাই। তুই একা।
,
এইটা হলো অভিমান।
মানে আমার বৌয়ের রাগটা এবার অভিমানে নেমে এসেছে। এখন শুধু একটু ভালোবাসলেই বৌয়ের জমাট বাধা অভিমানটা সহজেই গলে যাবে।
কতো সোজা বৌয়ের অভিমান ভাঙানো তাইনা?
,
আরে ভাই আগে বিয়ে তো করে নেন তারপর বুঝবেন বৌয়ের অভিমান ভাঙানোর থেকে ঠেলাগাড়ি ঠেলাও অনেক সহজ।
কাহিনী তো এখনো অনেক বাকি শুনতে থাকেন।
,
ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলাম সে আর পাচটা অভিমানী বৌগুলার মতোই রাগ করে অন্যদিকে শুয়ে ফোফাচ্ছে। আমার আবার বৌয়ের কান্নার আওয়াজটা খুব ভালো লাগে। তাই মাঝে মাঝেই ফোনে রেকর্ড করে রাখি। ও কাদলে আমি উল্টা হেসে ফেলি। সেটা দেখে ওর রাগ আরো বেড়ে যায়।
,
ভালোবাসার কথা বাদই দিলাম। সবথেকে বড় কথা সে আমার বৌ। আমার শেষ জীবনের সাথী। যে মেয়েটা আমার জন্য সারাদিন না খেয়ে থাকে তাকে রেখে আমি খাই কিভাবে??
,
তাই এবার নিজেও তার পাশে গিয়ে টান হয়ে শুয়ে পড়লাম।
,
-- আহ আহা আজ যে নতুন মেয়েটা অফিসে জয়েন করছে কি সুন্দর আহা একদম আসমানী পরীর মতো।(আমি)
-- বৌ কিছুই বললো না।
---মেয়েটার সাথে কথাও হইছে। নাম তারিন।আমাকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট ও দিছে
,
বৌ এখনো কিছু বললো না। কিন্তুু আমার উদ্দেশ্য যে করেই হোক তাকে আবার রাগিয়ে তোলা। কারণ এই রাগের চোটে সে আমাকে মারতে মারতেই একসময় আমার বুকে ঝাপিয়ে পড়বে।
এবার ফাইনাল ট্রাই করি।
,
-- দেখি ম্যাসেনজারে মেয়েটা ম্যাসেজ করছে কিনা।
,
ম্যাসেনজারের টিং টং আওয়াজের একটা রিংটন নামাই রাখছিলাম। এটা দিয়ে আমি বৌ কে জ্বালাতাম। কারণ ম্যাসেনজারের এই টিং টং আওয়াজ শুনলেই আমার বৌ দৌড়াইয়া ছুটে আসতো। মাঝে মাঝে রান্না করতো রান্নাঘরে। আর দুষ্টামি করে রুমে থেকে এই টিউন টা বাজাতাম। পাগলি রান্নাঘর থেকে খুন্তি নিয়ে একদৌড়ে ছুটে আসতো আমার কাছে। তারপর খুন্তিটা বন্দুকের মতো আমার দিকে তাক করে ধরে ফোনটা ১০ মিনিট ধরে চেক করতো। ওদিকে ভাত বা তরকারি পুড়ে গেলেও সেদিকে তার হুশ থাকতো না। এখান থেকেই বুঝতাম পাগলিটা আমাকে কতো ভালোবাসে।
,
এখনো তাই করলাম।
রিংটন টা বাজাতেই বৌ লাফিয়ে মুখ ঘুরিয়ে আমার দিকে ফিরে তাকিয়ে উঠে বসলো।
Nice