করোনা ভাইরাস নিয়ে যত গুজোব !!!!

0 9
Avatar for sazzadhosen
3 years ago

সারা বিশ্ব যখন করোনা ভাইরাসের সঙ্গে লড়ছে, তখনো কিছু মানুষ গুজব ছড়াচ্ছে৷ তড়িঘড়ি করতে গিয়ে সংবাদমাধ্যমের একটা অংশও পা দিচ্ছে ভুলে ভরা ফাঁদে৷ আসুন আমরা জানি কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা.......

০১-মিরপুরের টোলারবাগ মসজিদের ইমাম মুফতি মোজাফ্ফার আহমেদ জানিয়েছেন তিনি বেঁচে আছেন, সুস্থ আছেন। না জানালে বিভ্রান্তি থেকে হয়তো অনেক বড় অশান্তি জন্ম নিতো৷ সে আশঙ্কা জাগিয়েছিল একটি গুজব৷ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল করোনায় সংক্রমিত হয়ে মুফতি সাহেবের মৃত্যুর খবর যা সম্পুর্ণ গুজব।

০২-তার ঠিক একদিন আগে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকেও ‘‘আমি বেঁচে আছি, সুস্থ আছি’’ বলে সবাইকে আশ্বস্ত করতে হয়েছে৷ একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের দুটো স্ক্রল জোড়া দিয়ে কে বা কারা যেন ছড়িয়েছিল নিউ ইয়র্কে করোনা ভাইরাস সংক্রমণে আইভীর মৃত্যুর গুজব৷

গুজব দুটো শুধু গুজব থাকেনি সংবাদমাধ্যমের একাংশের সবার আগে সব খবর প্রচারের ‘অসুস্থ’ প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ার কারণে৷

গুজব খুব বিপদজনক৷ গুজব রোধে সবাইকেই ভূমিকা রাখতে হবে৷

তবে এটাও মনে রাখতে হবে যে, সব খাবার যেমন স্বাস্থ্যের জন্য ভাল নয়, সব খবরও মানুষের জন্য উপকারী নয়৷ বিপদের সময় ভুল খবর তো আগুনে ঘি-এর মতো! তিই আসুন আমরা গুজব থেকে সাবধান হই।

গুজবের পক্ষে, ভুল খবরের পক্ষে কিছু যুক্তিও আছে৷ কিছু যে খুব বাস্তবসম্মত এবং সুযুক্তি হিসেবে মেনে নেয়ার মতো তা- ও অস্বীকার করার কোন অবকাশ নেই৷

সরকারের সব দপ্তরের মধ্যে যে সমন্বয়ের অভাব আছে, সব তথ্য যে এখনো সহজলভ্য বা সবার কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠেনি তা-ও অনস্বীকার্য৷

সব পর্যায়েই স্বচ্ছতা, সততা, আন্তরিকতা এবং দায়িত্বশীলতা এই মুহূর্তে খুব দরকার৷

গুজব এবং ভুল খবরও স্বচ্ছতা, ‘সততা’ বা প্রশ্নাতীত দায়িত্বশীলতা নয়৷

দেশে, বিদেশে যার যেখানে যতটুকু সুযোগ বা সামর্থ্য আছে, গুজব এবং ভুল খবর রোধে তা কাজে লাগালে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইটা সহজ হবে৷

শিশু দের নিয়ে যতসব গুজব

আমাদের সকলের জানা বা অজানা বিষয় গুলোর মধ্যে একাটি হচ্ছে শিশুদের নাকি করোনা ভাইরাস আক্রমন করতে পারেনা। এরকম একটি গুজোব ছড়িয়েছিলো দেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে। আসলে করোনা ভাইরাস কার হবে আর কার হবেনা তা বলা মুশকিল। যাহার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একটু বেশি তারা বুঝতেই পারেনা যে সে করোনায় আক্রান্ত। তাই আসুন গুজোব নয় সচেতন হই।

করোনা: গুজব ও বাস্তবতা

০১।আমি কী সত্যি মারা যাব?

করোনায় আক্রান্ত হলেই আপনিসত্যি মারা যাবেন, এমন আশঙ্কা একেবারেই কম৷ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার চেষ্টা করুন৷ চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে চলুন৷ অনলাইনে যা দেখবেন, সব বিশ্বাস না করে নির্ভরযোগ্য তথ্যের সন্ধান করুন৷ সাবান,

স্যানিটাইজার নিজে কিনে জমিয়ে রাখবেন না৷ আপনি নিরাপদ থাকলেও আপনার আশেপাশের মানুষ নিরাপদ না থাকলে সহজেই তার কাছ থেকে ছড়াবে ভাইরাস৷ ফলে নিজে নিরাপদ থাকুন, অন্যদেরও থাকার সুযোগ দিন৷

০২।কী খেলে ঠেকানো যাবে করোনা?

কোনো কিছু খেয়েই করোনা ঠেকানো যাবে না৷ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিক রাখার জন্য সুষম খাবার এমনিতেই প্রয়োজন৷ অনলাইনে গুজব ছড়াচ্ছে৷ কেউ রসুন খাওয়ার কথা বলছেন, কেউ ব্লিচিং বা অন্য রাসায়নিক দ্রব্যের কথা বলছেন৷ রসুনে নানা উপাদান রয়েছে যা শরীরের জন্য ভালো৷

রসুন খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ বাড়াতে তা ভূমিকা রাখতে পারে৷ তবে ব্লিচিং বা অন্য রাসায়নিক শরীরে গেলে তা করোনা ভাইরাসের চেয়েও মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে৷

০৩। গরম বা ঠান্ডা পানি পান করা উচিত?

নিয়মিত পানি পান করলে শরীরের জন্য ভালো৷ কিন্তু ১৫ মিনিট পর পর গরম পানি পান করলে ভাইরাস মারা যাবে, এমন তথ্য সঠিক নয়৷ মুখে বা শরীরে একবার ভাইরাস প্রবেশ করলে কোনো খাবার বা পানীয় দিয়েই তা আটকানো যাবে না৷ শরীরের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিজেই এই ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করতে সক্ষম৷

০৪।অ্যান্টিবায়োটিক বা কোনো ওষুধে কাজ হবে?

অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের জন্য কার্যকর, ভাইরাসের জন্য নয়৷ কোনো কোনো ক্ষেত্রে অসুস্থ শরীরে ভাইরাসের পাশাপাশি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণও হতে পারে৷ সেসব ক্ষেত্রে চিকিৎসক অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের পরামর্শ দিতে পারেন৷ এখনো নভেল করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি৷ বিভিন্ন সংস্থা প্রতিষেধক আবিষ্কারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ শিগগিরই হয়তো আসবে সুখবর৷

০৫।আবহাওয়া ও তাপমাত্রার কোনো প্রভাব রয়েছে?

এ বিষয়ে এখনো বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত নন৷ পরীক্ষাগারে দেখা গেছে ৬০ থেকে ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ভাইরাস মারা যায়৷ কিন্তু এত উচ্চ তাপমাত্রা কোনো দেশেই থাকে না৷ অনেকে মনে করছেন গরম পানি দিয়ে স্নান করলে ভাইরাস থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে৷ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা সবসময় জরুরি৷ কিন্তু প্রচণ্ড গরম পানি দিয়ে স্নান করলেই তা করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচাবে, এমন তথ্য সঠিক নয়৷

০৬।থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে কি করোনা ভাইরাস শনাক্ত সম্ভব?

থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে শরীরে তাপমাত্রা বোঝা সম্ভব, ভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চত করা সম্ভব না৷ সেক্ষেত্রে কারো শরীরে জ্বর বা অন্য উপসর্গ দেখা দেয়ার আগ পর্যন্ত তার শরীরে ভাইরাসের উপস্থিতি বোঝা যাবে না৷ সাধারণত ভাইরাস শরীরে ঢোকার ১ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে করোনা ভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেয়৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ৫ দিনের মধ্যেই তা টের পাওয়া যায়৷ তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১৪ দিনের পরও ভাইরাস শরীরে কর্মক্ষম থাকতে পারে৷

০৭।টাকার মাধ্যমে কী করোনা ছড়ায়?

শরীরের বাইরে করোনা ভাইরাস কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘণ্টা বেঁচে থাকতে পারে৷ ফলে আমদানি করা কোনো পণ্য বা চিঠির মাধ্যমে করোনা ভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা নেই বললেই চলে৷ ময়লা টাকা থেকে যেকোনো জীবাণুই ছড়াতে পারে৷ ফলে টাকা লেনদেনের পর ভালো করে হাত ধুয়ে নেয়া উচিত৷ যত বেশি সম্ভব হাত-মুখ-নাক-কানে হাত নেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে৷

০৮।মশা বা অন্য পশুর মাধ্যমে ছড়াতে পারে­?

সার্স ভাইরাস ছড়িয়েছিল এক ধরনের বেড়াল থেকে৷ মার্স ছড়িয়েছিল উট থেকে৷ নভেল করোনা ভাইরাস কিভাবে ছড়ালো বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত নন৷ ধারণা করা হচ্ছে, বাদুড় থেকে অন্য কোনো মাধ্যম হয়ে মানুষের মধ্যে এটি ছড়িয়েছে৷ তবে মশা বা অন্য কোনো প্রাণীর মাধ্যমে এটি আপনার মধ্যে ছড়াবে না৷ সতর্কতা হিসেবে মাছ-মাংস খাওয়ার আগে ভালোভাবে রান্না করতে হবে৷ অর্ধেক সিদ্ধ মাছ-মাংস বা পোচ করা ডিম থেকে যেকোনো জীবাণুই ছড়াতে পারে৷

০৯।কিভাবে থাকবো নিরাপদ?

সবচেয়ে জরুরি হাত পরিষ্কার রাখা৷ সাবান দিয়ে হাত ভালো করে ২০ সেকেন্ড পরিষ্কার করতে হবে৷ যদি সাবান না থাকে, ব্যবহার করতে পারেন অ্যালকোহলযুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার৷ হাঁচি-কাশি দেয়ার সময় টিস্যু ব্যবহার করে তা ডাস্টবিনে ফেলুন, হাত ধুয়ে নিন৷ অথবা হাতের কনুইয়ে মুখ ঢাকুন৷ হাতের তালুতে হাঁচি-কাশি দিলে সেখান থেকে ভাইরাস ছড়িয়ে আক্রান্ত হতে পারেন অন্য়রা৷ হ্যান্ডশেক বা হাত মেলানো ও কোলাকুলি থেকেও বিরত থাকুন৷

১০।শিশুদের আশঙ্কা কি বেশি?

শিশুদের নিয়ে আলাদা করে কোনো আশঙ্কা নাই৷ যে কোনো বয়সের মানুষ আক্রান্ত হতে পারেন৷ আক্রান্তদের পাঁচ জনের চারজনের ওপর এই ভাইরাস সাধারণ ঠান্ডা-জ্বরের মতোই প্রভাব ফেলবে৷ এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হওয়া রোগীদের বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে শিশু ও তরুণ বয়সিরা স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দিয়েই সংক্রমণ কাটিয়ে উঠতে পারেন৷ মধ্যবয়সিরা এতে আক্রান্ত হলেও পর্যাপ্ত সেবা ও চিকিৎসায় তাদেরও সেরে ওঠার সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ৷

আসুন আমরা সকলে গুজোব না ছড়িয়ে সচেতন হই, তাহলেই আমরা করোনা থে রেহাই পেতে পারি।

0
$ 0.00
Avatar for sazzadhosen
3 years ago

Comments