A great love story

0 9
Avatar for sarothi
4 years ago

এটি একটি মহান প্রেমের কাহিনী। তবে লাইলী মজনু, শিরি ফরহাদ আর রোমিও জুলিয়েটের মত এটিরও সমাপ্তি বিয়োগে। করুন পরিনতির এই কাহিনীতে যদিও কোন খলনায়কের আবির্ভাব ঘটেনা, গল্পের চরিত্রের নিয়তিটাই খল চরিত্রের ভূমিকা নেয়।

গল্পের মজনুর নাম রাসেল আর লাইলীর নাম হ্যাপি। তাদের ১০ বছরের প্রেমের কোনরূপ মুল্যায়ন না ঘটিয়েই হ্যাপির বাবা মেয়ের বিয়ে দেন পাশের গ্রামের সহজ সরল ছেলে সফিকের সাথে। এক্ষেত্রে হয়তবা হ্যাপির বাবাই হতে পারেন সেই খল চরিত্রের মানুষটি। বিচারের ভারটি পাঠকের উপর দিয়ে আপাতত: আমরা চলে যাই গল্পের পরের অংশটিতে। এর বছর খানেক আগেই ভাগ্যোনয়ের পাশাপাশি প্রেমের রাজকন্যা জয়ের মানসে রাসেল পাড়ি জমায় বিদেশে। বুক বাধে আশায়, পয়সাকড়ি জোগাড় করে দেশে ফিরলে এবার আর বেকার আর লাফাংগা আখ্যায় তাকে আর প্রেয়সির দুয়ার থেকে ফিরিয়ে দেয়া হবে না। এরিমধ্যে অঘটন ঘটিয়ে ফেলেন হ্যাপির বাবা। সফিককে তার খুব পছন্দ হয়। পড়াশুনা শেষে অক্লান্ত চেষ্টায় ছোটাখাট চাকুরী জুটিয়ে নিয়ে বৃদ্ধ বাবা মা সহ তিনজনের সংসারের হাল ধরেছে ছেলেটি। খুব ছোট একটা বৃত্তে সফিকের জীবনটা ঘুরে ফিরে বিধায় ছিমছাম একটা সংসার।

কিন্তু হ্যাপি তার পুরোনো প্রেম কিংবা প্রেমিক কোনটাকেই ভুলতে পারেনা। এখনো স্বপ্ন দেখে মিলনের। পরষ্পর যোগাযোগ রাখে, লুকিয়ে চুরিয়ে। নতুন সংসারের কোন কিছুতেই তার মন ভোলেনা। আর ভুলবেই বা কেমনে, কেননা ত্যাগে আর বিপর্যয়ে রচিত হতে যাচ্ছে আর একটি মহান প্রেমের কাহিনী।

অবশেষে সবকিছুর অবসান ঘটিয়ে প্রেমিকযুগল উদ্যাগ নেয়ে মিলনের। দেশের পথে রওয়ানা দেয় রাসেল। হ্যাপি সবকিছু গুছিয়ে নেয়, প্রেমিকের হাত ধরে পালিয়ে যাবার পরিকল্পনাটাকে চুড়ান্ত রূপ দেয়ার আশায়। তর সয়না তাদের কারোরই। তাই দেশে ফেরার পরের দিনটিতেই পালিয়ে দুরে কোথাও প্রেমের সৌধ গড়ার পরিকল্পনা নেয় ওরা। সৌধটি যদিও গড়ে উঠবে সফিকের সংসারের সমাধিটির উপর।

কিন্তু প্রেমে যদি বাধাই না থাকে তবে সেটি আর প্রেমের কাহিনী হয় কিভাবে। তাই সেই একই দিনে রাতের ট্রেনে সফিক তার স্ত্রীকে জানায় গায়ে ফেরার কথা।পরিকল্পনাটি ভেস্তে না গেলেও বিলম্বিত হওয়ার আশংকা দেখা দেয়। প্রেমিকের মিলনে অধীর হয়ে থাকা হ্যাপীর মন কিছুতেই এই বিলম্বকে মেনে নিতে চায়না। হায় মানুষের মন! বহু বছরের বিচ্ছেদ মেনে নিতে চাইলেও আর মাত্র কয়টা দিনের বিচ্ছেদ মেনে নিতে চায়না হ্যাপির মন। অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠে প্রেমের তরী, অধৈর্য হয়ে উঠে এর যাত্রীরা। সময় অসময়, দিন রাত্রি, আপদ বিপদ কোন কিছুই বাধ মানেনা, যুক্তির তর্কের তোয়াক্কা করেনা, বিবেক বুদ্ধিও লোপ পায়। তাই কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য মনকে পাষান করে হ্যাপি। সফিকের প্রতি কিছুটা মায়াও হয়, লোকটা স্বামী হিসাবে মন্দ না। কিন্তু এটি একটি প্রেমের গল্প স্বামীর গল্প নয়।

এদিকে গল্পের নায়কের যাত্রাটি আকাশপথে নির্বিঘ্নে কাটলেও রেলপথের যাত্রাটি বিঘ্নিত হওয়ার উপক্রম ঘটে। রেলষ্টেশনে পৌছে যখন রাসেল ততক্ষনে টিকেট ফুরিয়ে গেছে। তার হা হুতাশ বেড়ে যায় যখন সে আবিস্কার করে লাইনের ঠিক আগের জনের হাতে শেষ টিকেটটি ঠাই পায়। প্রেমিকের মুখদর্শনে অস্থির রাসেলের মাথা মগজ কোনটাই কিংবা কোন একটা কাজ করেনা। বেশি দাম দিয়ে টিকেট কেনার আগ্রহ প্রকাশ করে লোকটির কাছে।

এতে করে লোকটি অসম্মানিত বোধ করে কিনা বুঝা না গেলেও অসন্তুষ্টির ছাপ পড়ে চোখেমুখে। নিজের ভুল বুঝতে পেরে বাড়ি ফেরার নিজের আকুতিটিকে লোকটির কাছে ব্যক্ত করার প্রয়াস চালায় রাসেল।

সদয় হন ভদ্রলোক। তাদের মধ্যে সদ্ভাবও জন্মায় যখন আলাপচারিতায় জানা যায় যে কাকতালীয়ভাবে তারা পাশাপাশি গায়ের বাসিন্দা। ভদ্রলোকটি আবার বিয়ে করেছেন রাসেলদের গ্রামে। তাই তাদের সম্পর্কটি শালা দুলাভাইয়ের সম্পর্ক পর্যন্ত গড়িয়ে পরষ্পর আরো ঘনিষ্ট হয়। একসময় ভদ্রলোক স্বেচ্ছায় টিকেটটি রাসেলের জন্য উতসর্গ করেন। বুড়ো বাবার জন্য কেনা ঔষধের প্যাকেটি ধরিয়ে দেন বাড়িতে পৌছে দেয়ার জন্য সাথে ছোট্ট একটি চিরকুট।

ট্রেন যখন ষ্টেশন ছেড়ে এগুয় ঠিক তখন আমাদের নায়কটি হাপ ছেড়ে বাচেন। ভদ্রলোকের কথা স্বরণে আসতেই তার কেন জানি হয় নামটি আগেও কোথায় কারো কাছ থেকে শুনেছে সে। স্থির হয়ে বসে থাকা হঠাত উত্তজিত হয়ে নড়েচড়ে বসে। চমকে উঠে এই ভেবে যে নামটি হয়ত তার প্রিয়ার কাছ থেকেই শুনা। হাত চালিয়ে পকেটে থেকে বের করে আনে চিরকুটটা। সম্বোধনের নামটি চোখে পড়তেই সব পরিষ্কার হয়ে যায় তার কাছে। এই হতভাগা লোকটির তার প্রিয়তমা হ্যাপির হতভাগা স্বামী। আমাদের নায়কের মাঝে পুলকের সৃষ্টি হয় এই ভেবে যে গায়ে ফেরার পর তার প্রথম সাক্ষাতটি ঘটবে তার প্রিয়তমার সাথেই। তার মনে হয় নিয়ত এবার তাদের পাশে এসে দাড়িয়েছে তাদের মিলনকে ত্বরান্বিত করার জন্য। সে ভেবে আমোদিত হয় যে আর কয়টি ঘন্টা পরই তার প্রিয়া দুয়ার খুলেই আবিস্কার করবে যে মনের মানুষটি ঠিক সামনে দাড়িয়ে আছে।

বিরহটাকে দীর্ঘায়িত করতে মাঝপথে ট্রেন কিছুসময় লেট করে গন্তব্যে যখন পৌছে তখন রাত একটা। ট্রেন থেকে নেমে আমাদের নায়ক তার জন্য অপেক্ষমান জনৈকের কাছে মালপত্র গুছিয়ে দিয়ে রওয়ানা দেয় প্রেমিকের বাড়ীর উদ্দ্যেশে।

রিক্সা একজায়গায় গিয়ে থেমে পরে। বাকীটা হেটে পেরুতে হয়। ছেলেবেলায় আশপাশের পথঘাট ঘুরে বেরিয়েই বড় হয়েছে আমাদের নায়ক, তাই পথ চিনতে ভুল হয় না তার।

মিলনের ক্ষেত্র তৈরি করতে চমতকার দৃশ্যপটের অবতারনা করে নিসর্গ। পুর্নিমার চাদ আলোতে ভাসিয়ে দিয়েছে সবকিছু, সাথে গা জুড়ানো মৃদু বাতাস। এসবকিছু ছাপিয়ে আমাদের নায়কের মানসে কেবল প্রিয়তমা হ্যাপির চাদমুখখানিই কেবল জ্বলজ্বল করতে থাকে।

একজায়গায় গাছগুলো গায়ে গায়ে লাগোয়া অবস্থায় আরো কাছে সরে আসে। এখানটায় চাদের আলোও ঠিকমত পৌছায় না। গা শির শির করে রাসেলের। অনেকদিন গায়ে রাতের আধারে হাটা হয় না বলেই হয়ত। আর একটু পেরুলেই প্রিয়তমার বাড়িতে পৌছে যাবে সে। ঔষধগুলো আর চিরকুটটা ফেলে ছিড়ে ফেলে দেয় পাশের একটি ডোবায়।

ঠিক ঐ মুহুর্তেই দৃশ্যপটে আগমন ঘটে চার পাচটি লোকের। সবার মুখ কালো কাপড়ে ঢাকা। কিছু বোঝা বা বলার আগেই কয়টি লাঠির আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পরে আমাদের নায়ক। আর্তস্বরে কোন প্রকারে আকুতি জানায় পরিত্রানের। প্রিয়তমার চাদ মুখখানির পরিবর্তে চোখেমুখে ভেসে উঠে বিভীশিকার মৃত্যু।

এরিমধ্যে একজন ফিসফিসিয়ে বলতে শুনে, ওর বৌ ত ওরে মাইরা ফেলাইতে কয় নাই, কইছি শুধু এমুন মাইর দিতে যাতে মাসখানেক হাসপাতাল থাকতে হয়।

আমাদের নায়ক এবার আকুলভাবে শেষ শক্তিটুকু খরচ করে বলার চেষ্টা করে যে সে কারো স্বামী নয়, একজন প্রেমিক মাত্র।

এমনি সময়ে মাথায় লাঠির আঘাতে জ্ঞান হারাতে বসে আমাদের নায়ক। জ্ঞান হারাবার আগে তার কাছে সবকিছু ষ্পস্ট হয়ে যায়। তার প্রিয়তমা হ্যাপি স্বামী সফিককে মারতে গিয়ে মারতে বসেছে প্রানপ্রিয় প্রেমিকাকে। প্রেমের পথের কাটাটি সরাতে গিয়ে কাটা পড়তে বসেছে প্রেমের নায়কটি। আর এভাবেই রচিত হয়েছে আরো একটি বিরহের প্রেমকাহিনী।

1
$ 0.00
Avatar for sarothi
4 years ago

Comments