আমার শাশুড়ি মা

8 30
Avatar for sajid.
Written by
3 years ago

কেমন যেন একটা পোঁড়া পোঁড়া গন্ধ আসছে নাকে। ইশ চুলায় তরকারি গরম করতে দিয়েছি আমারতো মনেই নেই। কোরআন শরীফটা বন্ধ করেই ছুটলাম রান্নাঘড়ের দিকে। গিয়ে দেখি মা(শাশুড়ী) চুলাটা কমিয়ে দিচ্ছেন।

-মা আসলে, আমি না তেলওয়াত করছিলাম একটুও মনে ছিলোনা।

--তেলওয়াতটা শেষ করে খাবার টেবিলে আসো। সেহরির সময় নেই বেশি আর।

-কিন্তু মা তরকারিটাতো পুঁড়ে গেছে।

--সমস্যা নেই খুব বেশি পুঁড়ে যায়নি। অন্যসব খাবার এর সাথে বোঝা যাবেনা তেমন। আর তোমায় কে বলেছিলো আমার আগে উঠতে? কতদিন বলবো তুমি এখনো অনেক ছোটো সংসারটা বুঝে উঠতে আরো সময় লাগবে।এখনি এতো পাকনামি করতে মানা করিনি আমি হুম?

-মা তুমিতো রোজ ওঠো সেহরিতে, আমায় কিচ্ছু করতেই দাওনা। তাই আমি আজ তেলওয়াত করতে এলার্ম দিয়ে রাখছিলাম। কিন্তু কে জানতো সবসময় এমন জটলা বাধিয়ে ফেলবো।

--ধুর পাগলি, আমি থাকতে তোমাকে এখনি এতো কাজ করতে হবেনাতো। পুরোটা জীবন পরে আছে তখন দেখবা আর কিছু জটলা বাধবেনা হাহাহা...

মাঝে মাঝে খুব অবাক হই, মানুষ কি করে এতোটা ভালো হতে পারে।এই নিয়ে এক সপ্তাহে দুইদিন তরকারি পুঁড়লাম। গত সপ্তাহেতো বাবার পচ্ছন্দের কলিজা ভুনাতে লবনটাই বেশি দিয়ে ফেলছিলাম। সে কি লজ্জা আমার! তবুও বাবা তৃপ্তি সহকারে খেয়ে উঠলেন। আর মা? সে তো বরাবরই বলেন যে আমার হাতে নাকি জাদু আছে রান্না খেয়ে পেট একদম ভরে যায়। অথচ সেই একই রান্নাটা আমি খেতে কত অসস্তিবোধ করি। রান্নার 'র' ও জানতামনা, জয়েন্ট ফ্যামিলিতে বড় হয়েছি কখনো কোনো কাজ করতে হয়নি। তাই ঘড় গোছানোর বাইরে বেশি কিছু জানতামনা। এ বাড়িতে যখন প্রথম পা রাখি সেদিনই আমার শাশুড়ী বলেছিলেন, "আমার একটা মেয়ে চাই, ছেলের বউ নয়"। সেদিনই বুঝেছিলাম আমার ভাগ্যটা ভীষন ভালো।

কতটা ভালো মনের মানুষ হলে কেউ ছেলের বউ কে হাতে কলমে শিখিয়ে নেয়, তা বাবা মা কে না দেখলে বুঝতামইনা।

.

সন্ধার দিকে....

ইফতারের টেবিলে আমি খাবার গুলো সাঁজিয়ে রাখছিলাম। হঠাৎ কলিং বেলের আওয়াজ শুনে দড়জাটা খুলতেই দেখি পাশের বাসার আন্টি এসেছেন।সালাম দিয়ে ভিতরে আসতে বললাম।উনার হাতে একটা হাদীসের বই দেখলাম। আমাকে জিজ্ঞেস করলেন মা কোথায়? আমি রান্নাঘরে বললাম।

উনি মা এর সাথে হাদীস নিয়েই কিছুক্ষণ আলোচনা করছিলেন। আমি টেবিলে বসে সব গোছাচ্ছিলাম। বাইরে থেকে স্পষ্ট সব শোনা যাচ্ছিলো। কথা শেষে বাসায় চলে যেতেই আন্টি মা কে বললেন,

-ভাবি আর কতো খাটবেন? ছেলে বিয়ে করাইছেন কি করতে বউ কে বসিয়ে রেখে রান্না করে খাওয়াইতে? এই রোজার দিনেও এতো এতো রান্না করছেন আপনি?

--......।

-দেখেন আমার কি সুন্দর কপাল, ছেলের বউরে দিয়া সব রান্না করাই। আমার কিছু করতেই হয়না। এইতো এখনো দেখে আসলাম আমার ছেলের বউ রান্না করছে নানা রকমের ইফতারি। সেই জন্যই বলছিলাম এতো ভালে হইয়েননা দেখবেন ছেলের বউ মাথায় উঠে বসবে। পরে আর নামাতে পারবেননা।

কথাগুলো শুনে খুব খারাপ লাগছিলো আমার কিন্তু খেয়াল করলাম মা একটা কথাও বলছেননা,অনবরত রান্না নাড়াচাড়া আওয়াজ করেই যাচ্ছেন।

সবটা চুপচাপ শোনার পর মা বললেন,

ভাবি আজকে ইফতারটা এখানেই করে যান, আমার বউমাটা অনেক ধরনের চপ বানাতে পারে।একবার খেলে ভূলতেই পারবেননা। আর ভাবি আমি বলি কি, সবসময় অপ্রয়োজনীয় কথা না বলে নিজের বউমা কেও একটু হাতে হাতে সাহায্য করেন দেখবেন খুব ভালো লাগবে আপনারো আপনার বউমাটারো।

মায়ের কথাগুলো শুনে ভেতরটা যেন শীতল হয়ে গেলো। অবাক হয়ে চেয়ে রইলাম রান্নাঘড়ের দিকে।দেখলাম আন্টি চুপচাপ মাথা নিচু করে বের হয়ে গেলেন।

রান্নাঘরের দিকে গেলাম, গিয়ে মা কে জিজ্ঞেস করলাম, "আচ্ছা মা তুমি এতোটা ভালো কেন?" মা মিষ্টি হেসে জবাব দিলো তোমার জন্য।

ভূলে যেওনা আমিও তোমার মতো এই সংসারে এসেছিলাম।একটা প্লেট কি করে ধুয়ে ভাত বেড়ে খেতে হয় জানতামনা কখনো।কিন্তু আমার শাশুড়ী আমায় নিজের মেয়ের মতো করে শিখিয়ে পড়িয়ে নিয়েছিলো।কখনো কোনো বকা দিয়ে কথা বলতোনা, একটা কাজ হাজারবার ভূল করতাম কিন্তু তিনি বুঝিয়ে উৎসাহ দিয়ে সেই কাজটা আবার করিয়ে দিতেন। সবটাই ভালোবাসা দিয়ে বুঝিয়ে দিতেন, কখনো চোঁখ রাঙ্গিয়ে নয়।

.

প্রতিদিনের মতো আজও দেখি ইফতার টেবিলে আমার পচ্ছন্দের খাবারগুলো খুব যত্ন করে বানানো।ঠিক যেন আমার মায়ের মতো করে। মনে মনে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি, আমায় এমন আরেকটা মা দেওয়ার জন্য।

.

আজকে ছোট মাছের তরকারিটা আমিই রান্না করেছি। মা পুরোটা সময় পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাই বুঝি আজ পোঁড়া টোড়া ছাড়াই কিছুটা পার্ফেক্ট তরকারি হয়েছে।

অপেক্ষা করছি বাবার ফেরার জন্য.....

বাবা তারাবী শেষে আমার রান্না করা ছোট মাছের চচ্চড়ি খেতে খেতে বললেন, বাহ এইনা হলে আমার মেয়ের হাতের রান্না। কাল কিন্তু খাসির মাংসটা আমার মেয়েই রান্না করবে। আমি অানমনে ভাবছি বাবা হয়তো আজকেও আমার মন রাখতেই এগুলা বলছে কিন্তু সেই ধারণাটা বদলে গেলো মূহুর্তেই। মুখের সামনে এক লোকমা ভাত তুলে ধরলো কেউ। তাকিয়ে দেখি মা। আমার চোঁখটা ঝাপসা হয়ে এলো, হা করতেই মা খাবারটা মুখে দিয়ে দিলেন। সত্যিতো আজ তরকারিটা খুব ভালো হয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই খাবার টেবিলটা সবার হাসির শব্দে মুখোরিত হয়ে উঠলো। নিজেকে তখন মনে হচ্ছিলো যেন কঠিন পরীক্ষায় সদ্য পাস করা ছাত্রী।

মা কে বললাম মা, কাল যদি আবার খাসির মাংসটা পুঁড়িয়ে ফেলি তখন কি হবে?

মা কিঞ্চিত হাসির রেখা মুখে নিয়ে বললেন, "ধুর বোকা মেয়ে, আমি আছি তাহলে কি করতে?"

.

.

.

(কোনো মানুষই জন্ম থেকে শিখে আসেনা। তাকে হাতে ধরে শিখিয়ে পরিয়ে নিতে হয়। ছেলের বউ বলে যে তাকে শিখিয়ে বুঝিয়ে নেবেননা এটা চরম ভূল। সে যে সবটা বাবার বাড়ি থেকে জেনে আসবে এটা মনে করাও ভূল। কারন বাবার বাড়িতে একটা মেয়ে বড় হয় খুব আদর যত্নে তাই সে ততোটা কাজকর্ম শিখে উঠতে পারেনা। কারো ভূল হবার পরেও যদি সেই কাজটাতে উৎসাহ দেন, দেখবেন দ্বিতীয়বার আর সেই ভূলটা হবেনা। মনে রাখবেন আজ হোক বা কাল শাশুড়ী কিন্তু আপনিও হবেন।তাই সেটাই করুন যেটা আপনি আশা করেন আপনার ছেলের বউ এর কাছ থেকে।)

16
$ 0.00
Avatar for sajid.
Written by
3 years ago

Comments

Nice article, please subscribe me,I will subscribe you.

$ 0.00
User's avatar pro
3 years ago

thank you

$ 0.00
3 years ago

thanks, How are u?

$ 0.00
User's avatar pro
3 years ago

অসাধারন, এই পোষ্টে অনেক কিছুই সেখার মত আছে,যা আমাদের বুঝতে সাহায্য করে,কিন্তু আমরা এসব বুঝতে চাইনা, তাই আমরা সামনে এগোতে পারিনা,যদি আমরা সব কিছু বুঝে শুনে কথা বলি তবে জীবনের পথে আমাদের কোনো সমস্যা হবেনা

$ 0.00
3 years ago

একদম ঠিক কথা বলছেন

$ 0.00
3 years ago

A very funny post. Very well done. The articles are very beautiful. There was a request to make more such posts. Thank you very much

$ 0.00
3 years ago

thank you so much for supporting me

$ 0.00
3 years ago

it is a very good story......you are a amazing man

$ 0.00
3 years ago